হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (পর্ব-২৩)
, ২৬শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২০ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ০৪ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) মহিলাদের পাতা
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য ঘরে প্রবেশ করোনা, যে পর্যন্ত অনুমতি না নাও এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম না করো। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা স্মরণ রাখ। (পবিত্র সূরা নূর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৭)
উক্ত আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমভাবে সকলকেই যে কারো ঘরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ কারো ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে ঘরওয়ালাদের অনুমতি সাপেক্ষে প্রবেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর এটাও মূলতঃ ‘হিজাব বা পর্দার’ একটি অংশ। পবিত্র সূরা নূর শরীফ উনার উক্ত ২৭নং আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় অনুসরণীয় মুফাস্সিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উনাদের তাফসীরগ্রন্থ সমূহে ১৭ টি মাসয়ালা উল্লেখ করেছেন। যা ধারাবাহিক প্রকাশ করা হচ্ছে।
তৃতীয় মাসয়ালা: ঘর ওয়ালার বিনা অনুমতিতে তার ঘরে প্রবেশ করা হারাম হওয়া সংক্রান্ত।
মহান আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা উনার প্রশংসা। যে তোমার ঘরের সদস্য নয় তার জন্য (বিনা অনুমতিতে তোমার) ঘরে প্রবেশ করা হারাম। استئناس শব্দের অর্থই হচ্ছে استئذان তথা অনুমতি গ্রহণ। হযরত ইবনু ওহ্হাব রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, الاستئناس শব্দের অর্থ হচ্ছে الاستئذان তথা অনুমতি প্রার্থনা, মহান আল্লাহ পাক তিনি অধিক জ্ঞাত। অনুরূপভাবে হযরত উবাই, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস এবং হযরত সাইদ ইবনু যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ক্বিরায়াত-
" حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا "
অর্থাৎ যতক্ষণ না অনুমতি নিবে এবং ঘরের অধিবাসীদেরকে সালাম দিবে।” কেউ বলেছেন, تَسْتَأْنِسُوا অর্থ: تستعلموا ‘তোমরা জানাবে’ অর্থাৎ ঘরের অধিবাসীকে আগমনের সংবাদ জানাবে। হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, গলাখাকড়ানোর মাধ্যমে জানাবে। ... আমি বলি: সুনানে ‘ইবনু মাজাহ্’তে আছে। ... হযরত আবূ আইউব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন; আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আয়াত শরীফে উল্লেখিত সালামের বিষয়টি আমরা বুঝি। কিন্তু استئناس বলতে কি বুঝায়? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এর অর্থ হলো “ঘরের বাইরে থেকে লোকেরা কথা বলার মাধ্যমে এবং তাছবীহ, তাকবীর, হামদ ও গলা খাকড়ানোর মাধ্যমে ঘরের অধিবাসীর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করবে।
চতুর্থ মাসয়ালা: অন্যের ঘরে প্রবেশের পূর্বে ঘর ওয়ালার নিকট অনুমতি তলবের সুন্নত তরীক্বা সংক্রান্ত।
অনুমতির সুন্নত মুবারক হচ্ছে তিনবার, এর বেশী করবে না। হযরত ইবনু ওহ্হাব রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন যে, হযরত মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেনঃ অনুমতি তিনবার, কারো জন্য এর অতিরিক্ত করা পছন্দনীয় নয়। অনুমতির পদ্ধতি হলো, আগন্তুক ব্যক্তি বলবে السلام عليكم “আস্ সালামু আলাইকুম’ أأدخل ‘আমি কি প্রবেশ করতে পারি’? যদি তাকে অনুমতি দেয়া হয় প্রবেশ করবে, যদি ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয় তবে ফিরে যাবে। যদি (অধিবাসী) চুপ থাকে, তবে তিনবার অনুমতি প্রার্থনা করবে অতপর তিনবারের পর ফিরে যাবে। আমরা বলিঃ নিশ্চয়ই অনুমতির সুন্নত মুবারক হচ্ছে তিনবার অনুমতি চাওয়া, যার অতিরিক্ত করা যাবেনা।
অনুমতির পদ্ধতি সম্পর্কে আমরা যা উল্লেখ করছি। হযরত আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত রিব্য়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন বনূ আমের গোত্রের এক ব্যক্তি, যিনি মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট অনুমতি প্রার্থনা করেছিলেন, যখন তিনি পবিত্র হুজরা শরীফের ভিতরে ছিলেন। সে ব্যক্তি বললেন, আমি কি প্রবেশের অনুমতি পেতে পারি? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার খাদিমকে বললেন; আপনি ঘরের বাইরে লোকটির কাছে গিয়ে উনাকে অনুমতির পদ্ধতি জানিয়ে দিন। অতঃপর তিনি লোকটিকে বললেন, আপনি বলুন السلام عليكم أأدخل ‘আস্সালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করতে পারি? লোকটি তা শুনলেন এবং বললেন السلام عليكم أأدخل ‘আস্সালামু আলাইকুম’ আমি কি প্রবেশ করতে পারি? তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি লোকটিকে প্রবেশের অনুমতি দিলেন, আর লোকটি প্রবেশ করলেন। হযরত ইমাম ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করে বলেছেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার বাঁদীকে বলতে বললেনঃ (রওযা) “আপনি সে ব্যক্তিকে বলুন, তিনি যেন বলেন السلام عليكم أأدخل؟ ‘আস্সালামু আলাইকুম, আমি প্রবেশ করতে পারি?” (হাদীছ শরীফ) বর্ণিত রয়েছে, নিশ্চয়ই একদা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি রোদ্রের তপ্ত পথ দিয়ে হেঁটে এক কুরাইশী মহিলার কাছে ফুসত্বাত্বে (একটি বড় ধরনের তাঁবুতে) আসলেন। তথাপি তিনি শান্তভাবে বললেন, السلام عليكم أأدخل؟ ‘আস্সালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করতে পারি? উত্তরে মহিলাটি বললেনঃ শান্তির সাথে প্রবেশ করুন। আবার তিনি পুনরাবৃত্তি করলেন, মহিলাটিও পুনরাবৃত্তি করলেন। (তৃতীয়বার) হযরত ইবনু উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাকে বললেন, আপনি বলুন, আমি কি প্রবেশ করবো? মহিলাটি আগের মতই জবাব দিলেন। তাই, তিনি প্রবেশ করলেন। তিনি বাইরে অপেক্ষা করেছিলেন, যাতে মহিলাটি বলেন যে, আপনি শান্তির সাথে প্রবেশ করুন।” (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বচক্ষে দেখা কিছু কথা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারিবারিক তা’লীমের গুরুত্ব ও তারতীব
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সুন্নতী খাবার সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ : মেথি
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাবার বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
জন্মের প্রথম মাস
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে মু’মীনদের জীবন গড়ে তোলা দায়িত্ব-কর্তব্য
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৩)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নারীবাদী বলে কথা........
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)