দেশের অর্থনীতির বিকাশের মূলনীতিই হলো দেশীয় পণ্যের সম্প্রসারণ।
অথচ দেশী পণ্যের বিকাশে পিছিয়ে বাংলাদেশ। বিদেশী পণ্য কব্জা করছে পণ্যবাজার। দেশী পণ্যের বিস্তারে ‘স্বদেশের মুহব্বত ঈমানের অঙ্গ’ এই জজবায় উজ্জীবিত হতে হবে সরকারকে।
, ১৪ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০১ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১৫ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) মন্তব্য কলাম
শুধু ভারত কিংবা পাকিস্তানই নয়; বিশ্বের সব দেশই দেশি পণ্যের প্রচার প্রসারে এবং জনগণের ব্যবহারের স্বার্থে রাষ্ট্রীয়ভাবে উৎসাহ প্রদান করে থাকে। কোনো কোনো দেশে দেশীয় পণ্য ব্যবহারে বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। শুধুমাত্র ব্যতিক্রম বাংলাদেশে।
বাংলাদেশের জনগনের মধ্যে একটা বদ্ধমূল ধারণা আছে ‘দেশী পণ্যের মান ভালো না, বিদেশী পণ্য উন্নত মানের’। ধারণাটি একেবারেই ভুল। দেশীয় পণ্যের মান যদি খারাপ হয়েও থাকে তাহলে তার জন্য দায়ী দেশের জনগন, সংশ্লিষ্ট মহল ও বিশেষ করে সরকার।
উল্লেখ্য, কোনো দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য সে দেশের স্থানীয় তথা দেশীয় পণ্যের বিকাশ জরুরী। মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, চীন ইত্যাদি দেশ সবসময়ই বিদেশী পণ্য ক্রয়ের আগে নিজেদের দেশের পণ্যের সম্প্রসারণের কথা বিবেচনা করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে দেশী পণ্যের এত সম্ভাবনা থাকার পরও বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় থাকা দেশের সরকার কিংবা জনগনের মধ্যে দেশীয় পণ্য ক্রয় কিংবা সম্প্রসারণের মনোভাব খুবই কম। যার কারণে বিদেশী পণ্য ধীরে ধীরে কব্জা করে নিচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের বাজার। মার খাচ্ছে দেশীয় পণ্য উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ী ও রফতানিকারকরা। গড়ে উঠছে না নতুন নতুন পণ্য উৎপাদনকারী খাত। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন দক্ষতা ও ব্যয় কুশলতা অর্জন করতে পারছেনা।
শিল্পজাত পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে কলকারখানার যন্ত্রপাতি ক্রয় ও ভবন নির্মাণ বাবদ প্রথমেই বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে হয়। ফলে প্রথম পর্যায়ে পণ্যের গড় উৎপাদন খরচ বেশি থাকে, যা উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে। এদিকে বড় বড় বিদেশি কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে ওই পণ্যের ব্যবসা করায় তাদের গড় উৎপাদন ব্যয় অনেক কমে আসে। ফলে তারা কম দামে ভালো পণ্য বিক্রি করতে পারে। এখন পণ্যের মানের দোহাই দিয়ে যদি সরকার কিংবা জনগন দেশীয় পণ্যের বিস্তার না ঘটায় তাহলে কখনোই দেশীয় পণ্যের মান ভালো হবেনা। শিল্প কখনোই শক্তিশালী অবস্থানে যেতে পারবে না।
দেশীয় বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়। বিশ্ববাজার প্রায় দখল করে রেখেছে বাংলাদেশীয় পোশাক। কিন্তু দেশের বাজার দখল করে আছে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের পোশাক। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসব মৌসুমে বিদেশী পোশাকের আধিপত্যে দেশীয় পোশাক উৎপাদকরা পথে বসে যায়। বাংলাদেশে সারা বছরই হাজার হাজার জাতের ফলের বাম্পার ফলন হয়। কিন্তু এরপরও বিদেশ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার ফল আমদানি করা হয়, গত ৭০ বছর ধরে দেশের ডেইরি খাতে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলা হয়েছে। এরপরও বিদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার দুগ্ধজাত সামগ্রী আমদানি করে দেশের বাজার সয়লাব করে ফেলা হয়। প্রতি বছর ১০ কোটি কেজি উন্নতমানের চা উৎপাদন হয় বাংলাদেশে। এরপরও বিদেশ থেকে লাখ লাখ কেজি চা আমদানি করা হয়। পাদুকাশিল্পে বাংলাদেশ বিশ্বে ৭ম হলেও বাংলাদেশের জুতার বাজার দখল করে রেখেছে বিদেশী কোম্পানিগুলো। সুগন্ধি সাবান ও তেল, প্রসাধনী, কলম, পেনসিল, স্টেশনারি পণ্য, ইলেট্রনিক পণ্য, ফ্রিজ, প্ল্যাস্টিক সামগ্রী, চামড়া, সিরামিক পণ্য ইত্যাদি বাংলাদেশে বিশ্বমানের তৈরি হলেও এসব পণ্যও বিদেশ থেকে প্রতিনিয়ত আমদানি করা হচ্ছে। পুরান ঢাকার জিঞ্জিরা সবার পরিচিত। ইলেক্ট্রনিক পণ্য তৈরিতে জিঞ্জিরার কারিগরেরা বেশ পারদর্শী। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকট, বাজারজাতকরণ ও সঠিক প্রশিক্ষণের অভাবে এগুতে পারছে না তারা।
প্রসঙ্গত, অর্থনীতি হচ্ছে দেশের মেরুদ-। দেশের মেরুদ- যদি সোজা রাখতে হয় তাহলে দেশী পণ্য ব্যবহার করাটা হচ্ছে সর্বোত্তম পন্থা। গ্রামগঞ্জে একটা কথা আছে ‘বিদেশী রুই থেকে দেশের পুঁটি মাছ ভালো’। এক্ষেত্রে জনগনের উচিত হবে দেশীয় পণ্য ক্রয়ের প্রতি জোর দেয়া। এতে করে দেশীয় পণ্যের মানও অনেক ভালো হবে। দেশের ৮০% লোক যখন দেশীয় পণ্য কিনতে চাইবে তখন দেশের শপিংমল কিংবা মার্কেটগুলোতেও বিদেশী পণ্যের বদলে দেশীয় পণ্য আধিপত্য বিস্তার করবে। দেশী পণ্য রাখা শুরু করবে দোকানদার। দেশী কারখানাগুলো সচল হতে থাকবে। আমদানি ব্যয় কমে আসবে। লাখ লাখ বেকারের কর্মসংস্থান হবে, খেলাপি ঋণ অনেক কমে যাবে। পণ্যের মান বৃদ্ধি পাবে। পণ্যের মান বৃদ্ধি পেলে রফতানি আয়ও বাড়বে। দেশী পণ্য কিনলে ধনী হবে আমাদের দেশের উদ্যোক্তারা। শ্রমিকদের বেতন বাড়বে। এতে করে দেশ উন্নত হতে বেশি দিন লাগবে না। সবাই দেশী পণ্য ব্যবহার করলে ২০৪১ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। তার আগেই বিদেশীরা নয় বরং বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা বিশ্বের দেশে দেশে বিনিয়োগ করে বেড়াবে।
বাংলাদেশের এমন কোনো খাত নেই যাতে প্রাচুর্যতা নেই। সব খাতই পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে সর্বসেরা হয়ে ওঠার সক্ষমতা রয়েছে। তাই ক্ষমতাসীন সরকারের উচিত হবে শুধু বিদেশী বিনিয়োগ আর বিদেশী পণ্য আমদানির একক চিন্তা বাদ দিয়ে দেশীয় পণ্যের সম্প্রসারণ এবং প্রচারের ব্যবস্থা করা। দেশীয় পণ্যের মান উন্নয়নের জন্য বাজেটে বরাদ্দের ব্যবস্থা করা। দেশীয় পণ্য উৎপাদনকারী কারখানাগুলোতে আধুনিক যন্ত্রাংশ, শ্রমিকদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা।
জিঞ্জিরার মতো যেসব শিল্প আপন সম্ভাবনাতেই গড়ে উঠেছে সেগুলোতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার ব্যবস্থা করা। আর এতে করেই দেশীয় পণ্যের বাজারকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবেনা। বাংলাদেশী পণ্য আপন সক্ষমতাতেই বিশ্ববাজারে দাপট দেখাতে সক্ষম হবে।
স্বাধীনতার ৫১ বছর পর্যন্ত এ মূল্যবোধ অর্জিত না হওয়ার পেছনে সব সরকারই দায়ী। আর সরকার ততক্ষণ পর্যন্ত সফল হবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানের মাঝে “স্বদেশের মুহব্বত ঈমানের অঙ্গ” এই দীনি জজবা না বিস্তার করবে।
- আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ডানে সেলফি বামে সেলফি, সেলফি সেলফি সেলফি উন্মাদনায় সমাজে ব্যাপকভাবে বেড়েছে হত্যা, আত্মহত্যা, সম্ভ্রমহরণ, সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা অপরাধ। বিভিন্ন দেশে সেলফি’র উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করলেও বাংলাদেশে কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
০২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানকে ‘মুসলমানিত্ব’ বুঝতে হবে। ‘আশহাদু আন্না মুহম্মাদার রসূলুল্লাহ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাক্বীক্বীভাবে বলতে হবে ও আমলে আনতে হবে।
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
এদেশে যারা পহেলা বৈশাখের নামে বাঙ্গালীয়ানার হুজ্জোতে মেতে উঠে তারাই আবার ইংরেজী থার্টি ফার্স্ট নাইটের অশ্লীলতায় মজে থাকে। পহেলা বৈশাখের বাঙ্গালীয়ানা এবং থার্টি ফার্স্ট নাইটের খ্রীষ্টিয়ানা কোনটাই ৯৮ ভাগ মুসলমানের এদেশে চলতে পারে না। পশ্চিমা বিজাতীয় খ্রিষ্টানদের অপসংস্কৃতি থার্টি ফার্স্ট নাইট এদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে। এই বিজাতীয় সংস্কৃতি সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী তথা দেশের যুবসমাজের চরিত্র বিধ্বংসী।
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকে- সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কতিপয় ফযীলত মুবারক বর্ণনা
৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র এখনও বন্ধ করলে যা লাভ হবে চালু রাখলে তার চেয়ে অনেক বেশী ক্ষতি হবে ৫৩টি পরিবেশবাদী সংগঠনের দাবী অবিলম্বে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হোক কিন্তু তাদের উপেক্ষা করে পরিবেশ উপদেষ্টা প্রমাণ করছে
২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সুন্দরবন ধ্বংসে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলছে ক্রমেই ছোট হচ্ছে সুন্দরবন, হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য আমাদের পরম প্রয়োজনীয় সুন্দরবন, এই সুন্দরবন বাঁচলে বাংলাদেশ ভালো থাকবে ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশের ফুসফুস সুন্দরবনকে বাঁচাতে হবে ইনশাআল্লাহ
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শুধু যুবকরাই নয় এখন এনার্জি ড্রিংকসে বুদ হচ্ছে শিশুরাও কর ফাঁকি দিতে অনেক এনার্জি ড্রিংকস হয়ে যাচ্ছে কোমল পানীয় জনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে অবিলম্বে এনার্জি ড্রিংকস বন্ধ করতে হবে
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
বাড়ছে পরকীয়া, বাড়ছে তালাক সমাজে বাড়ছে কলহ-বিবাদ, শিথিল হয়ে পড়ছে পারিবারিক বন্ধন দ্বীনী মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বৈরিতাই এর মুখ্য কারণ।
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইহুদী-নাছারাদের ষড়যন্ত্রে পড়েই দুনিয়াদার মালানারা বেহেশত-দোযখের ওয়াজ বাদ দিয়েছে। পর্নোগ্রাফি, মাদক থেকে যুব সমাজকে বাঁচাতে চাইলে বেহেশত-দোযখের ওয়াজও বেশি বেশি করতে হবে।
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পেয়াজ, সরিষা, ধান এমনকি ভরা মৌসুমে আলুর নিম্নমানের বীজে মহা ক্ষতির মুুখে চাষিরা। বহুদিন ধরে বিভিন্ন কোম্পানীর বীজে প্রবঞ্চিত হবার পর এখন খোদ সরকারের প্রণোদনার বীজেও প্রতারিত কৃষক। কৃষিপ্রধান দেশে কৃষক ও কৃষিপণ্য নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেলা আর কতদিন চলবে?
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৯৮ ভাগ মুসলমানের দেশে মুসলমানের সংজ্ঞা কতজন মুসলমান জানে? প্রকৃত মুসলমান না হয়ে শুধু বাহ্যিক মুসলমান দাবি কী অন্যায় নয়? মুসলমান মাত্রই পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করতে হবে।
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ডিজিটালাইজেশনের নামে শিশু-কিশোরদের ইন্টারনেট ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। দেশের ইন্টারনেট জগতে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় শিশু-কিশোররা আক্রান্ত হচ্ছে অশ্লীলতায়। শিখছে অনৈতিকতা, বেহায়াপনা, হিংস্রতা। সরকারের উচিত- দ্রুত দেশের ইন্টারনেট জগতে কন্টেন্ট ফিল্টারিংয়ের ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে শিশু কিশোরদের ইন্টারনেট আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অনুশাসন প্রচার প্রসার করা।
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)