হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (পর্ব-৪১)
, ১০ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ৩০ ছানী, ১৩৯১ শামসী সন , ২৯ জুলাই, ২০২৩ খ্রি:, ১৪ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) মহিলাদের পাতা
পর্দা শব্দটি ফার্সী ভাষার শব্দ, আরবী হচ্ছে হিজাব। আভিধানিক অর্থ হল, আবরণ বা কোন কিছু ঢেকে রাখা। কোন কিছুকে দূষণমুক্ত ও বিপদমুক্ত রাখা। সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায় মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত হুকুম ও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক অনুযায়ী নারী-পুরুষের দেখা শুনা, ওঠা-বসা ও চলাফেরার নামই হল পর্দা। পরপুরুষকে পরনারী থেকে এবং পরনারীকে পরপুরুষ থেকে দূরে সরে থাকার নাম পর্দা। নারী ও পুরুষের ‘সতর’ ঢেকে রাখার নাম পর্দা। গায়রে মাহরাম থেকে নিজেকে হেফাজত করার নাম পর্দা। পোশাক ও আবরণের মাধ্যমে পবিত্র জীবন-যাপনের নামই হল পর্দা। সুতরাং বলা যেতে পারে, নারী-পুরুষের সতীত্ব ও মর্যাদা রক্ষার্থে আবরণ বিশেষ শরঈ আহকাম বা পদ্ধতি অবলম্বন করার নামই হল পর্দা। অর্থাৎ পরপুরুষ থেকে নারীকে নিরাপদ রাখার জন্য নারীর শরীর ঢেকে রাখা ও দৃষ্টির হেফাজত করার নাম পর্দা। এককথায় পর পুরুষকে নারীর সৌন্দর্য না দেখানোর জন্য যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, তাই পর্দা।
এ পর্দাকে এক শ্রেণীর জ্ঞান পাপীরা বন্দিত্ব বা নারীকে চার দেয়ালের ভিতর গৃহবন্দী করে রাখা ইত্যাদি অশালীন শব্দে কটাক্ষ করে। তাদের নিকট পর্দা চরম সমালোচনার বিষয়। তাদের মতে পর্দা প্রাচীনকালের গোঁড়ামী, প্রগতী ও উন্নতির অন্তরায়। বস্তুতঃ তারা যথেচ্ছা অবাধ ব্যভিচার, বিজ্ঞাপনে নারীর দেহ প্রদর্শন, সর্বত্র নারীকে ভোগের সামগ্রী বানিয়ে তাদের দ্বারা ফায়দা লুটতে চায়। নাঊযুবিল্লাহ!
প্রকৃতপক্ষে পর্দা কোন বন্দিত্ব বা অবরোধ নয়। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে পর্দা হচ্ছে- বিশেষ ইবাদত বা আমল, পোশাক ও আবরণের মাধ্যমে বিশুদ্ধ ও পবিত্র জীবন পদ্ধতির নাম। নারী-পুরুষের সতীত্ব ও মর্যাদা রক্ষা করার জন্যই পর্দা। সমাজ থেকে অশ্লীলতা দূর করে মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই পর্দা। নারী-পুরুষের অবৈধ মেলা-মেশা থেকে বিরত রাখার জন্যই পর্দা। যৌতুক ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করার জন্যই পর্দা। নারীকে এসিড নিক্ষেপ হতে নিরাপদ রাখার জন্যই পর্দা। নারী জাতির নিরাপত্তার জন্যই পর্দা। নারী-পুরুষের শান্তিময় জীবন-যাপনের জন্যই পর্দা। এইডস ইত্যাদি থেকে মুক্ত থাকার জন্যই পর্দা। একটা সুন্দর ও সু-শিক্ষিত সুশৃঙ্খল জাতি সমাজ ও বিশ্বকে উপহার দেয়ার জন্যই কিন্তু পর্দা। নারীর মর্যাদা ও সৌন্দর্যকে বাড়ানোর জন্যই পর্দা। নারীকে বখাটেদের উৎপাত ও সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যই পর্দা। নেককার মানুষ তৈরী করার জন্যই পর্দা।
মানুষের শরীরের ত্বক যেভাবে শরীরের ভেতরকার রক্ত গোশত অস্থিমজ্জাকে ঢেকে রেখে সুরক্ষা করে, ভয়ঙ্কর পরিণতি থেকে বাঁচায়, যখন দুর্ঘটনাজনিত কোন কারণে শরীরের কোন স্থান থেকে “ত্বক” নামক আবরনটা ছিন্ন হয়ে যায়, তখন সেখানে পচন ধরে সারা শরীরে পচন ধরার আশঙ্কা থাকে। ঠিক একইভাবে নারীর রূপ-সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বকে আবরণ দিয়ে সকল প্রকার লয় ক্ষয় ও পচন থেকে রক্ষা করে থাকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার এই পর্দার আহকাম। নারী যখন এই আবরণকে ছিন্ন করে তখন তার জীবনে কত রকমের যে পচন ধরে তার প্রমাণ প্রায়ই দৈনিক পত্রিকাগুলোতে দেখতে পাওয়া যায়, আর মানসিকভাবে রক্তাক্ত হতে হয়।
বিষয়টি এভাবেও বলা যায়, মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার্য বস্তু সামগ্রীর মধ্যে যে বস্তুটা যত দামী সেটাকে ততবেশি মানুষের চোখের আড়ালে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এতেই তার গুরুত্ব আরও বহুগুণে বেড়ে যায়। যেমন একশ’ টাকার একটি প্রাকৃতিক ঝর্ণাচিত্র কাঁচ বাঁধাই করে দেয়ালে সাজালেও মূল্যবান কোন দলীল-দস্তাবেজ, সনদ কিংবা দামী কোন অলংকার দেয়ালে তো দূরের কথা মানুষ নাগাল পায় এমন স্থানেও রাখে না। এ কারণে এসব মূল্যবান সম্পদের অবহেলা বা অবমাননা হয় কিংবা সংরক্ষণের নামে ‘বন্দী’ করে রাখা হয় এমন কথা আজও কেউ বলেননি। মূলত পর্দাও একই যুক্তিতে নারীর অসীম সম্মান গুরুত্ব ও মর্যাদাটাই ফুটিয়ে তোলে। এতে তার ব্যক্তিত্বকে অবহেলা কিংবা খাটো করা হয় না। বরং নারীর মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার জন্যই পর্দা।
মোটকথা, নারীর সতীত্ব-সম্মান রক্ষা, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, নারী জাতির পরিপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা, দাম্পত্য জীবনে সুখী ও সমৃদ্ধিশীল হওয়া, অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা রোধ, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা রোধ প্রভৃতির জন্যই পর্দার হুকুম একান্ত প্রয়োজন।
পর্দা সর্ম্পকে প্রচলিত দু’টি মত: (এক) এটা প্রাচীন যুগের কুপ্রথা, নারী বন্দীশালা, অবরোধ, নারী নির্যাতন, তাকে শিক্ষা, চাকরী ও দেশ-বিদেশে ভ্রমণ এবং বিনোদন ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত করা। এটা হল পাশ্চাত্যের ভোগবাদী এবং তাদের প্রাচ্যবাসী এজেন্ট কথিত বুদ্ধিজীবি, নারীবাদী ও এনজিওদের কথা।
(দুই) প্রথমটির সম্পূর্ণ বিপরীত। অর্থাৎ পর্দা নারী নির্যাতন নয়, নারীর জন্য অবরোধ নয়। পর্দা হল নারীর অলংকার ও ইজ্জত আবরুর সংরক্ষণ। নারীর নারীত্ব, মাতৃত্ব, স্বকীয়তা ও সতীত্ব রক্ষার সুব্যবস্থা। অপরদিকে বেপর্দা হল বহু ফিতনা-ফাসাদের মূল। ব্যভিচার, নির্যাতন, হত্যা, অপহরণ, এসিড নিক্ষেপ, যৌতুক, বিবাহ বিচ্ছেদ ইত্যাদির প্রবেশ পথ। বেপর্দার দেশ পাশ্চাত্যই এর জলন্ত প্রমাণ। অপরদিকে যে দেশে পর্দা বেশী, সে দেশে উল্লেখিত অপরাধ নেই অথবা অপেক্ষাকৃত কম।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নছীহত মুবারক:
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (২)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৮)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
“মানুষের পেট কবরের মাটি ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা পূর্ণ হবে না”
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পুরুষদের ন্যায় মহিলাদেরও দ্বীনী তা’লীম গ্রহণ করা ফরযে আইন
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
জন্মের তৃতীয় মাসে যে বিষয়গুলো লক্ষণীয়
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
জমিনে ফিতনা-ফাসাদের বড় একটা কারণ বেপর্দা-বেহায়া নারী
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)