আত তাক্বউইমুশ শামসী সনের ইতিবৃত্ত
, ৩০ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২০ ছানী, ১৩৯১ শামসী সন , ১৯ জুলাই, ২০২৩ খ্রি:, ০৪ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক উনার বিষ্ময়কর সৃষ্টি হচ্ছে চাঁদ ও সূর্য। দিনের আকাশে জ্বলে থাকা সূর্য আর রাতের আকাশে ঝলমলে চাঁদ মানুষের কেবল কল্যাণেই আসেনি বরং মানব মনে জন্ম দিয়েছে নানান ভাল লাগা আর সৃষ্টি করেছে কৌতুহল। চাঁদ-সূর্যের প্রতি মানুষের আগ্রহেই জন্ম নিয়েছে মহাকাশ বিজ্ঞান আর বছরের হিসাব গণনা করার মত বিষয়ের। বছরের হিসাব গণনা করার বিষয়টি বর্ষপঞ্জির সাথে জড়িত।
বর্ষপঞ্জি ছাড়া আমাদের ব্যক্তিগত কাজকর্ম, সরকারি কাজকর্ম সবই অচল। দেশ, জাতি, ব্যক্তি, ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান, সাহিত্য- সব কিছুই সময়ের সুতোয় বাঁধা। সময় মানেই সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা, দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর, দশক, যুগ, শতক, সহস্রাব্দ- সব কিছু। আর এই সব মিলিয়েই তো বর্ষপঞ্জি। বর্ষপঞ্জিতে দিন, সপ্তাহ, মাসের সমন্বয়ে একটি বছরের সকল তারিখ উল্লেখ থাকে।
মুসলমান ছাড়া কাফির-মুশরিকদের রচিত কিছু সৌরপঞ্জি থাকলেও সেগুলো মুসলমান উনাদের অনুসরণীয় নয় আর অন্যদিকে সেগুলো পূর্ণাঙ্গও নয়। ইতিহাসে দেখা গেছে প্রায় অনেক পরিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান প্রচলিত সৌরপঞ্জিসমূহ ব্যবহৃত হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে ইরানী বর্ষপঞ্জি মানব সভ্যতার ইতিহাসে অন্যতম প্রাচীন একটি বর্ষপঞ্জি। ইরানীদের বর্ণমালা, শাসকবর্গ ও ধর্মীয় বিশ্বাসে পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন মাসের নাম ও গণনা রীতি পরিবর্তিত হয়েছে। যদিও বার মাসের নাম মোটামুটি একই আছে। এর গণনা রীতি প্রচলিত হয় একাদশ শতাব্দীতে কবি ও মহাকাশবিদ ওমর খৈয়ামের নেতৃত্বে জালালি বর্ষপঞ্জি নামে। ১৯২৫ সালে এটিকে ইরানের সংসদে দেশের অফিসিয়াল বর্ষপঞ্জি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। ইরানের সর্বশেষ রাজা রেজা শাহ পাহলভি ১৯৭৬ সালে বর্ষপঞ্জির হিসাব পদ্ধতিতে সামান্য পরিবর্তন এনে এর ১ম সালকে প্রায় ১২০০ বছর আগে নিয়ে হিসাব করার আদেশ জারি করেছিল। সালটিকে ধরা হয় ইরানের শাসক সাইরাসের ক্ষমতায় আরোহণের বছর হিসেবে। কিন্তু ১৯৭৯ সালে ইরানে কথিত ইসলামী বিপ্লবের পর পুণরায় আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় যা বর্তমান অবধি প্রচলিত আছে। আফগানিস্তান একই বর্ষপঞ্জি ১৯৫৭ সালে তাদের অফিসিয়াল বর্ষপঞ্জি হিসেবে ব্যবহার করে এবং আজ অবধি প্রচলিত আছে।
পৃথিবীতে বিভিন্ন ক্যালেন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত হচ্ছে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। এই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, জুলিয়াস সিজারের ক্যালেন্ডারে ছিল বেশকিছু সমস্যা।
এই সমস্যার সমাধানে মাত্র ৪০০ বছর আগে ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে রোমের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী মহাকাশ বিজ্ঞানীগণের পরামর্শ নিয়ে ক্যালেন্ডারটির সংস্কার করে। তারই নাম অনুসারে ক্যালেন্ডারটির নামকরণ করা হয়েছে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। যুক্তরাজ্যে এই গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার প্রচলিত হয় ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে। আর এই ক্যালেন্ডার আমাদের দেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে নিয়ে আসে।
১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকাস্থ বাংলা একাডেমি কর্তৃক বহুভাষাবিদ আল্লামা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তত্ত্বাবধানে ফসলী সনের যুগোপযোগী সংস্কার সাধিত হয়। সংশোধিত এই ফসলী সন এ দেশ কিন্তু সহজে গ্রহণ করেনি। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের স্বীকৃতি প্রদানের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় দেশগুলো যে রকম গড়িমসি করেছিল, বাংলা একাডেমি কর্তৃক সংশোধিত ‘ফসলী সন’ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশেও কিন্তু কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্ধ দেখা যায়। ফলে, সংশোধনের প্রায় দুই যুগ পর ১৯৮৮ সালের ১৯ জুন তারিখে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘ফসলী সন’-এর সংশোধিত রূপ স্বীকৃত হয়।
তাহলে দেখা গেল প্রায় কোন সৌরসনই পূর্বে সহজে মানুষের কাছে গ্রহণ যোগ্যতা পায়নি। ফলে নতুন কোন সৌরসন প্রচারের জন্য চাই সে বিষয়ে জ্ঞান আর ধৈর্য্যরে। “আত তাক্বউইমুশ শামসী” হচ্ছে বিশ্বে প্রথম মুসলমান রচিত একটি সৌরসন। যদিও মুহম্মদ আল বিরুনী এবং মুহম্মদ ফতেউল্লাহ সিরাজী দুজনেই সৌর সন তৈরী করেছিলেন, তবে তা ছিল চাঁদের ঘূর্ণয়ন সাপেক্ষে। তাই সেগুলো ছিল ত্রুটিপূর্ণ। ত্রুটিমুক্ত এবং পরিপূর্ণ অনুসরণীয় সৌর সন হচ্ছে আত তাক্বউইমুশ শামসী। এই সনের বহুল প্রচারের জন্যে প্রথম প্রয়োজন এই বিষয়ে জ্ঞান আর সেই লক্ষ্যেই রচনা করা হয়েছে এই বিশেষ রেসালা। একদিন অবশ্যই বিশ্বে “আত তাক্বউইমুশ শামসী” আদরণীয়ভাবে গৃহীত হবে ইনশাআল্লাহ আমাদের আছে সেই দৃপ্ত প্রত্যয় ইনশাআল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি মুসলিম উম্মাহকে ছহীহ সমঝ দান করুন। বিধর্মী রচিত যাবতীয় সন পরিত্যাগ করত আত্ব তাক্বউইমুশ শামসী অনুসরণ-অনুকরণ করে মুসলিম উম্মাহকে ঈমান, আক্বীদা ও আমল হিফাযত করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
-মুহম্মদ আল হিলাল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব (২)
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১)
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রসঙ্গ: সউদী রাজ পরিবারের পূর্বপুরুষ ইহুদী যে কারণে (১)
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- পবিত্র খুতবা উনার হুকুম-আহকাম
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১)
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র মসজিদ নির্মাণের ফাযায়িল-ফযীলত
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)