ইখলাছই হচ্ছে সমস্ত ইবাদতের মূল। ইখলাছবিহীন ইবাদত প্রাণহীন প্রাণীর ন্যায়। প্রত্যেকের জন্য ইখলাছ অর্জন করা ফরযে আইন
, ২১ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ৩০ ছানী, ১৩৯২ শামসী সন , ২৮ জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ১৩ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) ইলমে তাছাউফ
হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- ‘অনন্ত সুখময় জান্নাত কেবল কয়েক দিনের বাহ্যিক অনুষ্ঠান ক্রিয়াকলাপ দ্বারা লাভ করা যায় না। ইহা আন্তরিকতা ও একাগ্র চেষ্টা-কোশেশ দ্বারা লাভ করতে হয়। ’
আমাদের বেহেশতে প্রবেশ করতে হলে অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক লাভের জন্য কোশেশ করতে হবে। আমাদের কোশেশের মাধ্যমে ইলিম অর্জন করতে হবে এবং আমল করতে হবে। এই ইলিম এবং আমলের কোশেশ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে যদি আমরা ততোধিক কোশেশের মাধ্যমে ইখলাছ পয়দা না করতে পারি।
অতএব, ইখলাছই হচ্ছে সমস্ত ইবাদতের মূল। ইখলাছবিহীন ইবাদত প্রাণবিহীন প্রাণীর ন্যায়। প্রাণবিহীন প্রাণী যেমন মানুষের নিকট মূল্যহীন এবং কষ্টের কারণ তদ্রুপ ইখলাছবিহীন ইবাদত মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মূল্যহীন এবং অপছন্দনীয়।
ইখলাছ ও অতীতের আওলিয়ায়ে কিরাম উনাদের বর্ণনা:
হযরত মারুফ কারখী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজের শরীরে চাবুক মেরে বলতেন, “হে আমার প্রবৃত্তি! ইখলাছের সাথে কাজ করো, তাহলে পরিত্রাণ পাবে। ”
হযরত আবু সুলাইমান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলতেন, যে ব্যক্তি সারা জীবনে দ্বীনি পথের দিকে অন্ততঃ একটি কদমও ইখলাছের সাথে চলেছে যাতে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তোষ ভিন্ন অপর কোন উদ্দেশ্য তার ছিল না, সে ব্যক্তিই সৌভাগ্যবান।
হযরত রাবেয়া বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার ইখলাছ সম্পর্কে বলা হয়, একবার একদল লোক হযরত রাবেয়া বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার নিকট হাজির হন। তন্মধ্যে একজনকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “আচ্ছা! আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত কেন করেন?” তিনি বললেন। “দোযখের সপ্ত স্তর বড়ই কঠিন এবং সকলকে একদিন সেটার উপর দিয়ে পার হতে হবে। সেই দোযখের শাস্তির ভয়ে ইবাদত করি। ” অপর একজন বললেন, “বেহেশতে সৌন্দর্যময় অট্রালিকারাজি এবং নানাবিধ আরামের এবং নিয়ামতের জন্য খোদা প্রদত্ত ওয়াদা বিদ্যমান আছে, তজ্জন্যই আমি এই ইবাদত করছি। ” ইহা শুনে হযরত রাবেয়া বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি বললেন- “যে ব্যক্তি দোযখের ভয়ে ও বেহেশতের আশায় রব তায়ালা উনার ইবাদত করে, সে বড়ই হেয় ও হতভাগ্য। ” তারা বললেন, “আচ্ছা! বলুনতো, আপনি কেন মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করছেন? আপনার কি কোন বাসনা নেই?” তিনি বললেন, “আমার পক্ষে বেহেশত এবং দোযখ উভয়ই সমান। তিনি ইবাদত করার জন্য আদেশ করেছেন, আমার জন্য কি ইহাই যথেষ্ট নয়? কোন শাস্তির ভয় বা লোভণীয় কিছু না থাকলে উনার ইবাদত করা মানুষ মাত্রেরই কর্তব্য নয় কি?”
হযরত রাবেয়া বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার মুনাজাতে বলতেন, “আয় মহান আল্লাহ পাক! যদি আমি দোযখের ভয়ে আপনার ইবাদত করি, তবে আপনি আমাকে দোযখে নিক্ষেপ করুন, আর যদি বেহেশতের আশায় আপনার ইবাদত করি, তবে বেহেস্ত হতে আপনি আমাকে বঞ্চিত করুন। আর যদি কেবল আপনার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জনের জন্যই আমি ইবাদত করি তবে আপনার স্থায়ী সৌন্দর্য হতে আমাকে বঞ্চিত করবেন না। ”
হযরত ওয়ায়েস আল কারনী রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অছিয়ত মুতাবিক উনার পবিত্র জুব্বা মুবারক হযরত ওয়ায়েস আল করনী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে প্রদানপূর্বক ফেরার পথে আমীরুল মু’মিনীন, হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি কিছু নছীহত করতে অনুরোধ করায় তিনি বললেন, “হে হযরত আমীরুল মু’মিনীন আলাইহিস সালাম! আপনি কি মহান আল্লাহ পাক উনাকে চিনেছেন?” হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, “হাঁ নিশ্চয়ই চিনেছি। ”
হযরত ওয়ায়েস আল করনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “যদি উনাকে ব্যতীত অন্য কাউকেও না জানেন (চিনেন) তবে উহা আপনার জন্য উত্তম। ” হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, “আরও কিছু নছীহত করুন। ” হযরত ওয়ায়েস আল করনী রহতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি কি আপনাকে জানেন?” তিনি বললেন, “হাঁ জানেন। ” হযরত ওয়ায়েস আল করনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “তিনি ব্যতীত অন্য কেউ আপনাকে না চিনলেও কোন ক্ষতি নেই। ” ইহাই ইখলাছ।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাযকিয়াহ বা ইছলাহ অর্জন করা ব্যতীত কোনো বান্দার পক্ষে কামিয়াবী হাছিল করা সম্ভব নয়
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুর্শিদ বা শায়েখ হক্ব বা নাহক্ব তা যাচাই-বাছাই করার পর বাইয়াত হতে হবে
০৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাসাউফ চর্চা ছাড়া দ্বীন ইসলাম কায়েম সম্ভব না (২)
০১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত মুর্শিদ বা শায়েখ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়ার ক্ষেত্রে সন্তানের জন্য পিতা-মাতা উনাদের এবং স্ত্রীর জন্য স্বামীর বাধা গ্রহণযোগ্য নয়
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাসাউফ চর্চা ছাড়া দ্বীন ইসলাম কায়েম সম্ভব না (১)
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩১)
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র দশ লতিফা উনাদের বিবরণ
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয (২)
০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)