আজ মহাপবিত্র ১৯শে রবীউছ ছানী শরীফ:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সাওয়ানেহ মুবারক
, ১৯ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৫ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ২৩ অক্টোবর , ২০২৪ খ্রি:, ০৭ কার্তিক, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মহিলাদের পাতা
আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত ও রিসালাত মুবারক প্রকাশের ২০ বছর পূর্বে পবিত্র মাহে রবীউছ ছানী শরীফ উনার ১৯ তারিখ ইয়াওমুল জুমু‘য়াহ্ শরীফ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি’য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! (দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার নাম মুবারক হযরত যয়নাব আলাইহাস সালাম। কুরাইশ গোত্রের বনু আসাদ বংশে উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ। উনার সম্মানিত পিতার নাম হযরত জাহাশ আলাইহিস সালাম, যিনি ইসলাম-পূর্ব যুগে বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। পিতার দিক থেকে তিনি ১০ম পুরুষে গিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মিলিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ। উনার ৯ম পূর্ব-পুরুষ হচ্ছেন হযরত আসাদ ইবনে খুযাইমা আলাইহিস সালাম। হযরত আসাদ আলাইহিস সালাম ছিলেন বনু আসাদ বংশের প্রথম পুরুষ এবং একজন প্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্ব। উনার নাম মুবারক অনুযায়ী উনার বংশের নামকরণ হয়েছে “বনু আসাদ”।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার মাতা হযরত উমাইমাহ বিনতু আবদুল মুত্তালিব আলাইহাস সালাম ছিলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আপন ফুফু। সেই হিসাবে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি’য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আপন ফুফাতো বোন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিসবতে আযীমাহ শরীফ:
মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশক্রমে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার নিসবতে আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। পবিত্র কুরআন শরীফে একখানা পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করে মহান আল্লাহ পাক তিনি বিষয়টি পরিষ্কার করে দিলেন যে, এই নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ উনার ব্যবস্থা মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই করেছেন। এ বিষয়ে পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হলো-
فَلَمَّا قَضَى زَيْدٌ مِنْهَا وَطَرًا زَوَّجْنَاكَهَا لِكَىْ لَا يَكُوْنُ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ حَرَجٌ فِى أزْوَاجِ أدْعِيَائِهِمْ إذَا قَضَوْا مِنْهُنَّ وَطَرًا وَ كَانَ أمْرُ اللهِ مَفْعُوْلًا.
অর্থ: হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন উনার নিকট থেকে নিজ প্রয়োজন পূর্ণ করে নিলেন, তখন আমি আপনার সাথে উনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত করে দিলাম। যেন নিজেদের মুখে-ডাকা পুত্রদের আহলিয়াদের ব্যাপারে মু’মিন লোকদের কোন অসুবিধা না থাকে- যখন তারা তাদের নিকট থেকে নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করে নেয়। মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ তো বাস্তবায়ন হতেই হবে। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ, আয়াত শরীফ নং ৩৭)
এই একখানা আয়াত শরীফ দ্বারা মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সাথে আপনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ উনার কাজটি আমিই সমাধা করে দিলাম।
পবিত্র আয়াত শরীফে উল্লেখিত, “আমি আপনার সাথে উনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ করিয়ে দিলাম” এই ক্বওল শরীফ ও ব্যবহৃত শব্দ মুবারকগুলো দ্বারা একথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, এই নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ সরাসরি স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক ইরাদা ও মুবারক নির্দেশ মতই সম্পাদিত হয়েছে। এই নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ উনার কাজটি সম্পন্ন হয় ৫ম হিজরী সনের পবিত্র যিলক্বদ শরীফ মাসের ৮ তারিখ, লাইলাতু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ অর্থাৎ লাইলাতুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার)। সুবহানাল্লাহ! এই সময় সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার বয়স মুবারক হয়েছিল ৩৭ বছর ৬ মাস ১৯ দিন। সুবহানাল্লাহ! (সিয়ারু আলামিন নুবালা, দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)
বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি’য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি হিজরী ২০ সনের ২৩শে জুমাদাল ঊখরা শরীফ, সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ অর্থাৎ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। দুনিয়াবী দৃষ্টিতে উনার হায়াত মুবারক তখন হয়েছিলেন ৫২ বছর ২ মাস ৪ দিন। পবিত্র জান্নাতুল বাকী শরীফে উনার পবিত্র রওযা শরীফ।
জীবিত থাকতেই তিনি উনার নিজ কাফন মুবারক প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি ওছীয়ত মুবারক করে যান যে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম যদি আর একটি কাফনের ব্যবস্থা করেন, তবে উনার নিজের কাফনটি যেন গরীবদের মধ্যে বন্টন করা হয়। তিনি আরো ওছীয়ত মুবারক করে যান যে, উনার জিসিম মুবারক যেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জিসিম মুবারক যে মুবারক খাটিয়ায় রাখা হয়েছিল, সে খাটিয়ায় বহন করে নেয়া হয়। আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার পর তিনিই প্রথম মহিলা যে, উনাকে এই পবিত্র খাটিয়ায় উঠানো হয়। এভাবে উনার দু’টি ওছীয়ত মুবারকই পালিত হয়। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনার জানাযার নামায পড়ান। সুবহানাল্লাহ!
বিশেষ খুছুছিয়ত মুবারক ও বিশেষ লক্বব মুবারক:
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের নিকট ইরশাদ মুবারক করেছিলেন-
أسرعكن بى لحوقا اطولكن يدًا.
(আপনাদের মধ্যে যাঁর হাত মুবারক সবচেয়ে লম্বা তিনি আমার সঙ্গে অতিসত্ত্বর সাক্ষাত করবেন)।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ অর্থাৎ দীদার মুবারকে তাশরীফ মুবারক নেয়ার পর হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে উক্ত মজলিসে উপস্থিত হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা প্রথমে শাব্দিক অর্থ হিসাবে যাঁর হাত লম্বা তিনিই প্রথমে বিছালী শান মুবারক গ্রহণ করবেন, এইরূপ ধারণা পোষণ করতেন। সেই হিসাবে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্পর্কেই সকলের ধারণা ছিল যে, তিনিই প্রথমে বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করবেন। কারণ উনার হাত মুবারক সকলের চেয়ে লম্বা ছিলেন। পরে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি’য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি যখন বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করলেন, উনারা সকলেই বুঝতে পারলেন যে, হাত লম্বা দ্বারা অত্যধিক দানশীলা বুঝানো হয়েছে।
কারণ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার মুবারক হাত স্বাভাবিক থেকে বেশী লম্বা ছিল না। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি এ সম্পর্কে বলেন-
كَانَتْ أطْوَلُنَا يَدًا زَيْنَبُ لِأنَّهَا كَانَتْ تَعْمَلُ بِيَدٍ وَ تَتَصَدَّقُ
অর্থ: আমাদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা হাতের অধিকারিণী ছিলেন হযরত যয়নাব আলাইহাস সালাম। কারণ, তিনি হাতের কাজ করিয়ে উপার্জিত অর্থ প্রচুর দান করতেন।
ফযীলত ও মর্যাদা মুবারক:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি’য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি মাঝেমধ্যে উনার নিজ নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ উনার কথা উল্লেখ করে বলতেন, অন্যান্যদের নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ উনাদের পিতা-মাতা ব্যবস্থা করেছেন, আর আমার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ স্বয়ং খ¦ালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং আসমানে ব্যবস্থা করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (ইছাবা)
একবার কোন এক প্রসঙ্গে তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখে বলেছিলেন- ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার অন্য কোন আহলিয়ার মত নই। উনাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ উনার পিতা, ভাই, অথবা খান্দানের কোন অভিভাবক ব্যবস্থা করেননি। একমাত্র আমার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফই মহান আল্লাহ পাক তিনি আসমান থেকে আপনার সাথে সম্পন্ন করিয়েছেন। আপনার ও আমার দাদা একই সম্মানিত ব্যক্তি অর্থাৎ হযরত আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম। আর আমার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ উনার ব্যাপারে হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম ছিলেন দূত। সুবহানাল্লাহ! (তাবাক্বাত, আনসাবুল আশরাফ)
হাফেজ যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
فَزَوَّجَهَا اللهُ بِنَبِيِّهِ بِلَا وَلِىٍّ وَ لَا شَاهِدٍ
অর্থাৎ খ¦ালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ উনার সম্মানিত নবী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে কোন অভিভাবক ও সাক্ষী ছাড়াই করিয়ে দেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি উনার সম্পর্কে মন্তব্য করেন-
يَرْحَمُ اللهُ زَيْنَبْ بِنْتِ جَحْشٍ لَقَدْ نَالَتْ فِىْ هَذِهِ الدُّنْيَا الشَّرَفَ لَا يَبْلُغُهُ شَرَفٌ - إنّ اللهَ زَوَّجَهَا بنبيهِ فِى الدُّنْيَا وَ نَطَقَ بِهِ الْقُرْآنُ
অর্থ: খ¦ালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত যয়নাব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম উনার প্রতি সদয় হোন! সত্যিই তিনি দুনিয়াতে অতুলনীয় সম্মান ও মর্যাদা লাভ করেছেন। খ¦ালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক স্বয়ং উনার সম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ উনার ব্যবস্থা করিয়ে দিয়েছেন এবং উনার সম্মানার্থে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার কয়েকটি আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (তাবাক্বাত)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার প্রশংসায় বলেন-
كَانَتْ صَالِحةً صَوَّامَةً قَوّاَمَةً
অর্থাৎ তিনি ছিলেন খুব বেশী সৎকর্মশীলা, বেশী রোযা পালনকারিনী ও বেশী বেশী ছলাত বা নামায আদায়কারিণী। সুবহানাল্লাহ! (ইছাবা, সিয়ারু আলামিন নুবালা)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি’য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি খুব বেশী দান খয়রাত করতেন। তিনি নিজস্ব প্রক্রিয়ায় চামড়া দাবাগত করে পাকা করাতেন এবং তা থেকে যে আয় হতো তা সবই অভাবী লোকদের দান করে দিতেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা, ইছাবা)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি উনার প্রশংসায় আরো বলেন, সম্মানিত দ্বীন সংক্রান্ত ব্যাপারে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন যয়নাব আলাইহাস সালাম অপেক্ষা উত্তম কোন মহিলা আমি দেখিনি, যিনি ছিলেন অত্যন্ত খোদাভীরু, অত্যন্ত সত্যবাদী, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারিণী, শ্রেষ্ঠ আমানতদার ও দান-খয়রাতকারিণী।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একবার সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন, হযরত যয়নাব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম لأَوَّاحَةٌ (অর্থাৎ অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি অনুরাগিনী)। এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি অনুরাগিনীর অর্থ কি? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক উনাকে অধিক ভয়কারিনী এবং অধিক ক্রন্দনকারিনী। সুবহানাল্লাহ!
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের প্রত্যেকের জন্য বায়তুল মাল থেকে বার্ষিক নির্ধারিত বরাদ্দকৃত ভাতা নির্ধারণ করেন। তরতীব অনুযায়ী সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার নিকট ১২ হাজার দিরহাম পাঠালেন। তিনি ইহা গ্রহণ করে আত্মীয়-স্বজন ও ইয়াতিমদের মধ্যে বন্টন করে দিলেন। অতঃপর দোয়া করলেন, আয় মহান আল্লাহ পাক! সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ইবনে খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনার ভাতা যেন এরপর আমার নিকট আর না পৌঁছে। অতঃপর এক বছর শেষ না হতেই তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার প্রদত্ত ভাতা আর উনাকে গ্রহণ করতে হয়নি। (ইছাবা)
উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি উনার প্রশংসায় বলেন যে, এই সম্মানিতা নারী তিনি আর হায়াত মুবারকে নেই। তাই ইয়াতীম ও বিধবাগণ এখন ভগ্ন হƒদয় হয়ে গেল। (তাবাকাত)
উনার পর উনার কোন সম্পদ বাকি ছিল না। কারণ যা কিছু উনার নিকট আসত, সবই তিনি দান করে দিতেন। পবিত্র মদীনা শরীফের গরীব দুঃখীরাসহ সকলেই উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর গভীর শোক প্রকাশ করেছিল। (ইছাবা)
সূত্রসমূহ: উসুদুল গাবা, ইছাবা, তাবাকাত, আসাহহুস সিয়ার, অন্যান্য সীরত গ্রন্থাবলী, দৈনিক আল-ইহসান শরীফ।
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনভী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নছীহত মুবারক:
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (২)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৮)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
“মানুষের পেট কবরের মাটি ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা পূর্ণ হবে না”
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পুরুষদের ন্যায় মহিলাদেরও দ্বীনী তা’লীম গ্রহণ করা ফরযে আইন
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
জন্মের তৃতীয় মাসে যে বিষয়গুলো লক্ষণীয়
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
জমিনে ফিতনা-ফাসাদের বড় একটা কারণ বেপর্দা-বেহায়া নারী
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)