حكايات الابرار হিকায়াতুল আবরার বা নছীহতমূলক ঘটনাসমূহ (১২)
, ২০শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৪ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ২৯শে মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
দুষ্ট দুরাচারের বিচারের প্রয়োজন হয় না
বরং তার আমলের দ্বারাই তার বিচার হয়
এক লোক ছিল। এক বাদশাহর দরবারে সে যাওয়া আসা করতো। বাদশাহর দরবারে যেয়ে সে প্রত্যেকদিন একটা ঘোষণা দিত। বাদশাহর সামনেই দূরে থেকে সে বলত- দেখ, ‘নেক লোকদের সাথে তোমরা সদ্ব্যবহার কর আর যারা দুষ্ট, দুরাচার, ফাসিক-ফুজ্জার তাদেরকে তাদের আমলের উপর ছেড়ে দাও। তাদেরকে বিচার করার কোশেশ করনা। তাদের আমলই তাদের বিচার করবে।’ সে বাদশার দরবারে গিয়ে প্রত্যেকদিন এ ঘোষণা দিত। এ ঘোষণা দেয়ার কারণে বাদশাহ লোকটাকে খুব পছন্দ করতো এবং পুরস্কার দিত। বাদশাহর সভাসদের কিছু লোকের মধ্যে হিংসা হলো। এ লোকটাকে বাদশাহ এত এনাম দেয়, পুরস্কার দেয় অথচ সে কিছুই করেনা। সে শুধু এ কথাটা বলে। তাকে এখান থেকে সরিয়ে দিতে হবে। বাদশাহর সভাসদদের মধ্যে এক লোক ওই লোকটা চলে যাওয়ার পরে বাদশাহর কানে কানে যেয়ে বলল, হে বাদশাহ! এই যে লোকটা আপনার এখানে আসে, এখান থেকে সে বের হয়ে আপনার দুর্র্নাম করে। আপনার দুর্নাম করে সে বলে, বাদশাহর মুখে দুর্গন্ধ। বাদশাহ বললেন, এর প্রমাণ কি? প্রমাণ যদি আপনি চান, তাহলে কালকে আপনি তাকে ডাকান। দেখবেন কালকেই সে মুখে রুমাল দিয়ে আসবে। বাদশাহ পরের দিন তাকে সংবাদ দিল। সত্যই দেখা গেল লোকটা তার মুখ রুমাল দিয়ে ঢেকে বাদশাহর কাছে আসল। বাদশাহ তার ক্রোধকে, গোস্বাকে হজম করে কিছুই বললেন না। একটা চিঠি লিখে দিলেন। চিঠি লিখে দিয়ে ওই লোকটাকে বললেন, তুমি এ চিঠিটা অমুক লোকের কাছে পৌঁছিয়ে দিও। লোকটা চিঠি নিয়ে বের হয়ে গেল। সাধারণত বাদশাহ কাউকে চিঠি লিখেন না, বাদশাহ যদি কাউকে চিঠি লিখেনই তাহলে তাকে পুরস্কার দিয়ে থাকেন। ওই সভাসদ (যে হিংসা করত) দূর থেকে দেখল বাদশাহ তাকে একটা চিঠি লিখে দিয়েছেন। ওই সভাসদ তাড়াতাড়ি বের হয়ে যেয়ে তাকে জিজ্ঞেস করল, ভাই তোমাকে যে চিঠিটা বাদশাহ দিয়েছেন, সে চিঠি তুমি কোথায় নিয়ে যাবে? লোকটা বলল, এ চিঠি আমাকে অমুক লোকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। সেই হিংসুক ব্যক্তিটি বলল- ঠিক আছে, তোমার পৌঁছানোর দরকার নেই। আমার কাছে দিয়ে দাও, আমি এটা নিয়ে পৌঁছিয়ে দিব। সে চিঠিটা নিয়ে গেল। পরের দিন সকালে আবার সেই লোকটা আসল বাদশাহর দরবারে। বাদশাহ তাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। কি ব্যাপার! তুমি আসলে কি করে? সে বলল- হুযূর! আমি প্রত্যেকদিন যেভাবে আসি আজকেও সেভাবে এসেছি। বাদশাহ জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে আমি যে চিঠিটা দিয়েছিলাম সে চিঠিটা কোথায়? সে বলল- হুযূর! আপনার সভাসদ অমুক ব্যক্তি চিঠিটা নিয়ে গেছে এবং সে চিঠিটা সঠিক জায়গায় পৌঁছিয়ে দিবে। বাদশাহ বললেন- হ্যাঁ, সে তার সঠিক জায়গায় পৌঁছিয়ে দিবে সত্যিই তবে জিনিসটা অন্যরকম হয়ে গেল। লোকটি বলল, কেমন? বাদশাহ বললেন, চিঠিটা লিখেছিলাম তোমার সম্পর্কে। আচ্ছা তুমি একটা কথা বল দেখি, তুমি কি বাইরে একথা বলে থাক, বাদশাহর মুখে দুর্গন্ধ? সে বলল- না, আমি তো কখনও একথা বলিনি। বাদশাহ জিজ্ঞেস করলেন, তুমি যদি একথা নাই বলে থাক তাহলে গতকাল তুমি যখন আমার কাছে আসলে, তখন তোমার মুখ রুমাল দিয়ে ঢাকা ছিল কেন? সে বলল- হুযূর! মূলত কথাটা এরকম নয়। এ লোকটা (আপনার সভাসদ) আপনার এখানে আসার পূর্বে তার বাড়িতে আমাকে দাওয়াত করেছিল। কিছু রসুন মিশ্রিত তরকারি আমাকে খেতে দেয়, যার কারণে আমার মুখে দুর্গন্ধ হয়। আমার মুখের দুর্গন্ধটা যেন আপনার নাকে না যায়, সেজন্য আমি রুমাল দিয়ে আমার মুখ ঢেকেছিলাম। বাদশাহ বললেন, তাহলে তো তোমার কথা সত্যে পরিণত হয়েছে। কি কথা হুযূর? বাদশাহ বললেন, তোমার প্রতি গোস্বা হয়ে চিঠিতে লিখেছিলাম, জল্লাদ! এ ব্যক্তি ঢোকা মাত্রই তাকে হত্যা করবে এবং তার চামড়ার মধ্যে ভূষি পরিপূর্ণ করে আমার কাছে পৌঁছিয়ে দেবে। কিন্তু সে ঠিকই পৌঁছিয়ে দিয়েছে তবে তোমার লাশ নয়, সেই সভাসদের লাশ। তুমি যে বলতে প্রত্যেকদিন, নেককারদের সাথে সদ্ব্যবহার কর আর যে দুষ্ট দুরাচার তাকে ছেড়ে দাও তার আমলের প্রতি। তার বিচারের জরুরত নেই, তার আমলের দ্বারাই তার বিচার হবে। সত্যিই তার আমলের দ্বারাই তার বিচার হয়েছে। সে যে তোমার দুর্নাম করেছিল; তোমায় দোষারোপ করেছিল; তোমাকে হিংসা করেছিল; তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেছিল; এই বিদ্বেষের কারণে তার মৃত্যুদ- হয়ে গেছে। সে যখন চিঠিটা নিয়ে পৌঁছাল সেই জল্লাদের কাছে, তখন জল্লাদ খুলে দেখল তার মৃত্যুদ-। জল্লাদ বলল, হে ব্যক্তি! তোমার তো মৃত্যুদ-। সে বলল, এ চিঠি তো আমাকে নয় অমুক ব্যক্তিকে দেয়া হয়েছিল, তুমি বাদশাহকে জিজ্ঞেস করে দেখ। জল্লাদ বলল, না বাদশাহকে আর জিজ্ঞেস করতে হবে না, বাদশাহর স্বাক্ষর এখানে রয়ে গেছে। কাজেই তোমার মৃত্যুদ- হবে। তার মৃত্যুদ- দেয়া হল, তার গর্দান ফেলে দেয়া হল। তাকে কেটে চামড়াটা ছিলে তার মধ্যে ভূষি ভরে বাদশাহর কাছে প্রেরণ করা হলো।
এখন চিন্তা করুন, যারা হিংসুক তাদের সাজা, বদলা সে নিজেই পায়।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১)
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৫)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুহব্বত ঈমান, আর উনাদের সমালোচনা করা লা’নতগ্রস্ত হওয়ার কারণ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)