ইতিহাস
সুলতান আব্দুল হামিদ ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইহুদীবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে দৃঢ়চিত্ততা (বিস্তারিত)
, ০৫ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১১ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ০৯ অক্টোবর , ২০২৪ খ্রি:, ২৩ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) ইতিহাস
সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু গাদ্দার মুসলিম রাষ্ট্র পরগাছা সন্ত্রাসী ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়ে মুনাফিকী করেছে। ফলশ্রুতিতে মজলুম ফিলিস্তিনিরা তাদের ধিক্কার দিয়েছে। কিন্তু তাদের সেই ধিক্কার সমাবেশে উল্লাসের সাথে তুর্কি পতাকা ওড়াতে দেখা গেছে। কিন্তু এর কারণ কি?
ঐতিহাসিকভাবেই উসমানীয় সালতানাতের যুগটি ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি স্বর্ণযুগ ছিলো। উসমানীয় সুলতানরা পবিত্র মক্কা শরীফ এবং পবিত্র মদীনা শরীফ উনাদের পরেই গুরুত্বারোপ করতেন বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ এবং ফিলিস্তিনিদের নিয়ে। ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি নিয়ে।
উসমানীয়দের সর্বশেষ যোগ্য সুলতান ছিলেন আব্দুল হামিদ ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি ৩৪তম শাসক ছিলেন এবং মাত্র ৩৩ বছর শাসন করেছিলেন। তিনি ছিলেন সাচ্চা ঈমানদার এবং উম্মাহ দরদী। তিনি এমন সময় দায়িত্বে আসেন যখন অর্থনৈতিক সঙ্কট, অস্থিরতা এবং বিশেষভাবে বলকান অঞ্চলে যুদ্ধের কারণে তুরস্কের অবস্থা ছিল শোচনীয়।
তিনি ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে বিশ্বের মুসলমানদের একতাবদ্ধ করার প্রয়াস চালিয়েছেন। তুরস্কসহ মুসলিম বিশ্বে ইউরোপীয়দের হস্তক্ষেপ তিনি সহ্য করতে পারতেন না। উনার ডাকে ইউরোপীয় দেশগুলো বিশেষভাবে আলবেনিয়ার মুসলমানদের মাধ্যমে অস্ট্রিয়া, তাতার ও কুর্দিদের মাধ্যমে রাশিয়া, মরক্কোর মুসলমানদের মাধ্যমে ফ্রান্স এবং ভারতীয় মুসলমানদের মাধ্যমে ব্রিটেন সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। উনার জীবনের একটি ঘটনা কেবল অসাধারণ নয় রীতিমতো চোখ খুলে দেয়ার মতো বিস্ময়কর। ১৯০১ সালের কথা। মিজরারী নামক এক কুখ্যাত ইহুদী ব্যাংকার তার দু’জন সহযোগীসহ ইস্তাম্বুলে সুলতানের দরবারে আসে এবং প্রতিনিধির মাধ্যমে সুলতানের কাছে নিম্নোক্ত প্রস্তাব পেশ করেন-
উসমানীয় সালতানাতের সব ঋণ শোধ করে দেয়া হবে। শক্তিশালী নৌঘাঁটি তৈরি করে দেয়া হবে। তুরস্কের উন্নয়নের জন্য তিন কোটি ৫০ লাখ স্বর্ণমুদ্রা বিনা সুদে দেয়া হবে।
ইহুদীরা জানায়, বিনিময়ে আমরা দু’টি জিনিস চাই- ইহুদীদের যেকোনো সময় ফিলিস্তিন সফরের অনুমতি দিতে হবে। সেখানে ইহুদীদের বসতি স্থাপনের জন্য কিছু জমি বরাদ্দ দিতে হবে। সুলতান প্রতিনিধির মাধ্যমে ইহুদীদের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন এবং তাদের সাক্ষাৎ দিতে অস্বীকৃতি জানান। এমন প্রস্তাব নিয়ে আর না আসারও হুকুম দেন। তিনি যে জবাব দেন, তা স্বর্ণের অক্ষরে লিখে রাখার মতো মূল্যবান- ‘অভদ্র ইহুদীদের জানিয়ে দাও, ঋণ উসমানীয় সালতানাতের জন্য লজ্জার কোনো ব্যাপার নয়। আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যে ভূমি জয় করেছেন তা গোটা মুসলিম বিশ্বের সম্পদ। ইহুদীদের কাছে ফিলিস্তিনের ভূমি বিক্রি করে ইতিহাসে ঘৃণিত এবং জনগণ কর্তৃক প্রদত্ত দায়িত্বের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি না। ইহুদীদের বিপুল অর্থ থাকতে পারে, কিন্তু শত্রুর অর্থ দিয়ে তৈরি করা প্রমোদ প্রাসাদে উসমানীয়রা লুকাতে পারে না। ’
একই বছর কুখ্যাত ইহুদী নেতা থিউডর হার্জেল এসে সুলতানের সাক্ষাৎ কামনা করে কিন্তু সুলতান সাক্ষাৎ দিতে রাজি হননি। সুলতান উনার প্রধান উজিরের মাধ্যমে তাদের কাছে নিম্নোক্ত বার্তা পাঠান- থিউডরকে পরামর্শ দিন এ পরিকল্পনা নিয়ে যেন আর অগ্রসর না হয়। এক মুষ্টি মাটিও তাদের দেবো না, যেহেতু আমি এর মালিক নই। এটি বিশ্ব মুসলিমের সম্পদ। মুসলমানরা ফিলিস্তিনের জন্য যুদ্ধ ও বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এ পবিত্র ভূমিকে রঞ্জিত করেন। ইহুদীদের কোটি কোটি টাকা থাকতে পারে। কোনো দিন যদি ইসলামী সালতানাত ধ্বংস হয়ে যায় সে দিন তারা বিনা পয়সায় ফিলিস্তিন দখল করতে পারবে। কিন্তু আমি যত দিন বেঁচে থাকবো, আমার বুক তলোয়ারে বিদ্ধ হওয়া পছন্দ করবো; তবুও ফিলিস্তিনের ভূমি ইহুদীদের হাতে থাকা মানবো না। আমি জীবিত থাকতে আমার দেহের অঙ্গকে বিচ্ছিন্ন হতে দেবো না। ’
মুনাফিকী কতটাই নিকৃষ্ট যে, এমন উম্মাহ দরদী এবং ঈমানদার সুলতান মুসলিম নামধারী গাদ্দারদের ষড়যন্ত্রে মাত্র ৮ বছরের ব্যবধানে ১৯০৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত হন। উসমানীয় সামরিক বাহিনীর পাশ্চাত্যপন্থী নাস্তিক অফিসাররা উনার শাসনের বিরোধী ছিলেন। ইয়াং তুর্কি নামে পরিচিত সেনা কর্মকর্তারা সালতানাতের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন গুপ্ত সমিতি গঠন করে। তারা সুলতানকে এক ইহুদী ব্যাংকারের বাড়িতে বন্দী করে রাখে এবং ইহুদিদের ফিলিস্তিন ভূমিতে বসতি স্থাপনের সুযোগ দেয়। ১৯১৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি এ সুলতান ইন্তেকাল করেন। উনার ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে ৬০০ বছরের উসমানীয় সালতানাতের পরিসমাপ্তি ঘটে। তবে সুলতান আব্দুল হামিদ ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমানতদারী এবং মুসলিম ভ্রাতৃত্বের যে দৃষ্টান্ত রেখেছেন তা যুগ যুগ ধরে মুসলিম উম্মাহ স্বরণ করবে। শিক্ষা গ্রহণ করবে।
সম্পাদনায়: মুহম্মদ শাহজালাল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার সময়কার একটি ঈমানদীপ্ত ঘটনা
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে ভারতীয় লুটেরা সেনাবাহিনীর নজীরবিহীন লুটপাটের ইতিহাস
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে স্বর্ণ পরিশোধন ও রফতানি
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দিল্লির সুলতান হযরত শামসুদ্দীন আলতামাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার গুনাহমুক্ত জীবন
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তাতার বিরোধী যুদ্ধে হযরত আমীর খসরু দেহলভী চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আজকের নগরসভ্যতার জনক মুসলমানগণই
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আফগানিস্তানেও উগ্রতাবাদী ওহাবী-সালাফীদের অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)