ইলমুত তাযকিয়্যাহ
পথ অবলম্বনে খতা বা ভুল এবং তার প্রতিকার
, ০৬ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৬ ছানী, ১৩৯১ শামসী সন , ২৫ জুলাই, ২০২৩ খ্রি:, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
যারা নিজের ভাল-মন্দ কাজের মধ্যে তারতম্য করতে পারে না; বরং নিজের সব কাজই উত্তম বলে গর্বানুভব করে, তারা দ্বীনিপথে চলার কালে সর্বস্থলে বিপদাপন্ন হয়। এ কারণেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, রোজ কিয়ামতে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে বলবেন, আপনার সন্তানদের মধ্য থেকে জাহান্নামীদেরকে বেছে বের করুন। তিনি বলবেন, হে বারে ইলাহী! কতজনের মধ্যে কতজনকে বের করবো? মহান আল্লাহ পাক তিনি বলবেন, প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বই জনকে বের করুন। অবশ্য এরা সবাই অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে না। অনেকেই পাপ পরিমাণ শাস্তি ভোগ করে জাহান্নাম থেকে বের হয়ে আসবে। এদের সংখ্যা অগণিত। এদেরকে সাধারণত চারদলে ভাগ করা হয়েছে। যথা (১) আলিম-উলামা (২) আবিদ- ইবাদতকারী (৩) ছূফী-দরবেশ (৪) ধনী লোক।
প্রথমত : ভুলকারী আলিমদের মধ্যে কতক এমন আছে যে, তারা তাদের জীবনকাল ইল্ম অর্জনে অতিবাহিত করে; কিন্তু তাদের অর্জিত ইল্ম অনুযায়ী আমল করতে অভ্যস্ত হয় না। নিজেদের হাত-পা, জিহ্বা, চোখ, কান ও গুপ্তাঙ্গ প্রভৃতিকে পাপ কাজ থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে না। অথচ তাদের মনে এরূপ ধারণা জন্মেছে, আমরা ইল্ম শিখে এমন মর্যাদা লাভ করেছি যে, আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে না। আমাদের কোন কাজে কোনরূপ জবাবদিহি করতে হবে না; বরং আমাদেরই সুপারিশে অন্যান্য লোক মুক্তি লাভ করবে। নাঊযুবিল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, যারা আলিম হয়েও ইল্ম অনুযায়ী আমল করবে না, তাদের চেয়ে কঠোর শাস্তি রোজ কিয়ামতে আর কাউকেই প্রদান করা হবে না। বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, মূর্খ লোকের পরিণামের জন্য আফসুস একবার, আর বেআমল আলিমের জন্য আফসুস সাতবার। অর্থাৎ মূর্খ লোকের পারলৌকিক শাস্তির চেয়ে বেআমল আলিমের পারলৌকিক শাস্তি সাতগুণ বেশি হবে। নাঊযুবিল্লাহ!
দ্বিতীয়ত : ভুলকারী আবিদের মধ্যে কিছু লোক এরূপ আছে যে, তারা সব রকমের নেক কাজ করে থাকে। প্রত্যহ শত শত রাকাআত নফল নামায আদায় করে এবং হাজার হাজার তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করে। প্রায় সময় রোযা রাখে। বহুবার হজ্জ করে। পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করে কিন্তু এতকিছু করা সত্বেও তারা স্বভাব-চরিত্রের উন্নতির প্রতি মনোযোগ দেয় না। যে কারণে তাদের মনে হিংসা অহংকার, রিয়া প্রভৃতি মন্দ স্বভাবগুলো বিরাজমান থাকে। এরা মানুষের সাথে সদাচরণ করে না। বরং তাদের কথায় ও কাজে বদমেজাজী ও রুক্ষ ব্যবহার প্রকাশ পায়। যা তাদের ইবাদত-বন্দেগী ও তাসবীহ-তাহলীলকে নষ্ট করে ফেলে। নাঊযুবিল্লাহ!
তৃতীয়ত : ছূফীদের মধ্যে কিছু লোক এমন আছে, যারা লোকলজ্জার কারণে মামুলী পোশাক পরিধান করতে পারে না। এরা জায়নামায, লেবাস-পোশাক ও কতক বুলি ছাড়া প্রকৃত ছূফীর অবস্থার কিছুই দেখেওনি এবং বুঝেওনি। এরা শুধু বেশ-ভূষায় ছূফীদের সাজে নিজেদেরকে সাজিয়ে নিয়েছে। এরা সর্বপ্রকার ফরয কাজ সম্পাাদন করার এবং হারাম কাজ থেকে দূরে থাকার সামর্থও রাখে না। বস্তুত এরা শয়তান এবং কুপ্রবৃত্তির কাছে বন্দী হয়ে তাদের আদেশানুযায়ীই চলে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! তারা বলে যে, কাজের সম্পর্ক অন্তরের সাথে। বাইরে কাজ করে মানুষকে দেখালে কোন লাভ নেই। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি লক্ষ্য করেন মানুষের অন্তরের প্রতি। নামাযে গাফিল ছূফীরা বলে থাকে যে, আমাদের অন্তর সদাসর্বদা নামাযে লিপ্ত আছে। আমাদের অন্তরে প্রতি মুহূর্তে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির জারী আছে। আমাদের সম্মানিত দ্বীনি বিশ্বাস এমন স্তরে উন্নীত হয়েছে যে, তা সম্পূর্ণ পরিবর্তনহীন। কোন আলিম উনাকে দেখলে এরা বলে যে, এসব আলিম কিতাবের বিভিন্নমুখী কথার মার-প্যাচে আটকা পড়েছে। হাক্বীক্বতের পথ উনারা খুঁজেই পাননি। নাঊযুবিল্লাহ!
চতুর্থত : এই শ্রেণীর বহু লোক কুকাজকে ভাল বলে গ্রহণ করে। এদের অনেকে হারাম পথে উপার্জিত অর্থ মসজিদ, মাদরাসা এবং অন্যান্য জনসেবা কাজে বা প্রতিষ্ঠানে ব্যয় করে। তারা তা করে খুবই সৎকাজ করল বলে মনে আনন্দবোধ করে। আসলে এতে তাদের ছওয়াব তো হয়ই না; বরং এর দ্বারা পাপের মাত্রা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
কিছু সংখ্যক ধনী লোক আছে তারা পছন্দ করে যে, দলে দলে ভিক্ষুক কাতারবন্দী হয়ে তাদের দরজায় এসে সমবেত হোক, তখন তারা একসাথে সবাইকে জাঁকজমক সহকারে দানÑখয়রাত করবে যাতে তাদের এই দানের কথা শহরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। আবার কোন কোন ধনী ব্যক্তি বাকপটু ভিক্ষুক ব্যতীত দান-ছদকা করে না। কেননা বাকপটু ভিক্ষুককে ভিক্ষা দিলে সে দেশে বিদেশে দাতার প্রশংসা ও সুখ্যাতি করে বেড়াবে। এতে অন্যের মুখে প্রশংসা শুনতে তার খুবই ভাল লাগে। নাঊযুবিল্লাহ!
উল্লেখিত সকল প্রকার ব্যক্তির সংশোধন ও মুক্তির জন্য ফরয হচ্ছে ইখলাছ হাছিল করা। আর ইখলাছ হাছিল করতে হলে ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাওউফে পূর্ণতাপ্রাপ্ত, পবিত্র শরীয়ত ও পবিত্র সুন্নতের পূর্ণপাবন্দ একজন প্রকৃত ওলীআল্লাহ উনার নিকট বাইয়াত গ্রহন করে ক্বলবী যিকির ও অন্যান্য সবক্ব আদায় করা এবং তখনই রিয়াসহ যাবতীয় বদস্বভাব দূরীভূত হয়ে নেকস্বভাব অর্জিত হবে এবং ইখলাছ হাছিল হবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)