বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান:
আবুল ওয়ালিদ মুহম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে রুশদ
, ১৯ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৭ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ২৫ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ১০ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) বিজ্ঞান মুসলমান উনাদেরই অবদান
ইবনে রুশদ ৫২০ হিজরী (১১২৬ খ্রি:) সালে কর্ডোভায় প্রসিদ্ধ কাজী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। উনার শিক্ষাজীবনে তিনি হাদীছ শরীফ, ফিক্বাহ শাস্ত্রের সাথে চিকিৎসা ও ধর্মতত্ত্বের উপর জ্ঞান আহরণ করেন। প্রথমে তিনি মালেকী মাযহাবের উপর বিশেষ শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি আশারী আকাঈদের উপর শিক্ষাগ্রহণ করেন এবং উছূল এর উপর শিক্ষাগ্রহণে উনার অনেক আগ্রহ ছিল।
৫৪৭ হিজরী (১১৫৩ খ্রি:) সালে তিনি মারাক্কেশ, আলমোহাদ শাসকদের রাজধানীতে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ ও নতুন শিক্ষালয় স্থাপনে নিযুক্ত ছিলেন। এখানে তিনি ইবনে তুফাইলের সান্নিধ্যে আসেন এবং দর্শনের উপর কাজ করতে যেয়ে উনাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। পরবর্তীতে কর্ডোভার আমির আবু ইয়াকুব ইউসুফ উনার জ্ঞানে মুগ্ধ হন এবং উনার জ্ঞান চর্চার পৃষ্ঠপোষকতা করেন। আমির আবু ইয়াকুব ইউসুফের নির্দেশে তিনি গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটলের দর্শনের উপর একটি বিশদ দর্শন কিতাব রচনা করেন ৫৬৪ হিজরী (১১৬৯ খ্রি:) সালে। পরে উনাকে সেভিল এবং পরবর্তীতে কর্ডোভায় কাজী হিসেবে নিয়োগ দেন। ৫৭৭ হিজরী (১১৮২ খ্রি:) সালে তিনি কর্ডোভার প্রধান কাজী ও দরবারের চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পান। ইন্তেকালের পূর্বে কিছুকাল তিনি কর্ডোভা থেকে লুসিয়ানায় নির্বাসিত হন। পরে তিনি মারাক্কেশে ৫৯৪ হিজরী (১১৯৮ খ্রি:) সালে ইন্তেকাল করেন।
ঐতিহাসিকদের মতে উনার সর্বমোট কিতাবের সংখ্যা ৬৭টি। এর মধ্যে ২৮টি দর্শন শাস্ত্রের উপর, ২০টি ঔষধ ও চিকিৎসার উপর, ৮টি আইনের উপর, ৫ টি ধর্মতত্ত্বের উপর এবং ৪ টি ব্যাকরণের উপর।
চিকিৎসাশাস্ত্রের উপর তিনি ’আল কুল্লিয়াত ফীত্ব ত্বীব’ রচনা করেছিলেন। তিনি স্নায়ুতন্ত্রের একটি রোগের লক্ষণ সর্বপ্রথম এখানে উল্লেখ করেন যা বর্তমানে পার্ককিনসন ডিজিজ নামে পরিচিত। এছাড়া সম্ভবত তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি রেটিনাকে আলোক সংবেদী অংশ হিসেবে এতে উল্লেখ করেছেন। ইউরোপে উনার এই কিতাব কল্লিগেট নামে পরিচিত। এই কিতাবে তিনি একাধারে ব্যবচ্ছেদ বিদ্যা, শারীরতন্ত্রীয় বিদ্যা, রোগের লক্ষন, কারণ ও প্রতিকার, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও রোগের প্রতিষেধক নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে তিনি ঔষধবিদ্যা ও খাবার, খাবার গ্রহণ এই সবের উপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। প্রায় ৩০০টি সাধারণ ঔষধের বর্ণনা করেছেন। এছাড়া তিনি ইবনে সিনার ’আল কানুন ফি ত্বিব’ এর উপর একটি ভাষ্য লিখেন। আর চিকিৎসাশাস্ত্রে গ্রীকদের জানা জ্ঞান একত্রিকরণের ক্ষেত্রে তিনি গ্যালেনের চিকিৎসাবিধানের উপর একটি কিতাব রচনা করেন।
ইসলামী ফিকাহশাস্ত্রের উপর আবুল ওয়ালিদ মুহম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে রুশদ তিনি ‘বিদায়াতুল মুজতাহিদ ওয়া নিহায়াতুল মুক্বতাছিদ’ কিতাব রচনা করেছিলেন এবং এর মূল উপজীব্য ছিল মাযহাবসমূহ ও উনাদের পার্থক্যের কারণ। এছাড়া ইমাম আল গাজ্জালী উনার লিখিত কিতাব ‘আল মুছতাফা মিন ইলমিল উছূল’ উনার সারসংক্ষেপ রচনা করেন। ধর্মতত্ত্বের উপর তিনি ‘ফাসলুল মাক্বাল ফীমা বয়ানিল হিকমাহ ওয়াশ শরীয়াহ মিন ইত্তিসাল’ ৫৭৩ হিজরী (১১৭৮ খ্রি:) সালে প্রকাশ করেন যার মূল বিষয় ছিল দর্শন শাস্ত্রের সাথে দ্বীন ইসলাম উনার সংগতি। ‘আল কাশফু আন মানাহিজিল আদিল্লাহ’ ৫৭৪ হিজরী (১১৭৯ খ্রি:) সালে আশারী আকাঈদের সমালোচনা করে প্রকাশ করেন। হিজরী ৫৭৫ (খ্রি: ১১৮০) সালে ’তাহাফুতুত তাহাফুত’ নামক গ্রন্থে ইমাম গাজ্জালী উনার ’তাহাফুতুল ফালাসিফা’ কিতাবের খন্ডনমূলক জবাব প্রকাশ করেন। ধর্মতত্ত্বের উপর উনার কিতাবের কারণে তিনি মূলধারার ইমামদের বিরোধের সম্মুখীন হন এবং কিছুকাল নির্বাসিত জীবন কাটান।
-০-
চিত্র: বিদায়াতুল মুজতাহিদ ওয়া নিহায়াতুল মুক্বতাছিদ’ কিতাব।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার কর্তৃক জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ প্রভূত ক্ষেত্রে সৌন্দর্য্য বর্ধন ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করণ (২)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার কর্তৃক জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ প্রভূত ক্ষেত্রে সৌন্দর্য্য বর্ধন ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করণ (১)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সম্মানিত মুকুটস্বরূপ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
কায়রোর ‘দারুল হিকমাহ’
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সম্মানিত মুকুটস্বরূপ
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
একাডেমিক লাইব্রেরি
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
একাডেমিক লাইব্রেরি
০১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্যক্তিগত পাঠাগার বা প্রাইভেট লাইব্রেরি
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্যক্তিগত পাঠাগার বা প্রাইভেট লাইব্রেরি
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মসজিদ গ্রন্থাগার
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নুরুদ্দীন ইবনে ইসহাক আল-বিতরূজী
০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)