হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বদ মাযহাব, বদ আক্বীদা ও বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব- ৬
, ২২ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৬ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ২০ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) আক্বায়িদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের এত ফযীলত ও মর্যাদা লাভের একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বক্ষেত্রে পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ অনুকরণ করতেন। নিম্নে তার আরো কিছু প্রমাণ পেশ করা হলো-
(৫) এ প্রসঙ্গে বলা হয়, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কিরূপ বা কতটুকু অনুসরণ করতেন; তা আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার হায়াত মুবারকের একটা ওয়াকেয়া বা ঘটনা উল্লেখ করলে আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে।
বর্ণিত আছে যে, হযরত আবূ উবায়দা ইবনুল র্জারাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন বাইতুল মোকাদ্দাস জয় করলেন তখন খৃষ্টানরা বললো যে, হে হযরত আবূ উবায়দা ইবনুল র্জারাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনাদের যিনি খলীফা, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে আমরা চাবি হস্তান্তর করবো। হযরত আবূ উবায়দা ইবনুল র্জারাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি খলীফাতুল মুসলিমীন আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে চিঠি লিখলেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! আমাদের বাইতুল মোকাদ্দাস জয় হয়েছে। তবে খৃষ্টানরা আপনার কাছে চাবি হস্তান্তর করতে চাচ্ছে। এখন আপনি যদি দয়া করে তাশরীফ আনতেন তাহলে কতই না উত্তম হতো। চিঠি পেয়ে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি রওয়ানা হলেন। হযরত আবূ উবায়দা ইবনুল র্জারাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্যে কিছু পথ এগিয়ে এসেছিলেন, ফলে রাস্তার মধ্যে সাক্ষাত হলো। হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি একটু বিশ্রাম নিলেন। উনার কাপড়-চোপড় ধুলেন, শুকালেন আবার সেটা পরিধান করলেন।
তখন হযরত আবূ উবায়দা ইবনুল র্জারাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন খলীফাতুল মুসলিমীন! আপনার কোর্তা মুবারকে পট্টি দেখা যাচ্ছে। কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, উনার কোর্তা মুবারকে ১৩ থেকে ১৪টি পট্টি ছিল। তার মধ্যে একটা ছিল চামড়ার পট্টি। হযরত আবূ উবায়দা ইবনুল জাররাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, হে খলীফাতুল মুসলিমীন! আমার মনে হয় আপনার কোর্তা মুবারকটি পাল্টিয়ে নিলে ভাল হতো, যেহেতু আপনি খলীফাতুল মুসলিমীন।
জবাবে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম বললেন, হে হযরত আবূ উবায়দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, “আমরা তো ঐ সম্প্রদায়, যাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি দ্বীন ইসলামের দ্বারা সম্মানিত করেছেন। ”
এ বিষয়ে আপনি চিন্তা করবেন না। সেই কোর্তা মুবারক পরেই তিনি বাইতুল মুকাদ্দাসে পৌঁছলেন। তিনি যখন বাইতুল মুকাদ্দাসে পৌঁছলেন তিনি ছিলেন সাওয়ারীর নীচে, আর উনার খাদিম ছিলেন সাওয়ারীর উপরে। তাদের কিতাবের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, পাদ্রীদের থেকে অর্থাৎ খৃষ্টানদের থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস জয় করবেন যিনি, তিনি হবেন আমীরুল মু’মিনীন খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম। তিনি যখন আগমন করলেন, তখন পাদ্রীরা উনার ছূরত মুবারক, সীরত মুবারক, হাল বা অবস্থা মুবারক কিতাব খুলে মিলাতে লাগল। তারা সবকিছু মিলিয়ে দেখল যে, সবই মিলে গেছে। তখন প্রধান পাদ্রী বললো, হে খৃষ্টান সেনাপতি তুমি চাবি হস্তান্তর করো। তখন খৃষ্টানরা বললো, আমাদের একটা আবদার রয়েছে, কি আবদার? যিনি খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন উনার সম্মানার্থে আমরা একটু মেহমানদারীর বন্দোবস্ত করতে চাই। আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে বলা হলে, তিনি তাতে রাজী হলেন। একটা বিশাল রুমের মধ্যে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করা হলো। সেখানে বিভিন্ন দেশের আমীর-উমরাদেরকেও দাওয়াত করা হয়েছিল। আরব দেশে সাধারণতঃ গোশত আর রুটি খাওয়া হতো। দস্তরখানা ছিল চামড়ার খয়েরী রংয়ের, তারমধ্যে রুটি দেয়া হতো। এটা ছিল মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সুন্নত মুবারক।
খাওয়ার সময় রুটি-গোশত দেয়া হলো। খাওয়া প্রায় শেষ, সাধারণতঃ রুটি খেলে রুটির কিছু টুকরা দস্তরখানায় পড়ে থাকে। হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সুন্নত মুবারক আদায়ের লক্ষ্যে সেই রুটির টুকরাগুলো আঙ্গুল মুবারক দিয়ে টুকে টুকে খাচ্ছিলেন। এ অবস্থা দেখে এক ব্যক্তি বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন! এখানে অনেক রাজা বাদশাহ্, আমীর-উমরা উপস্থিত আছে, তাদের সামনে এ রকম খেলে মানুষ কি মনে করবে?
আমীরুল মু’মিনীন খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম বললেন, “হে ব্যক্তি! আমি কি এ সকল আহমক তথা বেদ্বীন-বদদ্বীন কাফির মুশরিক, ইহুদী-খৃষ্টানদের জন্য আমার যিনি সম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারক তরক করে দিব? তাদের আভিজাত্যতার কারণে তাদের সম্মানার্থে আমি কি সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসীলন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারক ছেড়ে দিবো? মূলত সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসীলন খতামুন্ নাবিয়্যীন নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নত মুবারকের পরিপূর্ণ ও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনুসরণ অনুকরণ করার কারণেই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে সম্মান দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
এখন ফিরিরের বিষয় যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতটুকু অনুসরণ-অনুকরণ করেছেন। আজকাল মানুষ সুন্নত মুবারকের অনুসরণ থেকে বিরত থাকে, সুন্নত মুবারকের অনুসরণ করলে মানুষ কে কি বলে, এ সকল চিন্তা-ফিকির করে।
উপরোক্ত বর্ণনাসমূহ দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয় যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা সর্বক্ষেত্রে এবং সব বিষয়েই নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাল্লাম উনাকে পরিপূর্ণরূপে ও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে অনুসরণ-অনুকরণ করেছেন। যার কারণে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বেমেছাল মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ক্বদমবুছী বা পদচুম্বন খাছ সুন্নত মুবারক; বিদয়াত-শিরক বলা কুফরী
১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মি’রাজ শরীফ সম্পর্কে সর্বোত্তম বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক
০৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা পালন করা ফরজ এবং ছবি তোলা হারাম
০৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক
৩০ অক্টোবর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক
২৩ অক্টোবর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক
১২ অক্টোবর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক
০৮ অক্টোবর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত ওয়ালিদাইন শরীফাইন আলাইহিমাস সালাম উনাদের প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইত্তেবা করা ব্যতীত কস্মিনকালেও মহান আল্লাহ পাক উনাকে পাওয়া যাবে না
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইত্তিবা বা অনুসরণ-অনুকরণ করা সকলের জন্য ফরয
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)