সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে সমৃদ্ধশালী ও গুরুত্বপূর্ণ নৌবন্দরসমূহ (১)
, ০৮ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৯ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ০৫ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) ইতিহাস
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে সমুদ্র অভিযান, নৌ-যুদ্ধ, নৌ-বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান দখল করে আছে। আর এসবের পাশাপাশি সমূহ ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলো তৎকালীন বিভিন্ন নৌবন্দরগুলো। যেগুলো মুসলমানগণ বিজয় করেছিলেন। এখন আমরা মুসলমানদের বিজয় করা নৌবন্দর সমূহের সংক্ষিপ্ত পরিচিত জানবো-
জার: এ নৌবন্দরটি লোহিত সাগরের আরব উপকূলে বর্তমান আমবু বন্দরের সন্নিকটে অবস্থিত ছিলো। সপ্তম হিজরীতে যে মুসলিম দলটি হাবশা (আবিসিনিয়া) থেকে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন, উনারা এই বন্দরেই অবতরণ করেন। এতে বোঝা যায় যে, এই বন্দরটি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার শুরুর যুগ থেকেই সুপরিচিত ছিলো। আমিরুল মুমিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফতকালে মিসর ও সিরিয়া বিজয়ের পর এর গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। অতঃপর খাল কেটে নীল নদ ও লোহিত সাগরের মধ্যে সংযোগ তৈরী করলে এটি প্রভূত মর্যাদার অধিকারী হয়। কেননা জার বন্দরটি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার নৈৗবন্দর হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিলো। পবিত্র মদীনা শরীফ উনার জন্য চতুর্দিক থেকে মালামাল এসে নামতো এবং এই জার বন্দর থেকেই মুসলিম বাণিজ্য তরীগুলো হাবশা, মিসর, এডেন, হিন্দুস্তান ও চীনদেশ পর্যন্ত যাতায়াত করতো।
শুরু থেকেই এই বন্দরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। জার বন্দর কেবল নৌবন্দরই ছিলো না, মুসলিম জ্ঞান বিজ্ঞান ও শিল্প সাহিত্যের অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিলো। এখানে ইতিহাস বিখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিকগণ জন্মগ্রহণ করেন। বড় বড় স্থাপনা নির্মিত হয়।
জার বন্দরের বিপরীত দিকে সমুদ্র মাঝে এক বর্গমাইলের একটি দ্বীপ ছিলো। দ্বীপটির নাম ছিলো কারাফু। সেখানে লোকজন নৌকায় যাতায়াত করতো। জারের ন্যায় এখানেও একটি মনোরম বসতি ছিলো।
উবাল্লা: বসরার অদূরে দজলা (টাইগ্রিস) নদীর তীরে সুপ্রাচীন এক ইরানী নৌবন্দর ছিলো। নাম ছিলো উবাল্লা। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আগমনের পর এটি কেন্দ্রীয় মর্যাদা লাভ করেছিলো। পূর্বে এটি ইরানী সেনা ছাউনী ও বাণিজ্য বন্দর ছিলো। চতুর্দশ হিজরীতে এটি মুসলমানগণদের দ্বারা বিজিত হয়। এখানে বিশেষভাবে চীন ও হিন্দুস্তানগামী জাহাজ থাকতো। এই বন্দর বিজয়ের মাধ্যমেই মুসলমানগণ পূর্নরূপে ইরান বিজয় করতে সক্ষম হন। ২৫৬ হিজরী পর্যন্ত এই বন্দরের প্রভাব বিদ্যমান ছিলো। এরপর এর গুরুত্ব লোপ পেতে থাকে।
বসরা: এই নৌবন্দরটি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারককালে চতুর্দশ হিজরীতে কারনা ও শাতিল আরবের মধ্যস্থলে নির্মিত হয়। ভৌগোলিক অবস্থানগত গুরুত্বের কারণে স্বল্পকালের মধ্যেই বসরা সমৃদ্ধি লাভ করে। ধীরে ধীরে এটি চীন ও হিন্দুস্তানগামী জাহাজের এক বিশিষ্ট কেন্দ্রে পরিণত হয়। মুসলমানদের সিন্ধু বিজয়ের পর এর গুরুত্ব আরো বৃদ্ধি পায়। সিন্ধু ও বসরার যোগাযোগ আরো ঘনিষ্ঠ হয়।
সীরাফ: এই নৌবন্দরটি হিজরী তৃতীয় শতক বসরার অদূরে পারস্যোপসাগরে স্থাপিত হয়। এটিরও জৌলুস ছিলো অত্যাধিক। আরবের বাণিজ্য তরী এই বন্দর দিয়েই চীন ও হিন্দুস্তান যাতায়াত করতো।
এডেন: আমন উপকুলে এডেন বন্দর অবস্থিত। এটি সুপ্রাচীন বন্দর। হিজরী তৃতীয় শতকে প্রভূত উন্নত হয়েছিলো এটি। এডেন ইয়ামেনের রাজধানী সানার নৌবন্দর ছিলো। এখান দিয়ে হাবশা, মানদাব, জেদ্দা, হিন্দুস্থান ও চীনের বাণিজ্য তরী আসা যাওয়া করতো। হিজরী চতুর্থ শতকে সমৃদ্ধির উচ্চশিখরে আরোহন করে এই বন্দরটি। এডেন বাজার খুবই বিখ্যাত ও মালামালে ভরপুর ছিলো। দুনিয়াজুড়ে এর সুখ্যাতি ছিলো।
(পরবর্তী পর্বে আরো কিছু নৌবন্দরের বর্ণনা প্রকাশিত হবে। ইনশাআল্লাহ!)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তাতার বিরোধী যুদ্ধে হযরত আমীর খসরু দেহলভী চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আজকের নগরসভ্যতার জনক মুসলমানগণই
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আফগানিস্তানেও উগ্রতাবাদী ওহাবী-সালাফীদের অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আগলাবী সালতানাতের মুসলিম নৌবহর (১)
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বর্ণালী যুগে মুসলমানদের বিজয় রহস্য এবং বিধর্মীদের স্বীকারোক্তি (১)
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারস্যের এক গভর্নরের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের ঘটনা
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)