অনলাইন জুয়ায় বছরে পাচার ৫ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশকে অনলাইন জুয়ার হাব বানানোর চেষ্টায় আন্তর্জাতিক জুয়াড়িরা। অনলাইন জুয়ায় জড়িয়ে নিঃস্ব হচ্ছে যুবক থেকে বৃদ্ধ, বাড়ছে সামাজিক অপরাধ। সরকারের উচিত- শক্ত আইন প্রণয়ন করে অনলাইন জুয়ার মূলোৎপাটন করা।
, ২১ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৮ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ০৭ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ২২ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) মন্তব্য কলাম
জুয়ার সাইটের বিজ্ঞাপন যেমন বাংলাদেশের কিছু বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে দেখা যায়, তেমনই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, বিশেষ করে ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলগুলোয় প্রচার হতেও দেখা যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মকে খুব সহজেই প্ররোচিত করা যায়। এই সুযোগের অপব্যবহার করে তাদের জুয়ার দিকে আকৃষ্ট করা হয়। যেহেতু তরুণদের ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত ইত্যাদি বিচার-বিবেচনার ক্ষমতা কম থাকে, তাই তারা অতি সহজেই এই ফাঁদে পা দেন।
অনলাইন জুয়ার ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অথবা অন্য কোনো অনলাইন বা ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল মাধ্যমে খেলাধুলা বা এ-সংক্রান্ত অন্য কোনো বিষয়ে বাজি ধরা হয়। বাজির লেনদেনের জন্য জুয়াড়িরা ক্যাশবিহীন ব্যাংকিং লেনদেন (যেমন ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি) বা মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন (যেমন বিকাশ, রকেট, নগদ, উপায়, পেপাল ইত্যাদি) বা বিটকয়েনসহ অন্য যেকোনো ক্রিপ্টোকারেন্সি ইত্যাদি ব্যবহার করতে পছন্দ করেন।
কারণ, এতে সহজে ধরা পড়ার ভয় নেই। জুয়ায় সহজে টাকা আয় করা যায় প্রাথমিকভাবে। এটিও জুয়ার প্রতি মানুষকে আকর্ষিত করার ফাঁদ। কয়েকবার স্বল্প পরিমাণে টাকা পেয়ে যারা জুয়া খেলেন, তারা লোভে পড়ে যান। কম পরিশ্রমে বেশি লাভের জন্য এরপর জুয়াড়িরা বেশি টাকা দেন জুয়ায়। যখন দেওয়া মূল টাকা ফেরত আসে না, তখন পরেরবার নিশ্চয়ই ফেরত পাব, এই আশায় আবার টাকা খরচ করেন তারা। পরবর্তী সময়ে সেই টাকাও না পেলে দিশাহারা হয়ে আবারো ওই টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় বারবার টাকা দিতে থাকে জুয়ায়।
অনলাইন গেমস থেকে তরুণ-কিশোরেরা অসহিষ্ণু, কলহপ্রিয়, বিবাদপ্রেমী এবং হত্যার খেলায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। বহু কচি প্রাণ ইতোমধ্যে ঝরেও গেছে। নেশাদ্রব্যে ঘায়েল হয় মানুষের স্নায়ু এবং মানস প্রক্রিয়া আর এখন যে হারে অনলাইন জুয়ার মাদকতা শুরু হয়েছে, তাতে বহু পরিবার উচ্ছন্নে যেতে বসেছে। অনলাইন জুয়ার ফাঁদে পড়ে দিনে দিনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বহু মেধাবী ছেলেমেয়ে। ওই জুয়ার ‘স্টেক’ ধরার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে কেউ বাবার পকেট কাটছে, কেউ মায়ের গহনা ধরে টান দিচ্ছে; কেউ আবার চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইয়ের পথ ধরছে। একটি অপকর্মে উৎসমুখে জড়ো হচ্ছে আরো বহু অনাচার ও অপকর্ম। সত্যিই এক ভয়ঙ্কর নেশা এই অনলাইন জুয়া। এ যে কী ভয়ঙ্কর নেশা, বলে বোঝানো যাবে না।
যে নেশা দেশের তরুণ প্রজন্মের একটি বিপথগামী অংশকে নৈতিক অবক্ষয়ের অতল গহ্বরে নিয়ে যেতে পারে, সেই নেশার দংশন জাত সাপের দংশনের চেয়েও বিষবান কি না তা ভুক্তভোগী সংসারগুলোই ভালো বলতে পারবে। মাদকের চেয়েও ভয়াবহ এই অনলাইন জুয়ার নেশার লাগাম টেনে ধরতে সরকারকেই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। এই সর্বনাশা অনলাইন জুয়ার নেশার বিরুদ্ধে বিপন্ন পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। যেকোনো মূল্যে যেকোনো উপায়ে তরুণ-কিশোরদের রক্ষা করতে হবে মোবাইল অ্যাপসে সংক্রমিত এসব জুয়ার আগ্রাসন থেকে। ‘ক্যাসিনোর’ জুয়ার ফাঁদের চেয়েও ভয়ঙ্কর এসব অনলাইন ‘ডিজিটাল’ আসর। এসব অনলাইন জুয়ার মধ্যে রয়েছে ‘ওয়ান এক্স বেইট’, ‘বেট উইনার’, ‘চরকার’ মতো আসর। এগুলোর দ্রুত বিস্তার সমাজদেহে ছড়িয়ে পড়ছে ‘ক্যান্সার’-এর চেয়েও দ্রুত প্রসারমান ম্যালিগন্যান্সির মতো। (কিংবা তার চেয়েও দ্রুত সম্প্রসারমান এই ঘাতক ব্যাধি)। বিপথগামী কিশোর-তরুণরা অনলাইন গেমস থেকে ঘটিয়েছে অনলাইন জুয়ার। সর্বনাশা বিষয়টি হলো- এসব জুয়া সমাজে এমনভাবে বিস্তৃতি লাভ করছে যে, মোবাইল ফোনের সিমকার্ডে আগাম বিল (ফ্লেক্সিলোডের) মতো এখন এসব অনলাইন জুয়ার অ্যাপসে টাকা ভরার জন্য শহর থেকে মফস্বলে রীতিমতো ‘এজেন্ট’ নিয়োগ করা হচ্ছে। খেলার প্রতিযোগিতার মতো তরুণ-কিশোররা এসব অনলাইন জুয়ায় ভয়াবহ মাত্রায় জড়িয়ে পড়ছে। এসব জুয়ায় জেতে খুব নগণ্য সংখ্যকই; হারেই বেশি মানুষ। এসব অনলাইন জুয়া যারা ‘হোস্ট’ করে, ক্যাসিনোর মতো তাদেরও টার্গেট থাকে কিভাবে মানুষের টাকা হাতানো যায়। কদাচিত হয়তো কেউ সামান্য কিছু জেতে, যা এসব কোম্পানির বিনিয়োগের বড়জোর ৫ শতাংশ। বাকি ৯৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী আশায় আশায় বেট ধরে এবং হারতে হারতে সর্বস্বান্ত হয়।
প্রসঙ্গত, অনলাইন জুয়া বন্ধে দেশে যথোপযুক্ত আইন নেই। জুয়া বন্ধ করতে ‘প্রকাশ্য জুয়া আইন, ১৮৬৭’ রয়েছে। এটা অনেক পুরোনো এবং সেখানে সাজা খুবই অপ্রতুল। আর সেখানে অনলাইন জুয়া সম্পর্কে কোনো কিছু বলা হয়নি। সরকারি যে দপ্তরগুলো সর্বেসর্বা হয়ে বসে আছে তাদের ডার্ক ওয়েব কিংবা ওপেন সোর্স টুলস নিয়ে কোনো সফটওয়্যার নেই। টাকা খরচ করলে, কোন দেশ থেকে কারা এসব সাইট চালাচ্ছে, তা জানা সম্ভব।
আইনের দুর্বলতা থাকার কারনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও অবহেলার পরিচয় দেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জুয়া নিয়ে প্রশ্ন করলে তাদের একটা বক্তব্য ‘আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসে নাই’। অথচ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে অনলাইনে এসব দেশবিরোধী কর্মকান্ডের উৎস্য ও মূল হোতাদের খুঁজে বের করে আইনে আওতায় নিয়ে আসা। যুব সমাজকে এই ঘৃণ্য ও নোংরা জুয়ার সংস্কৃতি থেকে বের করে নিয়ে আসা।
বলাবাহুল্য, অনলাইন হোক কিংবা অফলাইন হোক এই জুয়ার সংস্কৃতি একটি ইহুদী কুটকৌশল। এই জুয়ার ধোঁকায় ইহুদীরা বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর ধনীদের ভিক্ষুকে পরিণত করে থাকে। আর এই ষড়যন্ত্রের ভাগিদার হচ্ছে বাংলাদেশ। অথচ বাংলাদেশ ৯৮ ভাগ মুসলমানদের দেশ। আর পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে জুয়াকে স্পষ্টভাবে হারাম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সংবিধানে ১৮(২) অনুচ্ছেদে জুয়াকে নিরুৎসাহিত ও প্রতিরোধ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আইনে তার প্রয়োগ নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাঝেও তার প্রতিফলন নেই। কাজেই সংবিধানকে সামনে রেখে বিশেষ সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রদ্বীন পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দেশ তথা ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে জুয়ার অপসংস্কৃতি নির্মুল করা।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
জুয়ার নেশায় বুদ হচ্ছে শিশু-কিশোররা-শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ সাইটই পরিচালিত হয় দেশের বাইরে থেকে অনলাইনে জুয়ায় ছোট ছোট বাজির টাকা দিন শেষে একটি বড় অঙ্কের অর্থ হয়ে দেশ থেকে ডলারের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে প্রতিদিন
২২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রসঙ্গ: হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া এবং হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে গুপ্তহত্যার মাধ্যমে শহীদ করা জায়নবাদী তথা বর্বর ইহুদীরা কাপুরুষতার প্রমাণ দিয়ে অতীত ইতিহাস থেকে একের পর এক গুপ্তহত্যা করে আসছে ইহুদীদের গুপ্তহত্যার অনেক নিন্দা, ধিক্কার এবং প্রচারণা ও প্রতিহতের প্রচেষ্টা দরকার (পর্ব-১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শুধু যুবকরাই নয় এখন এনার্জি ড্রিংকসে বুদ হচ্ছে শিশুরাও কর ফাঁকি দিতে অনেক এনার্জি ড্রিংকস হয়ে গেছে কোমল পানীয় জনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে অবিলম্বে এনার্জি ড্রিংকস বন্ধ করতে হবে
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইহুদী-নাছারাদের ষড়যন্ত্রে পড়েই দুনিয়াদার মালানারা বেহেশত-দোযখের ওয়াজ শরীফ বাদ দিয়েছে। পর্নোগ্রাফি, মাদক থেকে যুব সমাজকে বাঁচাতে চাইলে বেহেশত-দোযখের ওয়াজ শরীফও বেশি বেশি করতে হবে।
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ডানে সেলফি বামে সেলফি, সেলফি সেলফি সেলফি উম্মাদনায় সমাজে ব্যাপকভাবে বেড়েছে হত্যা, আত্মহত্যা, সম্ভ্রমহরণ, সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা অপরাধ। বিভিন্ন দেশে সেলফি’র উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করলেও বাংলাদেশে কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
১৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দিন দিন বাড়ছে পারিবারিক সহিংসতা, খুন আর আত্মহত্যা মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং দ্বীন ইসলাম বৈরিতাই এর মুখ্য কারণ সরকারের উচিত জাতীয়ভাবে দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ ও শিক্ষা প্রচার ও প্রসার করে এই সামাজিক সমস্যাটি দূরিকরণ করা।
১৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যথাযথ পদক্ষেপ নিলে ইনশাআল্লাহ আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের প্রথম ধনী দেশ। এক উত্তারাঞ্চলের খনিজ উত্তোলন করলেই গোটা দেশের চেহারা পাল্টে যাবে। সরকারের নিষ্ক্রিয়তা বরদাশতযোগ্য নয়।
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অবহেলায় কৃষিতে ব্যবহৃত হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক; বাড়ছে ক্যান্সারের ঝুঁকি। বিলুপ্তির পথে ১৯২ জাতের উপকারী পোকা। সরকারের উচিত অবিলম্বে কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও কৃষিকে বিষমুক্ত করা।
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালন করা কী অপরাধ? সংবিধান কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনের সুযোগ দেয়নি? পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে কী বেপর্দা ও ছবির বিরুদ্ধে বলা হয়নি?
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রতি বছর ১ কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক “অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স নতুন আশঙ্কা এবং বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমেছে”- এ তথ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নচেৎ সাধারণ অসুখেই প্রাণনাশ হতে পারে
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘ইসলামভীতি মোকাবেলায় জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস’ হলেও কার্যকরী কিছুই হচ্ছে না ইসরাইলকে সহযোগিতা করতে আমেরিকায় ইসলামোফোবিয়ার বিস্তার আরো বাড়ানো হচ্ছে
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রতারণার ফাঁদে নাগরিক জীবন। সরকারের নজরদারী নেই। রকমফের প্রতারণা বন্ধে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক বিস্তারের বিকল্প নেই।
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)