সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা সারা কায়িনাত
, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
হযরত আবূ উবাইদাহ্ ইবনে র্জারাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার বেনযীর দৃষ্টান্ত মুবারক:
হযরত আবূ উবাইদাহ্ ইবনে র্জারাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি ‘আশারায়ে মুবাশ্শিরা’ উনাদের মধ্যে অন্যতম বিশেষ ব্যক্তিত্ব মুবারক। তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সূচনালগ্নেই সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেছিলেন। স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবূ উবাইদাহ্ ইবনে র্জারাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার সম্মানিত শান মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করেছেন-
لِكلِّ أمَّةٍ أمينٌ وأمينُ هذِه الأمَّةِ حضرت أبو عبيدةَ بنُ الجرَّاحِ رضى الله تعالى عنه
অর্থ: “প্রত্যেক উম্মতের একজন আমীন বা বিশ্বস্ত ব্যক্তিত্ব মুবারক রয়েছেন। আর এই উম্মতের আমীন বা বিশ্বস্ত ব্যক্তিত্ব মুবারক হচ্ছেন হযরত আবূ উবাইদাহ্ ইবনে র্জারাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি। ” সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত বদর জিহাদ মুবারক উনার কথা। হযরত আবূ উবাইদাহ্ ইবনে র্জারাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ মুবারক করছেন। আর উনার পিতা মুশরিকদের পক্ষে জিহাদ করছে। যুদ্ধের ময়দানে হযরত আবূ উবাইদাহ্ ইবনে র্জারাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি এমন কঠিনভাবে কাফিরদের ওপর আক্রমণ চালাতে থাকেন যেন তিনি মৃত্যুর প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন। মুশরিকরা উনার আক্রমণে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং তাদের অশ্বারোহী সৈনিকরা মৃত্যুর ভয়ে দিশেহারা হয়ে দিকবিদিক পালাতে থাকে। কিন্তু উনার পিতা বার বার ঘুরে ফিরে উনার সামনে এসে দাঁড়াতে লাগল। আর তিনি উনার পিতার সামন থেকে সরে যেতে লাগলেন। এক পর্যায়ে উনার পিতা শত্রুপক্ষ ও উনার মাঝখানে এসে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াল। অবশেষে অবস্থা এমন হলো যে, তিনি যদি এখন উনার পিতাকে হত্যা না করেন, তাহলে উনার পিতা একজন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে শহীদ করে ফেলবেন। তখন তিনি উনার পিতাকে তোয়াক্কা করলেন না। তিনি উনার উন্মুক্ত তরবারীর এক আঘাতে উনার পিতার শরীর থেকে গর্দানটা আলাদা করে দিলেন। উনার পিতা নিহত হলো। সুবহানাল্লাহ!
তারপর যখন সম্মানিত জিহাদ মুবারক শেষে হলেন, তখন হযরত আবূ উবাইদাহ্ ইবনে র্জারাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার ভাই এসে উনাকে বললো যে, ‘আপনি আপনার পিতাকে হত্যা করেছেন। ’ জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি আমার পিতাকে হত্যা করিনি; বরং একজন মুশরিককে হত্যা করেছি। ’ তারপর উনার ভাই বললো, ‘আমি আপনার ভাই। ’ তিনি বললেন, ‘কোনো মুশরিক আমার ভাই হতে পারে না। ’ তারপর তিনি একজন হযরত আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে দেখিয়ে বললেন যে, ‘উনি আমার ভাই। ’ এটা বলে তিনি ঐ হযরত আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার হাত ধরে উনাকে নিয়ে উনার ভাইয়ের কাছ থেকে দূরে সড়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ!
তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি নাযিল করেন-
لَا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ أُولَئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُمْ بِرُوحٍ مِنْهُ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ أُولَئِكَ حِزْبُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
অর্থ: “(আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি ওই ক্বওমকে যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের প্রতি ঈমান এনেছেন এবং পরকালের প্রতি ঈমান এনেছেন অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে আপনি কখনোই পাবেন না ঐ সকল লোকদের প্রতি মুহব্বত স্থাপন করতে যারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, শত্রুতা পোষণ করে। যদিও তারা উনাদের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি, ভাই-বোন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশী কিংবা নিকটাত্মীয়-স্বজন হোক না কেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের অন্তর মুবারক-এ সম্মানিত ঈমান উনাকে মোহরাঙ্কিত করে দিয়েছেন এবং উনাদেরকে গাইবী মদদ করেছেন। আর তিনি উনাদেরকে এমন সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ প্রবেশ করাবেন যার নিচ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত রয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট, উনারাও সেই সন্তুষ্টি মুবারক যথাযথভাবেই অর্জন করতে পেরেছেন। উনারাই মহান আল্লাহ পাক উনার একমাত্র প্রতিনিধি। সাবধান! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার মক্ববূল প্রতিনিধিগণ উনারাই একমাত্র কামিয়াবী লাভ করবেন। ” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা মুজাদালাহ্ শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২২)
তাহলে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে কতটুকু ফানা ও বাক্বা ছিলেন? তাহলে সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সবাইকে উনার মাঝে কতটুকু ফানা ও বাক্বা হতে হবে? তাহলে উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল? এক কথায় তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন; এছাড়া সব। সুবহানাল্লাহ!
মূলত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারাই হাক্বীক্বীভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত বুলন্দী শান মুবারক উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। যার কারণে উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে হাক্বীক্বীভাবে ফানা ও বাক্বা হয়ে উনার জন্য উনাদের ধন-সম্পদ সমস্ত কিছু তো বিসর্জন দিয়েছেনই; এমনকি শেষ পর্যন্ত উনাদের জানটুকুও কুরবান করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
তাই সমস্ত উম্মতের জন্য ফরযে আইন হচ্ছে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে হাক্বীক্বীভাবে ফানা ও বাক্বা হয়ে উনার জন্য তাদের ধন-সম্পদ তো অবশ্যই; এমনকি নিজেদের জানটুকুও কুরবান করে দেয়া। সুবহানাল্লাহ! তাহলেই তারা ইহকাল ও হাক্বীক্বী কামিয়াবী লাভ করতে পারবে।
উল্লেখ্য যে, পরবর্তী উম্মত যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে হাক্বীক্বী ফানা ও বাক্বা হতে চায়, তাহলে অবশ্যই আগে স্বীয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার মাঝে হাক্বীক্বী ফানা ও বাক্বা হতে হবে। উনার মাঝে হাক্বীক্বী ফানা ও বাক্বা হতে পারলে আফসেআফ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে হাক্বীক্বী ফানা ও বাক্বা হতে পারবে। সুবহানাল্লাহ! অন্যথায় কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।
-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মহাসম্মানিত খলীফা উনার অনুসরণ-অনুকরণ করা ফরয
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা সারা কায়িনাত
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত খলীফা উনার নিকট আনুগত্যতার বাইআত গ্রহণ করা ফরয
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই দায়িমীভাবে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করে যাচ্ছেন এবং অনন্তকাল যাবৎ পালন করতেই থাকবেন
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘উম্মী’ শব্দ নিয়ে বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচারের চূড়ান্ত জবাব (১৬)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহাসম্মানিত খলীফা উনার শর্তাবলী
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা সারা কায়িনাত
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক উনার গুরুত্ব এবং আবশ্যকতা:
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা সারা কায়িনাত
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আজ আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে সিব্তু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুল উমাম আল খ¦মিস আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস মুবারক
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক উনার উৎস:
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা সারা কায়িনাত
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)