আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের বিশুদ্ধ আকীদাহ্ মুবারক
হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক
, ১৪ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০১ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ২০ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ১৪ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) আক্বায়িদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ إِلا رِجَالا نُّوحِي إِلَيْهِم مِّنْ أَهْلِ الْقُرَىٰ
অর্থ: “আপনার পূর্বে আমি যতজনকে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম হিসেবে জনপদের নিকট পাঠিয়েছি উনারা পুরুষ ছিলেন। আমি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সম্মানিত ওহী মুবারক পাঠাতাম।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ইঊসুফ শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৯)
উনাদের খাওয়া-দাওয়া, উঠা-বসা, চাল-চলন, কথা-বার্তা, ঘুম, স্বপ্ন, চিন্তা, ফিকির মুবারকসহ সমস্ত কিছুই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওহী মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ উনাদের সমস্ত আমল মুবারকই সম্মানিত ওহী মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। কাজেই ‘উনারা ইজতিহাদ করেছেন এবং উনাদের ইজতিহাদে ভুল হয়েছে।’ এরূপ আক্বীদাহ্ পোষণ করা সুস্পষ্ট কুফরী। না‘ঊযুবিল্লাহ!
উনারা উনাদের আম্মাজান আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের তাহতাচ্ছুররাহ অর্থাৎ নাভির নীচ দিয়ে জমিনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন। সুবহানাল্লাহ! উনাদের শান মুবারক এ চুঁ-চেরা কিলকাল করা, কোন বিষয়ে বিদ্বেষ পোষণ করা, বিরোধিতা করা প্রত্যেকটাই কাট্টা কুফরী এবং জাহান্নামী হওয়ার কারণ। উনাদের কোন ব্যক্তিগত জিন্দেগী ছিল না বরং উনাদের পুরাটাই নুবুওওয়াতী ও রিছালতী জিন্দেগী মুবারক। উনারা ক্বাবলাল ওহী মুবারক ও বা’দাল ওহী মুবারক সব অবস্থায়ই মা’ছুম। সুবহানাল্লাহ!
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক:
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা প্রত্যেকেই মাহফূয (সংরক্ষিত)। উনারা সন্তুষ্টি মুবারক প্রাপ্ত। উনাদেরকে মুহব্বত করা ঈমান এবং উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা কুফরী। যারা উনাদের বিরোধীতা ও সমালোচনা করবে, তাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত। উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি। উনাদের যে কাউকে, যেকোন বিষয়ে, যে কোনো ব্যক্তি অনুসরণ করবে, সেই হেদায়েত লাভ করবে। আর উনাদের মত ঈমান আনতে পারলেই প্রকৃত হেদায়েত লাভ করতে পারবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
فَاِنْ اٰمَنُوْا بِمِثْلِ مَآ اٰمَنْتُمْ بِهٖ فَقَدِ اهْتَدَوْا
অর্থ: “যদি পরবর্তী উম্মত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে ঈমান আনতে পারে, তাহলেই তারা হাক্বীক্বী হেদায়েত লাভ করতে পারবে।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারাহ্ শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩৭)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
وَالسّٰبِقُوْنَ الْاَوَّلُوْنَ مِنَ الْمُهٰجِرِيْنَ وَالْاَنْصَارِ وَالَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُمْ بِاِحْسَانٍ رَّضِىَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ وَاَعَدَّ لَهُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِىْ تَحْتَهَا الْاَنْهٰرُ خٰلِدِيْنَ فِيْهَا اَبَدًا ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
অর্থ: “হযরত মুহাজির ও আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমগণ উনাদের মধ্যে যাঁরা প্রথম পর্যায়ে সম্মানিত ঈমান গ্রহণ করেছেন এবং (ক্বিয়ামত পর্যন্ত) উনাদেরকে যাঁরা উত্তমভাবে অনুসরণ করবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জন করেছেন এবং করবেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের জন্য এমন সম্মানিত জান্নাত মুবারক প্রস্তুত করে রেখেছেন যার নিচ দিয়ে নহর প্রবাহিত রয়েছে। উনারা সেখানে অনন্তকাল অবস্থান করবেন। এটা হলো (উনাদের জন্য) বিরাট সফলতা।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা তাওবা শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১০০)
কাজেই ‘উনারা ইজতিহাদ করেছেন এবং উনাদের ইজতিহাদে ভুল হয়েছে।’ এরূপ বলা সুস্পষ্ট কুফরী। কেননা উনারা মুজতাহিদের উর্ধ্বে। মুজতাহিদ হচ্ছে ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের তবক্বা। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা যা করেছেন সবকিছুই সঠিক। কেননা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন-
عَنْ سَيِّدِنَا حَضْرَتْ الفاروق الاعظم عَلَيْهِ السَّلَامُ (سَيِّدِنَا حَضْرَتْ عُمَرَ بْنِ الْـخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ) قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَصْحَابِـىْ كُلُّهُمْ كَالنُّجُوْمِ فَبِاَيِّهِمْ اِقْتَدَيْتُمْ اِهْتَدَيْتُمْ
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা প্রত্যেকেই হচ্ছেন তারকা সদৃশ। উনাদের যে কাউকে, যে কোনো ব্যক্তি, যে কোনো বিষয়ে অনুসরণ করবে সে হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে।” সুবহানাল্লাহ! (রযীন শরীফ, মিশকাত শরীফ, মাছাবীহুস সুন্নাহ ইত্যাদি)
উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা সুস্পষ্ট কুফরী। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- لِيَغِيْظَ بِـهِمُ الْكُفَّارَ “একমাত্র কাফিররাই (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম) উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২৯)
যারা উনাদের সম্পর্কে চুঁ-চেরা করে বা করবে, তাদেরকে লা’নাতুল্লাহি আলাইহি বলা ফরজ। কেননা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رضى الله تعالى عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا رَأَيْتُمُ الَّذِينَ يَسُبُّونَ أَصْحَابِي فَقُولُوا لَعْنَةُ اللهِ عَلَى شَرِّكُمْ
অর্থ: “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন তোমরা কাউকে আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে গালি দিতে দেখবে, তখন তোমরা বলো- এ নিকৃষ্ট কাজের জন্য তোমাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত বর্ষিত হোক। অর্থাৎ তুমি মাল‘ঊন বা অভিশপ্ত।” (তিরমিযী শরীফ)
শুধু তাই নয়; নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
فَلَا تُجَالِسُوهُمْ، وَلَا تُؤَاكِلُوهُمْ، وَلَا تُشَارِبُوهُمْ، وَلَا تُنَاكِحُوهُمْ، وَلَا تُصَلُّوا مَعَهُمْ، وَلَا تُصَلُّوا عَلَيْهِمْ
অর্থ: “তাদের সঙ্গে তোমরা উঠা-বসা করবে না, খাওয়া-দাওয়া করবে না, পানাহার করবে না, তাদের মেয়েকে তোমরা বিবাহ করবে না এবং তাদের নিকট তোমাদের মেয়েকে বিবাহ দিবে না। তাদের সাথে নামায পড়বে না এবং তাদের জানাযার নামায পড়বে না।” (আস সুন্নাহ লিআবী ইবনে খাল্লাল ২/৪৮৩)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ক্বদমবুছী বা পদচুম্বন খাছ সুন্নত মুবারক; বিদয়াত-শিরক বলা কুফরী
১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মি’রাজ শরীফ সম্পর্কে সর্বোত্তম বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক
০৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা পালন করা ফরজ এবং ছবি তোলা হারাম
০৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বদ মাযহাব, বদ আক্বীদা ও বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব- ৬
০৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক
২৩ অক্টোবর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক
১২ অক্টোবর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক
০৮ অক্টোবর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত ওয়ালিদাইন শরীফাইন আলাইহিমাস সালাম উনাদের প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইত্তেবা করা ব্যতীত কস্মিনকালেও মহান আল্লাহ পাক উনাকে পাওয়া যাবে না
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইত্তিবা বা অনুসরণ-অনুকরণ করা সকলের জন্য ফরয
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)