আপনার ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ সম্পর্কে আইন কি বলে
, ৩০ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২১ ছানী ‘আশার, ১৩৯০ শামসী সন , ২১ মে, ২০২৩ খ্রি:, ০৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) আইন ও জিহাদ
দ-বিধির ৯৬ থেকে ১০৬ ধারায় বলা আছে,
(১) নিজের এবং অন্যের দেহ ও সম্পত্তি রক্ষা করবার অধিকার প্রত্যেক ব্যক্তিরই রয়েছে।
(২) এরূপ প্রতিরক্ষার উদ্দেশ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি যতখানি আঘাত অন্যকে বা আক্রমনকারীর উদ্দেশ্যে দেওয়া প্রয়োজন তা বিনা দ্বিধায় দিতে পারেন।
অর্থাৎ জীবনের উপর মারাত্মক আঘাত আসলেই প্রত্যাঘাতের অধিকার জন্মে। তাই দন্ডবিধির ৯৬ ধারায় বলা হয়েছে, ‘আত্মরক্ষামুলক অধিকার প্রয়োগকালে কৃত কোন কাজই অপরাধ বলে গণ্য হবেনা।’
দ-বিধির আওতায় অধিকার প্রয়োগ :
দ-বিধির ১০২ ধারায় বলা হয়েছে,
‘দেহের ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার, অপরাধ সংঘটিত না হয়ে থাকলেও উক্ত অপরাধ সংগঠনে উদ্যোগ বা ভীতি হতে দেহ বিপন্নকারী যুক্তিযুক্ত আতঙ্ক সৃষ্টি হবার সঙ্গে সঙ্গে আরম্ভ হয় এবং যতক্ষন পর্যন্ত আতঙ্ক অব্যাহত থাকে ততক্ষন পর্যন্ত উক্ত অধিকার অব্যাহত থাকে।’
অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অধিকার প্রয়োগ:
দ-বিধির ৯৮ ধারায় বলা আছে, ‘যখন কোন কার্য যা প্রকারান্তে একটি বিশেষ অপরাধ বলে গণ্য হত তা উক্ত কার্য সম্পাদঙ্কারী ব্যক্তির তারুণ্য অপরিণত বিবেক, অপ্রকৃতিস্থতা বা প্রমত্ততার কারণে অনুরূপ অপরাধ বলে গন্য হয়না, তখন প্রত্যেক ব্যক্তির কার্যটি অনুরূপ অপরাধ বলে গণ্য হবার বেলায় উক্ত কার্যের বিরুদ্ধে যদ্রুপ ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা অধিকার থাকত তদ্রুপ ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা অধিকার থাকবে।’
নির্দোষ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অধিকার প্রয়োগ:
দ-বিধির ১০৬ ধারায় বলা আছে, “যুক্তিযুক্তভাবে মরণভীতি সৃষ্টি করে এরূপ আক্রমনের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষক যদি এরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হন যে কোন নিরপরাধ ব্যক্তির প্রতি ক্ষতিসাধনের ঝুঁকি না নিয়ে তিনি অনুরূপ অধিকার কার্যকরীভাবে প্রয়োগ করতে পারেননা, তাহলে উক্ত ঝুঁকি নেবার প্রতিও তার ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা অধিকার প্রযোজ্য হবে।”
আত্মরক্ষার জন্য অপরের মৃত্যু ঘটানোর অধিকারঃ নিজেকে রক্ষা করার জন্য আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে আক্রমণকারীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানোর অধিকার আইন স্বীকৃতি দিয়েছে। যে যে অবস্থায় এরকম মৃত্যু ঘটালে তা দ-নীয় হয়না তা দন্ডবিধির ১০০ ধারায় বর্ণিত হয়েছে।
দ-বিধির ১০০ ধারায় বলা হয়েছে, “৯৯ ধারায় আরোপিত নিয়ন্ত্রন সাপেক্ষে, দেহরক্ষার প্রয়োজনে আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার প্রয়োগ করে স্বেচ্ছাক্রমে আক্রমন কারী প্রতিপক্ষের মৃত্যু ঘটানো বা অন্য যে কোন ক্ষতি সাধন করা যেতে পারে, যদি সে অপরাধটির বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার প্রয়োগ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে এবং সে অপরাধটি যদি নিম্নোক্ত বিভিন্ন ধরনের মধ্যে যেকোন এক ধরনের হয়। যথা:
(১) এমন আঘাত, যার ফলে ন্যায়সঙ্গতভাবেই এমন আশংকার সৃষ্টি হয় যে, তাতে আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকারের অবাধ প্রয়োগ না করলে সে আঘাতে আক্রান্ত ব্যক্তির আসন্ন মৃত্যু অনিবার্য।
(২) এমন আঘাত বা আক্রমণ, যার ফলে ন্যায়সঙ্গতভাবেই এমন আশঙ্কার সৃষ্টি হয় যে, সে আঘাতে আক্রান্ত ব্যক্তির গুরুতর আহত হওয়া অনিবার্য।
(৩) সম্ভ্রমহরণের উদ্দেশ্যে আঘাত বা আক্রমণ।
(৪) অস্বাভাবিক কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে আঘাত বা হামলা।
(৫) শিশু অপহরণ বা ব্যক্তি হরণের উদ্দেশ্যে হামলা বা আঘাত।
(৬) কোন ব্যক্তিকে অন্যায় বা বেআইনীভাবে আটক করার উদ্দেশ্যে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করা, যে পরিস্থিতিতে ন্যায়সঙ্গতভাবেই আক্রান্ত ব্যক্তির মনে এরকম আশংকার সৃষ্টি হয় যে, সে মুক্তির জন্য সরকারী কর্তৃপক্ষের আশ্রয় নিতে সমর্থ হবেনা।”
আত্মরক্ষার অধিকারের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ:
দ-বিধির ৯৬ ধারায় ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার দেওয়া হয়েছে। ৯৭ ধারায় দেহ ও সম্পত্তি রক্ষায় ব্যক্তিগত অধিকার প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে।
আবার এসব অধিকারের অপব্যবহার যাতে না ঘটে সেজন্য যেসব কাজের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার নেই তা ৯৯ ধারায় সুস্পষ্টভাবে বর্ননা করে দেওয়া হয়েছে।
দ-বিধির ৯৯ ধারায় বলা হয়েছে, “সঠিক বিচারে আইনসঙ্গত না হলেও কোন সরকারী কর্মচারী তাঁর পদমর্যাদাবলে সৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কোন কাজ করলে বা করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার প্রযোজ্য হবেনা। যদি সরকারী কর্মচারীর ঐ কাজে বা কাজের প্রচেষ্টায় ন্যায়সঙ্গতভাবে মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের আশংকা দেখা না দেয়।
সঠিক বিচারে আইনসঙ্গত না হলেও কোন সরকারী কর্মচারী সরকারী পদমর্যাদাবলে ও আন্তরিক সদিচ্ছাপ্রণোদিতভাবে প্রদত্ত নির্দেশ অনুযায়ী কোন কাজ করার প্রচেষ্ঠার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত অধিকার প্রযোজ্য হবেনা। যদি সরকারী কর্মচারীর নির্দেশানুসারে সম্পন্ন কাজটিতে বা কাজ করার প্রচেষ্ঠায় ন্যায়সঙ্গতভাবে মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের আশঙ্কা দেখা না দেয়।
যেসব ক্ষেত্রে সরকারী কর্তৃপক্ষের আশ্রয় নেবার সুযোগ ও সময় থাকে, সে সব ক্ষেত্রে কোনোরূপ আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকারটি তা থেকে বিশেষ ক্ষতিসাধনে প্রযোজ্য হবে।”
অর্থাৎ নিজেকে রক্ষার বিকল্প কোন উপায় থাকলে আত্মরক্ষার এই অধিকার প্রযোজ্য হবেনা। তারপরও কেউ এই অধিকার ব্যবহার করলে সে আইনের চোখে অপরাধী হয়ে যাবে।
আলোচনা হতে আমরা বুঝতে পারলাম যে, নিজেকে রক্ষা করতে আমাদের সর্বোচ্চ সুবিধা দিয়েছে। আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই অধিকারের প্রচন্ডরকম অপব্যবহার চলছে। নিজেই নিজের ক্ষত সৃষ্টি করে অন্যকে খুন বা হত্যা অথবা অন্যের সম্পত্তির উপর হস্তক্ষেপ করবার প্রয়াস চালাচ্ছে। আমাদের সম্মিলিতভাবে এসব অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো উচিত। আর এজন্য আমাদের সর্বপ্রথম জানা উচিত এর সম্পর্কে বিশদ আইন এবং আইনের প্রয়োগ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (৪)
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (২)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৯)
০৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)