ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং ইহুদীদের চারটি প্রশ্ন
, ২২ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১১ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ১০ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ২৬ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) ইতিহাস
তেমনি এক অপকৌশলের অংশ হিসেবে কয়েকজন ইহুদী সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম উনার দরবার শরীফে এলো। তারা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম উনাকে জানালো যে তারা চারটি প্রশ্ন করতে চায়। সবগুলো প্রশ্নের উত্তর সম্মানিত আসমানী কিতাব থেকে দিতে হবে। যদি সঠিক উত্তর পায় তাহলে তারা সবাই দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করবে। না হয় মুসলমানদের পরাজয়ের খবর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিবে। নাউযুবিল্লাহ! সম্মানিত ইসলামী খিলাফত উনার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়াবে। নাউযুবিল্লাহ!
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি ইহুদীদের এই কুটকৌশল ধরতে পারলেন। তিনি রাজী হলেন তাদের এই চারটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য।
প্রথম প্রশ্ন: দুইজন জমজ ভাই। উনারা এক সঙ্গে দুনিয়াতে আগমন করেন এবং একইসাথে বিদায় নেন। কিন্তু উনাদের উভয়ের বয়সের মধ্যে ১০০ বছরের পার্থক্য। উনারা কোন দুই ভাই? উনাদের মাঝে বয়সের এই পার্থক্য কেনো?
দ্বিতীয় প্রশ্ন: পৃথিবীর এমন একটি স্থান যেখানে সূর্যের কিরণ মাত্র একবারই পড়েছিলো। এর আগে কখনো সেখানে সূর্যের আলো পড়েনি, ভবিষ্যতে পড়বেও না। কোন জায়গা এটি?
তৃতীয় প্রশ্ন: একটি কবর, তার ভেতরে একটি মুর্দা। কিন্তু কথা হলো, এই কবরেরও প্রাণ আছে, তার ভেতরকার মুর্দা উনারও প্রাণ আছে। ওই কবরটি মুর্দা উনাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এক সময় মুর্দা ব্যক্তি তিনি কবর থেকে বের হয়ে আসেন। এটি কোন কবর ও কোন মুর্দা?
চতুর্থ প্রশ্ন: একটি কারাগারের ভেতর একজন বন্দী। বন্দীটি সেখানে কোনো প্রকার শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে না পারলেও বেঁচে থাকে। এটি কোন কারাগার? বন্দির পরিচয় কি?
মূলত এ সবগুলো প্রশ্নেরই উত্তর আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার পরিচালনার তরতীব অনুযায়ী ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ডাকলেন এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে বললেন।
প্রশ্নগুলো শুনে ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমীরুল মু’মিনীন! এই প্রশ্নগুলোর উত্তর একেবারেই সোজা।
প্রথম প্রশ্নের উত্তর: এই সম্মানিত দুই ভাই হলেন আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত নবী হযরত উযাইর আলাইহিস সালাম এবং উনার ভাই। উনারা দুইজনই একইসাথে দুনিয়ায় আগমন মুবারক করেন। একদিন হযরত উযাইর আলাইহিস সালাম তিনি এক জনমানবহীন শুষ্ক প্রান্তর দিয়ে গমন করছিলেন এবং বলছিলেন, আয় আল্লাহ পাক! এমন শুল্ক প্রান্তরেও কি আবাদ হওয়া সম্ভব? একথা বলার কিছুক্ষণ পর সেই প্রান্তরে বিশ্রাম নেয়ার জন্য যখন তিনি থামলেন তখন তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন এবং এক ঘুমেই ১০০ বছর কাটিয়ে দিলেন। তারপর যখন ঘুম থেকে উঠলেন তখন তিনি বুঝতে পারলেন ১০০ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে এবং উনার বয়স মুবারকও বৃদ্ধি পায়নি। পরবর্তীতে উনি এবং উনার ভাই একইসাথে পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর: সেই স্থানটি হলো নীলনদের ওপর ভেসে ওঠা রাস্তা। নীলনদ পার হবার সময় যখন হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি পানিতে উনার মহাসম্মানিত লাঠি মুবারক দ্বারা আঘাত করেছিলেন তখন মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারকে পানি সরে গিয়ে রাস্তা তৈরী হয়েছিলো। এই রাস্তাটিতেই মাত্র একবার সূর্যের কিরণ পৌছেছিলো। ওই রাস্তাটি আর কখনো ভাসবেও না, আলোও কখনো পড়বে না। সুবহানাল্লাহ!
তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর: সেই কবর হলো সাইয়্যিদুনা হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনাকে পেটে ধারণ করা মাছটি। আর মাইয়্যিত বলতে হযরত ইউনুছ আলাইহিস সালাম উনাকে বুঝানো হয়েছে। মাছটিও জীবিত ছিলো এবং হযরত ইউনুছ আলাইহিস সালাম তিনিও বহাল তবিয়তেই অবস্থান মুবারক করছিলেন মাছের পেটের ভেতর। সুবহানাল্লাহ!
চতুর্থ প্রশ্নের উত্তর: সেই বন্দীটি হচ্ছে মায়ের গর্ভে থাকা বাচ্চা। মায়ের গর্ভে থাকা শিশুটি কোনো প্রকার শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে না পারলেও আল্লাহ পাক উনার দয়া-ইহসান মুবারকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকে। সুবহানাল্লাহ!
এই মহাসম্মানিত চারটি প্রশ্নের উত্তর অত্যন্ত নিখুতভাবে পেয়ে সেখানে উপস্থিত সকল ইহুদীরা চমকে গেলো। তৎক্ষনাৎ তারা আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম উনার কাছে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করলেন। পাশাপাশি হযরত ফারূকে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনিও ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে শুকরিয়া জানালেন এবং উনার সম্মানিত প্রশংসা মুবারক করলেন। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার সময়কার একটি ঈমানদীপ্ত ঘটনা
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে ভারতীয় লুটেরা সেনাবাহিনীর নজীরবিহীন লুটপাটের ইতিহাস
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে স্বর্ণ পরিশোধন ও রফতানি
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দিল্লির সুলতান হযরত শামসুদ্দীন আলতামাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার গুনাহমুক্ত জীবন
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তাতার বিরোধী যুদ্ধে হযরত আমীর খসরু দেহলভী চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আজকের নগরসভ্যতার জনক মুসলমানগণই
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আফগানিস্তানেও উগ্রতাবাদী ওহাবী-সালাফীদের অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)