মন্তব্য কলাম
অপারেশনের ওষুধের টাকা জোগাড় করতে করতে ক্লান্ত রোগীরা ওষুধ আর পরীক্ষার জন্য রোগী পাঠানো হয় বাইরে সব হাসপাতালে দালালচক্র সক্রিয়
, ১৯ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৮ ছানী, ১৩৯২ শামসী সন , ২৬ জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ১১ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) মন্তব্য কলাম
সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোয়ও অপারেশনের সব ওষুধই কিনতে হচ্ছে রোগীদের। একেকটি অপারেশনে ওষুধ বাবদ এক থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে তাদের। অথচ অপারেশনের জন্য আদৌ এত টাকার ওষুধের প্রয়োজন আছে কি না, তা যাচাই করার জন্য নেই গবেষণা ও তদারকি। আবার ফার্মেসিগুলো ন্যায্যমূল্য রাখছে কি না তাও দেখার কেউ নেই। ফলে ওষুধ কিনে নিঃস্ব হচ্ছেন রোগীরা।
অপারেশনের ওষুধ কিনতে বেশি টাকা লাগায় সিট পেয়েও অনেক রোগী ভর্তি হতে পারছে না। আর যারা ভর্তি হচ্ছে, তাদের কারও কারও অপারেশনের ওষুধের টাকার জন্য ধার-কর্জ করতে হচ্ছে। কেউ সম্পদ বিক্রি করছে, না-হয় হাত পাতছে মানুষের কাছে। তাদেরই একজন খশরু মিয়া। পেশায় কৃষক এই ব্যক্তি চোয়ালের অপারেশনের জন্য ভর্তি হয়েছিলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে। অপারেশনের আগে ও পরে মোট ১৬ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হয়েছে তাকে।
শুধু যে অপারেশনেই ওষুধ কিনতে বেশি টাকা লাগছে তা নয়, অনেক সময় অপারেশন ছাড়াও রোগীদের চড়া দামে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ফার্মেসিগুলোয় যখন ক্রেতা ওষুধ কেনেন, তখন ওই ওষুধের দাম ধরা হয় ইচ্ছেমতো। ওষুধের গায়ে লেখা দামের চেয়ে বেশি ধরা হচ্ছে কিনা বোঝার উপায় নেই রোগী ও তার স্বজনের পক্ষে।
সম্প্রতি ভাঙ্গা পায়ের সমস্যা নিয়ে মোমেনশাহী সদরের বলরামপুর গ্রামের হতদরিদ্র বিশু (৪৫) হাসপাতালের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন। এ সময় তার পায়ের দু’বার এক্স-রে করা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে করা এই এক্স-রের জন্য প্রতিবার ফী দিতে হয়েছে ১৫০ টাকা। এর মধ্যে প্রতিবার ৮০ টাকা করে গুনতে হয়েছে বখশিশ! চিকিৎসকরা বিশুকে পায়ে অপারেশনের পরামর্শ দিয়েছে। এরপর থেকে চলছে বিশুর অপেক্ষার পালা। ইতোমধ্যে দু’বার অপারেশনের তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। এ সময়ে বিশুর ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। দিন দিন এই ব্যয় আরও বাড়ছে। এর বাইরে চিকিৎসকদের দেয়া পরামর্শে অপারেশনের জন্য কিনে রাখা হয়েছে আরও আট হাজার টাকার ওষুধ সামগ্রী। এর মধ্যে সিরিঞ্জ ও স্যালাইন সেট থেকে শুরু করে নরম্যাল স্যালাইন, সার্জিক্যাল গ্লোভস ও সুই সুতোসহ ওষুধ সামগ্রী রয়েছে। অথচ, এ সবের সিংহভাগ ওষুধ ও সামগ্রী হাসপাতালেই সরবরাহ রয়েছে।
মোমেনশাহী শহরতলির বয়রা গ্রামের ১৩ বছরের স্কুলছাত্র হৃদয় জামগাছ থেকে পড়ে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আসে। হাসপাতালের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তির পর হৃদয়কে এমআরআই পরীক্ষার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসকরা পাঠান বাইরের একটি ল্যাবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষীয় সূত্র জানিয়েছে, এই পরীক্ষাটি হাসপাতালেই চালু রয়েছে। অথচ ওষুধ আর পরীক্ষার জন্য রোগীদের পাঠানো হচ্ছে হাসপাতালের বাইরে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারী ওষুধ পাচার ও পরীক্ষা থেকে কমিশনের জন্যই এসব করা হচ্ছে। প্রচার রয়েছে, হাসপাতাল প্রশাসন এসবের সঙ্গে জড়িত বলেই বন্ধ হচ্ছে না চিকিৎসকদের অনৈতিক প্রাকটিস। হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ কেনার কারণে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে প্রতিবছর প্রচুর ওষুধ নষ্ট হচ্ছে হাসপাতালের গুদামে।
অপর একটি খন্ডচিত্র রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের। চিকিৎসকের পরামর্শপত্র হাতে নিয়ে ওষুধ কেনার জন্য একটি কক্ষ থেকে প্রায় ছুটতে ছুটতে বের হলেন আরমান আলী। বাইরে করিডরে তখন একদল যুবকের জটলা। তারা আরমান আলীকে কাগজ হাতে দেখেই একযোগে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন। একজন পরামর্শপত্রটি কেড়ে নিলেন। এরপর সবাই মিলে চলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ওষুধের নাম পড়া। এ অবস্থায় আরমান আলী অসহায় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকেন।
আরমান আলীর ব্যবস্থাপত্রের ওপর হামলে পড়া এই যুবকরা বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি। তাদের হাত থেকে সাত-আট মিনিট পর ছাড়া পেয়ে ওষুধের দোকানের দিকে যেতে যেতে আরমান এক প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার ভাগ্নিটার অপারেশন চলছে। তালিকা অনুসারে আগেই অনেক ওষুধ কিনে দিয়েছি। কিন্তু ভেতর থেকে এখন জরুরিভাবে আরো দুটি ওষুধ নিয়ে আসতে বলল। কিন্তু ওই লোকগুলো আমাকে দেরি করিয়ে দিল। হাসপাতালের মধ্যে এই অবস্থা কিভাবে চলছে, বুঝতে পারছি না। ’ পরক্ষণেই তিনি বলেন, 'যে কোম্পানির ওষুধ লেখা হয়েছে, ঠিক সেটাই নিতে বলে দিয়েছেন ডাক্তার। অন্য কোম্পানির হলে নাকি চলবে না!’
ওই হাসপাতালের সামনের পরপর তিনটি ওষুধের দোকান ঘুরেও পাওয়া যায়নি ওই ওষুধ। পরে কিছুদূর হেঁটে গিয়ে আরেক দোকান থেকে আনা হয় ওষুধটি। এতে প্রায় আধা ঘণ্টা পার হয়ে যায়। বৃষ্টিতে ভিজে পড়িমরি করে ওষুধ নিয়ে অপারেশন থিয়েটারের সামনে আসতেই আরমান আলীকে ধমক লাগান কর্তব্যরত একজন নার্স, 'ওই মিয়া, এত দেরি লাগল ক্যান? যেই কোম্পানির ওষুধ লিখছে সেইটাই আনছেন তো!'
আরেক রোগীর স্বজন অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে আক্ষেপ করে বলেন, ‘এ কী অবস্থা দেখেন! নিজের টাকায় ওষুধ খাবেন, কিন্তু কোন কোম্পানির ওষুধ খাবেন, তা ঠিক করে দেন চিকিৎসকরা! এ জন্য ওষুধ কোম্পানির লোকেরা আগে থেকেই লেগে আছেন চিকিৎসক ও ওষুধ বিক্রেতাদের পেছনে। এর সঙ্গে এখন কয়েক বছর ধরে যোগ হয়েছে ভোক্তা বা ওষুধ ক্রেতাকে ঘিরে ধরার প্রবণতা। ওষুধের ক্ষেত্রে ক্রেতা বা ভোক্তার কোনো পছন্দ-অপছন্দের অধিকার নেই।
উল্লেখ্য, চিকিৎসকদের দায়িত্ব কেবল রোগীর প্রয়োজন অনুসারে ওষুধের মূল বা জেনেরিক নাম লিখে দেওয়া। কিন্তু চিকিৎসকরা তা না করে নিজেদের পছন্দমতো কোম্পানির ওষুধের নাম লিখে দেয়। আর ওষুধ কোম্পানিগুলোও প্রকাশ্যে চিকিৎসকদের পায়ে পায়ে ঘুরে তাদের প্রভাবিত করছে।
ওষুধ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সরকারি হিসাবে দেশে অনুমোদিত জেনেরিক ওষুধের (অ্যালোপ্যাথিক, ইউনানি, আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক) সংখ্যা ১ হাজার ২০০। এর মধ্যে কেবল অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারী ২৬৫টি প্রতিষ্ঠানই জেনেরিক ওষুধের আওতায় ব্র্যান্ড বা ট্রেড হিসেবে তৈরি বা বাজারজাত করছে প্রায় ২২ হাজার ওষুধ। এসব ওষুধ সম্পর্কে কেবল চিকিৎসকদের মধ্যে প্রচারণা চালানো যায়।
কিন্তু বাস্তবে ওষুধ ব্যবসায়ীদের কোন সরকারের আমলেই নিয়ন্ত্রণ করতে না পাড়ার কারণে তাদের অপবাণিজ্যের কাছে দেশের মানুষ এখন মূলত জিম্মী হয়ে পড়েছে।
-মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
এবার রোযায় ইফতারীতে একটু মিষ্টি মুখে দিতে ব্যার্থ হবেন মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত রোযাদাররা। এবার রোযায় হোটেলের ইফতারী কিনতে ব্যর্থ হবেন মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত রোযাদাররা। এবার রোযায় মুখে এক টুকরা আপেল, আঙ্গুর বা মাল্টা মুখে দিতে ব্যার্থ হবেন মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত রোযাদাররা। উল্টো এবার রোযায় স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সরকারের তরফ থেকে বিক্রি হবে না গরু-খাসির গোশত
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মানবতা বা মনুষ্যত্ব শব্দ উচ্চারণের অধিকার বিশ্ববাসীর আর নাই গাজার শিশুদের আর্তনাদ, গাজার মায়ের আহাজারি যে বিশ্ব শুনতে পায় না- “সে বিশ্ব বধির”। গাজার শেষ হাসপাতাল ধ্বংস চরম নিষিদ্ধ ফসফরাস বোমার আক্রমণ যে বিশ্ব দেখতে পায় না- “সে বিশ্ব মহা অন্ধ”।
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সন্ত্রাসবাদ নয়; জিহাদী যোগ্যতা অর্জন করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অনুযায়ী ফরয। ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সব নাগরিকের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলামে কী প্রকৃতির মুহব্বত ও ঋতু প্রিয়তার কথা নেই? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে শীতকাল যে কত প্রিয় তা অনেকেরই অজানা। শীতে আছে গণীমত (পর্ব -২)
১১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলামে কী প্রকৃতির মুহব্বত ও ঋতু প্রিয়তার কথা নেই? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে শীতকাল যে কত প্রিয় তা অনেকেরই অজানা। শীতে আছে গণীমত (পর্ব -১)
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে চীন ভারতের ভূ-রাজনীতি দেখতে চায় না দেশ প্রেমিক জনসাধারণ পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করা গেলে তিস্তা মহাপরিকল্পনাও এদেশীয় অর্থায়নেই সম্ভব ইনশাআল্লাহ তিস্তা মহাপরিকল্পনা যথাযথ করতে পারলে এবং বাস্তবায়ন করলে দেশের উত্তারঞ্চল সোনালী সমৃদ্ধিতে আরো সমুজ্জল হবে ইনশাআল্লাহ
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দিন দিন বাড়ছে পারিবারিক সহিংসতা, খুন আর আত্মহত্যা মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং দ্বীন ইসলাম বৈরিতাই এর মুখ্য কারণ
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
কর্মক্ষম জনশক্তি তথা কর্মক্ষমতার স্বর্ণযুগে বাংলাদেশ বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৭৫ জনই কর্মক্ষম। এবং ইন্দোনেশিয়া নয়, বাংলাদেশই বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র। বাংলাদেশের মুসলমানের সংখ্যা ৪৫ কোটিরও উপরে। (সুবহানাল্লাহ)
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম মদের বিরুদ্ধে দিয়েছে অসংখ্য সতর্কবাণী ও নির্দেশনা। অথচ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশে দেয়া হবে মদের লাইসেন্স! মদ-জুয়ার প্রসার মহান আল্লাহ পাক উনার চরম অসন্তুষ্টির কারণ। যার পরিণতি হতে পারে খোদায়ী গযব। নাউযুবিল্লাহ!
০৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গঃ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন
০৪ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ডানে সেলফি বামে সেলফি, সেলফি সেলফি সেলফি উন্মাদনায় সমাজে ব্যাপকভাবে বেড়েছে হত্যা, আত্মহত্যা, সম্ভ্রমহরণ, সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা অপরাধ। বিভিন্ন দেশে সেলফি’র উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করলেও বাংলাদেশে কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
০২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানকে ‘মুসলমানিত্ব’ বুঝতে হবে। ‘আশহাদু আন্না মুহম্মাদার রসূলুল্লাহ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাক্বীক্বীভাবে বলতে হবে ও আমলে আনতে হবে।
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)