ইলমুত তাযকিয়্যাহ
অতিরিক্ত ও অনর্থক কথা বলা হতে বেঁচে থাকা কর্তব্য
, ০৯ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ৩০ ছানী ‘আশার, ১৩৯০ শামসী সন , ৩০ মে, ২০২৩ খ্রি:, ১৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ اِلَّا لَدَيْهِ رَقِيْبٌ عَتِيْدٌ
অর্থ : “মানুষ যবান দ্বারা যা কিছুই বলে তা লিপিবদ্ধ রাখার জন্য তার কাছে প্রহরী নিযুক্ত রয়েছে।” (পবিত্র সূরা ক্বাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮)
অর্থাৎ যবান দ্বারা ভাল-মন্দ যা কিছুই বলা হোক অবশ্যই তার হিসাব নিকাশ হবে এবং তার সাথে ক্ষতি ও উপকারের বিষয়টিও জড়িত রয়েছে। দুনিয়া ও আখিরাতে তার পুরষ্কার ও শাস্তি ভোগ করা অনিবার্য। কাজেই খুব চিন্তা ভাবনা করে প্রয়োজন অনুযায়ী কথা বলতে হবে। যে কথাই বলা হোক তা যেনো সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে বৈধ হয়।
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্র্ণিত রয়েছে- তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন তোমরা কোন বান্দাকে দেখবে যে, দুনিয়ার প্রতি তার কোন আসক্তি না থাকার এবং কম কথা বলার নিয়ামত দান করা হয়েছে তখন উনার নিকটবর্তী হও অর্থাৎ সাহচর্য গ্রহণ করো। কেননা উনার প্রতি হিকমত নাযিল করা হয় অর্থাৎ উনার অন্তকরণে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে ইল্ম ও হিকমতের বিষয় ঢেলে দেয়া হয়। (মিশকাত শরীফ)
অপর এক হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্র্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি নিজের যবানকে হিফাযত করে মহান আল্লাহ পাক তিনি তার ওইসব বিষয়কে গোপন রাখবেন যা প্রকাশ হওয়া তার নিকট খুবই অপছন্দনীয়।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্র্ণিত- তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির ব্যতীত তোমরা বেশি কথা বলবেনা। কেননা মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির ব্যতীত বেশি কথা বললে ক্বলব (অন্তর) কঠিন হয়। আর মহান আল্লাহ পাক উনার থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী সেই ব্যক্তিই হয়, যার ক্বলব কঠিন হয়।” (তিরমিযী শরীফ)
প্রতীয়মান হলো, মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির যতই করা হোক উহা উত্তম ও কল্যাণময়। এর ফলে দুনিয়াতে শান্তি লাভ হয় আর আখিরাতে মহাপ্রতিদান লাভ হয়। মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরের মধ্যে সেইসব বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যা দ্বীনী প্রয়োজনে করা হয়। এছাড়া মানুষকে পার্থিব প্রয়োজন পুরণের জন্যও মুখে কথা বলতে হয় সেক্ষেত্রে প্রয়োজন মাফিক খুব অল্প কথা বলে কাজ করা উচিত। কেননা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন যে, মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির ব্যতীত অধিক কথা বলোনা। কারণ অধিক কথা বলার কারণে অন্তর কঠিন হয় আর অন্তরের কাঠিন্যতাই মানুষকে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির হতে এবং অন্যান্য দ্বীনী কাজ হতে ফিরিয়ে রাখে। যার কারণে মানুষ মহান আল্লাহ পাক উনার থেকে অনেক দূরে সরে পড়ে।
বর্র্ণিত রয়েছে, অন্তরের কাঠিন্যতা দুটি পন্থায় প্রকাশ পায়। একটি হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হক্ব আদায় হয় না। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, মাখলূক্বাতের সাথে সৎ ব্যবহার করা হয়না। অর্থাৎ যারা অধিক ও অনর্থক কথা বলে থাকে তাদের দ্বারা বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ উভয় দিক থেকে শরীয়ত বিরোধী আচরণ প্রকাশ পেয়ে থাকে।
উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরা সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু হাবীবা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্র্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আদম সন্তানের যবান থেকে বের হওয়া প্রত্যেকটি কথাই এর জন্য খারাপ পরিণতি ডেকে আনবে। কিন্তু ন্যায়ের আদেশ এবং অন্যায় ও খারাপ কাজ হতে বিরত রাখা এবং মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরের উদ্দেশ্যে কোন কথা বলা, এসবের হুকুম আলাদা।
অর্থাৎ মানুষের যবান হতে যে কথাই বলা হয় উহাই তাদের জন্য অশুভ পরিণতি সৃষ্টি করে। তা তাদের জন্য কোনই উপকার করতে পারে না। তবে ন্যায় ও সৎকর্মের জন্য কথা বললে অথবা অন্যায় ও অসৎ কাজ হতে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে কথা বললে কিংবা মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরে মশগুল থাকার ব্যাপারে তাদের যবান থেকে যাই বের হোক না কেন, তা উপকারী। পাপের কথা যবান হতে প্রকাশ পেলে তা অপরাধজনক হওয়া সুস্পষ্ট কথা। আর যে কথায় পাপও নেই, পূণ্যও নেই তাতে মশগুল থাকাটাও ক্ষতিকর।
তাবিয়ী হযরত হাসান বছরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নিজের দ্বীনের ব্যাপারে বুদ্ধিমান নয় সে ব্যক্তি যবানকে হিফাযত করেনা বা নিয়ন্ত্রণে রাখেনা। অপর এক বুযুর্গ বলেছেন, তোমার কথা লেখার জন্য যদি কাগজ ক্রয় করতে হতো, তবে এর মূল্যের বোঝাটির কারণে অধিক কথা বলা হতে ফিরে থাকতে।
হযরত রবী’ ইবনে খাশাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বিশ বছর পর্যন্ত দুনিয়াবী কোন কথা বলেননি। কোন কথা বলতে হলে তিনি কলম ও কাগজ কাছে রাখতেন। যা বলতেন তাই তিনি লিখে রাখতেন। অতঃপর সন্ধ্যবেলা নিজের নফসের নিকট হিসাব নিতেন যে, অমুক অমুক কথাটি কি প্রয়োজনে বলা হয়েছে? প্রয়োজনে বলেছে কিনা অথবা অধিক বলেছে কিনা?
-আহমদ নুছাইর
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১)
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র মসজিদ নির্মাণের ফাযায়িল-ফযীলত
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সমস্ত প্রকার অশ্লীলতাই হারাম
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১)
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)