অমুসলিম মহিলাদের দ্বীন ইসলাম গ্রহণের ঈমানদীপ্ত ঘটনা:
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম এটাইতো সে বিষয় যা বহু বছর ধরে আমি খুঁজছিলাম -মার্কিন নও মুসলিম ডায়না বিটি
, ১৮ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৯ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ১৫ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মহিলাদের পাতা
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে এ মহান দ্বীন উনার ছায়াতলে আশ্রয় নেয়া মার্কিন নও-মুসলিম মাসুমাহ বা সাবেক ডায়ানা বিটি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমি জন্ম নিয়েছিলাম যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের একটি খ্রিস্টান পরিবারে। অবশ্য আমরা খুব একটা ধর্ম পালন করতাম না এবং আমাদের ঘরে ধর্মের প্রতি খুব একটা গুরুত্ব দেয়া হ’ত না।
তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ছিলো মরমোন সম্প্রদায়ের খ্রিস্টান। আর আমার মা বড় হয়েছে প্রোটেস্টান্ট পরিবারে। আমার মনে পড়ে আমার বাবা-মা প্রতি রোববারে আমাকে ও আমার ভাইকে গির্জার স্কুল বা খ্রিস্ট ধর্ম শিক্ষা কেন্দ্রে পাঠাতো, কিন্তু তারা নিজেরা গির্জায় উপস্থিত না হয়ে ঘরে থাকতো। তরুণ বয়সেই আমার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্পর্কে আগ্রহ জন্মেছিল। আমি নিজেকেই প্রশ্ন করতাম সত্যিই কি মহান আল্লাহ পাক উনার অস্তিত্ব আছে? যদি থেকে থাকে তাহলে তিনি কী চান আমাদের কাছে?
মার্কিন নও-মুসলিম মাসুমাহ বা সাবেক ডায়ানা বিটি আরো বলেছেন, ‘আমি বাইবেলসহ খ্রিস্ট ধর্মের নানা বই পড়তে লাগলাম কোন পূর্ব-অনুমান ছাড়াই। হাইস্কুলের ছাত্রী অবস্থায়ই বাইবেলের মধ্যে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি ও অসঙ্গতি খুঁজে পেলাম। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে এটা আমার নযরে পড়ল যে বাইবেলের কোথাও সাইয়্যিদুনা হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক এবং কোথাও উনাকে মানুষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সে সময় ভাবতাম সমস্যাটা হয়তো আমারই এবং আমি হয়তো এখনও এ বিষয়টি বোঝার যোগ্যতা অর্জন করিনি’।
নও-মুসলিম মাসুমাহ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রপাত প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমি সব সময়ই বিভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিলাম। ধীরে ধীরে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সম্পর্কে আমার মধ্যে কিছু কৌতূহল জাগে। আর ঐ দিনগুলোতেই একজন মুসলমানের সঙ্গে পরিচয় ঘটে আমার’। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে প্রশ্ন করতাম, কেন এই বিশেষ পদ্ধতিতে তিনি সালাত বা নামায পড়ছেন? কেন তিনি বিভিন্ন বিশ্বাস ও কার্যক্ষেত্রে সেগুলোর প্রয়োগ বা ইবাদত-বন্দেগীর অনুসারী তা জানতে ইচ্ছে হতো। খ্রিস্টানদের প্রার্থনা ও উপাসনার বিশেষ কোনো পদ্ধতি নেই। খ্রিস্ট ধর্ম থেকে আমাদের এটা শেখানো হয়েছে যে, আমার যা কিছুই প্রয়োজন তা যেন সাইয়্যিদুনা হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার কাছ থেকেই চাই, মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে নয়’।
তিনি আরো বলেন. ‘খ্রিস্ট ধর্মে ইবাদতের প্রকৃত বা বাস্তব অস্তিত্ব নেই, যদিও আমাদের বলা হয় যে, সাইয়্যিদুনা হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি আমাদের পাপের জন্য নিজেকে কোরবানী করেছেন বলে তার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। আমি চাইতাম যে, মহান আল্লাহ পাক উনার সঙ্গে আমার সম্পর্ক যেন কেবলই কিছু ইচ্ছা পূরণের বা দোয়া কবুল হওয়ার পর্যায়েই সীমিত না থাকে। তাই আমি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার শরণাপন্ন হলাম এবং উনার অনুবাদ পড়া শুরু করলাম’।
নও-মুসলিম মাসুমাহ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রপাত প্রসঙ্গে আরো বলেছেন, ‘প্রথমবার আমি যখন পবিত্র কুরআন শরীফ পড়ি তখন আমার মধ্যে দ্বি-মুখী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইহুদি ও খ্রিস্ট ধর্মের অনেক নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের জীবনী স্থান পাওয়ায় একদিকে বেশ বিস্মিত হয়েছিলাম। এর আগে খ্রিস্টান, ইহুদি ও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। আমি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে প্রাচ্যের হিন্দু বা বৌদ্ধ ধর্মের মত কোনো ধর্ম বলে মনে করতাম’।
তিনি বলেন, ‘অন্যদিকে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফে যখন দেখি যে সাইয়্যিদুনা হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার পুত্র বা তিন ¯্রষ্টার মধ্যে অন্যতম খোদা বলে বিবেচিত কিছু নন তখন পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠই বন্ধ করে দেই। কারণ, এ ধারণা ছিল সেই সময় পর্যন্ত আমি যা জানতাম তার সম্পূর্ণ বিপরীত। এ ছাড়া পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত অন্য বিষয়গুলো ছিল আমার জানা বিষয়গুলোর অনুরূপ। ধীরে ধীরে আমার মধ্যে এ চিন্তা জেগে উঠল যে, খ্রিস্ট ধর্ম সম্পর্কে আমাদের যা যা শেখানো হয়েছে কেন তা এত সহজেই বিশ্বাস করেছিলাম?’
তিনি বাইবেল পাঠচক্রের প্রধান ও এর সদস্যদের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করতেন কিন্তু কোনো উত্তর পেতেন না।
ডায়ানা বলেছেন, আমাদের বাইবেল পাঠচক্রের প্রধান কিছু দিন আলজেরিয়ায় খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারে মশগুল ছিলেন। তাই আমি তার কাছেই আমার প্রশ্নগুলো তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেই’। ‘আমি তাকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করি, এ পর্যন্ত কখনও তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ পড়েছেন কিনা। তার উত্তর শুনে আমি অবাক হলাম। কারণ, তিনি বললেন, কুরআনের কোন কোন অংশের দিকে খুব অল্প সময়ের জন্য চোখ বুলিয়ে গেছি! ফলে আমি বুঝতে পেরেছি যে আমি মাত্র কয়েক মাস ধরে পবিত্র কুরআন শরীফ পড়ে এই খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারকের চেয়েও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে বেশী জ্ঞান অর্জন করেছি। তাই আমি খুব দ্রুত তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করি। যে পবিত্র কুরআন শরীফই পড়েনি সে তো এ মহান আসমানী কিতাব সম্পর্কে সঠিক বিচার-বিবেচনা করতে পারবে না’।
মাসুমাহ আরও বলেছেন, বাইবেল স্টাডি সার্কেলের ওই প্রধানসহ খ্রিস্টানদের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বা পবিত্র কুরআন শরীফ সম্পর্কে কোনো পড়াশুনা না করেই আমাদের এভাবে ধর্ম সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান দিচ্ছে বলে আমি ভীষণ ক্ষুব্ধ হলাম। তারা আমাদের যা শেখাচ্ছে তা আসলে নিজেদের মনগড়া কথা ছাড়া আর কিছু নয়। এ ঘটনা ছিল আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া ঘটনা।
তিনি বলেন, এর কারণ হলো, আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলাম যে সত্যকে খোঁজার যে চেষ্টা আমি করছি সেই পথে সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে কারো ওপর ভরসা করতে পারছি না। বরং আমাকে একাই এ পথে এগিয়ে যেতে হবে। ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম যে ত্রিত্ববাদের ওপর আমার আর আস্থা নেই।
আমি এটা আর এড়িয়ে যেতে পারছিলাম না যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল এবং পবিত্র কুরআন শরীফ মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম মুবারক। এ অবস্থায় গবেষণা শুরু করার কয়েক মাস পরই আমি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে আমার দ্বীন হিসাবে বেছে নেই।
মাসুমাহ মনে করেন, যারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে কিছুই জানে না তাদের কাছে এটা বোঝানো খুব কঠিন যে এ দ্বীন কিভাবে মানুষের জীবন-পদ্ধতিকে বদলে দেয় এবং মানুষের উন্নতি ঘটায়। তিনি বলেছেন, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম আমার জীবনকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। সঠিক পথের দিশা পাওয়ার পর থেকে এ পৃথিবীতে জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে আমার মধ্যে আর কোনো দ্বন্দ্ব নেই।
মাসুমাহ আিরো বলেছেন, মানুষ যখন জানতে পারে যে তার জীবনের লক্ষ্য রয়েছে তখন সে মানসিক ও চিন্তাগত প্রশান্তি লাভ করে। খ্রিস্ট ধর্ম ত্যাগ করে যখন সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করলাম তখন মনে হল এটাই তো সে বিষয় যা বহু বছর ধরে আমি খুঁজছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ আমি তা পেয়েছি।
-উম্মু রাহাত।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার একখানা বিশেষ স্বপ্ন মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা অন্য কারো মতো নন; উনারা বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক উনার অধিকারিণী
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কিভাবে প্রথম মাসে আপনার শিশুর বিকাশে সাহায্য করবেন?
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘ই’জায শরীফে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সন্তানদের ও পরিবারের সকলকে সালাম দেয়া শিক্ষা দান করুন
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৪)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কাফের বিশ্বে নারীরা শুধু কি এখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে?
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একজন দ্বীনদার পরহেযগার আল্লাহওয়ালী মহিলা উনার পর্দা পালনের বেমেছাল দৃষ্টান্ত
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)