‘দেনমোহর’ নিয়ে কথিত নারীবাদীদের ভন্ডামি কেন?
, ১৫ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৩ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ২১ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ০৬ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মহিলাদের পাতা
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার জরুরী বিষয়গুলি অবমাননা করতে করতে তথাকথিত নারীবাদীরা ইচ্ছামত তাদের প্রলাপ বলেই যাচ্ছে যা প্রত্যেক মুসলমানদের অন্তরে আঘাত লাগে।
নারীবাদীরা শরীয়তের বিধান ‘দেনমোহর’ এর বিপক্ষেও উঠে পড়ে লেগেছে। বুঝলাম না, তাদের সমস্যাটা কোথায় হচ্ছে? তারা তো আর ধর্ম-কর্ম মানছে না, তাই না?
সমাজের একটা, দুইটা মানুষ দেনমোহর নিয়ে ছিনিমিনি খেলে, ছলচাতুরি করে এটা আমরা সবাই জানি এবং এটা অন্যায়। তাই বলে মহান আল্লাহ পাক উনার এত সুন্দর বিধানকে তো নারীবাদীরা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে পারে না।
নারীবাদীদের যদি সমাজ না থাকে তাহলে কোন সমাজের কথা তারা বলে?
কোন সমাজ তারা পাল্টাতে চায়?
স্বপ্নের রাজ্যে বসে বসে সমাজ পাল্টানোর কথা বললেই কি সমাজ পাল্টে যাবে?
না, তা কখনই নয়। নিজেকে দ্বীনি আদলে পরিবর্তন না করলে শুধু মুখের কথায় চিড়া ভিজবে না।
নারীবাদীদের সম্বোধন করে বলতে চাই, আমরা কুসংস্কারে বিশ্বাসী নই। দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শে আমাদের পথ চলা। সুবহানাল্লাহ! দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে গোঁড়ামি বলে কিছু নেই।
‘দেনমোহর’ নিয়ে কিছু কথা বলার প্রয়োজন।
প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ও নারী আবদ্ধ হয় বিবাহবন্ধনে এবং তৈরি হয় সুখময় সংসার, তারপর সন্তান-সন্ততি। এভাবেই চলেছে দুনিয়া। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবসময় নিয়ামত উনার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নির্দশন এই যে, তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের আহলিয়াদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক মহব্বত এবং দয়া সৃষ্টি করে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নির্দশনাবলী রয়েছে। ” (সূরা রূম : আয়াত শরীফ ২১)
এ বৈবাহিক সম্পর্কের সূচনায় মহান আল্লাহ পাক নারীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে নারীর জন্য মোহরানা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যা আদায় করা পুরুষের জন্য আবশ্যক। ইসলামি পরিভাষায়, দেনমোহর বা মোহরানা একান্তই কনের অধিকার ও প্রাপ্য, যা আদায় করা বরের জন্য ফরয। প্রতিটি বিবাহিত পুরুষের উপর অবশ্যই আদায়যোগ্য আমল। হোক তা নগদ কিংবা বাকি। আজ কিংবা কাল।
‘দেনমোহর’ মূলত একটি সম্মানী যা আহাল বা স্বামী তার স্ত্রীকে দিয়ে থাকে। সুবহানাল্লাহ! এটা নারীর মূল্য নয় যে, তা পরিশোধ করার পর মনে করতে হবে, এ নারী এখন আহালের বা স্বামীর কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। নাউযুবিল্লাহ!
আবার তেমনিভাবে তা শুধু কথার কথাও নয়, যে শুধু মুখে মুখে নির্ধারণ করা হলো কিন্তু জীবনভর তা দেওয়ার কোনো তাগিদ থাকলো না। বরং আহলিয়া বা স্ত্রীকে নিজের ঘরে আনার সময় উপহার হিসেবে তাকে এ মোহর দিতে হবে এবং সম্মান জানিয়ে তাকে নিজের ঘরে তুলতে হবে। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বেশ কয়েক জায়গায় স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। পবিত্র সূরা নিসা শরীফ উনার ৪ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا
অর্থ: আর তোমরা নারীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও স্বেচ্ছায়। তবে তারা যদি তা থেকে কোনো অংশ মাফ করে দেয়, তখন তা তোমরা ভোগ করতে পার।
মহান আল্লাহ পাক তিনি একই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন সূরা মুমতাহিনার ১০ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে এবং আরও কয়েক জায়গায়। বারবার তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছন, নারীর অধিকার ও সম্মান যেন আদায় করা হয়। বিয়ের সঙ্গে সঙ্গে মোহর আদায় করা উচিত। তবে কারণবশতঃ তখন অপারগ হলে কবে আদায় করবে- তা নির্ধারণ করতে হবে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যুগ এবং ছাহাবীগণ উনাদের সময়েও কেউ নারীর মোহরানা বাকি রেখে বিয়ে করতেন না। সুবহানাল্লাহ!
আবারো বলছি, এ মোহর মূলত একটি সম্মানী, যা আহাল (স্বামী) কর্তৃক আহলিয়াকে (স্ত্রীকে) দেয়া হয়। এর উদ্দেশ্য কেবল আহলিয়ার প্রতি সম্মান প্রদর্শন। এটি আহলিয়ার মূল্য নয় যে, এর কারণে আহলিয়া আহালের হাতে বিক্রি হয়ে যাবে। তার বাঁদী-দাসীতে পরিণত হবে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এমন ধারণা পোষণের মোটেও সুযোগ নেই।
এদিকে শরীয়তের দাবি হলো, মোহরের পরিমাণ এত অল্পও নির্ধারণ না করা যে, তাতে সম্মানের বিষয়টি একেবারেই প্রকাশ পাবে না। তেমনি এত অধিক পরিমাণও নির্ধারণ না করা যে, আহাল তা আদায়ের সামর্থ্য রাখে না। ফলে মোহর আদায় না করেই সে ইন্তেকাল করে কিংবা পরিশেষে আহলিয়ার নিকট মাফ চেয়ে নিতে বাধ্য হয় ।
শরীয়ত মোহরের সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করেননি। তবে আহাল যে পরিমাণ নির্ধারণ করে আদায় করতে সমর্থ হন, এ ব্যাপারে শরীয়তে কোনো বাধা নেই। তবে এ ক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে, 'মোহরে আহলে বাইত শরীফ' নির্ধারণ করা। এতে সুন্নত মুবারকের আমল করা হয় এবং নাযাতের কারণও হয় । সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং, যুক্তি বা তর্ক-বিতর্ক দিয়ে দ্বীন ইসলাম মানা যাবে না। বিনা চু-চেরায় মহান আল্লাহ পাক উনার আহকামকে বিশ্বাস করতে হবে, সাথে সাথে মানতে হবে। এরই নাম ঈমান।
এখন যে ঈমানদার হবে সে নারীবাদীত্বের এই কুফরিমূলক কথাবার্তা থেকে সরে আসবে। আর যে ফিরবে না বা তওবা করবে না, তার কথাতো ভিন্ন। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি চান যেন বান্দারা ফিরে আসে। তিনি আশা দিয়েছেন বারবার। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَّا يَوَدُّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَلَا الْمُشْرِكِينَ أَن يُنَزَّلَ عَلَيْكُم مِّنْ خَيْرٍ مِّن رَّبِّكُمْ ۗ وَاللهُ يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ
অর্থ: আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা কাফির তারা এবং মুশরিকরা চায় না, তোমাদের উপর তোমাদের রব উনার পক্ষ থেকে খাইর-বরকত নাযিল হোক। মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে ইচ্ছা উনাকে রহমতে খাছ দান করেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি মহান অনুগ্রহশীল। (সূরা বাক্বারা শরীফ: আয়াত শরীফ-১০৫)
মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে হিদায়েত দান করুন। আমীন।
-আহমদ আযীমা ফারহা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বচক্ষে দেখা কিছু কথা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারিবারিক তা’লীমের গুরুত্ব ও তারতীব
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সুন্নতী খাবার সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ : মেথি
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাবার বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
জন্মের প্রথম মাস
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে মু’মীনদের জীবন গড়ে তোলা দায়িত্ব-কর্তব্য
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৩)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নারীবাদী বলে কথা........
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)