সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১২)
, ২০ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৮ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৩ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মহিলাদের পাতা
পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
শি‘বে আবু তালিব থেকে বের হওয়ার পরপরই খাজা আবু তালিব ও সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনাদের মারিদ্বী শান মুবারক জাহির হন। অবশেষে একই বছরে উনারা উভয়ই বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। এজন্য এ বছরকে عَامُ الْحُزْن (‘আমুল হুযন অর্থাৎ দুঃখের বছর) বলা হয়ে থাকে। প্রথমে খাজা আবু তালিব ২২শে রজব ওফাত প্রাপ্ত হন। অতঃপর উনার ওফাতের পর সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র ১৭ই রমাদ্বান শরীফ পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত একটি হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে যখন তিনি মারিদ্বী শান মুবারকে ছিলেন, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জান্নাতের আঙ্গুর দ্বারা আপ্যায়ন করেন। সুবহানাল্লাহ! (শরহে আল্লামা যারক্কানী আলাল মাওয়াহিব)।
শি‘বে আবু তালিব থেকে বের হওয়ার পর পরই (অর্থাৎ নামায ফরয হওয়ার পূর্বে এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিকভাবে মিরাজ শরীফ সংঘটিত হওয়ার পূর্বে) নবুওওয়াত মুবারক প্রকাশের ১০ম বছরে ১৭ই পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ, ইয়াওমুস সাবত শরীফ, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তখন উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারক হয়েছিলেন ৬৪ বছর ৬ মাস ৩ দিন।
হযরত উম্মে আইমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ও হযরত উম্মুল ফদ্বল রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে গোসল মুবারক প্রদান করেন। পবিত্র মক্কা শরীফ উনার হাজুন নামক স্থানে যেখানে জাদ্দে রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওযা শরীফ উনার সামান্য দূরে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার রওযা শরীফ স্থাপন করা হয়। এই রওযা শরীফ উনার দূরত্ব বায়তুল্লাহ শরীফ থেকে ১ মাইল উত্তর দিকে অবস্থিত। বর্তমানে ইহাকে জান্নাতুল মু‘য়াল্লা (جنة المعلى) বলা হয়। জান্নাতুল মু‘য়াল্লায় উম্মুল মু’মিনীন আল উলা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার রওযা শরীফ উনার স্থান লোক মুখে শনাক্ত করা আছে। তবে কোন নির্দিষ্ট স্থান উনার রওযা শরীফ হিসাবে পৃথক করে রাখা হয় নি (উসুদুল গাবা, ইছাবা)।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশিত হলে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নুরুর রাবিয়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ফরিয়াদ করতে থাকেন। তিনি বার বার বলতে থাকেন أين أمى، أين أمى (আমার আম্মাজান কোথায় গেলেন, আমার আম্মাজান কোথায় গেলেন)। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে সান্ত¡না দেন এবং আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়ার সুসংবাদ দেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: সেদিন উম্মতের উপর এমন দু’টি মুছিবত (সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম ও খাজা আবু তালিব-উনাদের ওফাত শরীফ) আপতিত হয় যে, আমি বুঝে উঠতে পারছি না যে, আমি কোন্টির উপর বেশী দুঃখ করব। এই দুঃখ ও চিন্তার কারণেই উক্ত বছরের নাম রাখা হয় عام الحزن (‘আমুল হুযন অর্থাৎ দুঃখের বছর)।
পরম শ্রদ্ধেয় চাচা খাজা আবু তালিব এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনাদের বিছালী শান মুবারক প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে কুরাইশ পাষন্ডরা একেবারে বেপরোয়া হয়ে উঠে। তারা অতি নির্দয়ভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার প্রতি অসৎ আচরণ করতে থাকে। (নাউযুবিল্লাহ) এই সময়েই তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ হতে তায়েফ গমন করেন।
সার্বিকভাবে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ফযিলত:
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে সামগ্রিকভাবে সকল হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অনন্য সাধারণ ফাযায়েল-ফযীলত রয়েছেন। খালিক, মালিক, রব্ব মহান আল্লাহ পাক তিনিই উনাদেরকে এইরূপ ফাযায়েল-ফযীলত দিয়েছেন। খালিক, মালিক, রব্ব মহান আল্লাহ পাক তিনি পূর্ব থেকেই উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য উনাদেরকে মনোনীত করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা একদিক দিক দিয়ে সম্মানিত মহিলা ছাহাবী, অন্যদিকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার পূতঃপবিত্র জাওযাহ মুকাররামাহ, পবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম সম্মানিত সদস্য। আর পবিত্র আহলু বায়ত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্রতা এবং সুউচ্চ মর্যাদা-মর্তবা মুবারক সম্পর্কে খালিক, মালিক, রব্ব মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন-
إنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أهْلَ الْبَيْتِ وَ يُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْرًا -
অর্থ: হে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম! খালিক, মালিক, রব্ব মহান আল্লাহ পাক তিনি অবশ্যই চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করতে অর্থাৎ আপনাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করেই তিনি সৃষ্টি করেছেন। উনারা নিজেরা শুধু পবিত্রই নন, বরং উনারা পবিত্রতা দানকারী। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র আহলু বাইত শরীফ উনাদের মর্যাদা-মর্তবার দিক থেকে সর্বপ্রথম হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার মহা সম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আব্বা আলাইহিস সালাম তিনি এবং মহাসম্মানিতা ও মহাপবিত্র হযরত আম্মা আলাইহাস সালাম তিনি, উনারা হচ্ছেন সম্মানিত পবিত্র আহলু বাইত শরীফ উনাদের মূল। অতঃপর হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মর্যাদা-মর্তবা মুবারক, অতঃপর হযরত আবনাউ রসুলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনাদের এবং হযরত বানাতু রসুলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মর্যাদা-মর্তবা মুবারক এবং অতঃপর অন্যান্য হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা-মর্তবা মুবারক। কারণ উনারা সকলেই মহাসম্মানিত পবিত্র আহলু বাইত শরীফ উনাদের অন্তর্ভূক্ত। সুবহানাল্লাহ!
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অপরিসীম মর্যাদা-মর্তবার বিষয়ে খালিক, মালিক, রব্ব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালাম মজীদে ইরশাদ মুবারকে করেছেন,
لستن كاحد من النساء -
(অর্থাৎ আপনাদের ফযীলত এত উর্দ্ধে যে, আপনারা অন্য কোন মহিলাদের মত নন)। অর্থাৎ হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মান-মর্যাদা পৃথিবীর সকলের উর্দ্ধে। মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
اَلنَّبِـىُّ اَوْلـٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ وَاَزْوَاجُه اُمَّهٰتُهُمْ.
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা মু’মিনদের নিকট নিজেদের জানের চেয়েও অধিক প্রিয় এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টির মহাসম্মানিত পিতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টির মহাসম্মানিত মাতা আলাইহিন্নাস সালাম। (সুরা আহযাব শরীফ, আয়াত শরীফ ৬)।
তাহলে উম্মাহাতুল মু’মিনীন উনার অর্থ হচ্ছেন সমস্ত মু’মিন উনাদের মহাসম্মানিতা মাতাগণ। সুবহানাল্লাহ! এই সম্মানিত লক্বব মুবারক উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনিই হাদিয়া করেছেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ হযরত নবী-রসুল আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ সৃষ্টির শুরু থেকে এ পর্যন্ত যত মু’মিন দুনিয়াতে এসেছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মু’মিন দুনিয়ার যমিনে আসবেন, (শুধু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতীত) উনাদের প্রত্যেকেরই মহাসম্মানিতা মাতা হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা। সুবহানাল্লাহ! পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
الجَنّةُ تَحْتَ أقْدَامِ الْأُمُّهَاتِ -
অর্থাৎ সম্মানিত জান্নাত সম্মানিতা মাতা উনাদের পায়ের নিচে। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সকল নবী-রসুল, ওলী-আবদাল, গাউছ-কুতুব উনাদের বহুগুণ উর্দ্ধে সর্বোচ্চ জান্নাতে অবস্থান মুবারক করবেন। আবার হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সকলই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে একই সম্মানিত জান্নাত মুবারকে একসাথে অবস্থান মুবারক করবেন। সুবহানাল্লাহ! তাহলে দেখা যাচ্ছে একমাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতীত সকল নবী-রসুল, ওলী-আবদাল, গাউছ-কুতুব সকলেরই জান্নাত হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের কদম পাকের নীচে হবে। সুবহানাল্লাহ! এ থেকে বুঝা যায়, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান-মান, ফাযায়েল ফযীলত, বুযুর্গী সম্মান কত বে-মেছাল, যা তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও ফিকিরের উর্দ্ধে!
এককভাবে উনার ফযীলত ও মর্যাদা মুবারক:
সার্বিকভাবে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী সম্মান তো রয়েছেই, উপরস্তু সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার এককভাবে উনার অনেক অনন্য-সাধারণ বৈশিষ্ট-গুণাবলী ও ফাযায়েল-ফযিলত মুবারক ছিলেন। তিনি ছিলেন প্রথম ঈমান আনয়নকারী। সেই হিসাবে হাদীছ শরীফ অনুযায়ী-
فَلَهَا أَجْرُهَا وَ أجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا إلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ-
অর্থাৎ উনার নেক আমলের ছওয়াব তো উনি পাবেনই, উপরন্তু ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত লোক ইসলাম উনার উপর থেকে নেক আমল করবেন সকলের অনুরূপ নেক আমলের ছওয়াবও তিনি পাবেন (শরহে আল্লামা যারক্বানী আলাল মাওয়াহিব)।
দ্বীন ইসলাম উনার সূচনা পর্বে ওহী নাযিলের প্রারম্ভে অনেক ঘটনার কথা জানা যায়, যাতে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার অনুপম ধৈর্য, বিচক্ষণতা এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি প্রবল আবেগ ও বিশ্বাস এবং সর্বাবস্থায় উনার পাশে দাঁড়ানোর দৃশ্য ফুটে উঠে। এ সকল ঘটনা পর্যালোচনা করলে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে তা হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আগমনের পূর্বেই সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব এবং তিনি নবী হিসেবেই প্রকাশিত হবেন। সেজন্যই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন উনার নিকট এসে বললেন, উনার নিকট হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম এসেছেন, তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ওহী মুবারক লাভ করেছেন, তখন ক্ষণিকের জন্যও সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার মনে কোন দ্বিধা-সংশয় দেখা দেয় নি। তিনি যেন আগে থেকেই এমন একটি সুসংবাদ পাওয়ার প্রতীক্ষায় ছিলেন এবং মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন। তাই তিনি সঙ্গে সঙ্গে ইসলাম কবুল করলেন।
দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পর সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সমুদয় ধন-সম্পদ মহাসম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রচার ও প্রসারের জন্য ওয়াক্ফ করে দেন। উনার বিশাল ধন সম্পদ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মক্কা শরীফে অবস্থানকালীন সময়ে দীন ইসলাম উনার বিরাট খিদমতে কাজে লাগে।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার উল্লেখযোগ্য মুবারক বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে একটি এই ছিল যে, তিনি পঁচিশ বছর পর্যন্ত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ছোহবত মুবারকে কাটান এবং একমাত্র হযরত আন নুরুর রাবী (হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম) আলাইহিস সালাম ব্যতীত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত সকল আওলাদই উনার পবিত্র হুজরা শরীফে বিলাদতি শান মুবারক প্রকাশ করেন। (ইবনে সা’দ)। এতদ্ব্যতীত এই সৌভাগ্যও তিনি লাভ করেন যে, তিনি হায়াত মুবারকে থাকতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আর দ্বিতীয় কোন নিসবাতুল আযীম শরীফ করেন নি।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার আভিজাত্য, সম্মান ও মর্যাদা মুবারক সর্বজন স্বীকৃত। হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে উনার জন্য সালাম মুবারক নিয়ে আসতেন। এক হাদীছ শরীফে হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, একবার হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন -
هذه حضرت جديجة عليها السلام، قد اتتك بإناء فيه طعام أو إدام أو شراب، فإذا هى أتتك فاقرأ عليها السلام من ربها و منى و بشرها ببيت فى الجنة من قصب لا صخب فيه ولا نصب -
অর্থ: এই যে হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি একটি পাত্র মুবারক নিয়ে আসছেন, উহাতে খাওয়ার দ্রব্য, তরকারী অথবা পানীয় রয়েছে। তিনি যখন আপনার নিকট আসবেন, তখন আপনি উনাকে উনার মহান রব তায়ালা উনার পক্ষ থেকে এবং আমার পক্ষ থেকে সালাম বলবেন এবং উনাকে জান্নাতের মধ্যে মুক্তা খচিত এমন একটি ঘরের সুসংবাদ প্রদান করবেন, যেখানে না কোন শোরগোল রয়েছে, আর না কোন কষ্ট রয়েছে (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)।
তাবারানী শরীফে উল্লেখ আছে, এই খাদ্য বা পানীয় সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম হেরা পাহাড়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট নিয়ে যাচ্ছিলেন (শরহে যারক্বানী আলাল মাওয়াহিব)।
সীরত গ্রন্থসমূহে উল্লেখ আছে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি উনার খাদিমাকে সঙ্গে নিয়ে খাদ্য ও পানিয় হেরা পাহাড়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খেদমতে দিয়ে আসতেন। হেরা পাহাড় মক্কা শরীফ থেকে তিন মাইল উত্তর-পূর্ব দিকে একটি উঁচু পাহাড়। ইহার সর্বোচ্চ চূড়া যেখানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবস্থান মুবারক করছিলেন তা একেবারে সোজা, ঢালু ও পিচ্ছিল। সেখানে উঠা কোন পুরুষের পক্ষেও খুব কষ্টকর ছিল। ১৯৮৩/৮৪ সনে দেখা গিয়েছে, এই পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে প্রায় দুই ঘন্টার বেশী সময় লাগত এবং তা অত্যন্ত কষ্টকর ছিল। এটা ভাবতেও আশ্চর্য লাগে যে, যখন এই পাহাড়ে উঠার কোন ব্যবস্থাই ছিল না, তখন কিভাবে এবং কত কষ্ট করে এই পাহাড়ের চূড়ায় উঠে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খেদমতে খাদ্য ও পানীয় দিয়ে আসতেন? ইহা শুধু উনার সম্মানার্থে তিনি করতেন, নতুবা খাদ্য পৌঁছানোর জন্য উনার খাদিমের তো কোন অভাবই ছিল না।
তাবারানী শরীফে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত অন্য একটি হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে-
سئل رسول الله صلى الله عليه و سلم عن حضرت خديجة عليها السلام فقال أبصرتها على نهر من أنهار الجنة فى بيت من قصب لا لغو فيه و لا نصب -
অর্থ: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সম্পর্কে সুওয়াল করা হলে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: জান্নাতের নদীসমূহের একটি নদীর নিকট একটি মুক্তা খচিত ঘরে আমি উনাকে দেখেছি, যেখানে নেই কোন শোরগোল, নেই কোন কষ্ট।
উপরোক্ত দু’টি হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় হযরত সুহায়লি রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন যে, এখানে بيت (বাইত বা গৃহ) উল্লেখ করার মধ্যে একটি সূক্ষ্ম অর্থ রয়েছে, তা এই যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন দ্বীন ইসলাম উনার প্রারম্ভে এমন একটি গৃহের মালিক, যেখানে সর্বপ্রথম নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নবুওওয়াত মুবারক প্রকাশিত হয়। নবুওওয়াত মুবারক প্রকাশের প্রথমে সেই একটি গৃহ ব্যতীত পৃথিবীতে ইসলামের অন্য কোন গৃহ ছিল না। এই বিষয়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার গৃহটি একক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। সেজন্য পবিত্র হাদীছ শরীফে قصر (ক্বাছ্র অর্থাৎ প্রাসাদ) উল্লেখ না করে بيت (বাইত বা গৃহ) উল্লেখ করা হয়েছে, যা উনাকে জান্নাতে হাদিয়া করা হয়েছে। এখানে আরো একটি কারণ রয়েছে, বাইত শব্দ দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে বাইত শরীফের দিকে ইঙ্গিত রয়েছে, যা কালামুল্লাহ শরীফে এই আয়াত শরীফে উল্লেখ রয়েছে
اِنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَ يُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْرًا
(আল্লাহ পাক তিনি ইচ্ছা করেন যেন, হে রসুলের আহলে বায়ত, আপনাদের নিকট থেকে নাপাকী দূর করে দেন এবং আপনাদেরকে অতিশয় পাক-পবিত্র করে নেন অর্থাৎ আপনাদেরকে পাক-পবিত্র করেই সৃষ্টি করেছেন)।
এখানে উল্লেখিত আহলে বাইত শরীফের মূল নিসবত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা সাইয়্যিদাতুনা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার দিকে রয়েছে। এই গৃহটি পবিত্র কা’বা শরীফের সন্নিকটে উত্তর দিকে কা’বা শরীফ ও জান্নাতুল মু’য়াল্লা কবরস্তানের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। কয়েক বছর পূর্বে সউদী ওহাবী সরকার এই বরকতময় গৃহটি ভেঙ্গে ইহার শেষ চিহ্ন মুছে ফেলেছে। নাউযুবিল্লাহ।
হযরত সুহায়লি রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন যে, এই গৃহে কোন শোরগোল নেই এবং কোন কষ্ট নেই এই দু’টি গুণ পবিত্র হাদীছ শরীফদ্বয়ে উল্লেখ করা হয়েছে এজন্য যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্মানিত নবুওওয়াত ও রিসালত মুবারক প্রকাশিত হওয়ার পর যখন সর্বপ্রথম ঈমানের দিকে আহ্বান করেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনিই এই ডাকে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব না করে সর্ব-প্রথম সাড়া দেন। পাশাপাশি তিনি সান্ত¡না দিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সকল প্রকার কষ্ট দূরীভূত করার প্রচেষ্টা করেছেন। কাজেই মহান আল্লাহ পাক উনার কাজের অনুরূপ পুরষ্কার উনাকে জান্নাতে হাদিয়া করেছেন। সুবহানাল্লাহ (শরহে ‘আল্লামা যারক্বানী ‘আলাল মাওয়াহিব)।
একটি হাদীছ শরীফের বর্ণনায় জানা যায়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে বললেন: হে হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম! স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম-উনার মাধ্যমে আপনাকে সালাম দিয়েছেন। উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উক্ত সালামের জওয়াব দিলেন এভাবে-
وَ السَّلَامُ عَلَيْكَ، وَ عَلَى جِبْرَائِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ، وَإنَّ اللهَ هُوَ السَّلَامُ -
অর্থ: ইয়া রসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি এবং হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম উনার প্রতিও আমার সালাম। আর আল্লাহ পাক তিনি তো নিজেই সালাম অর্থাৎ শান্তি দাতা। তিনি অন্য কোন সালামের মুখাপেক্ষী নন।
এই জওয়াব মুবারক থেকে উনার বেমেছাল বুদ্ধিমত্তা ও সুক্ষ্ম জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সারা জীবন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার কথা স্মরণ করেছেন। তিনি যখন ছাগল জবাই করতেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম-উনার খাদেমাদের নিকট গোশ্ত হাদীয়া পাঠাতেন। উনার সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেছেন,
وَ اللهِ مَا أبدلنى اللهُ خَيْرًا مِنْهَا: آمَنَتْ بِىْ حِيْنَ كَفَرَ النَّاسُ، وَ صَدَقَتْنِىْ إذْ كَذَّبَنِىَ النَّاسُ، وَاسَطْنِىْ بِمَالِهَا إذْ حَرَّمَنِىَ النَّاسُ، وَ رَزَقَنِىَ اللهُ مِنْهَا الْوَلَدُ دُوْنَ غَيْرِهَا مِنَ النِّسَاءِ -
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! মহান আল্লাহ পাক আমাকে যেসব নিয়ামত দান করেছেন, তম্মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বোত্তম। মানুষ যখন কুফরী করেছে, তখন তিনি আমার উপর ঈমান এনেছেন, মানুষ যখন আমার উপর মিথ্যারোপ করেছে, তিনি তখন আমাকে সত্য বলে সাক্ষ্য দান করেছেন, মানুষ যখন আমাকে মাহরুম করতে চেয়েছে, তিনি আমাকে উনার ধন সম্পদ দিয়ে খিদমত করেছেন। আর উনার মাধ্যমেই মহান আল্লাহ পাক আমাকে আওলাদ হাদিয়া মুবারক করেছেন, যা তিনি আমাকে অন্য কারো মাধ্যমে দেননি। (মুসনদে ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি)।
মুসলিম শরীফের একটি হাদীছ শরীফে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন,
إنى قد رُزقتُ حبها
অর্থ মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার অন্তরে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার জন্য মহব্বত মুবারক সৃষ্টি করে দিয়েছেন (মুসলিম শরীফ)।
মহান আল্লাহ পাক সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে এমন এক বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন, যা অন্য কাউকে দেন নি। তা হচ্ছে এই যে, তিনিই হচ্ছেন উম্মু আ’লে বায়তিন নাবীয়ে ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ আওলাদে রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রথম মূল। সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নুরুর রাবিয়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম উনারই সম্মানিত সন্তান; উনার নছব শরীফ থেকে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলে বাইতে রসুলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতে রসুলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মাধ্যমে সম্মানিত আওলাদে রসুলগণ ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারী আছেন এবং থাকবেন এবং দুনিয়াবাসীদের মধ্যে হিদায়েতের নূর দ্বারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম ক্বায়েম রাখবেন। সুবহানাল্লাহ!
(সূত্রসমূহ: উসুদুল গাবা, ইছাবা, তাবাকাত, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, ইসলামী বিশŸকোষ, আসহহুস সিয়ার, আল্লামা আবদুর রউফ দানাপুরী কাদেরী, শরহে যারক্বানী আলাল মাওয়াহিব)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ঝগড়া-বিবাদের কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যেভাবে দ্বীন ইসলাম উনার দুইজন সম্মানিত খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইসি সালাম উনারা মনোনীত হয়েছিলেন
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নছীহত মুবারক:
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (২)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৮)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
“মানুষের পেট কবরের মাটি ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা পূর্ণ হবে না”
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)