তাদক্বীক্বুল আহাদীছ ফিছ্ ছহীহ ওয়াদ্ব দ্বায়ীফ ওয়াল মাওদ্বূ’:
সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার আদম আলাইহিস সালাম তিনি হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম উনাকে বয়স মুবারক দান সংক্রান্ত হাদীছ শরীফ উনার তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ (৮)
, ২রা শাবান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৫ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ২৩ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ০৯ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মহিলাদের পাতা
স্মরণীয় যে, ছিহাহ সিত্তাহ কিতাবের সকল হাদীছ শরীফই ছহীহ নয় বরং তাতেও অনেক দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ এমনকি মওজূ হাদীছও রয়েছে। মূলকথা হলো- এমন কোন হাদীছ শরীফ-এর কিতাব নেই, যে কিতাবের সকল হাদীছ শরীফই ছহীহ বা বিশুদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে সকল মুহাদ্দিছগণ একমত হয়েছেন। বরং কোন একখানা হাদীছ শরীফকে কোন একজন ছহীহ বলেছেন, অন্য একজন সেটাকে দ্বয়ীফ বলেছেন। যেমন- ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনারা এমন বহু হাদীছ শরীফ ছহীহ নয় বলে ছেড়ে দিয়েছেন, অথচ সেগুলো হযরত ইমাম আবূ দাউদ, হযরত ইমাম তিরমিযী, হযরত ইমাম নাসায়ী, হযরত ইমাম ইবনে মাজাহ, হযরত ইমাম দারু কুতনী রহমতুল্লাহি আলাইহিম প্রমুখ ইমামগণ উনারা ছহীহ বলে গ্রহণ করেছেন। (সায়িকাতুল মুসলিমীন)
আবার এমন অনেক হাদীছ শরীফ রয়েছে, যেগুলো হযরত ইমাম বুখারী ও হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনারা ছহীহ বলে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ছিহাহ সিত্তাহর অন্যান্য ইমামগণ সেগুলো ছহীহ নয় বলে পরিত্যাগ করেছেন। আর তাই বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত ইমাম সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি “আলফিয়া” কিতাবের হাশিয়ায় উল্লেখ করেন যে, “ছহীহ বুখারী শরীফ-এর ৮০ জন ও ছহীহ মুসলিম শরীফ-এর ১৬০ জন রাবীর বর্ণনাকৃত হাদীছ শরীফ দ্বয়ীফ বলে প্রমাণিত হয়েছে।” (নুয্হাতুন্ নাজার)
হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত ইমাম দারু কুতনী, হযরত আবূ আলী ও হযরত আবূ দাউদ দামেস্কী রহমতুল্লাহি আলাইহিম ছহীহ বুখারী শরীফ ও ছহীহ মুসলিম শরীফ-এর ২০০ হাদীছ শরীফকে দ্বয়ীফ বলে উল্লেখ করেছেন।” (মুক্বাদ্দিমায়ে শরহে মুসলিম)
হযরত ইমাম কুস্তলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ছহীহ বুখারী শরীফের মধ্যে এরূপ হাদীছ শরীফও রয়েছে, যা কারো মতে ছহীহ, আর কারো মতে দ্বয়ীফ।” (শরহে বুখারী)
কাশফুয যুনূন, মুক্বাদ্দিমায়ে ফাতহুল বারী ইত্যাদি কিতাবে ছহীহ বুখারী শরীফ-এর কিছু কিছু হাদীছ শরীফকে দ্বয়ীফ বলে প্রমাণ করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, ছহীহ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফে ২০ জন মরজিয়া, ২৩ জন কদিরিয়া, ২৮ জন শিয়া, ৪ জন রাফিজী, ৯ জন খারিজী, ৭ জন নাসিবী কর্তৃক হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে। (সায়িকাতুল মুসলিমীন)
মুসাল্লাম কিতাবের টীকা ৪১১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে, আল্লামা বাহরুল উলূম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, হযরত ইবনু ছালাহ এবং কতক আলিম যে বলেছেন, ছহীহ বুখারী শরীফ ও ছহীহ মুসলিম শরীফ-এর হাদীছ শরীফগুলি নিশ্চয়ই ছহীহ; কিন্তু ইহা ভ্রান্তিমূলক মত। কারণ ছহীহ বুখারী শরীফ ও ছহীহ মুসলিম শরীফ-এ বহু বিপরীত হাদীছ শরীফ রয়েছে। এ ছাড়া ক্বদরিয়া, খারিজী, রাফিজী, মরজিয়া ইত্যাদি বাতিল ফিরক্বার লোকদের বর্ণিত বহু হাদীছ শরীফ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ-এ আছে।
হযরত ইমাম দারু কুতনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছহীহ বুখারী শরীফ-এর ৯৫টি এবং ছহীহ মুসলিম শরীফ-এর ১১৫টি হাদীছ শরীফ দ্বয়ীফ বলেছেন। হাদীছ শরীফ বিশেষজ্ঞ আলিমগণ ছহীহ আবূ দাউদ, ছহীহ তিরমিযী ও ছহীহ নাসায়ী শরীফ-এর বহু হাদীছ শরীফকে দ্বয়ীফ বলেছেন। হযরত ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা হযরত ইমাম আবূ দাউদ, ইমাম তিরমিযী ও ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের বর্ণিত অনেক হাদীছ শরীফকে দ্বয়ীফ বলেছেন। পক্ষান্তরে উক্ত তিন ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা হযরত ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনাদের বর্ণিত অনেক হাদীছ শরীফকে দ্বয়ীফ বলেছেন।
সনদ বিশ্লেষণ
উপরোক্ত বর্ণনা সমূহ থেকে একটি বর্ণনার সনদ হলো:
قَالَ أَبُو يَعْلَى : حدثنا عُقْبَةُ بْنُ مُكْرَمٍ ، ثنا عُمَرُ بْنُ مُحَمَّدٍ ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ رَافِعٍ، عَنِ الْمَقْبُرِيّ ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ الله عَنْه - وقد رواه الحافظ أبو بكر البزار والترمذي والنسائي
অর্থ: হযরত ইমাম আবূ ইয়ালা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের নিকট হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন উকবা ইবনে মুকরিম রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের নিকট হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন উমর ইবনে মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি ইসমাইল ইবনে রাফে’ থেকে তিনি মাক্ববারী থেকে তিনি হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। এ হাদীছ শরীফখানা হাফিজ আবূ বকর বাজ্জার, ইমাম তিরমিযী ও ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বর্ণনা করেছেন।
উপরোক্ত বর্ণনা সম্পর্কে মুসনাদে আবূ ইয়ালা আল মাওসিলী (দারুল মা’মূন লিত তুরাস) কিতাবের ১১/৪৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে-
اسناده ضعيف - اسماعيل ابن رافع قال احمد ضعيف منكر الحديث,
অর্থ: উপরোক্ত হাদীছ শরীফের সনদ দ্বয়ীফ। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উক্ত হাদীছ শরীফের একজন রাবী - ইসমাইল ইবনে রাফে’ রাবী হিসাবে দ্বয়ীফ এবং মুনকিরুল হাদীছ।
وقال ابو حاتم منكر الحديث
অর্থ: ইমাম আবূ হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উক্ত হাদীছ শরীফের একজন রাবী ইসমাইল ইবনে রাফে’ মুনকিরুল হাদীছ।
وقال ابن معين والعجلي: ضعيف,
অর্থ: ইমাম ইবনে মুয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং আল আজালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেন, উপরোক্ত হাদীছ শরীফের সনদ দ্বয়ীফ।
و ضعفه العقيلي وابن الجارود ,وابن عبد البر والخطيب, وابن حزم,
অর্থ: ইমাম উক্বাইলী, ইবনুল জারূদ, ইবনে আব্দুল বার,খতীব এবং ইবনে হাযাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম তিনি উনারা উপরোক্ত হাদীছ শরীফের সনদকে দ্বয়ীফ বলেছেন।
وقال النسائ فى الضعفاء برقم (৩২) متروك الحديث, وقال الدارقطني , وعلى بن الجنيد متروك
অর্থ: ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার দ্বুয়াফা কিতাবের ৩২ পৃ; এবং ইমাম দারু কুতনী ও ইমাম আলী ইবনুল জুনায়েদ উনারা উপরোক্ত হাদীছ শরীফকে মাতরূক হাদীছ হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
وقال الترمذي: ضعفه بعض اهل العلم
অর্থ: ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন - বিভিন্ন উলামায়ে কিরামগণ উপরোক্ত হাদীছ শরীফের সনদ দ্বয়ীফ বলেছেন।
وقال النسائ هذا حديث منكر,
অর্থ: ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- এ হাদীছ শরীফ মুনকার
واختلف فيه على إسماعيل بن رافع،
অর্থ: এ হাদীছ শরীফ উনার একজন রাবী’ ইসমাইল ইবনে রাফে’ সম্পর্কে ইখতিলাফ রয়েছে। (আনীসুস ছারী তাখরী জু আহাদীসি ফতহুল বারী ২/১৫৮৯)
وإسناده ضعيف لضعف إسماعيل بن رافع
অর্থ: এ হাদীছ শরীফ উনার সনদ দ্বয়ীফ, একজন রাবী’ ইসমাইল ইবনে রাফে’ এর কারণে। (ইবনে সা’দ ১/৩০) (চলবে)।
-হাফিযুল হাদীছ মুহম্মদ ফদ্বলুল হক্ব।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নছীহত মুবারক:
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (২)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৮)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
“মানুষের পেট কবরের মাটি ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা পূর্ণ হবে না”
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পুরুষদের ন্যায় মহিলাদেরও দ্বীনী তা’লীম গ্রহণ করা ফরযে আইন
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
জন্মের তৃতীয় মাসে যে বিষয়গুলো লক্ষণীয়
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
জমিনে ফিতনা-ফাসাদের বড় একটা কারণ বেপর্দা-বেহায়া নারী
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)