ঘটনা থেকে শিক্ষা
ইলিম এবং আলিম উনাদের ফযীলত
, ২০ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০১ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ১৭ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, ইবলিস ওয়াসওয়াসা দিয়ে থাকে। কিন্তু ইবলিস সবচাইতে বেশী খুশি হয় কিসে জানা আছে কি? ইবলিসের মজলিশ বসে প্রতিদিন। যেমন- আলিম-ওলামাদের মজলিশ বসে থাকে। ঠিক তদ্রুপ ইবলিসের মজলিশ বসে থাকে পানির উপরে। প্রতিদিন দিনের শেষে বসে ইবলিসের মজলিশ। সে বসে তাদের সকলকে নিয়ে, যারা তার খাছ শারগেদ রয়েছে, অর্থাৎ বিশিষ্ট শয়তান যারা রয়েছে, তারা তার মজলিশে হাজিরা দেয়, উপস্থিত হয়। সেখানে উপস্থিত হওয়ার পরে ইবলিস সবাইকে জিজ্ঞাসা করে- তোমরা আজকে কে কি কাজ করেছো? একজন বলে যে, আমি ওমুক স্থানে মারামারি করে লোক হত্যা করিয়েছি। কেউ বলে- আমি ওমুকখানে ঝগড়াঝাটি করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তালাকের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। একেকজন একেকটা বলে। কেউ খুন-খারাবী, কেউ তালাক, কেউ শরাব পান করা, কেউ জুয়া, কেউ জিনা ইত্যাদি ইত্যাদি অবৈধ হারাম কাজের কথা বলতে থাকে পর্যায়ক্রমে। কিন্তু একটা শয়তান এক কোণার মধ্যে চুপ করে বসে থাকে। যখন সে কোণার মধ্যে চুপ করে বসে থাকে, সকলেই খুশির সাথে তাদের সংবাদ পেশ করে। ইবলিস কিন্তু কারো প্রতি সন্তুষ্ট হয় না। ইবলিস বলে এতো তেমন কোন কাজ নয়। খুন করিয়েছো, তারা ইস্তেগফার করবে, তওবা করবে, মাফ হয়ে যাবে। তালাক দেয়ার ব্যবস্থা করেছো, এখন যদি তিন তালাক না দিয়ে থাকে, তাহলে তো আবার নিতে পারবে। আর তিন তালাক দিলে, আবার পরবর্তী সময় ইচ্ছা করলে হিলা করে গ্রহণ করতে পারবে, ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। কিন্তু তোমাদের কাজ কোনটাই তেমন উল্লেখযোগ্য হয়নি।
একটা শয়তান কোণায় বসে আছে চুপ করে। ইবলিস তখন বলে যে, হে শয়তান! তুমি কি কিছু করোনি? সে বললো যে, ওস্তাদ! আমি তেমন কিছু করিনি। সেজন্য আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না। তবে করেছি সামান্য একটা কাজ। আমি যা করেছি, তা বলার মতো নয়, তাই আমি লজ্জিত। মূল ইবলিস বললো, বলো তুমি কি কাজ করেছো? আমি একটি ছোট্ট কাজ করেছি, একজন তলিবে ইলম, একজন ছাত্র মাদরাসায় ভর্তি হয়েছিল, একটা ছাত্র মাদরাসায় যেতো, পড়াশুনা করতো, সে রীতিমত মাদরাসায় যেতো। ইলমে দ্বীন হাছিল করতো। আমি আজকে তাকে বুঝিয়ে মাদরাসা থেকে বের করে দিয়েছি। সে আর জীবনে কোনদিন মাদরাসায় যাবে না। শুধু এতটুকু কাজ করেছি। যখন সে এটা বলেছে, ইবলিস এক লাফ দিয়ে এসে শয়তানকে ধরে কোলে তুলে সে লাফালাফি শুরু করে দিলো। সে হট্টগোল শুরু করে দিলো। ইবলিস বললো- তুমিই সবচাইতে শ্রেষ্ঠ কাজ করেছো। তুমিই সবচাইতে উত্তম কাজ করেছো। কারণ তুমি একটা তলিবে ইলমকে মাদরাসা থেকে ফিরিয়ে দিয়েছো, গাইরুল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দিয়েছো, দুনিয়ার দিকে ফিরিয়ে দিয়েছো, মহান আল্লাহ পাক উনার থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে ফিরিয়ে দিয়েছো। এই তলিবে ইলম যদি মাদরাসা থেকে ইলিম অর্জন করতো, একদিন সে আমার বিরোধিতা করতো। হাজার-হাজার লোকদেরকে সে আমার থেকে ফিরিয়ে দিতো। আজকে তুমি সেই তলিবে ইলমকে মাদরাসা থেকে ফিরিয়ে, দুনিয়ার দিকে মশগুল করে দিয়েছো, গাইরুল্লাহর দিকে মশগুল করে দিয়েছো। কাজেই তুমি শ্রেষ্ঠ কাজ করেছো। তুমি আমার খাছ শাগরিদ, আমার সভাসদ, আমার সঙ্গী, তোমাকে পুরস্কার দিতে হবে। ইবলিস সেটা নিয়ে নানান হট্টগোল শুরু করে দেয়।
এখন ফিকিরের বিষয়, ইবলিস কোন কাজেই সে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলো না। সন্তুষ্টি সে প্রকাশ করলো এতটুকুর মধ্যে যে, একজন তলিবে ইলমকে মাদরাসা থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে, গাইরুল্লাহর দিকে ঝুঁকিয়ে দেয়া হয়েছে, দুনিয়ার দিকে ঝুঁকিয়ে দেয়া হয়েছে। সেজন্য সে খুশি হয়ে বলেছে যে, এটিই প্রধান কাজ। কারণ আলিম যদি কেউ হয়, তাহলে সে আলিম জীবন ভর আমার বিরোধিতা করবে। হাজার-হাজার তলিবে ইলম তৈরী করবে। মানুষকে তা’লীম দিবে, শিক্ষা দিবে, মানুষ আমার সম্পর্কে জেনে ফেলবে। কাজেই আমি তাকে ধোঁকা দিতে পারবো না। তার উছীলায় লক্ষ লক্ষ লোক হিদায়েত প্রাপ্ত হয়ে যাবে। কিন্তু এই তলিবে ইলমকে ফিরিয়ে দেয়ার কারণে এই লক্ষ লক্ষ লোক গোমরাহীতে রয়ে গেল। তারা আর হিদায়েত প্রাপ্ত হবে না। কাজেই তুমি সবচাইতে উত্তম এবং শ্রেষ্ঠ কাজ করেছে।
এখন ফিকিরের বিষয়, ইবলিস খুশি হয় মানুষ যখন ইলিম থেকে সরে যাবে। মাদরাসা থেকে সরে যাবে, মহান আল্লাহ পাক এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে সরে যাবে, গাইরুল্লাহর মধ্যে মশগুল হবে। কাজেই সাবধান থাকতে হবে ইলিমের ব্যাপারে, ইলিমের যে ফযীলত দেয়া হয়েছে এজন্য। আর যে আলিম, আলিম হওয়া সত্ত্বেও গাইরুল্লাহর মধ্যে মশগুল হয়ে যাবে। তার জন্য জাহান্নাম ছাড়া কোন গতি নেই। তাহলে ইলিম এবং আলিম উনাদের ফযীলত কতটুকু ফিকির করতে হবে।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সকল কাফিররাই মুসলমানদের প্রকাশ্য শত্রু
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৫)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৪)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৩)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৭)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)