ইলমে আরূজী অর্থাৎ ছন্দ প্রকরণ সংশ্লিষ্ট আদব (১৬)
, ২২ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৫ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ১৫ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ২৯ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
শেষ কথা :
ইতোমধ্যেই আলোচিত হয়েছে, হিজরী ৭ম শতকের মুজাদ্দিদ, সুলত্বানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হিজরী ৮ম শতকের মুজাদ্দিদ, মাহবুব-এ ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং উনাদের সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত কোনো মুরীদ বা এই সিলসিলার হক্বপন্থী কোনো আউলিয়ায়ে কিরাম কখনো বাদ্যযন্ত্রসহ সামা শরীফ শোনেননি, কাওয়ালী করেননি। আমরা এও আলোচনা করেছি হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি খেয়ালের জনক নন, তবলা এবং সিতারের উদ্ভাবকও নন। এছাড়াও সঙ্গীত শিল্পী মিয়া তানসেন তিনিও মহান আল্লাহ পাক উনার বিশিষ্ট ওলী হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ গাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাতে বাইয়াত হওয়ার পর সঙ্গীত থেকে দূরে সরে ছিলেন। সুতরাং সকল আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা সামা শরীফ-এর অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে, ক্বাছীদা শরীফ শোনার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণভাবে সুন্নত উনার অনুসরণ করতেন এবং শরীয়তে নিষিদ্ধ হারাম গান-বাজনা থেকে দূরে থাকতেন। পূর্ববর্তী মুজাদ্দিদ এবং আউলিয়ায়ে কিরামগণের এই বিষয়টি বোঝার জন্য হিজরী ১৪ শতকের মুজাদ্দিদ হযরত মাওলানা আব্দুল্লাহিল মারুফ মুহম্মদ আবু বকর ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি মুবারক ঘটনা তুলে ধরা হলো।
তিনি একবার সুলত্বানুল হিন্দ হযরত খাজা সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযার শরীফ যিয়ারতে যান। মাযার শরীফ-এ অজ্ঞ মুসলমানদের সিজদা, বুছা দেখে, মাযার শরীফ-এর বাইরে গান-বাদ্য, কাওয়ালী-করতালী, নৃত্যগীত দেখে এসবের প্রতিকারার্থে তুমুল আন্দোলন অবশেষে তর্ক জিহাদ ঘোষণা করলেন। তিনি প্রবলভাবে ওয়াজ-নছীহত করলেন এবং বিদয়াত দমনের ইশতিহারসমূহ (যা তিনি কলিকাতা থেকে ছাপিয়ে নিয়ে এসেছিলেন) বিলিয়ে দিলেন। আলিমগণকে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও তাছাউফের দলীল দিলে হক্ব তালাশীগণ সমর্থন করলেন। শুধু অর্থলোভী বাতিল লোকগুলো উগ্রমূর্তি ধারণ করেছিলো। তিনি সমন্বরে সকলকে এ কথাই বলেছিলেন বাংলা-আসামের বহু মুসলমান এখানে এসে এই হারাম বিষয়গুলোকে জায়িয মনে করে গুমরাহ হয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে হিদায়েত করার জন্যই আমার এ স্থানে আগমন। (পীর ক্বিবলার জীবন চরিত্র- আব্দুস সাত্তার)
অর্থাৎ সমস্ত মুজাদ্দিদ উনারা গান-বাদ্য ধ্বংস করার জন্যই এসেছেন এবং উনাদের অনেকেই পবিত্র সুন্নত উনার অনুসরণে সামা শরীফ উনার প্রচলন করার কোশেশ করেছেন।
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে গান-বাজনার শরয়ী ফায়ছালা :
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে গান-বাজনা করা হারাম ও কবীরা গুণাহের অন্তর্ভূক্ত। তা যে কোন গানই হোক না কেন। যেমন- নবী তত্ত্ব, মুর্শীদি, জারী, কাওয়ালী, পল্লীগীতি, ভাওয়ালী, ভক্তিমূলক ইত্যাদি যে কোন প্রকার গানেই হোক না কেন। তবে বাজনা বা বাদ্য-যন্ত্র ব্যতীত হাম্দ শরীফ, না’ত শরীফ, ক্বাছীদা শরীফ ইত্যাদি পাঠ করা ও শোনা জায়িয রয়েছে। তাই কিতাবে উল্লেখ আছে, ইল্ম দু’প্রকার। (১) “ইল্মে আরূদ্বী” অর্থাৎ ছন্দ প্রকরন যেমন- “বালাগাল উলা বিকামালিহী ......... ও মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে পাঠকৃত ক্বাছীদাসমূহ, যা গানের সূরে পাঠ করা হয় না। (২) “ইল্মে মুসীক্বী” অর্থাৎ রাগ-রাগীনী বা গানের সূর।
কাজেই বাদ্য-যন্ত্র বা বাজনাতো সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণই নাজায়িয। সাথে সাথে বাদ্যবিহীন ইল্মে মুসীক্বীও নাজায়িয। মূলতঃ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের অকাট্য ও কেৎয়ী দলীল দ্বারা গান-বাজনা সুস্পষ্টভাবে হারাম সাব্যস্ত হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার অসংখ্য স্থানে গান-বাজনা করতে ও শুনতে নিষেধ করেছেন। যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْتَرِي لَـهْوَ الْـحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَـهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ.
অর্থ: “লোকদের মধ্যে কিছু এরূপ আছে যে,لـهو الـحديث “লাহওয়াল হাদীছ” বা সঙ্গীত বা গান-বাজনা করে, এ কারণে যে, (লোকদেরকে) বিনা ইলমে মহান আল্লাহ পাক উনার পথ হতে সরিয়ে দেয় এবং তা হাসি-ঠাট্টারূপে ব্যবহার করে। তাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।” (পবিত্র সূরা লুক্বমান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি ‘লাহওয়াল হাদীছ’ অবলম্বন করে, সে দোজখের কঠিন শাস্তি প্রাপ্ত হবে, কাজেই তা হারাম। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ‘লাহওয়াল হাদীছ’ কি? উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘লাহওয়াল হাদীছ’ শব্দ মুবারক উনার ব্যাখ্যায় তফসীরে ইবনে কাছীর ৮ম খ-, ৩/৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
لـما ذكر تعالى حال السعداء و هم الذين يهتدون بكتاب الله وينتفعون بسماعه (الى) عطف بذكر حال الاشقياء الذين اعرضوا عن الانتفاع بسماع كلام الله و اقبلوا على استماع الـمزامير و الغناء بالالـحان و الات الطرب كما قال حضرت ابن مسعود رضى الله تعالى عنه فى قوله تعالى و من الناس من يشترى لـهو الـحديث ليضل عن سبيل الله قال هو و الله الغناء. روى حضرت ابن جرير رحـمة الله عليه عن حضرت ابى الصهباء البكرى رحـمة الله عليه انه سـمع حضرت عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه و هو يسئل عن هذه الاية و من الناس من يشترى لـهو الـحديث ليضل عن سبيل الله فقال حضرت عبد الله بن مسعود رضى لله تعالى عنه الغناء و الله الذى لا اله الا هو يرددها ثلاث مرأت، وكذا قال حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه و حضرت جابر رضى الله تعالى عنه وحضرت عكرمة رحـمة الله عليه و حضرت سعيد بن جبير رحـمة الله عليه و حضرت مـجاهد رحـمة الله عليه و حضرت مكحول رحـمة الله عليه و حضرت عمرو بن شعيب رحـمة الله عليه و حضرت على بن بذيـمة رحـمة الله عليه و قال حضرت الـحسن البصرى رحـمة الله عليه نزلت هذه الاية فى الغناء والـمزامير.
অর্থ: “যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত সৌভাগ্যবান ব্যক্তি উনাদের আলোচনা করলেন যারা মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব দ্বারা পথ প্রাপ্ত হয়ে থাকেন এবং তা শ্রবণে উপকৃত হন, তখন উক্ত হতভাগ্যদের আলোচনায় প্রবৃত্ত হলেন যারা মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কুরআন শরীফ শ্রবণ করার উপকারিতা হতে বিমুখ হয়েছে এবং বংশীধ্বনীসমূহ, কন্ঠস্বর ও সঙ্গীতযন্ত্রসমূহ কর্তৃক অনুষ্ঠিত সঙ্গীত শ্রবণ করতে অগ্রসর হয়েছে, যেরূপ হযরত ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বলেন- و من الناس من يشترى لـهو الـحديث ليضل عن سبيل الله এ পবিত্র আয়াত শরীফ সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার শপথ, তা (لـهو الـحديث) সঙ্গীত বা গান-বাজনা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)