স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও উন্নয়ন শহরকেন্দ্রীক।
ক্রমাগত পিছিয়ে যাচ্ছে গ্রাম। কয়েকটি বিভাগীয় শহর নয়; ৮৭ হাজার গ্রামের উন্নয়ন হলেই গোটা দেশের উন্নয়ন হবে।
, ০৯ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০২ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ০২ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ১৬ই ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) সম্পাদকীয়
সাধারণত একটি দেশের শহর ও গ্রাম উভয়েরই অবদান থাকে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পেছনে। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে উন্নয়নের ধারা কেবল শহরকেন্দ্রীক হওয়ার একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উন্নয়ন কৌশলে শহরের প্রতি পক্ষপাত করে গ্রামীণ উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। তৈরী হচ্ছে দারিদ্রের দুষ্টচক্র। অথচ, গ্রামীণ উন্নয়ন হলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা বাড়বে, প্রবৃদ্ধি বাড়বে, প্রযুক্তি উন্নতর হবে- যাতে দেশের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়ে উচ্চ আয়ের স্তরে নিয়ে যাবে দেশকে। সঙ্গে অধিকতর কর্মসংস্থানও হবে গ্রামীণ এলাকাতে। কিন্তু সেটি হচ্ছে না।
কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নাগরিক জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে গ্রাম বরাবরের মতো বৈষম্যের মধ্যেই রয়ে গিয়েছে। বছরের পর বছর যেসব উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে সেগুলোর সিংহভাগই শহরকেন্দ্রীক হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশের মোট আয়তন ১ লাখ ৪৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে গ্রাম বা পল্লি এলাকা ১ লাখ ৩৩ হাজার বর্গকিলোমিটার এবং শহুরে এলাকা ১৪ হাজার ৭৫৭ বর্গ কিলোমিটার। শহরের আয়তনের চেয়ে গ্রামের আয়তন ১ লাখ ১৪ হাজার ২৪৩ বর্গকিলোমিটার বেশি। অর্থাৎ ৮ গুণ বা ৮০০% বেশি। শহরের চেয়ে গ্রামে জনসংখ্যাও বেশি। এ হিসাবে গ্রামের উন্নয়নই দ্রুত ও বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে এমনটা হচ্ছে না।
শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের সুযোগ-সুবিধা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। নেই ভালো চিকিৎসা ও শিক্ষা ব্যবস্থা। অন্যান্য সেবার প্রসারও কম। শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার বেশি। এমন কি খাদ্য মূল্যস্ফীতির হারও বেশি। উৎপাদিত খাদ্য উপকরণ কৃষক বিক্রি করে দিলে একটি গ্রুপের হাতে চলে যাচ্ছে। তারা তখন বেশি দামে বিক্রি করছে। এছাড়া, শহরে নায্যমূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিক্রি হলেও গ্রামে এমনটি হয় না। যে কারণে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেশি। আর খাদ্যের দাম বেশি হওয়ার কারণেই গ্রামে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার বেশি হচ্ছে।
গ্রাম থেকে টাকা এনে শহরের ঋণের জোগান বাড়ানো হচ্ছে। অথচ গ্রামে ঋণ প্রবাহ কম। কিন্তু আমানতের প্রবৃদ্ধির হার বেশি। গ্রামে কর্মোপযোগী মানুষ বেশি থাকলেও স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার কম। যোগাযোগ কাঠামোতেও রয়েছে দুর্বলতা। তাদের সুযোগগুলো কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কমদামে পণ্য বিক্রিতে বাধ্য করা হচ্ছে।
বলাবাহুল্য, সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ২১টি ইশতেহার প্রদান করেছিলো। যার মধ্যে অন্যতম ছিলো গ্রামীণ উন্নয়ন। কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে গ্রামের যথাযথ উন্নয়ন হয়নি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গ্রাম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে; কিন্তু সার্বিকভাবে গ্রামীণ অর্থনীতি জাতীয় অর্থনীতিতে সঠিকভাবে অবদান রাখতে পারছে না। অথচ গ্রামকে উপেক্ষা করে কখনোই দেশের সার্বিক উন্নয়ন আশা করা যায় না। কিন্তু এ সত্যটিই এতদিন উপেক্ষিত হয়ে এসেছে।
বর্তমানে দেশে আধুনিকতা তথা ডিজিটালাইজেশন হলেও এখনো দেশে ৮০ ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে। কিন্তু জাতীয় অর্থনীতিতে গ্রামীণ অর্থনীতির অবদান রাখার ক্ষেত্রে বৈষম্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমাদের দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনায় শহরকে যেভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়, গ্রামকে তা কখনোই দেয়া হয়নি। অথচ এতদিনে যদি গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা যেতো তাহলে শহরমুখী গ্রামীণ মানুষের চাপ বাড়তো না, রাজধানীর বেহাল চিত্র পরিলক্ষিত হতোনা। আজকে রাজধানী যে ধীরে ধীরে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে তার পেছনে গ্রাম/শহর উন্নয়ন বৈষম্য বহুলাংশেই দায়ী।
প্রসঙ্গত, গ্রামীণ অর্থনীতির সাথেই মৎস্য উৎপাদন, পোল্ট্রি শিল্প, শাক-সবজি-ফলমুল উৎপাদন ইত্যাদি জড়িত। গ্রামীণ ২ কোটি চাষীরাই দেশের খাদ্যচাহিদার সিংহভাগের যোগান দিয়ে থাকে, গ্রামীণ ৬০ লাখ জেলে দেশের আমিষের চাহিদার সিংহভাগ পুরন করে, এছাড়া পোল্ট্রি কিংবা ডেইরি শিল্পের অধিকাংশই গ্রামে গড়ে উঠেছে। সেইসাথে ঢাকা শহরে ৯ লাখ রিক্সাচালক, ৪৫ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক এবং বিভিন্ন পেশার লোক রয়েছে। যারা সবাই গ্রাম থেকে আসা এবং তাদের আয়ের ৩ ভাগের ২ ভাগই যাচ্ছে গ্রামে। এক্ষেত্রে, সরকার যদি গ্রামপর্যায়ে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে, প্রণোদনা দেয় তথা কৃষকদের জন্য, খামারীদের জন্য, জেলেদের জন্য বাজেট বরাদ্দ করে তাহলে তা দেশের অর্থনৈতিক সুঠামতার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে।
অন্যদিকে, সারাদেশের গ্রামপর্যায়ে প্রায় ৬০ লাখ মসজিদ-মাদ্রাসা রয়েছে। এই মসজিদ মাদ্রাসাগুলোর কারণে গ্রামীণ পর্যায়ে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার শিক্ষা ছড়িয়ে যাচ্ছে। এতে করে গ্রামীণ মানুষ সুযোগ্য নৈতিকতার শিক্ষা লাভ করছে। পাশাপাশি এই মসজিদ-মাদ্রাসাগুলো গ্রামীণ অর্থনীতির সাথে জড়িত। গ্রামপর্যায়ে প্রায় ১ লাখ প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সরকার যদি এই গ্রামীণ শিক্ষাখাতেও বাজেট বরাদ্দ করে তাহলে যথাযথ শিক্ষা অর্জন করতে পারবে গ্রামীণ মানুষ। দেখা যাচ্ছে, নানা বহুমুখীতায় গ্রামীণ অর্থনীতি একটা বিশাল ফ্যাক্টর। কিন্তু সরকারের বাজেট বরাদ্দহীনতা, উন্নয়ন পরিকল্পনাহীনতা তথা উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে গ্রাম বিকশিত হচ্ছে না।
সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে- গ্রাম-নগর বৈষম্য কমাতে হবে। তাই সরকারের উচিত- দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতিকে একতরফা শহরমুখী না করে গ্রামীণমুখী করা। গ্রামগুলোকে দেশের অস্তিত্ব রক্ষার অপার শক্তি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। দেশের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোর সিংহভাগই গ্রামমুখী করতে হবে। এতে করে বর্তমানে যারা বেকার হয়ে পড়েছে তাদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। খাদ্যঝুঁকি তো মিটবেই পাশাপাশি প্রতিবছর যেসকল খাদ্যপণ্যে আমদানিনির্ভরতা রয়েছে তাও দুর হয়ে যাবে।
সঙ্গতকারণেই আমরা বলতে চাই, গ্রাম অর্থনীতি একটি বিশাল নিয়ামক। সরকারের উচিত হবে গ্রামীণ উন্নয়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতির গতি বাড়াতে, ব্যবসা ও শিল্পের বিকাশ আরো ত্বরান্বিত করতে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকেও শক্তিশালী করা। আরো ব্যাপক ও গভীর এবং ত্বরিৎ মনোযোগ দেয়া।
খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র তা লাভ করা সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দেশে সাড়ে ৩ কোটি শুধু শিশুই সিসার বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত এবং সব প্রাপ্ত বয়স্করাও ক্ষতিগ্রস্থ সিসার ক্ষতি থেকে বাঁচতে সুন্নতী তৈজসপত্র ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক সুন্নত প্রচার কেন্দ্রের জিনিস ক্রয়ে নিবেদিত হতে হবে ইনশাআল্লাহ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মহাব্যার্থ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে আরো ক্ষমতা দিয়ে প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
জ্বালানী তেলের দাম এক্ষুনি কমাতে হবে ইনশাআল্লাহ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
অনেক কিছু করার প্রচারনা চালালেও জিডিপি এবং দেশের উন্নয়নের মূল ভিত্তি অর্থনীতির লাইফ লাইন এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার কিছুই করছে না
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রসঙ্গ: রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম, মুসলমানের দ্বীনি অধিকার, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে পালনের আবহ এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের দায়।
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সিঙ্গাপুর, রাশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধ বাংলাদেশেও বিভিন্ন মহলে ইসকন নিষিদ্ধের দাবী জোরদার হচ্ছে, সংস্কারের দাবীদার সরকার কী করে নির্বিকার থাকতে পারে?
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ব্যাপকভাবে বাড়ছে সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি ও হয়রানী জান-মাল এবং সম্মান হিফাজতে সরকারকে এক্ষুনি পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে ইনশাআল্লাহ
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পাচারকৃত ১৭ লাখ কোটি টাকা ফেরত আনতে শামুকের মত ধীর গতি বরদাশতের বাইরে
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সোনার বাংলার আরেক সোনালী অর্থনীতি- মৎস্য সম্পদ এর সমৃদ্ধির সুফল জনগণের হাতে যথাযথভাবে তুলে দিতে হবে ইনশাআল্লাহ
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছুটির দিনেও ঢাকার বাতাস এখন জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ নারিকেল দ্বীপ বাঁচানোর মিথ্যা প্রচারণার আগে সত্যিকার অর্থে ঢাকাকে বাঁচাতে হবে। ইনশাআল্লাহ!
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সরকারের নির্দেশ আর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কমানো হচ্ছে না শিশুর কাধে ১২ কেজির বইয়ের বোঝা সংস্কারের দাবীদার- নতুন সরকার কী নতুন বছরে শিশুর কাধে বইয়ের বোঝা কমাবে?
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বীজ আইন সংস্কার করে শস্যের বীজে কৃষকের আসার নিশ্চিত করতে হবে।
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)