ইলমুত তাযকিয়্যাহ তমা’ বা ধন-সম্পদ পাওয়ার লোভ এবং তার প্রতিকার
, ০১ আগস্ট, ২০২৩ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মহান আল্লাহ পাক তিনি অবশ্য লোভরূপ প্রবৃত্তিকে সৎ উদ্দেশ্যেই মানুষের মধ্যে প্রদান করেছেন; কিন্তু মানুষ তাকে সর্বনাশের পথে কাজে লাগিয়ে থাকে। মানুষ নিজের জন্য নির্ধারিত অংশ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে না। যারা অল্পে তুষ্ট থাকতে পারে না তারা লোভ-লালসার কবল থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করতে সক্ষম হয় না।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, দু’টি প্রান্তরপূর্ণ স্বর্ণ হস্তগত হলেও মানুষ তৃতীয় আরকটি প্রান্তরপূর্ণ স্বর্ণ পেতে লোভ করবে। কেবলমাত্র মাটি ছাড়া আর কিছুই মানুষের অন্তরকে তৃপ্ত করতে পারবে না, অর্থাৎ কবরে না যাওয়া পর্যন্ত মানুষের অর্থলিপ্সার নিবৃত্তি নেই। তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, মানুষের সবকিছুই বৃদ্ধ হতে থাকে কিন্তু দুটি বস্তু ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধিই পেতে থাকে। এর একটি হলো দীর্ঘজীবন লাভের আকাঙ্খা এবং অপরটি হলো অধিক ধন-সম্পদ লাভের লালসা।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি দয়া করে ইসলাম উনার পথ দেখিয়ে দিয়েছেন এবং অভাব মোচন পরিমাণ সম্পদ দান করেছেন আর সে ব্যক্তিও তাতে পরিতৃপ্ত রয়েছে এরূপ ব্যক্তিই সৌভাগ্যবান। তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম আমার অন্তর মুবারকের মধ্যে ফুঁক দান করে একথা বলে দিয়েছেন যে, মানুষের জন্য যে রিযিক নির্ধারিত আছে তা সম্পূর্ণরূপে ভোগ না করা পর্যন্ত কোন মানুষই ইন্তিকাল করবে না। মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো এবং ধীর-স্থিরভাবে জীবিকা তালাশ করো। অর্থ উপার্জনের জন্য তাড়াহুড়া করো না এবং সীমাহীনভাবে লোভ করো না।
একবার হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফে আরজ করলেন, হে বারে ইলাহী! আপনার বান্দাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ ধনী। মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে জাওয়াব এলো, আমি যাকে যা দান করেছি তাতে যে খুশি থাকে সে ব্যক্তিই শ্রেষ্ঠ ধনী।
লোভ-লালসার প্রতিকার সম্পর্কে বর্র্ণিত রয়েছে যে, ব্যয় সংকোচই এই ব্যবস্থার প্রথম কাজ। মামুলী অন্ন-বস্ত্র সংগ্রহের জন্য মানুষকে লোভ-লালসার বশবর্তী হতে হয় না। কিন্তু আহার সংক্রান্ত জাঁক-জমক ও আড়ম্বর বাড়াতে গেলে খরচ বৃদ্ধি করতে হয়। অল্পে তুষ্ট থাকা সম্ভব হয় না। তখন লোভ-লালসা এসে অন্তরে চেপে বসে এবং পরদ্রব্যে লালসা জন্ম নেয়।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি মধ্যম প্রকার খরচ করে সে ব্যক্তি কখনও অভাগ্রস্ত হয় না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সীমাতিরিক্ত খরচ করবে, সে সর্বদা অভাগ্রস্ত থাকবে।
অভাব মোচন পরিমাণ উপজীবিকা হাতে এলে ভবিষ্যৎ চিন্তায় মনকে ব্যাকুল করা উচিত নয়। এমতাবস্থায় শয়তান মানুষের মনে কুপরামর্শ দিতে শুরু করে যে, তোমাকে হয়তো বহুদিন বেঁচে থাকতে হবে তখন হয়তো কিছু ভাগ্যে নাও জুটতে পারে, সুতরাং এখনই আগামী দিনের জীবিকা উপার্জনের জন্য চেষ্টা করা উচিত। এক্ষেত্রে মানুষকে একথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যার ভাগ্যে যে পরিমাণ জীবিকা লিখে রেখেছেন তা আপনা থেকেই প্রত্যেকের কাছে এসে পৌঁছবেই।
অভাবের সময় পরমুখাপেক্ষী না হয়ে ধৈর্যধারণ করা উচিত। লোভের তাড়না সহ্য করে ধৈর্যধারণ করলে ইহকালেও মানুষের প্রশংসা ও সম্মানের পাত্র হওয়া যায় আর পরকালেও বিশেষ ছওয়াব ও সৌভাগ্যের অধিকারী হওয়া যায়।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পরমুখাপেক্ষী না হওয়ার মধ্যেই মুসলমানের সম্মান নিহিত।
মানুষের চিন্তা করে দেখা উচিত সে কি উদ্দেশ্যে এই লোভ-লালসা করছে। যদি দেখতে পায় যে তার লোভ-লালসা শুধু উদরপূর্তির জন্য, তবে মনে করবে গরু ও গাধা প্রভৃতি পশুরা তার চেয়ে অধিক আহার করে থাকে। আর যদি লোভ-লালসা কাম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার লক্ষ্যে হয়ে থাকে তবে ভেবে দেখবে যে শুকর, ভল্লুক কাম শক্তিতে তার চেয়ে অধিক শক্তিমান। যদি জাঁকজমক ও পোশাক-পরিচ্ছদে আড়ম্বর প্রদর্শনের লক্ষ্যে হয়ে থাকে তবে তাকালেই দেখবে যে বহু ইহুদী, খৃষ্টান ও হিন্দু তদপেক্ষা অধিকতর জাঁকজমকপূর্ণ জীবনযাপন করছে। আর যদি অন্তর থেকে লোভ-লালসা দূরীভূত করে অল্পে তুষ্ট হতে পারে, তবে সে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ব্যতীত আর কাউকে তার সমতুল্য দেখবে না।
অতএব, লোভ-লালসার বশবর্তী হয়ে চুতুষ্পদ জন্তু এবং মানবাকৃতি পশুদের তুল্য হওয়ার চেয়ে অল্পে তুষ্ট থেকে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সমতুল্য হওয়াই উত্তম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)