বিভাগ: মহিলাদের ইলিম-তালিমের ফাযায়িল-ফযীলত
“তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম যে নিজে পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়” (২)
, ০৫ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৮ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ২৮ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ১৪ চৈত্র, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) মহিলাদের পাতা
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘বলুন! যারা জানেন এবং যারা জানেন না তারা কি সমান? জ্ঞানীরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।’ অর্থাৎ যারা ইলিম মুবারক অর্জন করেছেন মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে তাদের আলাদা মর্যাদা রয়েছে। উনারা পুরুষ হোন বা মহিলা হোন। সেজন্য পুরুষ-মহিলা সবার জন্যই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে ইলিম অর্জন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ ও মহিলার জন্য ইলিম অর্জন করা ফরয।’ শুধু ইলিম অর্জনের তাকীদই দেওয়া হয়নি, ইলিম অর্জনকারীদের মর্যাদার বিষয়টিও পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে একাধিকবার এসেছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে, আর যাদেরকে ইলিম দান করা হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের সুউচ্চ মর্যাদা দান করবেন।’ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ইলিম তলব করার উদ্দেশ্যে কোনো পথ অবলম্বন করেছে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে বেহেশতের পথসমূহের একটি পথে পৌঁছে দেন।’
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।’ এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘তোমরা নিজেরা ইলিম-তালীম গ্রহণ করো এবং পরিবারবর্গকে ইলিম-তালীম দাও সমস্ত কল্যাণময় রীতি-নীতি এবং তাদের আদব শিক্ষা দাও এবং এসব কাজে অভ্যস্ত করে তোলো।’
পবিত্র আয়াত শরীফ অনুযায়ী নিজে ইলিম অর্জন করতে হবে পাশাপাশি আহাল-ইয়াল পরিবারবর্গকেও ইলিম শিখাতে হবে। আর এক্ষেত্রে মহিলাদের গুরুত্ব অনেক বেশী। কারণ একজন মহিলা যখন বিশুদ্ধ ইলিম অর্জন করেন, তখন তার আহাল বা স্বামী, সন্তান পরিবার, প্রতিবেশী মহিলা সবাইকে ইলিম-তালীম দেয়া সহজ হয়ে যায়। পরিবারে সুন্নতী পরিবেশ তৈরী করা ও আহাল বা স্বামী সন্তানদের আল্লাহওয়ালা বানানো সহজ হয়।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘পুরুষ অথবা মহিলার মধ্যে কেউ সৎ কাজ করলে ও মু’মিন হলে তারা জান্নাতে দাখিল হবে এবং তাদের প্রতি অনু পরিমাণও জুলুম করা হবে না।’ সুতরাং ইলমে দ্বীন জানা প্রত্যেক পুরুষ-মহিলার জন্য একান্ত জরুরি। ইলিম চর্চা মুসলিমদের জন্য অবশ্য করণীয় বা ফরয।
ইলিম অর্জন সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার নির্দেশনার পাশাপাশি হাদীছ শরীফেও সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেকে মুয়াল্লিম হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। একইভাবে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারাও মুয়াল্লিমা ছিলেন। সুতরাং পুরুষদের ন্যায় মহিলাদেরও ইলিম-তালীম অর্জন ও প্রদান করা খাছ সুন্নত মুবারক উনার অর্ন্তভুক্ত। ইলিম-তালীমের ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফে অনেক বর্ণনা রয়েছে।
যেমন, সাইয়্যিদুনা হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, ‘ইলিম অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয বা অপরিহার্য।’
সাইয়্যিদুনা হযরত মুয়াবিআ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, ‘মহান আল্লাহ পাক তিনি যার ভালাই চান, তিনি তাকে দ্বীনি গভীর ‘ইলিম দ্বীনি সমঝ দান করেন।’
সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইলিম অন্বেষণের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তা দ্বারা তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।’
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি যে, মহান আল্লাহ পাক ওহী মুবারক যোগে আমাকে জানিয়েছেন, ‘যে ব্যক্তি দ্বীন শিক্ষার জন্য কোনো পথ ধরে, আমি তার জন্য বেহেশতের পথ সুগম করে দেই।’
সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি ইলিম অর্জনের জন্য কোনো পথ গ্রহণ করে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে জান্নাতের একটি পথে পরিচালিত করেন।’
মূলতঃ ইলিম অর্জনের উদ্দেশ্য হলো মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি রেজামন্দি হাছিল করা। উনার আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী পরিচালিত হওয়া, পরিবার-পরিজনকে সেই অনুযায়ী পরিচালিত করা। গাইরুল্লাহ’র উদ্দেশ্যে ইলিম অর্জন করা জায়িয নয়। ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ উদ্ধার করা, নিজ বাহাদুরী প্রকাশ করা এবং অপরকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ইলিম শিক্ষা করা বৈধ নয়।
এ প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুনা হযরত কা’ব ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এ উদ্দেশ্যে ইলিম অন্বেষণ করে যে, আলিমদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, অথবা বোকা ও মূর্খ লোকদের সঙ্গে বিতর্ক করবে এবং লোকদের দৃষ্টি তার দিকে আকৃষ্ট করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।’
সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, ‘কিয়ামতের দিন মর্যাদার দিক দিয়ে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি বলে সাব্যস্ত হবে সেই আলিম, যার ইলিমের দ্বারা কোনো কল্যাণ সাধিত হয় না।’
এছাড়া ইলিম-তালীমদাতাদের সুউচ্চ মর্যাদা বর্ণনায়, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, ‘আলিম উনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে আকাশ ও পৃথিবীর অধিবাসীরা, জোৎ¯œার পানির নিচের মাছ। মুর্খ ইবাদতকারীর তুলনায় আলিমের ঠিক সেরকম মর্যাদা, যেমন পূর্ণিমার রাতের চাঁদ তারকারাজির উপর দীপ্তিমান। আর আলিমগণ হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের ওয়ারিছ।’
এখানে আলিম বলতে পুরুষ ও মহিলা উভয়কে বুঝানো হয়েছে। অতএব, মহিলাদের ইলিম অর্জন করা এবং তা’লীম দেওয়া অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ কাজ। উনাদের জন্য আসমান, জমিনের সমস্ত সৃষ্টি এমনকি পানির নীচের মাছও মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে দোয়া করে। (চলবে)
-উম্মু মুদ্দাস্সির।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বচক্ষে দেখা কিছু কথা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারিবারিক তা’লীমের গুরুত্ব ও তারতীব
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সুন্নতী খাবার সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ : মেথি
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাবার বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
জন্মের প্রথম মাস
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে মু’মীনদের জীবন গড়ে তোলা দায়িত্ব-কর্তব্য
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৩)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নারীবাদী বলে কথা........
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)