ইলমে আরূজী অর্থাৎ ছন্দ প্রকরণ সংশ্লিষ্ট আদব (১৩)
, ১৬ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১০ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন, ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ২৫ই মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ওলীআল্লাহ উনাদের হাক্বীক্বত না বোঝার কারণে ঐতিহাসিকগণ বিভ্রান্ত হয়েছে
হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বলা হয় খেয়ালের জনক, তবলা এবং সেতার যন্ত্রের আবিষ্কারক। নাঊযুবিল্লাহ! কিতাবের পাতা উল্টালেই শুধু এই ইতিহাস চোখে পড়বে। আর সে কারণেই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে যে, বিশিষ্ট মুজাদ্দিদ, মাহবুব-এ-ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সঙ্গে হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কী গভীর নিছবত ছিল এবং উনার তাক্বওয়া, পরহেযগারী কোন পর্যায়ের ছিল। এখানে আরো একটি বিষয় তুলে ধরা হলো। আশা করা যায়, কোনো বুদ্ধিমান এবং নেকবখত মানুষের জন্য এ ঘটনাই যথেষ্ট।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের মাত্র ছয় মাস পর পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন খাতুনে জান্নাত, সাইয়্যিদাতুন নিসা, উম্মু আবিহা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম। এই ছয় মাস তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইশকের মধ্যেই গরক ছিলেন।
সেই সুন্নত মুবারক উনার অনুসরণ দেখতে পাই হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনে। মাহবুব-এ-ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিছাল শরীফ লাভ করার মাত্র ছয় মাস পর বিছাল শরীফ লাভ করেন হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি।
বলা হয়, যদি সম্মানিত শরীয়ত উনার বিধান অনুযায়ী একই মাজার শরীফ-এ দু’জনকে রাখা জায়িয এবং আদব হতো তবে হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে উনার শায়েখ হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ উনার মধ্যেই রাখা হতো। কিন্তু হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শায়েখ হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযার শরীফ উনার পাশেই শায়িত আছেন। একজন সঙ্গীত শিল্পী, বাদক, বাদ্যযন্ত্রের উদ্ভাবক কখনো একজন মহান মুজাদ্দিদ উনার পাশে অবস্থান করার যোগ্যতা রাখে না। বরং তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী ছিলেন এবং হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অত্যন্ত সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত মুরীদ ছিলেন।
যে সকল ঐতিহাসিকরা হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে খেয়ালের জনক, তবলা ও সেতারের আবিষ্কারক বলেছে, তারা সুনির্দিষ্টভাবে ইতিহাসের সত্যতা প্রমাণ করতে পারেনি। তারা ইতিহাস রচনার সময় ‘বলা হয়ে থাকে’, ‘ধারণা করা হয়’ এভাবে বাক্য ব্যবহার করেছে। যে বিষয়গুলো ঐতিহাসিকদের মধ্যে ধারণার জন্ম দিয়েছে যে তিনি বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ‘খেয়াল’ গাইতেন, তবলা আবিষ্কার করেছেন- সে বিষয়গুলো পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
প্রথম কারণ : ভারতবর্ষে প্রচলিত ছিল ‘ধ্রুপদ’ জাতীয় সঙ্গীতের। মন্দিরে হিন্দু ধর্মীয় সঙ্গীত হিসেবে ধ্রুপদ পরিবেশন করা হতো। কিন্তু ধারণা করা হয় হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সময় থেকে শুরু হয় খেয়াল গানের। আর খেয়াল গানের ঢং হচ্ছে পারস্যের সঙ্গীতের মতো। আর হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বাবা যেহেতু পারস্য থেকে এসেছেন, তাই ধরে নেয়া হয় তিনিই পারস্য সঙ্গীতের অনুকরণে খেয়ালের প্রবর্তন করেন। নাঊযুবিল্লাহ!
দ্বিতীয় কারণ : ‘খেয়াল-এর মধ্যে থাকে- দুই প্রেমাস্পদের মধ্যে কথোপকথন। সেখানে কথায় একটি আবেগকে ফুটিয়ে তোলা হয়।
হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত সকল সাহিত্যকর্মকে চারভাগে ভাগ করা হয়েছে তার মধ্যে একটি ভাগ হচ্ছে ‘রোমান্টিক’ রচনা। আর এ বিষয়টির গূঢ় অর্থ না বোঝার কারণে ঐতিহাসিকরা বিভ্রান্ত হয়েছে।
তৃতীয় কারণ : সে সময়কার রাজা-বাদশাহদের দরবারে কাব্য ও সঙ্গীতচর্চা আয়োজন ছিল। হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবদ্দশায় মোট ৭ জন বাদশাহর রাজকবি হিসেবে মনোনীত ছিলেন। ফলে ঐতিহাসিকরা ধরে নিয়েছে তিনি রাজ দরবারে সঙ্গীত লিখে, সুর করে বাদ্যযন্ত্রসহ পাঠ করতেন। নাঊযুবিল্লাহ!
চতুর্থ কারণ : বাজারে অনেক ক্বাছীদা, কাওয়ালী পাওয়া যায়, যার রচয়িতা হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং সেগুলো বাদ্যযন্ত্রসহ পাঠ করা হয়। এ বিষয়টিতেও বিভ্রান্ত হয়েছে ঐতিহাসিকরা।
পঞ্চম কারণ : হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অনুমতিক্রমে হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সামা পরিবেশনে একটি নিজস্ব পদ্ধতি প্রবর্তন করেছিলেন আর তাতেই ঐতিহাসিকরা বিভ্রান্ত হয়েছে যে, তিনি হয়তো খেয়াল গানের জনক ছিলেন। নাঊযুবিল্লাহ!
ষষ্ঠ কারণ : মুসলমানগণকে আউলিয়া কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য এবং উনাদের শানে অপবাদ দেবার লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে মুসলমান বিদ্বেষী ঐতিহাসিকরা ইতিহাস বিকৃতি করেছে।
ভারতবর্ষে ‘ধ্রুপদ’ জাতীয় সঙ্গীতের প্রচলন ছিল। মন্দিরে হিন্দুদের ধর্মীয় সঙ্গীত হিসেবে ‘ধ্রুপদ’ গাওয়া হতো। পরবর্তীতে ভারতে ‘খেয়াল’-এর প্রচলন ঘটে। খেয়ালের ঢং যেহেতু পারস্য অঞ্চলসমূহের সঙ্গীতের মতো, তাই ধারণা করা হয়- ‘খেয়াল’-এর জনক হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি। নাঊযুবিল্লাহ!
অথচ ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই, হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পিতা তুরস্ক-বলখ হয়ে ভারতের উত্তর প্রদেশে আসেন। তিনি কখনো সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন না, ছিলেন উনার এলাকার আমীর। আর হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ভারতেই জন্মগ্রহণ করেন এবং উনার মাতা বিবি দৌলতনাজ ছিলেন দিল্লীর অধিবাসী।
হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ৮ বছর বয়স মুবারক থেকে হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক ছোহবত পান। তাহলে যিনি পারস্যের সংস্কৃতির পরিচয় পাননি, যিনি ৬ বছর বয়স মুবারকে বাবা হারিয়ে মাত্র ৮ বছর মুবারক থেকে মাহবুব-ই ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছোহবত পান, তিনি কী করে পারস্য সঙ্গীতের অনুকরণে ‘খেয়াল’-এর জন্ম দিতে পারেন? কী করে তা ধরে নেয়া যায়?
সাধারণত একজন সন্তান মায়ের ভাষা এবং সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকেন। যদি হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিতা মাতা পারস্যের অধিবাসী এবং সাংস্কৃতিক পরিম-লে বড় হওয়া মানুষ হতেন তবুও কিছু যুক্তি দেয়া যেতে পারতো। কিন্তু উনার মাতা ছিলেন দিল্লীর অধিবাসী এবং আল্লাহওয়ালী। সঙ্গীতের কোনো ছোঁয়া হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে স্পর্শ করতে পারেনি। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল কায়িনাত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করা ও তা’যীমার্থে ক্বিয়াম শরীফ করা সুন্নত হওয়ার অকাট্য প্রমাণ
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়তে রজম বা ছঙ্গেছারের বিধান (৩)
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মর্যাদা-মর্তবা ও ফযীলত মুবারক প্রসঙ্গে (৩৭)
১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কর্তব্য কাজে দৃঢ়তা এনে দেয় সন্তুষ্টি ও নিয়ামত
১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
উলামায়ে সূ’ ধর্ম ব্যবসায়ীদের পরিচিতি ও হাক্বীক্বত (৪)
১২ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
১২ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১২ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)