নছীহতে কায়িম মাকামে উম্মাহাতুল মু’মীনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ করা ফরয
, ০৪ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৯ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০২ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মহিলাদের পাতা
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
لَــقَـدْ كَانَ لَكُـمْ فِـيْ رَسُـوْلِ اللّٰـهِ أُسْوَةٌ حَسَـنَـةٌ ﴿২১﴾ سورة الاحزاب
অবশ্যই তোমাদের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ মুবারক। [সূরা আহযাব শরীফ: ২১]
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতের জন্য কী আদর্শ মুবারক নিয়ে এসেছেন বা তিনি উম্মতকে কি আদর্শ মুবারক শিক্ষা দিয়েছেন এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
لَـقَدْ مَنَّ اللّٰهُ عَلَى الْمُـؤْمِـنِـيـْنَ إِذْ بَـعَثَ فِـيْـهِـمْ رَسُوْلًا مِّنْ أَنْـفُـسِـهِـمْ يَــتْـلُـوْ عَلَـيْـهِـمْ آيَاتِـهٖ وَيُزَكِّـيْـهِـمْ وَيُـعَـلِّـمُـهُمُ الْكِـتَابَ وَالْـحِكْـمَةَ وَإِنْ كَانُـوْا مِنْ قَـبْـلُ لَفِيْ ضَلَالٍ مُّـبِـيـْنٍ ﴿১৬৪﴾ سورة آل عمران
নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক মু’মিনদের প্রতি ইহসান করেছেন যে, তিনি তাদের মাঝে একজন রসূল পাঠিয়েছেন, যিনি তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার আয়াত শরীফ সমূহ তিলাওয়াত করে শুনান এবং তাদের অন্তর সমূহকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। যদিও ইতিপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীর মধ্যে ছিল অর্থাৎ হিদায়েতের উপর ছিল না। [সূরা আলে ইমরান শরীফ: ১৬৪]
অর্থাৎ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বান্দা-বান্দী উম্মতগণকে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কালাম শরীফ তিলাওয়াত করে শুনিয়েছেন, তাদের অন্তর ইছলাহ বা পরিশুদ্ধ করেছেন এবং তাদেরকে কিতাব এবং হিকমত মুবারক শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি এই আদর্শ মুবারক নিয়েই মহান আল্লাহ পাক উনার ইহসান স্বরূপ মু’মিনদের মাঝে প্রেরিত হয়েছেন। তিনি যা কিছু জানিয়েছেন, শিক্ষা দান করেছেন সে সমস্ত বিষয়ই হচ্ছে উনার আদর্শ মুবারক। উনার সমস্ত আদর্শ মুবারকের সম্মিলিত রূপই হচ্ছে পবিত্র দ্বীন ইসলাম।
আর সামগ্রিকভাবে এই আদর্শ মুবারক গ্রহণ করার জন্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন,
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَـهَاكُمْ عَنْهُ فَانْــتَـهُوْا ۚ وَاتَّــقُوا اللّٰـهَ ۖ إِنَّ اللّٰـهَ شَدِيْـدُ الْعِـقَابِ ﴿৭﴾ سورة الـحشر
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে আদর্শ মুবারক নিয়ে এসেছেন অর্থাৎ যে শরীয়ত বা বিধান নিয়ে এসেছেন তা আঁকড়িয়ে ধরো এবং যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকো। তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা। [সূরা হাশর শরীফ: ৭]
এই আয়াত শরীফে বলা হয়েছে উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ করার জন্য।
উম্মতের জন্য যে বিষয়গুলো ফরয, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, সুন্নতে যায়িদাহ, মুস্তাহাব প্রত্যেকটি বিষয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক বা সুন্নাহ শরীফ। তিনি যে বিষয়কে যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন, সেভাবে গ্রহণ করা বা পালন করাই উম্মতের জন্য ফরয এবং সেভাবে পালন করলেই হাক্বীক্বীভাবে উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ করা হবে।
তাই এই আয়াত শরীফ-এর উপর ভিত্তি করে ইমাম-মুজতাহিদগণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারকের মধ্য থেকে আমলের গুরুত্ব বুঝে কোনোটাকে ফরয, কোনোটাকে ওয়াজিব, কোনোটাকে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, কোনোটাকে সুন্নতে যায়িদাহ, কোনোটাকে মুস্তাহাব সাব্যস্ত করেছেন। এই আয়াত শরীফ-এর উপর যা আমল করা ফরয ছিল তা আমল করা হয়ে গেছে। নতুন করে সুন্নতকে ফরয সাব্যস্ত করার কোনো প্রয়োজন নেই। মানুষ সাধারণভাবে সুন্নত বলতে বুঝে থাকে সুন্নতে যায়িদাহ, মুস্তাহাব ও নফল। এই আয়াত শরীফ দ্বারা এইসব আমলকে ফরয সাব্যস্ত করা ইজমার পরিপন্থি অর্থাৎ ইমাম-মুজতাহিদগণ উনাদের ইজমার বিরোধিতা করার নামান্তর।
এ বিষয়ে আল বাইয়্যিনাত শরীফের ৩য় সংখ্যা ৪৪ পৃষ্ঠায় ফতওয়া বিভাগে এসেছে, “প্রকৃত জ্ঞানী তো তারাই, যারা ফরযকে ফরয, ওয়াজিবকে ওয়াজিব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদাকে মুয়াক্কাদা, যায়িদাকে যায়িদা এবং মুস্তাহাবকে মুস্তাহাব হিসেবে মেনে নিবে। জানা আবশ্যক যে, মুস্তাহাবকে যদি আমলের জন্য তাকিদ দেয়া হয়, তা কখনোই ওয়াজিব হবে না। ইহার বাহিরে যারা মত পোষণ করবে তারা সীমা লঙ্ঘনকারী হিসেবে চিহ্নিত হবে। ”
এছাড়া মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
وَمَا جَعَلَ عَلَـيْكُمْ فِـي الدِّيـنِ مِنْ حَرَجٍ ﴿৭৮﴾ سورة الـحج
তিনি তোমাদের দ্বীনের মধ্যে কোনো কিছু কঠিন করেননি। [সূরা হজ্জ শরীফ: ৭৮]
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে এসেছে,
عَنْ أَبِـي هُرَيـْــرَةَ رَضِىَ اللّٰهُ تَــعَالـٰى عَـنْـهُ عَنِ النَّبِـيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ الدِّيـنَ يُسْـرٌ وَلَنْ يُّـشَادَّ الدِّيْـنَ اَحَدٌ اِلَّا غَلَـبَـهٗ. (رواه البخاري)
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই দ্বীন হচ্ছে সহজ। কেউ যেন দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে, তাহলে তার জন্য কঠিন হয়ে যাবে।
[বুখারী শরীফ]
সুতরাং সুন্নতকে ফরয সাব্যস্ত করলে দ্বীনকে কঠিন করে ফেলা হবে বা দ্বীনের মধ্যে কাঠিন্যতা আরোপ করা হবে এবং অনেক সমস্যার সৃষ্টি হবে। যেমন, কারো যদি যে কোনো কারণ বশত কোনো সুন্নত তরক হয়ে যায় তাতে কোনো গুনাহ হবে না কিন্তু সুন্নত ফরয সাব্যস্ত হলে তখন তা তরক করলে কবীরা গুনাহ হবে। এজন্য ইমাম-মুজতাহিদগণ আমলের প্রতি গুরুত্বারোপ করে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, সুন্নতে যায়িদাহ, মুস্তাহাব ইত্যাদি বিভিন্ন ভাগে আমলকে বিভক্ত করেছেন। তাই উনাদের ইজমা মেনে নেয়া আবশ্যক।
এছাড়া মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
لَا تَـغْـلُـوْا فِـيْ دِيْـنِـكُمْ ﴿৭৭﴾ سورة الـمائدة
তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না। [সূরা মায়িদা শরীফ: ৭৭]
মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যেখানে দ্বীন বা শরীয়ত কঠিন করেননি সেখানে আমরা কিভাবে সহজটাকে কঠিন করতে পারি? এটা দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হবে, যা উচিত নয়।
মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদের সবাইকে দ্বীনের সহীহ-সমঝ দান করেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নত মুবারক যথাসাধ্য অনুসরণ করে মহান আল্লাহ পাক উনার মুহাব্বত মুবারক অর্জন করার ও হক্বের উপর ইস্তেক্বামত থাকার তাওফীক্ব দান করেন। (আমীন)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নিকাহ বা বিবাহের ফযীলত (১৯)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইলিম চর্চায় কতবেশি মনোযোগ!
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
শিশু সন্তান জন্ম গ্রহণের ৭ম দিনে সুন্দর অর্থবোধক নাম রাখা
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দেনমোহর নিয়ে কিছু কথা.... (১)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (১)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইতিহাস কথা বলে: নারী নির্যাতনের সাথে বিধর্মীদের সম্পৃক্ততার অনুসন্ধানে
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হাত-পা, চেহারা খোলার মাধ্যমে অবশ্যই সৌন্দর্য প্রকাশ পায়
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইতিহাস কথা বলে- ‘বোরকা’ বাঙালি মুসলমানদের আদি সংস্কৃতি
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আপনি চান, আপনার সন্তান সুশ্রী এবং সুন্দর হয়ে জন্মগ্রহণ করুক?
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে ব্যক্তিত্ব বা আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
‘শরয়ী পর্দা’ মেয়েদের অন্তরের পবিত্রতার সাথে সাথে বাহ্যিক সৌন্দর্য্য ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখে
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)