ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ
ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি
(বিলাদত শরীফ ৮০ হিজরী, বিছাল শরীফ ১৫০ হিজরী)
, ০১ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৭ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ০৫ অক্টোবর , ২০২৪ খ্রি:, ২০ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সম্মানিত নামায ও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত:
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবু ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, একদিন আমি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে যাচ্ছিলাম। পথের ধারে ছেলেরা উনাকে দেখে পরস্পর বলাবলি করতে ছিলেন যে, তিনি সেই ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি সারা রাত ইবাদত-বন্দেগী ও যিকির-ফিকিরে অতিবাহিত করেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আবু ইউসূফ! দেখুন! আমার ব্যাপারে ছেলেরা কি বলছে। আজ থেকে আমাকে আর রাতে ঘুমানো যাবে না।
হযরত আব্দুল মজিদ ইবনে রাওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র হজ্জের সময়ও আমি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে তাওয়াফ সম্মানিত নামায এবং ফতওয়া দানের ক্ষেত্রে অধিক ব্যস্ত অন্য কাউকে দেখিনি। সারা দিন ও সারা রাত তিনি ইবাদত বন্দেগী ও যিকির-ফিকিরে নিমগ্ন থাকতেন। আবার তা’লীম-তালকীনও দান করতেন। একটানা দশদিন পর্যন্ত তিনি সম্মানিত নামায, তাওয়াফ এবং তা’লীম দানে ব্যস্ত ছিলেন। রাত-দিন কোন সময়ই তিনি একটুও ঘুমাননি। সুবহানাল্লাহ!
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে লাবীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস আসলে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতে নিমগ্ন থাকতেন। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে ৬১ বার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ খতম করতেন। আর পবিত্র রমাদ্বান শরীফের শেষ দশকে উনার সাথে সাক্ষাতের সুযোগই হতো না। সুবহানাল্লাহ!
হযরত আমর ইবনে হাইছাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, একবার আমি সাইয়্যিদুনা হযরত শুবা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি পত্র নিয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক খিদমতে হাজির হলাম। তখন ছিলো পবিত্র আছর নামাযের সময়। তিনি পবিত্র মসজিদেই আছর, মাগরিব এবং ইশার নামায আদায় করলেন। নামায শেষে উনার পবিত্র হুজরা শরীফে চলে গেলেন। খানা খেয়ে আমাকে একটি বিছানায় শুয়ে দিলেন। আর তিনি পবিত্র হুজরা শরীফের এক কোনে পবিত্র নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। আর সারা রাত নামাযে কাটিয়ে দিলেন। তিনি এক রাকায়াতে পূর্ণ কুরআন শরীফ খতম করেছেন। (তারীখে বাগদাদ-১৩/৩৫৪, তাহযীবুল কামাল-২৯/৪৯৪, আত্ তাবাকাতুস সুন্নিয়্যাহ-১/৩২, আখবারু আবী হানিফা ওয়া আছহাবিহ-১/৫৩, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা-১১/৪৮৪)
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দোয়া বা প্রার্থনার স্বরূপ:
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ فُتِحَ لَهٗ مِنْكُمْ بَابُ الدُّعَاءِ فُتِحَتْ لَهٗ اَبْـوَابُ الرَّحْمَةِ
অর্থ: তোমাদের মধ্যে যার জন্য দোয়া বা প্রার্থনার দরজা খুলে দেয়া হয় তার জন্য সম্মানিত রহমত মুবারক উনার সমস্ত দরজা খুলে দেয়া হয়। অর্থাৎ তার উপর সবসময় অজস্রধারায় রহমত মুবারক বর্ষিত হয়ে থাকে। (তিরমিযী শরীফ)
এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পরিপূর্ণ হক্বদার বা মিছদাক্ব হচ্ছেন- ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। সুবহানাল্লাহ!
তিনি প্রতি রাতেই বিশেষভাবে দোয়া করতেন। দীর্ঘসময় ধরে দোয়া বা প্রার্থনা করতেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইয়াজিদ ইবনে কুম্মাত রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ইমামুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ছিলেন। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে খুবই কঠিনভাবে ভয় করতেন।
একদিন সাইয়্যিদুনা হযরত আলী ইবনে হুসাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাদেরকে নিয়ে সম্মানিত ইশার নামায আদায় করলেন। সম্মানিত নামাযে তিনি পবিত্র সূরা যিলযাল শরীফ তিলাওয়াত করছেন। ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও সে সময় উনার পিছনে নামায আদায় করেন। নামায শেষে লোকেরা নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেলেন। ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে দেখলাম তিনি নিজ স্থানে বসে আছেন। তিনি যিকির-ফিকির, মুরাকাবা করছেন। লম্বা লম্বা শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন।
আমি ভাবলাম যে, আমি মসজিদ থেকে চলে যাই। কারণ, আমার দ্বারা উনার একাগ্রতা বিনষ্ট হতে পারে। আমি বাড়ীতে চলে আসলাম। আসার সময় একটি বাতি জ্বালিয়ে রেখে আসলাম। যাতে সামান্য তেল ছিল। ছুবহি ছাদিক হলে আমি মসজিদে এসে দেখলাম, তিনি উনার হাত মুবারক উঠিয়ে দোয়া করছেন, “হে মহান আল্লাহ পাক! আপনি তো বিন্দুতম নেক আমল ও বদ আমলের প্রতিদান দিয়ে থাকেন। এ অধমকে আপনি জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন। ছোট-বড় সকল অনিষ্টতা থেকে নাজাত দান করুন। আর আপনার পবিত্রতম রহমত মুবারকের ছায়াতলে আশ্রয় দান করুন। আমীন।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইবনে হুসাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট গিয়ে দেখতে পেলাম যে, বাতিটি এখনো নিভু নিভু জ্বলছে। তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে দেখে তিনি বললেন, তুমি কি বাতি নিতে এসেছ? আমি বললাম, রাত তো শেষ হয়ে গেছে। আমি আযান দিয়ে ফেলেছি। তিনি বুঝতে পারলেন যে, রাতের ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকিরের বিষয়টি আমি জেনেছি। তাই তিনি বললেন, “তুমি যা দেখেছ তা গোপন রাখবে। কারো নিকট প্রকাশ করবে না। ”
অতঃপর তিনি দু’ রাকায়াত সুন্নত নামায আদায় করে বসে রইলেন। কিছুক্ষণ পর জামায়াত শুরু হলো। তিনি ইশার নামাযের ওযু দ্বারাই ফযরের নামায আদায় করলেন। সুবহানাল্লাহ! (তাবাকাতুস সুন্নিয়্যাহ ফী তারাজিমিল হানাফিয়্যাহ, ওয়াফিয়াতুল আ’ইয়ান-৫/৪১২, উকদুল জুমান-২২৫, ইমামে আ’যম আবূ হানীফা জীবন ও কর্ম-৮৩৩)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)