ইতিহাস
ষড়যন্ত্র ও শঠতার মাধ্যমে যেভাবে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছিলো রাশিয়া-আমেরিকা
, ২০ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৯ ছানী, ১৩৯২ শামসী সন , ২৭ জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ১২ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) ইতিহাস
১৯৪৭ সালে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনে দুটি পৃথক রাষ্ট্র এবং একটি ফেডারেল রাষ্ট্র গঠনের জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ভোটাভুটির আয়োজন করে। এই আয়োজনটির উদ্দেশ্য ছিলো, সারা বিশ্ব থেকে ইহুদীদের একজোট করে ফিলিস্তিনে নিয়ে গিয়ে সেখানে ইহুদীদের স্বাধীন আবাসভূমি কায়েম করা। সেই ভোটাভুটিতে স্বাধীন ফিলিস্তিনকে বিভক্ত করে সেখানে একটি ইহুদী রাষ্ট্র কায়েমের প্রস্তাব পাশ হয়। প্রস্তাব পাশ হওয়ার পর জাতিসংঘে আরব মুসলিম রাষ্ট্রগুলো এর তীব্র বিরোধীতা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিন বিভক্তির প্রস্তাবকেই গুরুত্ব দেয়া হয়।
বিভক্তির প্রস্তাব পাশ হওয়ার পর ফিলিস্তিনে অনুপ্রবেশ করা ইহুদীরা ফিলিস্তিনী মুসলমানদের উপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালানো শুরু করে। ইহুদীদের গঠন করা সন্ত্রাসবাদী দলগুলো জোর জবরদস্তি করে মুসলমানদের বাড়ি-ঘর ও সম্পত্তি দখল করে নেয়। জাতিসংঘে ফিলিস্তিন বিভক্তির প্রস্তাব গ্রহণ করার পর মাত্র ১০০ দিনে ১৭ হাজার ফিলিস্তিনীকে শহীদ করে ইহুদী সন্ত্রাসবাদীরা। তখন সমগ্র মুসলিম জাহানে এ অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠে। এর প্রেক্ষিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এ বিষয়টি নিয়ে পুনরালোচনা শুরু হয় এবং ফিলিস্তিন বিভক্তির বিষয়টি স্থগিত করে রাখা হয় বেশ কিছুদিন।
এ সময় ইহুদীরা নয়া ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারা গোপনে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানের সাথে গোপন যোগাযোগ করে ষড়যন্ত্র শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় হঠাৎই ১৯৪৭ সালের ১৪ই মে সকাল ৬ টা ১ মিনিট কুখ্যাত ইহুদী নেতা বেন গুরিয়ান ইসরাইল নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের ঘোষণা করে ফিলিস্তিনে এবং এর মাত্র ১০ মিনিট পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান সেই অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইলকে স্বীকৃতি প্রদান করে। এর কিছুক্ষন পরই রাশিয়াও ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়। এভাবে পৃথিবীতে শান্তি ও ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠার জোর দাবীদার ভন্ড দুটি রাষ্ট্র রাশিয়া ও আমেরিকা মুসলি জাহানের বুকে বিষাক্ত ছুরি বসিয়ে দেয়।
তবে তৎকালীন আরব রাষ্ট্রগুলো এ বিষয়টি স্বীকার করে নেয়নি। তারা তৎক্ষনাৎ ইসরাইলের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনগুলো এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা পোষন করে। শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ। প্রায় ৮ মাসব্যাপী ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বেশ কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্র। এ সময় ইসরাইলকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে আমেরিকাসহ বেশ কয়েকটি দেশ। পরবর্তীতে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে যুদ্ধবিরতি হয় এবং ফিলিস্তিনে ইহুদীদের দাবীকৃত জায়গা এবং স্বাধীন ফিলিস্তিনেও জাতিসংঘ সেনা মোতায়েন করে। মূলত এটাই ছিলো জাতিসংঘের কুটচাল। তারা চেয়েছিলো যাতে করে স্বাধীন ফিলিস্তিনকে বাস্তবিকভাবে আলাদা করা যায়। এর মাধ্যমে বিশ্ববাসী বুঝতে পারে যে, জাতিসংঘ মূলত ইহুদীসংঘ তথা ইহুদীদের তল্পিবাহক হিসেবে কাজ করছে।
বিভিন্ন তথ্যে জানা যায়, সে সময় ইহুদী অবৈধ রাষ্ট্র দাবীকৃত ইসরাইলের বিরুদ্ধে জর্ডান থেকে ৫ লাখ, লেবানন থেকে দেড় লাখ, ফিলিস্তিনের গাজা থেকে ৩ লাখ, সিরিয়া থেকে ১ লাখ আরব মুহাজির এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলো।
-মুহম্মদ শাহ জালাল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আগলাবী সালতানাতের মুসলিম নৌবহর (১)
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বর্ণালী যুগে মুসলমানদের বিজয় রহস্য এবং বিধর্মীদের স্বীকারোক্তি (১)
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারস্যের এক গভর্নরের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের ঘটনা
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র আযানের জন্য ২২ জন মুসলমানের শহীদ হওয়ার ঈমানদীপ্ত ঘটনা
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সুলতান আব্দুল হামিদ ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইহুদীবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে দৃঢ়চিত্ততা (বিস্তারিত)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যুগে যুগে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের ইতিহাস (২)
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)