বুলন্দী শান মুবারক
সাইয়্যিদুল মুয়াল্লিমীন, মুত্ত্বালা’ আলাল গইব, ছাহিবুল ক্বলম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক হিদায়েত ও তা’লীমের পদ্ধতি (২)
, ১৩ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৩ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২২ মে, ২০২৪ খ্রি:, ০৮ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
বলার অপেক্ষা রাখেনা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হিদায়েত ও তা’লীমের পদ্ধতি ছিলো, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অনুযায়ী। যেমন উনার হিদায়েতের পদ্ধতি সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اُدْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ
অর্থ: “আমার সম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি মানুষকে মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় হিকমত এবং উত্তম নছীহতের মাধ্যমে আহবান করুন। আর তাদের সাথে (যদি প্রয়োজন হয়) আলোচনা করুন, কিন্তু উত্তম পন্থায়। ” (পবিত্র সূরা নহল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১২৫)
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তা বলতে দ্বীন ইসলামকে বুঝানো হয়েছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীকা অর্থাৎ ঈমান ও আকাঈদের ইলিম যা পরবর্তীকালে মুতাকাল্লেমীনগণ প্রচার করেছেন। আহকামে ফিক্বাহ অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ ও নিষেধসমূহ যা পরবর্তীতে ফক্বীহগণ প্রচার করেছেন এবং ইলমে তাছাওউফ যা পরবর্তীতে ছূফিয়ানে কিরাম ও শায়েখগণ প্রচার করেছেন। অর্থাৎ পূর্ণ শরীয়ত এবং তরীক্বতের কাজ করেছেন। অর্থাৎ যে দ্বীন আমরা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ইমাম-মুজতাহিদ, আলিম-উলামা, মাশায়েখ কর্তৃক প্রাপ্ত হয়েছি, সে দ্বীনের দিকে আহবান করেছেন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি তিনটি বিষয় নির্দেশ মুবারক করেছেন। (১) দাওয়াত বিল-হিকমত, (২) উত্তম ওয়াজ-নছীহত দ্বারা দাওয়াত (৩) উৎকৃষ্ট পদ্ধতিতে বাহাছ ও আলোচনার মাধ্যমে দাওয়াত। প্রধানত দুটি বিষয়ের প্রয়োজন হয়। একটি হলো, নিজের দাবিকে দলীল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করা। অন্যটি হলো, প্রতিপক্ষের দাবির অসারতা প্রমাণ করা। আর তৃতীয় জিনিস হলো, উত্তম পন্থায় ওয়াজ-নছীহত করা। এর মূল হলো, মানুষের প্রতি দয়া-ইহসান, মুহব্বত। দাওয়াত বিল হিকমার উদাহরণ হিসাবে বলা যায় হুদায়বিয়ার সন্ধির পর অবস্থা স্বাভাবিকভাবেই শান্তিপূর্ণ হয়ে যায়। এ সুযোগে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন বাদশাহ, শাসক ও আরবের আমীর-উমরা বরাবর অত্যন্ত হিকমতের সাথে উত্তম পন্থায় দ্বীন ইসলাম উনার দিকে আহবান করেন। এজন্য তিনি বেশ আয়োজন করেন এবং প্রত্যেক শাসকের জন্য এমন দূত মনোনীত করেন যাঁরা সেই সকল শাসকদের অবস্থা মুতাবিক হিকমতের সাথে উত্তম ও নছীহতমূলক কথাবার্তা বলতে পারেন এবং সে সকল দেশের ভাষা (যেমন রোমক, পারসিক, কিবতী ও আবিসিনিয়া) অধিকন্তু দেশের অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আরজ করেছিলেন যে, এসব দেশের শাসকবর্গ এমন কোন পত্র গ্রহণ করে না যার উপর মোহরাঙ্কিত না করা হয়। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের জন্য একটি বিশেষ মোহর (সিল) তৈরী করেন যার বৃত্ত ছিল রৌপ্যের এবং মাঝখানে صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَّسُوْلُ اللهُ مُحَمَّدٌ এভাবে অংকিত ছিল। উত্তম পন্থায় বাহাছ ও আলোচনা উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করা যায়, নাজরানের খৃষ্টান আলিমদের সাথে বাহাছ, যার ফলে তারা পরবর্তীতে দ্বীন ইসলাম কবুল করেছিলেন। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এমনভাবে তা’লীম-তালকীন মুবারক দিতেন যাতে শ্রোতারা খুব ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারে। তিনি স্পষ্টভাবে, ধীরে ধীরে এমনকি কোন কোন কথা মুবারক তিনবারও বলতেন। পবিত্র হাদীছ শরীফে রয়েছে-
وَيَتَكَلَّمُ بِجَوَامِعِ الْكَلِمِ فَصْلٌ لَا فُصُولٌ وَلَا تَقْصِيرٌ
অর্থ: “এমন শব্দ প্রয়োগ করতেন, যা অল্প হলেও ব্যাপক অর্থবোধক। একটি কথা অপরটি থেকে পৃথক থাকতো। বক্তব্যে অপ্রয়োজনীয় বিষয় স্থান পেতো না, আবার প্রয়োজনের চেয়ে কমও হতো না। ” ওয়াজ-নছীহতের ব্যাপারে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শিক্ষা হলো কৃত্রিমতা ও ছন্দ রচনা বর্জন করা এবং ওয়াজ-নছীহতের প্রতি মানুষকে বিতৃষ্ণা না করা। ওয়াজকারীর জন্য কুরআন শরীফের নীচের তিনটি আয়াত শরীফের উপর আমল থাকা জরুরী।
(১) মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنْسَوْنَ أَنْفُسَكُمْ
অর্থ: “তোমরা কি মানুষকে সৎকাজের উপদেশ দাও এবং নিজেদের ব্যাপারে ভুলে যাও। ” (পবিত্র সূরা বাক্বারাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৪৮)
(২) মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-
لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ
অর্থ: “তোমরা নিজেরা যা করো না, তা অপরকে করতে বলো না” (পবিত্র সূরা ছফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-২)
(৩) মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا أُرِيدُ أَنْ أُخَالِفَكُمْ إِلَى مَا أَنْهَاكُمْ عَنْهُ
অর্থ: “আমি চাইনা, যেসব মন্দ কাজ করতে আমি তোমাদেরকে নিষেধ করি, সেগুলো করার জন্য নিজে এগিয়ে যাই। ” (পবিত্র সূরা হুদ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৮৮)
মূল কথা হলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উসওয়াতুন হাসানাহ। তিনি সকলের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক। তিনি তা’লীম-তালকীনের ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন শরীফ এবং হিকমত মুবারক এ দু’টি বিষয়ে গুরুত্ব দিতেন।
কাজেই, সর্বক্ষেত্রে পবিত্র সুন্নত মুবারক অনুসারে আমল করা সকলের জন্য আবশ্যক। মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে সর্ববিষয়ে সম্মানিত সুন্নত মুবারক মুতাবিক জীবন-যাপন করার তাওফিক দান করুন। (সমাপ্ত)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
‘উম্মী’ শব্দ নিয়ে বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচারের চূড়ান্ত জবাব (৭)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (২০)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (৪)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৭)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘উম্মী’ শব্দ নিয়ে বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচারের চূড়ান্ত জবাব (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (১৯)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৬)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (১৮)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আলোচনায় বা লেখনীতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ইসমে যাত বা নাম মুবারক বারবার বলা ও লেখা সম্পূর্ণ আদবের খিলাফ (২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)