স্থাপত্য-নিদর্শন
অনন্য নিদর্শন সভ্যতার স্বর্ণযুগে গ্রন্থবাঁধাই (৪)
, ১৭ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৪ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০৬ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) স্থাপত্য নিদর্শন
(গত ২৬ ছফর শরীফের পর)
পারস্যের তৈমুরীয় যুগের গ্রন্থবাঁধাই সূচিকর্মের দিক বিবেচনায় অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ও মনোরম বলে প্রতীয়মান হয়। তৈমুরীয় আমলের হিরাত একাডেমীতে সম্পন্ন গ্রন্থবাঁধাই উন্নত প্রযুক্তি ও উত্তম ডিজাইনের অনুসরণে চামড়ার জালিরূপ সৌকার্যে মোহনীয় হয়ে ওঠেছে। কভারের বহিঅবয়বে স্টাম্প-সদৃশ অলঙ্করণের সাথে নীল পটভূমিতে বিভিন্ন টাইপের অলঙ্করণ মটিফ উপস্থাপিত হয়েছে। ইস্তাম্বুলের তোমকাপু সারেই লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত পঞ্চদশ শতাব্দীর ১৪৩৭ ও ১৪৪৫খৃ: পা-ুলিপিসমূহের বাঁধাইয়ে তৈমুরীয় লান্ডস্কেপ বা ভূমিদৃশ্য ও চৈনিক মটিফের সমন্বয়ে বাঁধাইশৈলী সমুজ্জ্বলরূপ ধারণ করেছে বলে বিবেচিত হতে পারে। ১৪৪৬ খৃ: একটি পা-ুলিপির চামড়া-বাঁধাই ডিজাইন মেট্রোপলিটান মিউজিয়ামে (নিউ ইয়ার্ক) সংরক্ষিত ১৪৪৯ সালের নিজামীর ‘খামসা’ এর বাঁধাইয়ের অনুরূপ। এটি একটি উন্নতমানের সৌকার্য এবং নান্দনিক শিল্পের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তৈমুরীয় গ্রন্থবাধাই শিল্পে এরূপ অলঙ্করণ-প্রযুক্তি অপ্রতুল নয়। ষষ্ঠদশ শতাব্দীতে সাফাবীয় শাসনামলে পুস্তকবাঁধাই শিল্প আরো বিকাশ লাভ করে। নান্দনিক শিল্পীগণ পুস্তকের কভার বা আবরণ-পৃষ্ঠার অলঙ্করণের দিকে আরো মনোযোগী হয়ে ওঠেন এবং এটিকে একটি উন্নত শিল্পের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে উদ্যোগী হন। এই সময়পর্বে শিল্পীগণ পুস্তকের কভার বা আবরণ-পৃষ্ঠা বিস্তৃতভাবে বিভিন্ন মটিফে অলঙ্করণের দিকে দৃষ্টি দেন এবং পনের শতকের চেয়ে স্বর্ণের অধিক ব্যবহার করে কভারপৃষ্ঠার চাকচিক্য বৃদ্ধি করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অলঙ্করণের পরিধি কভারপৃষ্ঠা জুড়ে বিস্তৃত ছিল; আবার কখনও কখনও তা বিশেষ জায়গায় কিংবা মেডেল-চিত্রের মধ্যে বন্ধনীযুক্ত ছিল। এই যুগের ইরানীয় পুস্তক বাঁধাইয়ের একটি উৎকৃষ্ট নমুনা সাদীর ‘বুস্তান’ যা মেট্রোপলিটান মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। এই গ্রন্থের কভারপৃষ্ঠার বহিস্থদিক অলঙ্কৃত হয়েছে স্বর্ণখচিত এরাবেস্ক মটিফ দিয়ে যাতে প্রবিষ্ট হয়েছে নমোনীয় পুষ্পগুচ্ছ এবং চৈনিক পুঞ্জিভূত মেঘমালা। আর আন্ত ভাগের অলঙ্করণ মোহনীয় হয়ে ওঠেছে নীল, পাটলবর্ণ ও সবুজের পটভূমিতে কমনীয় চামড়া-সুক্ষ্ম জালির এরাবেস্ক বিমূর্ত রেখামালায়।
ষষ্ঠদশ শতাব্দীর একটি অনন্য ইরানীয় পুস্তকবাঁধাইয়ের দৃষ্টান্ত পরিদৃষ্ট হয় একটি কভার বা আবরণ প্রচ্ছদে। এটির বহিস্থদিকের সাটানো ও স্বর্ণখচিত অলঙ্করণ তার লান্ডস্কেপে বা ভূমিদৃশ্যে। সাফারী গ্রন্থবাঁধাই অলঙ্করণ শৈলী তৈমুরীয় যুগের অলঙ্করণ পদ্ধতি হতে ভিন্নতর এবং তা হলো অলঙ্করণক্ষেত্রসমূহে চিত্র ও বিমূর্ত-মটিফ হস্তসঞ্চালনে না সাটিয়ে তামা ও স্টিল ধাতবের নির্মিতখোদাই যন্ত্রের সাহায্যে সুবিন্যস্ত করা হয়। এ জাতীয় অলঙ্করণে প্রেসিং ও গিল্ডিং (সাটানো ও স্বর্ণখচিত) পদ্ধতি সাধারণত সমভাবে যুক্ত হয়ে পরিচালিত হয়। তবে কোনো সময় এই সাধারণ যুক্ত পদ্ধতির ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায়। সেক্ষেত্রে তপ্ত ছাঁচে প্রেসার দেয়ার পূর্বে চামড়ার গিল্ড বা সোনালীকরণ পর্ব সম্পন্ন করা হয়। উপর্যুক্ত গ্রন্থকভারের আন্তঃদিক স্বর্ণম-িত কাগজের সুক্ষ্ম সৌকার্যে দীপ্তময় হয়েছে। আর তা তৈমুরীয় যুগের চামড়াকর্তন প্রক্রিয়ার স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। এই কাগজ জালিকর্ম লাল, নীল, সবুজ, কালো রং ও সুগন্ধি লাভেন্দার তরুরাজির পটভূমির ওপর সংস্থাপিত হয়েছে। চলবে....
সম্পাদনায় -মুহম্মদ নাইম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
যার এক মাথা বাংলাদেশে অপর মাথা ত্রিপুরার আগরতলায়!
০২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
গৌরবের স্মারক: হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক মসজিদ
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৯)
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৭)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হাজীগঞ্জ দুর্গ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৬)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সুনামগঞ্জে কালের সাক্ষী শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী পাগলা বড় মসজিদ
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
৫০০ বছরের ঐতিহাসিক নিদর্শন বাঘা শাহী মসজিদ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৬)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৫)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৪)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৩)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)