ইলমে আরূজী অর্থাৎ ছন্দ প্রকরণ সংশ্লিষ্ট আদব (১৪)
, ২৩শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৭ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ০২ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি
উনার সমগ্র জীবনের সাহিত্যকর্ম
হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সমগ্র জীবনের সাহিত্যকর্মকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়-
১. দিওয়ান রচনা : কবিতাসমগ্র যেমন তুহফাত-উস-সিগার, ওয়াসতুল হায়াত ইত্যাদি।
২. ঐতিহাসিক রচনা : যেমন মিফতা-উল-ফাতহ। বাদশাহ জালালুদ্দিন খিলজীর চারটি বিজয় অভিযানের উপর রচিত।
৩. গদ্য রচনা : আফজালুল ফায়িয হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি উনার কর্তৃক দেয়া তালিমের উপর রচিত।
৪. রোমান্টিক রচনা : হাশত-বেহেশত, শিরিন ওয়া খসরু, মজনু ওয়া লাইলী ইত্যাদি।
উনার রচিত কিতাব সংখ্যা অনেক। এখানে উদাহরণের জন্য কয়েকটি নাম প্রকাশ করা হলো। তবে আমাদের আলোচ্য বিষয় উনার রোমান্টিক রচনাবলী নিয়ে। ঐতিাহিসকরা উনার রোমান্টিক রচনাবলীগুলোকে দুনিয়াবী প্রেমপ্রীতির বিষয় ধারণা করে, বস্তুগত প্রেম-ভালোবাসার গান, ‘খেয়াল’ রচনা মনে করে উনাকে ‘খেয়াল’-এর জনক, বাদ্যের আবিষ্কারক ইত্যাদি ভাবতে সাহস দেখিয়েছে। ঐতিহাসিকদের বিভ্রান্ত হবার একটা মূল কারণ এখানে তুলে ধরা প্রয়োজন মনে করছি।
হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রোমান্টিক রচনাসমগ্রকে বলা হয় ‘খামছা-এ-নিযামী’ এবং রচনাকাল ১২৯৮। সেখানে তিনি পাঁচটি অধ্যায় রচনা করেন।
১. হাশত- বেহেশত ২. মাতলাউল আনওয়ার
৩. শিরিন ওয়া খসরু ৪. মাজনু ওয়া লাইলী
৫. আয়না-ই সিকান্দারী।
কিন্তু উনার আরো অনেক আগে ১১৪১-১২০৯ ঈসায়ী সালে বৃহত্তম পারস্যের আজারবাইজান অঞ্চলের কবি নিযাম গানজাবী (নিযামুদ্দীন আবু মুহাম্মদ ইলিয়াস বিন ইউসুফ বিন যাক্কি) তিনি প্রথম ‘খামছা-এ-নিযামী’ রচনা করেন।
তার রচনাসমগ্রের মধ্যে ছিল
১. মাখযান আল আসরার ২. খসরু ও শিরিন
৩. লাইলী ও মজনু ৪. ইস্কান্দার নামা
৫. হাপ্ত পেকার।
কিন্তু নিযামী গানজাবী কোনো দরবারের কবি ছিল না এবং তার এই রচনা ছিল মূলত বস্তুগত প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে। আর এখানে নিযামী হলো লেখক নিজেই। পরবর্তীতে পারস্যের এবং অন্যান্য অঞ্চলের অনেক কবিগণ নিযামী গানজাবীর এই ধারা অনুযায়ী পাঁচ অধ্যায়ের রচনাসমগ্র তৈরি করেছিলেন। হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও এরূপ রচনা করেন।
তবে তিনি উনার কিতাবের নামকরণ করেছিলেন উনার শায়েখ হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নাম মুবারক-এ এবং উনার রচনা বিষয় ছিল মহান আল্লাহ পাক উনার ইশক, শায়েখের নিছবত সেসব বিষয়ে। ঐতিহাসিকগণ উক্ত ‘খামছা-এ নিযামী’ নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকেও সস্তা রোমান্টিক গানের, ‘খেয়াল’-এর রচয়িতা হিসেবে অপব্যাখ্যা করেছে। নাঊযুবিল্লাহ!
আবার অনেক মুসলিম ছূফী কবি-সাহিত্যিক উনারা মুরীদ এবং শায়েখের নিছবতের বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে বান্দা এবং মহান আল্লাহ পাক উনার মধ্যে গভীর ইশকের বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে ‘সুরা-সাকী’ এবং নানা রকম কল্পিত বিষয় উপমা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত ‘মজনু ওয়া লাইলী’, ‘শিরিন ওয়া খসরু’ ইশকের গভীরতার উপর রচিত। উনার রচিত এই রোমান্টিক রচনাসমূহ থেকে তারা ধারণা করেছে তিনি ‘খেয়াল’-এর জনক। কেননা ‘খেয়াল’-এর মধ্যে থাকা দুই প্রেমাস্পদের কথোপকথন। দুই থেকে আট লাইনের মধ্যে থাকে ‘খেয়াল’-এর কথাগুলো। কাল্পনিক একটি বিষয়কে ফুটিয়ে তোলা হয় ‘খেয়াল’-এর মাধ্যমে।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যারা শায়েখ এবং মুরীদের বিষয়টি বোঝে না, মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মা’রিফাত মুহব্বতের বিষয়টি বোঝে না তারা হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইশকের উপর রচিত সাহিত্যকর্মকে রোমান্টিক কর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করবে এবং ‘খেয়াল’-এর জনক বলবে- এটাই স্বাভাবিক। কেননা যে যেমন সে আরেকজনকে তেমনি বিবেচনা করবে।
হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক জীবদ্দশায় দিল্লীতে তিনটি রাজবংশের শাসন পান। প্রথমত মামলুক (১২০৬-১২৯০) দ্বিতীয়ত খিলজী বংশ (১২৯০-১৩৩০), তৃতীয়ত তুঘলক বংশ (১৩২১-১৩৯৮)।
তিনি মামলুক বংশের শেষের দিকের সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের ভাতিজা এবং একটি প্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত গভর্নর মালিকে কাজুর দরবারের কবি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি গিয়াসুদ্দিন বলবনের ছেলে বুগরা খান বাংলার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পেলে তার দরবারের কবি হিসেবেও নিয়োজিত হন এবং বাংলা ছফর করেন। বলবনের দ্বিতীয় ছেলে সুলতান মাহমুদ তিনি মুলতানের দায়িত্ব পেলে হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে মুলতান নিয়ে যান। এর পরেই আসে খিলজী বংশ এবং তিনি দিল্লীতেই থেকে যান।
খিলজী বংশের অনেক শাসকের শাসনামল পর্যন্ত তিনি দরবারের কবি হিসেবেই সম্মানিত ছিলেন। এরপরে আসে তুঘলক বংশ তুঘলক বংশের প্রথম সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক এবং দ্বিতীয় সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলক।
মুহম্মদ বিন তুঘলকের শাসনামলে মাহবুব-এ ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন এবং উনার বিছাল শরীফ উনার প্রায় ৬ মাস পর তিনিও বিছাল শরীফ লাভ করেন।
সুতরাং দেখা গেল যে, ক্ষমতার পট পরিবর্তনে নতুন রাজবংশ ক্ষমতায় এলেও তিনি দরবারের কবি হিসেবেই সম্মানিত ছিলেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন প্রদেশের গর্ভনরগণ উনাকে সভার কবি হিসেবে পেতে চাইতেন এবং সঙ্গে নিয়ে যেতেন। হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বেমেছাল যোগ্যতা, প্রতিভা, তাক্বওয়া, পরহেযগারী সবাইকে আকৃষ্ট করতো। তিনি একাধারে ফার্সী, হিন্দাভী এবং ব্রিজ ভাষায় (উত্তর প্রদেশে চালু এক প্রকার ভাষা) সাহিত্য রচনা করতেন। তিনি রাজ দরবারের কবি ছিলেন বলেই সঙ্গীত চর্চা করতেন, বাদ্য বাজাতেন, খেয়াল গেয়েছেন, রচনা করেছেন এসব বলা অবান্তর। রাজদরবারের কবি থাকাতে ঐতিহাসিকরা বিভ্রান্ত হয়েছে অথচ কোনো ইতিহাস প্রমাণ করে না তিনি সঙ্গীতের ধারে কাছেও ছিলেন। কিন্তু অসংখ্য মাসনাবী, কাছীদা রচনা করেছেন, ইতিহাস রচনা করেছেন, উনার শায়েখের নছীহত সঙ্কলন করেছেন এসবের প্রমাণ আজও বিদ্যমান। তিনি যে সুলতানদের তোয়াজ করে চলতেন না তার প্রমাণ পাওয়া যায় সুলতান জালালুদ্দিন খিলজীর ঘটনায়।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলু বাইতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার কতিপয় কামালত মুবারক
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলু বাইতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার কতিপয় কারামত মুবারক
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছাহিবু ক্বাবা ক্বাওসাইনি আও আদনা, ছাহিবু লাওলাক, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশকালে প্রকাশিত বেমেছাল মু’জিযা শরীফসমূহ
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
এক নজরে ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পরিচিতি মুবারক
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক-এ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল হাদী আশার মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত কারামত ও কামালত মুবারক
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
এক নজরে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, ত্বহিরাহ, ত্বইয়্যিবাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত সিবত্বতু রসূল আর রবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত পরিচিতি মুবারক
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
এক নজরে ইবনু রসূলিল্লাহ, আশবাহুল খলক্বি বি-রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুল বাশার, সাইয়্যিদুল আসইয়াদ, আল মুবাশ্শির, আল আবাররু, আল আজওয়াদ সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রবি’ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত পরিচিতি মুবারক
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)