ইতিহাস
সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার সময়কার একটি ঈমানদীপ্ত ঘটনা
, ১৯ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৪ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০৭পৌষ , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) ইতিহাস
সম্মানিত ইসলামী ইতিহাসের একটি বড় স্থানজুড়ে আছে ন্যায়বিচার, ইনসাফ এবং ক্ষমার দৃষ্টান্ত। মুসলমান উনাদের ইনসাফপূর্ণ আচরণের মাধ্যমেই পথহারা বিধর্মীরা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে সম্মানিত হয়েছিলেন। এমনই একটি ইনসাফ, ন্যায়পরায়নতা এবং ক্ষমার ঘটনা ঘটেছিলো খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত খিলাফত মুবারককালে।
একদিন দু’জন সহোদর ভাই এক বালককে টেনে ধরে নিয়ে আসলেন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার কাছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কেন ওই বালককে এভাবে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে। উত্তরে উনারা বললেন, এই বালক আমাদের পিতাকে হত্যা করেছে।
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনি কি সত্যিই তাদের পিতাকে হত্যা করেছেন? বালকটি বললেন, ‘হ্যাঁ, আমি হত্যা করেছি তবে তা ছিল দূর্ঘটনাবশত, আমার উট তাদের বাগানে ঢুকে পড়েছিল তা দেখে তাদের পিতা একটি পাথর ছুড়ে মারলো, যা উটের চোখে লাগে। আমি দেখতে পাই যে, উটটি খুবই কষ্ট পাচ্ছে। যা দেখে আমার গোস্বা পয়দা হয় এবং একটি পাথর নিয়ে তার দিকে মারি, পাথরটি তার মাথায় লাগে এবং উনি মারা যান।
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি দু’ভাইকে বললেন, আপনারা কি বালককে ক্ষমা করবেন?’ উনারা বললেন- না, আমরা তার মৃত্যুদন্ড চাই। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বালকটির কাছে জানতে চাইলেন, আপনার কি কোনো শেষ ইচ্ছা আছে? বালকটি বললেন, আমার আব্বা ইন্তেকাল করার সময় আমার ছোট ভাইয়ের জন্য কিছু সম্পদ রেখে যান, যা আমি এক যায়গায় লুকিয়ে রেখেছি। আমি তিন দিন সময় চাই, যাতে আমি সেই জিনিস গুলো আমার ভাইকে দিয়ে আসতে পারি। আমার কথা বিশ্বাস করুন। তিনি বললেন, আমি আপনাকে বিশ্বাস করতে পারি যদি একজন জামিন জোগাড় করতে পারেন, যিনি নিশ্চয়তা দেবেন যে আপনি ফিরে আসবেন? বালকটি দরবারের চারদিকে তাকালো এত মানুষের মধ্যে কেউই তার জামিন হলো না।
হঠাৎ দরবারের পেছন থেকে একটি হাত উঠলো। কার হাত মুবারক ছিলেন এটি? বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবু যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার। তিনি বললেন, আমি তার জামিন হবো। ফিকিরের বিষয়, জামিন মানে হলো, যদি বালকটি ফিরে না আসে তবে হযরত আবু যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।
সুতরাং বালকটিকে ছেড়ে দেওয়া হলো। এক দিন গেল, দ্বিতীয় দিনেও বালকটি আসলো না, তৃতীয় দিনে দু’ভাই হযরত আবু যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে গেলেন। তিনি বললেন, আমি মাগরিব পর্যন্ত অপেক্ষা করব। মাগরিবের কিছুক্ষণ আগে হযরত আবু যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার কাছে রওনা হলেন। পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অধিবাসীগণ উনারাও পেছন পেছন যেতে লাগলেন। সবাই দেখতে চান কি ঘটে। সত্যিই কি হযরত আবু যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে বালকের কারণে? চারদিকে পিনপতন নীরবতা। কি হতে চলেছে।
হঠাৎ মাগরিবের আযানের কিছুক্ষণ আগে সেই বালক চিৎকার দিয়ে দৌড়ে এসে সেই স্থানে পৌঁছলেন। তাকে দেখে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে বালক আপনি কেন ফিরে এসেছেন? আমি তো আপনার পিছনে কোনো লোক পাঠাইনি। কোন জিনিসটা আপনাকে ফিরিয়ে আনলো? বালকটি বললেন, আমি চাই না যে, কেউ বলুক একজন মুসলিম কথা দিয়েছিলো কিন্তু সে তা রাখেনি, তাই আমি ফিরে এসেছি।
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আবু যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন, আপনি কেন এই বালকের জামিন হলেন? হযরত আবু যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি দেখলাম একজন মুসলমানের সাহায্য প্রয়োজন, আমি চাই না যে, কেউ বলুক একজন মুসলমানের সাহায্য প্রয়োজন ছিল কিন্তু কোন মুসলমান তাকে সাহায্য করেনি। এ কথা শুনে দুই ভাই বললেন, আমরাও চাই না যে কেউ বলুক একজন মুসলমান ক্ষমা চেয়েছিলো কিন্তু অন্য মুসলমান তাকে ক্ষমা করেনি। ’ তারপর বালকটি মুক্তি পেল। সুবহানাল্লাহ!
-মুহম্মদ শাহ জালাল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে ভারতীয় লুটেরা সেনাবাহিনীর নজীরবিহীন লুটপাটের ইতিহাস
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে স্বর্ণ পরিশোধন ও রফতানি
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দিল্লির সুলতান হযরত শামসুদ্দীন আলতামাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার গুনাহমুক্ত জীবন
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তাতার বিরোধী যুদ্ধে হযরত আমীর খসরু দেহলভী চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আজকের নগরসভ্যতার জনক মুসলমানগণই
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আফগানিস্তানেও উগ্রতাবাদী ওহাবী-সালাফীদের অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আগলাবী সালতানাতের মুসলিম নৌবহর (১)
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)