হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৬)
, ০৫ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১০ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মহিলাদের পাতা
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার দানশীলতা মুবারক
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি নিজে যেমনি দান করতেন অন্যদেরকেও দান করার জন্য উৎসাহিত করতেন। মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে যা কিছু রিযিক্ব আসতো তিনি সেটা দান করে দিতেন। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে,
وَكَانَتْ لاَ تُمْسِكُ شَيْئًا مِمَّا جَاءَهَا مِنْ رِزْقِ اللهِ {إِلاَّ} تَصَدَّقَتْ
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার কাছে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে রিযিক হিসেবে যা কিছু আসত, তিনি তা জমা না রেখে দান করে দিতেন। ’ সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ : পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ৩৫০৫)
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حضرت أُمِّ ذَرَّةَ رضى الله تعالى عنها قَالَتْ بَعَثَ حضرت ابْنُ الزُّبَيْرِ رضى الله تعالى عنه إِلَى سيدتنا حضرت عَائِشَةَ عليها السلام بِمَالٍ فِي غِرَارَتَيْنِ يَكُونُ مِائَةَ أَلْفٍ فَدَعَتْ بِطَبَقٍ وَهِيَ يَوْمَئِذٍ صَائِمَةٌ فَجَعَلَتْ تَقْسِمُ فِي النَّاسِ قَالَ فَلَمَّا أَمْسَتْ قَالَتْ يَا جَارِيَةُ هَاتِي فِطْرِي فَقَالَتْ حضرت أُمّ ذَرَّةَ رضى الله تعالى عنها يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ أَمَا اسْتَطَعْتِ فِيمَا أَنْفَقْتِ أَنْ تَشْتَرِي بِدِرْهَمٍ لَحْمًا تُفْطِرِينَ عَلَيْهِ ؟ فَقَالَتْ لاَ تُعَنِّفِينِي لَوْ كُنْتِ أَذْكَرْتِنِي لَفَعَلْتُ.
অর্থ: হযরত উম্মে যাররাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন,) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার নিকট দুই থলি ভর্তি সম্পদ পাঠান। যাতে ১ লক্ষ দিরহাম ছিলো। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি একটি থালা বা পাত্র নিয়ে আসতে বললেন। আর ঐ দিন তিনি রোযা অবস্থায় ছিলেন। এরপর ঐ ১ লক্ষ দিরহাম সব মানুষের মাঝে বন্টন করে দিলেন। রাবী বলেন, অতঃপর যখন সন্ধ্যা হলো তিনি উনার খাদিমাকে বললেন, ইফতার দেয়ার জন্য। উনার খাদিমা হযরত উম্মে যাররাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা তিনি বললেন, হে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম! আপনি কি পারতেন না যে দিরহামগুলো দান করেছেন সেখান থেকে কিছু দিরহাম দিয়ে ইফতার করার জন্য গোস্ত ক্রয় করে আনতে? তখন তিনি বললেন, তুমি আমার প্রতি কঠোরতা অবলম্বন করোনা। যদি তুমি আমাকে পূর্বেই স্মরণ করিয়ে দিতে তাহলে আমিতো সেটা ব্যবস্থা করতাম। ” ( আত ত্ববাক্বাতুল কুবরা লি ইবনে সা’দ ৮/৬৭)
আরো বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حضرت عُرْوَةَ رحمة الله عليه عَنْ حضرت عَائِشَةَ عليها السلام قَالَ رَأَيْتُهَا تَصَدَّقُ بِسَبْعِينَ أَلْفًا وَإِنَّهَا لَتَرْفَعُ جَانِبَ دِرْعِهَا.
অর্থ: বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্পর্কে বলেন, আমি উনাকে (এক বসাতে) ৭০ হাজার দিরহাম দান করে চাদরের কোণা ঝেড়ে ফেলতে দেখেছি। সুবহানাল্লাহ! (আত ত্ববাক্বাতুল কুবরা লি ইবনে সা’দ ৮/৬৬)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীকাহ আলাইহাস সালাম তিনি একদিন রোযা ছিলেন। উনার হুজরা শরীফে শুধু একটি রুটি ছিলো। এ সময় এক মিসকীন মহিলা উপস্থিত হলে তিনি তাকে রুটিটি দেওয়ার জন্য খাদিমাকে নির্দেশ দিলেন। খাদিমা আরয করলেন, তবে কি দিয়ে ইফতার করবেন? তখন তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি রিযিকের যিম্মাদার। ঠিকই বিকেলে কোন একজন লোক উনার জন্য বকরীর গোশত প্রেরণ করেন। তিনি খাদিমাকে ডেকে বললেন, এই নিন, আপনার রুটির চেয়ে উত্তম ইফতার।
উনার ভাগিনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন-
مَا رأيتُ امرَأتَيْنِ أَجوَدَ مِن حضرت عائشةَ عليها السلام وحضرت أَسمَاء رضى الله تعالى عنها وجُودَهُمَا مُخْتَلِفٌ أَمَّا حضرت عائشةُ عليها السلام فَكَانَت تَجمَعُ الشَّيءَ إِلَى الشَّيءِ حَتَّى إِذَا كَانَ اجتَمَعَ عِندَهَا قَسَمتْ وأَمَّا أَسْمَاءُ رضى الله تعالى عنها فَكَانَت لَا تُمْسِكُ شيئاً لِغَدٍ.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার এবং হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনার অর্থাৎ উনাদের চেয়ে অধিক দানশীলা আর কোন মহিলাকে দেখিনি। তবে উনাদের দু’জনের দানের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে কিছুটা ভিন্নতা ছিলো। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি একটু একটু করে জমা করতেন। জমাকৃত বস্তু উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হলে তিনি তা বণ্টন করে দিতেন। আর হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি আগামী দিনের জন্য কিছু তুলে রাখতেন না (যা পেতেন সাথে সাথে দান করে দিতেন)। ” সুবহানাল্লাহ! (আল আদাবুল মুফরাদ : পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ২৮০)
তাহলে উনার দানশীলতা মুবারক কতো বেমেছাল ছিলো সেটা বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
-মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সন্তানকে দুনিয়াদার নয় আল্লাহওয়ালা হওয়ার শিক্ষা প্রদান করতে হবে
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
শীতে ত্বকের যত্ন নিতে যা খাবেন
১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারিবারিকভাবে দ্বীনি শিক্ষা অত্যন্ত জরুরী
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
২টি বিষয় যা বৃদ্ধ হয় না
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নেককার দ্বীনদার সন্তান পেতে চাইলে অবশ্যই হালাল গ্রহণ করতে হবে
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দান-ছদকাহ বালা-মুসিবত দূর করে
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
স্বচক্ষে দেখা কিছু কথা
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
বেপর্দা-বেহায়াপনাকে যারা ‘স্বাধীনতা’ বলে থাকো, তোমরা কি পরকালে বিশ্বাস করো না?
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সন্তান লালনপালনকারীদের যে বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ রাখা জরুরী
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পুরুষ ও মহিলা উভয়কেই পর্দা পালনের বিষয়ে সচেতন হতে হবে
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)