ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি (১৩)
, ৩রা শাবান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৬ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ২৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ১০ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তাক্বওয়া ও পরহেযগারী
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
অতঃপর হযরত ইমাম শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অগ্রসর হয়ে খলীফার হাত ধরে বললেন, জনাব! কেমন আছেন? আপনার শরীর-স্বাস্থ্য ভালো তো? আপনার ছেলে-মেয়েরা কেমন আছে? খলীফা হযরত ইমাম শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আলাপের ধরন দেখে মনে করলেন যে, নিশ্চয়ই উনার মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছে। কাজেই, উনাকে কাজীর পদে নিয়োগ দেয়া সমীচীন হবে না।
অতঃপর হযরত শরীহকে ডেকে আনা হলো। তিনি খলীফাকে বললেন, খলীফা! আমি একজন পাগল। আমার মাথা অতিশয় দুর্বল। আমার পক্ষে এ দায়িত্বপূর্ণ কাজ করা কখনোই সম্ভব নয়।
উনার কথা শুনে খলীফা বললেন, আপনি আপনার এ রোগের চিকিৎসা করুন। আরোগ্য হয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ! শেষ পর্যন্ত হযরত শরীহকেই কাজীর পদে নিয়োগ দেয়া হলো।
এরপর থেকে হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত শরীহ উনার সাথে যোগাযোগ একেবারে বন্ধ করে দিলেন। এমনকি উনার সাথে কথা বলাও ছেড়ে দিলেন।
উল্লেখ্য যে, ইমামুল মুসলিমীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ্ব দ্বীন হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কাজীর পদ গ্রহণ না করার অন্যতম কারণ হচ্ছে- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই পবিত্র হাদীছ শরীফ। যেখানে তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “যাকে কাজী নির্বাচন করা হলো তাকে বিনা ছুড়িতে হত্যা করা হলো।” (কাশফুল মাহযূব)
হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তীক্ষè মেধা, গভীর জ্ঞান, মহান আল্লাহ পাক উনার ভয়, তাক্বওয়া-পরহেযগারী এবং পবিত্র ইবাদত ও রিয়াযতের কথা না বললেই নয়। আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন “ ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এমন এক ব্যক্তিত্ব, উনাকে অনুসরণ করা কর্তব্য। কারণ, তিনি ছিলেন বেমেছাল মুত্তাক্বী, পরহেযগার, আলিম এবং ফকীহ। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত জ্ঞান, মেধা, দূরদৃষ্টি এবং খোদা-ভীতির ভিত্তিতে যে ইলমী ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং ইলমে ওহী মুবারক উনার যে খিদমত ও প্রসার ঘটিয়েছেন, সে ব্যাপারে কেউ উনার সমকক্ষ হতে পারেননি।” (কারদারী কৃত মানাকিবে আবু হানিফা : পৃষ্ঠা ৪৬)
হযরত সুফিয়ান ইবনে আইনিয়্যাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন ‘আমাদের যামানায় মক্কা শরীফ উনার মধ্যে এমন কোনো ব্যক্তি ছিল না, যিনি ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চেয়ে অধিক নামায পড়তেন।’ (তারীখে বাগদাদ- খ- ১৩ : পৃষ্ঠা ৩৩৮)
হযরত আবু মুতী’ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- ‘আমি মক্কা শরীফ থাকাকালীন রাত্রে যখনই তাওয়াফের উদ্দেশ্যে বাইতুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করতাম, তখনই ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত সুফিয়ান সাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদেরকে তাওয়াফরত অবস্থায় দেখতে পেতাম।’ (তারিখে বাগদাদ- খ- ১৩ : পৃষ্ঠা ৩৩৮)
হযরত আবু আছেম নাবীল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- “হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এত বেশি নামায পড়তেন যে, লোকেরা উনাকে মসজিদের খুঁটি হিসেবে অভিহিত করতো। (তারীখে বাগদাদ- খ- ১৩ : পৃষ্ঠা ৩৩৮)
হিফছ ইবনে আব্দুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ‘হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি চল্লিশ বৎসর সারা রাতে জেগে থেকে ইবাদত করতেন এবং তাতে সম্পূর্ণ পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করতেন।’ সুবহানাল্লাহ! (তারিখে বাগদাদ- খ- ১৩ : পৃষ্ঠা ৩৫৪)
বাশার ইবনে ওয়ালীদ হযরত কাজী আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, এক সময় হযরত আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কোথায়ও যাচ্ছিলেন, এমন সময় হঠাৎ হযরত আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শুনতে পেলেন যে, এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তিকে বলছে, ‘এই যে ইনিই হলেন হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি রাত্রে ঘুমান না।’ একথা শুনে হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, ‘মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি একথা পছন্দ করি না যে, আমার সম্পর্কে (প্রশংসা স্বরূপ) এমন কিছু বলা হোক, যা দ্বারা আমার আমল বিঘিœত হয়।’ এরপর থেকে তিনি রাতে আর ঘুমাতেন না। বরং কান্নাকাটি এবং দোয়া ও মুনাজাতের মধ্যে কাটিয়ে দিতেন। একথাও বর্ণিত আছে যে, হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সাত হাজার বার পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (সিয়ারে ই’লামুন নুবালা- খ- ৬ : পৃষ্ঠা ৩৯৯)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)