ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি (১৬..১৭) (বিলাদাত শরীফ- ৮০ হিজরী, বিছাল শরীফ- ১৫০ হিজরী)
, ০১ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৯ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ১৮ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ০৩ ভাদ্র শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
একদিন অনেক লোক একত্রিত হয়ে ইমামুল মুসলিমীন, ইমামুল মুহাদ্দিসীন ওয়াল ফুক্বাহা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিদমত মুবারকে হাজির হলো। জিজ্ঞাসা করলো, জামায়াতের সাথে নামায আদায়কালে ইমাম সাহেবের সাথে মুক্তাদিকেও সূরা ফাতিহা শরীফ পাঠ করতে হবে কিনা? সাইয়্যিদুনা ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাদেরকে বললেন, তোমাদের এতো লোকের সাথে আমি একাকী কথা বলবো কিভাবে? বরং তোমরা একজনকে আমার সাথে কথা বলার জন্য মনোনীত করো। তার সাথে আমার কথোপকথনকেই পুরো জামায়াতের সাথে কথোপকথন বলেই তোমরা স্বীকার করে নাও।
এই প্রস্তাব অনুসারে তারা তাদের একজনকে ইমাম বা নেতা নির্ধারণ করলো। সাইয়্যিদুনা ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তখন তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, এই তো সব প্রশ্নের ফায়সালা হয়ে গেল। তোমরা যেভাবে একজনকে তোমাদের মুখপাত্র ঠিক করলে, সেভাবে জামায়াতের সাথে নামায আদায় করার সময় ইমাম সাহেব সকল মুক্তাদীর মুখপাত্র হয়ে থাকেন। কাজেই, ইমাম সাহেবের ক্বিরাআত পাঠ করাই সকল মুক্তাদির ক্বিরাআত পাঠের মধ্যে গন্য হয়ে থাকে।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইহাই বর্ণিত রয়েছে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
من صلى خلف الامام فقرائة الامام قرائة له
অর্থ: “যে ব্যক্তি ইমাম সাহেবের পিছনে নামায আদায় করে তার জন্য ইমাম সাহেবের ক্বিরাআতই তার ক্বিরাআতের অন্তর্ভুক্ত। ”
উল্লেখ্য যে, ইমামুল মুসলিমীন, ইমামুল মুহাদ্দিছীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অন্যতম অসাধারণ গুণ ছিল যে, তিনি অত্যন্ত জটিল ও কঠিনতম বিষয়কেও অল্প কথায় এবং সুন্দর দৃষ্টান্ত দ্বারা বুঝিয়ে দিতে পারতেন। যা সর্বসাধারণ সবাই সহজেই বুঝতে পারতো। কাজেই, অতি সহজেই তর্ক-বিতর্কও মিটে যেত।
ল হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুর রহমান যিনি আবী লায়লা নামেই মাশহূর ছিলেন। তিনি ২৩ বছর কুফা শহরের কাজী ছিলেন। ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং উনার মধ্যে সম্পর্ক ভাল ছিল না। কারণ তিনি বিচারকার্যে ভুল করলে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনাকে শুধরিয়ে দিতেন। কাজী সাহেব পবিত্র মসজিদ মুবারকে বসে বিচার কার্য পরিচালনা করতেন।
একদিন তিনি বিচারকার্য শেষ করে রাস্তা দিয়ে চলছিলেন। পথে একজন স্ত্রীলোককে দেখলেন যে, সে অন্য একজন লোকের সাথে ঝগড়া করছে। স্ত্রী লোকটি উক্ত লোকটিকে “ইয়া ইবনে যানিয়াতাইন” অর্থাৎ ওহে দুই ব্যভিচারীর সন্তান বলে গালি দিল।
কাজী সাহেব হুকুম দিয়ে বললেন, স্ত্রী লোকটিকে গ্রেফতার করা হউক। তিনি পুনরায় বিচারের আসনে ফিরে আসলেন এবং হুকুম দিলেন স্ত্রী লোকটিকে দাঁড়ানো অবস্থায় দুটি দোররা মারা হউক।
ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইহা শুনে বললেন যে, কাজী সাহেব এই বিচারে কতগুলো ভুল করেছেন-
১। বিচার আসন থেকে উঠে গিয়ে পুনারায় ফিরে এসে এজলাস করেছেন। যা আদালতের নিয়মের খিলাফ।
২। পবিত্র মসজিদে শাস্তি দেয়ার হুকুম দিয়েছেন। অথচ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপ করতে নিষেধ করেছেন।
৩। স্ত্রীলোককে বসিয়ে শাস্তি দেয়ার নিয়ম। কাজী সাহেব তারও খিলাফ করেছেন।
৪। একটি অপরাধজনক শব্দ উচ্চারণের শাস্তিও একটিই হবে। অথচ উনি দুটি দোররা মারার হুকুম জারী করেছেন।
৫। তাছাড়া দুটি দোররার প্রয়োজন হলেও তা এক সাথে মারা যাবে না। একটি মেরে অপরাধীকে ছেড়ে দিতে হবে। ঘা শুকানোর পর দ্বিতীয়বার মারতে হবে।
৬। সবচেয়ে বড় কথা হলো যাকে গালি দেয়া হয়েছে সে যখন বিচারের দাবী করলো না তখন কাজী সাহেবের বিচার করার ইখতিয়ার থাকলো না।
ইহা শুনে কাজী আবী লায়লা রহমতুল্লাহি আলাইহি অত্যন্ত রাগান্বিত হলেন। কুফার গভর্নরের নিকট অভিযোগ করলেন, “ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমার কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন। ” গভর্নর হুকুম জারি করলেন যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যেন আর কোন ফতওয়া না দেন।
-কাওছার আহমদ
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)