সরু চোখে.... (পর্ব ২)
হজ্জের রেকর্ড বৃদ্ধি ও একজন মুসলমানের ভাবনা
, ০৮ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ৩১ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ৩১ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ১৭ চৈত্র, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) মহিলাদের পাতা
এ বছর হজ্জের ব্যয় রেকর্ড বৃদ্ধি করেছে সরকার। সরকারিভাবে একজনকে হজ্জে যেতে গুনতে হবে প্রায় ৬ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা। এই টাকার মধ্যে প্রায় ২ লক্ষ টাকা হচ্ছে বিমানভাড়া। স্বাভাবিকভাবে জেদ্দা-মদীনা শরীফ রুটে যাওয়া আসা করতে যে খরচ হয়, হজ্জের সময় তার ৪-৫ গুণ বেশি ভাড়া নিচ্ছে বাংলাদেশ বিমান। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বাংলাদেশ বিমান সারা বছর লোকসানে থাকে, তাই হাজীদের থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে সেই লোকসান পুষিয়ে নিতে চায় তারা।
অত্যধিক হজ্জ ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অনেকেরই হজ্জে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও হজ্জে যেতে পারছেন না। তাই এর বিরুদ্ধে অনেকেই প্রতিবাদ করছেন।
মূলতঃ অতিরিক্ত হজ্জ ব্যয় বৃদ্ধি এক ধরনের আর্থিক জুলুম। সেই জুলুমের কারণে অনেকে হজ্জ করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শরীয়ত অনুসারে, দ্বীন ইসলামের ৫টি খুটির ১টি খুটি হজ্জ হলেও সবার জন্য তা ফরজ হয় না। যাদের হজ্জে যাওয়ার সামর্থ্য আছে তাদের জন্যই কেবল হজ্জ ফরজ। এ বছর আর্থিক জুলুমের কারণে অনেকের আর্থিক সামর্থ্য না থাকায়, আর তাদের জন্য হজ্জ করা ফরজ থাকছে না।
লক্ষণীয়, আর্থিক জুলুমের কারণে যদি হজ্জ করা অনেকের জন্য ফরজ না হয়, তবে প্রশ্ন আসে, ঈমানী জুলুমের কারণে কি হজ্জ করা ফরজ থাকতে পারে? ঈমানী জুলুম বলতে বুঝাচ্ছি- হজ্জে যেতে যদি কাউকে হারাম কাজ করতে বাধ্য করা হয়, সেটাকে।
প্রশ্ন: হজ্জে গেলে কি ঈমানী জুলুম হয়?
অবশ্যই হয়, হজ্জে যেতে গেলে ছবি তুলতে হয়। পাসপোর্টে তুলতে হয়, সিসিটিভিতে তুলতে হয়। মহান আল্লাহ পাক সূরা হজ্জ শরীফে স্পষ্ট বলেছেন- “তোমরা মূর্তির অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাকো” (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ: আয়াত শরীফ- ৩০), আমরা স্বাভাবিকভাবে যাকে মূর্তি বলি সেটা থ্রি ডাইমেনশন মূর্তি, আর ছবি হলো টু ডাইমেনশন মূর্তি। যেখানে সূরা হজ্জ শরীফের মধ্যে মূর্তির অপবিত্রতা থেকে বাঁচতে বলা হচ্ছে, সেখানে নিজের টু-ডাইমেনশনের মূর্তি বানিয়ে হজ্জ করলে কি হজ্জে আল্লাহ তায়ালা উনার আদেশ মানা হলো?
মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা বাক্বারা শরীফের ১৯৭ নম্বর আয়াত শরীফে বলেছেন- “হজ্জ তখনই ফরজ, যখন হজ্জে গিয়ে অশ্লীল-অশালীন, হারাম কাজ ও ঝগড়াঝাটি হবে না।”
এ আয়াত শরীফে স্পষ্ট- হজ্জের জন্য হারাম কাজ করতে বাধ্য করা হলে হজ্জ ফরজ থাকে না। আরেকভাবে ব্যাখ্যা করলে, হজ্জে গিয়ে হারাম কাজ করলে হজ্জ কবুলও হবে না।
কেউ হয়ত বলতে পারেন- ভাই! আমি কত ক্ষেত্রে ছবি তুলি, পড়ালেখা, ব্যবসা বাণিজ্য, বিদেশ ভ্রমণ। তখন তো কিছু বলছেন না। কিন্তু হজ্জের ক্ষেত্রে ছবির কথা বলে, কেন হজ্জকে ফরজ বলছেন না।
আসলে- ছবি তোলা হারাম সেটা যেই ক্ষেত্রে হোক। তবে হজ্জ কবুল হওয়ার জন্য সেটা গুরুত্বপূর্ণ।
যেমন- আপনি ওযূ ছাড়া ক্লাস করছেন, গাড়ি চালাচ্ছেন, হাটাহাটি করছেন। তাহলে নামাযের সময় ওযূ ছাড়া করলে সমস্যা কোথায়? এমন প্রশ্ন যদি করেন, তবে সবাই বোকা বলবে। কারণ নামায একটি ইবাদত এবং তার জন্য ওযূ শর্ত। ক্লাস, গাড়ি চালানো বা হাটাহাটির জন্য নয়। ঠিক তেমনি হজ্জ কবুল হওয়ার জন্য হজ্জের স্থানে গুনাহের কাজ না করা শর্ত। আপনাকে যদি হজ্জে যেতে বা হজ্জের স্থানে গুনাহের কাজ করতে বাধ্য করা হয়, তবে তখন আপনার জন্য হজ্জও ফরজ থাকে না।
সমস্যা হচ্ছে, ছবি তুলে হজ্জে যেতে বর্তমান মুসলিম সমাজের তেমন সমস্যা মনে হয় না। কারণ বর্তমানে সাধারণ মুসলমান তো অবশ্যই, আলেম-উলামারাও ছবি-ভিডিওতে এতটাই অভ্যস্থ হয়ে গেছে, হারাম ছবি-ভিডিওকে তাদের কাছে ডালভাত, ছবির গুনাহ তাদের কাছে আর গুনাহ মনে হয় না। নাউযুবিল্লাহ। সুতরাং হজ্জে যেতে হলে ছবি তোলা তাদের জন্য কোন ব্যাপারই না। অথচ সমগ্র মুসলিম উম্মাহ যদি আজকে হজ্জের মত পবিত্র স্থানে হারাম কাজ করতে বাধ্য করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতো, তবে এতদিনে অবশ্যই সৌদি সরকার হজ্জে যেতে ছবির বাধ্যবাধকতা তুলে নিতো। তাছাড়া হজ্জে ছবির প্রচলন তো মাত্র ৪০-৪২ বছর। ১৪০০ বছর যদি ছবি ছাড়া হজ্জ চলতে পারে, তবে ৪০-৪২ বছরের নিয়ম কেন বদলানো যাবে না? পবিত্র কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফে ছবির বিরুদ্ধে হাজার হাজার দলিল আছে, সুতরাং মুসলিম উম্মাহ যদি বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করতো, তবে অবশ্যই এতদিনে হজ্জের মত পবিত্র কাজে হারাম বিষয়ের বাধ্যবাধকতা তুলে দিতো। আসুন আমরা হজ্জের মত পবিত্র স্থানে হারাম ছবি তোলার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলি।
-উম্মু আমিম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বচক্ষে দেখা কিছু কথা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারিবারিক তা’লীমের গুরুত্ব ও তারতীব
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সুন্নতী খাবার সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ : মেথি
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাবার বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
জন্মের প্রথম মাস
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে মু’মীনদের জীবন গড়ে তোলা দায়িত্ব-কর্তব্য
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৩)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নারীবাদী বলে কথা........
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)