হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (পর্ব-২২)
, ১৯ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৩ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ১১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ২৮ই মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) মহিলাদের পাতা
যেমন, কারো ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে অনুমতি নেয়া, মাহরাম ব্যতীত অন্য কারো সাথে দেখা-সাক্ষাত না করা, মাহরামদের সামনেও শালীনতা বজায় রাখা, চলাচলের সময় পুরুষ-মহিলা উভয়ের দৃষ্টিকে অবনত রাখা, নিজেদের লজ্জাস্থানকে হিফাজত করা, বিনা প্রয়োজনে গলার আওয়াজ বা কণ্ঠস্বর পরপুরুষকে না শুনানো, প্রয়োজনে কথা বলতে হলে ও কিছু চাইতে হলে পর্দার আড়াল থেকে বলা ও চাওয়া এবং শক্ত ভাষায় কথা বলা, নরম ভাষায় কথা না বলা ইত্যাদি সবই হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র আয়াত শরীফসমূহে এ বিষয়গুলোই মূলতঃ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। উল্লেখিত প্রতিটি বিষয়ে ‘তাফসীর বা ব্যাখ্যা’ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরলে বিষয়গুলো আরো সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে এবং শরয়ী ‘হিজাব বা পর্দার’ পরিচয় সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে। তাই নিম্নে নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থ থেকে উল্লেখিত প্রতিটি বিষয়ে তাফসীর বা ব্যাখ্যা পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করা হলো।
অনুমতি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করা সংক্রান্ত আয়াত শরীফসমূহের বিস্তারিত তাফসীর বা ব্যাখ্যা:
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য ঘরে প্রবেশ করোনা, যে পর্যন্ত অনুমতি না নাও এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম না করো। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা স্মরণ রাখ। (পবিত্র সূরা নূর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৭)
উক্ত আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমভাবে সকলকেই যে কোন কারো ঘরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ কারো ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে ঘরওয়ালাদের অনুমতি সাপেক্ষে প্রবেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর এটাও মূলতঃ ‘হিজাব বা পর্দার’ একটি অংশ। অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করা সংক্রান্ত উল্লেখিত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় ইমাম-মুজতাহিদ তথা অনুসরণীয় মুফাস্সিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের তাফসীর গ্রন্থসমূহে যে ফায়ছালা দিয়েছেন নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো-
পবিত্র সূরা নূর শরীফ উনার ২৭নং আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় অনুসরণীয় মুফাস্সিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উনাদের তাফসীরগ্রন্থ সমূহে লিখেন, “অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ১৭ টি মাসয়ালা রয়েছে।
প্রথম মাসয়ালা: কারো ঘরের ছিদ্র দিয়ে ভিতরে দৃষ্টি দেয়া সংক্রান্ত।
মহান আল্লাহ তায়ালা উনার কালাম- (يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا)
“(হে ঈমানদারগণ! তোমরা কারো ঘরে প্রবেশ করোনা) মহান আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার আদম আলাইহিস সালাম উনার সন্তানের জন্য আবাসস্থল তথা ঘর নির্ধারণ করেছেন। এর মাধ্যমে তাদেরকে অনেক দৃষ্টি থেকে আড়ালে রেখেছেন এবং আলাদাভাবে তাদেরকে উপকার লাভের মালিকানাস্বত্ত্ব দিয়েছেন। মানুষের জন্য সীমা যে, যা ঘরের বাইরে এবং ঘরের অভ্যন্তরে তা ঘরের মালিকের অনুমতি ছাড়া দেখবে না। তাদেরকে আদব শিক্ষা দিয়েছেন তাদের মধ্যে আওরাতদের থেকে ফিরানোর মাধ্যমে, যাতে তাদের মধ্যে কেউ অপর কোন মহিলার দিকে দৃষ্টি না দেয়। ‘ছহীহ্ মুসলিম’ শরীফে আছে, সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “কেউ যদি কোন সম্প্রদায়ের কারো বাড়ীতে তাদের অনুমতি ছাড়া উকি মেরে দেখে, বাড়ীওয়ালার জন্য বৈধ হবে তার চক্ষুকে ফুটা করে দেয়া।”... এখানে চক্ষু ফুটা করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেন এর উপর আমল করার মত আমল করা হয়। এমনকি এরপর সে অপর কারো ঘরে দৃষ্টি দিবে না। আর কেউ কেউ বলেন; এতে জরিমানা হবেনা এবং কেছাছও হবে না। এটাই ছহীহ্ মত।
দ্বিতীয় মাসয়ালা: উক্ত আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার শানে নুযূল বা নাযিল হওয়ার কারণ সংক্রান্ত।
যা ইমাম ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং অন্যান্যগণ হযরত আদী ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয়ই একজন আনছারী মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আরজ করলেন যে, আমি আমার বাড়ীতে কখনো এমতাবস্থায় থাকি যে, আমি পছন্দ করিনা সে অবস্থায় কেউ আমাকে দেখুক। না আমার পিতা-মাতা, আর না সন্তান-সন্তুতি। কিন্তু আমার বাড়ীর কেউ না কেউ বিনা বাধায় এ অবস্থায় আমার ঘরে প্রবেশ করে এবং আমাকে দেখে ফেলে। এ পরিস্থিতিতে আমি কি করব? এমন আরজের উত্তরে উক্ত আয়াত শরীফ নাযিল হয়। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মেয়ে সন্তান জন্মগ্রহণ মহান আল্লাহ পাক উনার দয়া ইহসান মুবারক
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অনুসরণই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ঝগড়া-বিবাদের কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যেভাবে দ্বীন ইসলাম উনার দুইজন সম্মানিত খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইসি সালাম উনারা মনোনীত হয়েছিলেন
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নছীহত মুবারক:
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (২)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৮)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)