বর্তমান ২০২৩ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- বিশ্বের ১৯৫টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ফেসবুক ব্যবহারকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৯ নাম্বার। বাংলাদেশের মোট ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটি ২৭ লক্ষ ৬৫ হাজার। বাংলাদেশের গড় ইন্টারনেট স্পীড ৩৪.৮৫ এমবিপিএস, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তালিকায় ১২০ নাম্বার অবস্থানে। এটা একটা ফিকিরের বিষয় যে, এই ল্যাংড়া-খোড়া ইন্টারনেট স্পীড দিয়েও ফেসবুক ব্যাবহারে বিশ্বের ৯ নাম্বার অবস্থানে বাংলাদেশ। হারামের মধ্যে কতটা মশগুল হলে সেøা স্পীড ইন্টারনেট দিয়েও ৯ নাম্বার অবস্থানে যাওয়া যায়?

তাহলে এই নেশাগ্রস্থ জাতিকে হারাম থেকে হালালে আনার একমাত্র বিকল্প যোগাযোগ মাধ্যম কি? সিরাতুল মুস্তাক্বীম।



প্রচলিত সোশ্যাল মিডিয়ার কুফলসমূহ:



- মুসলমান ও দ্বীন ইসলাম উনাদের ক্ষতিসাধন করাই মূল উদ্দেশ্য: ফেসবুকের উদ্দোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে খ্যাত জোকার বার্গ সে তার আয়ের ৯০ ভাগ ব্যায় করে মুসলমান এবং দ্বীন ইসলাম উনার বিরুদ্ধে। নাউযুবিল্লাহ!

মূলত কাফির মুশরিকরা সোশ্যাল মিডিয়া নামক যত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে তা সারা বিশ্বের মুসলমানদের ক্ষতি সাধনের জন্যই করেছে। কিন্তু মুসলমান সেটা বুঝতে পারেনি।

মুসলমানগণ মনে করে কাফিরদের তৈরি এসব সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করায় তাদের অনেক উপকার হচ্ছে, তারা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে খুব এগিয়ে যাচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!

বর্তমানে প্রচলিত সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলোতে দ্বীন ইসলাম বিরোধী প্রচারণা হয়, পবিত্র শান মান উনার খিলাফ বিষয়গুলো বাধাহীন ভাবে প্রচার হয়। আবার প্রতিবাদ করলে বরং প্রতিবাদকারীদের আইডি ব্লক করে দেয়া হয়। আপনি ফেসবুকে কিছু কিছু শব্দ যেমন কাফের, মুশরিক, জিহাদ ইত্যাদি এ ধরনের শব্দ যদি আপনার পোস্টে থাকে তাহলে যেকোনো সময় আপনার আইডি ৪৮ ঘণ্টার জন্য, বা ১ মাসের জন্য ব্লক হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ আপনি চাইলেই কাফির মুশরিকদের বিরুদ্ধে কোনো লেখা-লেখি করতে পারবেন না।

এসব কথিত সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলোতে অশ্লীল ছবি ভিডিও, গান বাজনা, খেলাধুলা, সেলফি ছবি, বিভিন্ন কুফরী বিষয় অর্থাৎ দ্বীন ইসলাম বিরোধী বিষয়গুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেশি রিচ হয়, বেশি ভিউ হয়, বেশি প্রমোট হয়। যেনো মুসলমানগণ ইচ্ছায় অনিচ্ছায় এগুলোতে ডুবে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!

কাফির মুশরিকদের তৈরি এসব সোশ্যাল মিডিয়ায় নিবন্ধন করা মূলত কোনো নিষিদ্ধ জগতে প্রবেশের জন্য নিবন্ধন করা। নাউযুবিল্লাহ!

- কথিত সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নিজের ছবি ভিডিও প্রকাশ করে একে অপরের সাথে অবৈধ সম্পর্ক করে বহু পরিবারে অশান্তি ও সম্পর্কে ভাঙ্গন হয়েছে, হচ্ছে। বিশেষ করে যুবক ও তরুন সমাজে বহু আত্মহত্যা, মাদকতা, অবৈধ সম্পর্ক, পরকীয়া, পরিবারের সাথে বিচ্ছেদ, সংসার ভাঙ্গন ইত্যাদি নানাবিধ অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে অশ্লীলতা, সম্ভমহরণ, কাফির মুশরিকদের অনুসরণে নানাবিধ হারাম কর্মকান্ড ও অপসংস্কৃতি।

শিক্ষার্থীরা বই ছেড়ে দিয়ে দিন রাত কথিত সোশ্যাল মিডিয়ায় বুদ হয়ে থাকছে। ফলে দেশে শিক্ষার হার কমে যাচ্ছে, দেশ মহামূল্যবান মেধা সম্পদ হারাচ্ছে, গবেষনায় ও সার্বিক উন্নয়নে দেশ পিছিয়ে পড়ছে। এমনকি মায়ের কোলে থাকা শিশুদের খাওয়ার জন্য, ঘুম পাড়ানোর জন্য, ফেসবুক বা ইউটিউবের শর্টস ভিডিও দেখিয়ে থাকে এখনকার বাবা মায়েরা। নাউযুবিল্লাহ!

এবার স্বাস্থ্যগত কিছু ক্ষতির কথা বলা যাক। এই যে মোবাইলের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে থাকা। এটাকে স্ক্রীন টাইম বলা হয়। বর্তমান সময়ে মানুষের ‘স্ক্রীণ টাইম’ বাড়িয়ে দিচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। ফেসবুকের ইউজার এনগেজমেন্ট টাইম এনালায়টিকস রিপোর্টে আসছে এর ব্যবহারকারীরা ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত টানা ফেসবুক ব্যবহার করে। নাউযুবিল্লাহ!

চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মাত্রাতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম বাড়লে চোখে মায়োপিয়া, চোখ শুখিয়ে যাওয়া, দৃষ্টি সিনড্রোম ইত্যাদি রোগ হতে পারে। ডিজিটাল স্ক্রীন থেকে নির্গত নীল আলো চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই বিপজ্জনক। স্ক্রিন টাইম চোখের সমস্যার পাশাপাশি শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা বাড়াচ্ছে, স্থূলতা বাড়াচ্ছে, এ কারণে ঘুমের সমস্যা, মস্তিষ্কের সমস্যাও বাড়ছে। এছাড়া বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কথিত সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের মধ্যে একাকীত্ব ও ডিপ্রেশন (মানুষিক অস্থিরতা) বাড়িয়ে দিচ্ছে। মানুষকে অসামাজিক ও একঘরে করে তুলছে।

আলাদা হয়ে যাওয়া, সাইবার বুলিং (হেনস্তার শিকার), গোপনীয়তার অভাব, উদ্বিগ্নতা, অবাস্তব প্রত্যাশা, হতাশা, মিথ্যা সম্পর্ক, অপর্যাপ্ত ঘুম, ডিপ্রেশন (মানুসিক চাপ/বিষন্নতা), উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস। (চলবে)

-মুহম্মদ ইবরাহীম সোহেল।