শেখ হাসিনার পতন হজম করতে পারছে না ভারত সরকার -রিজভী
, ২৯শে জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৪ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০২ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) দেশের খবর
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, শেখ হাসিনার পতন হজম করতে পারছে না ভারত সরকার।
গতকাল ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, দুনিয়া কাঁপানো ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মুখে কুখ্যাত গণতন্ত্রের ঘাতক শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের স্বস্তি-শান্তির অভাবনীয় স্বর্ণদ্বার উন্মোচিত হয়েছে। দেশের চতুর্দিকে গণতন্ত্রে উত্তরণের সম্ভাবনায় জনউচ্ছাস দেখা দিয়েছে। দেড় দশকের জগদ্দল পাথর অপসারণ হয়েছে মানুষের স্কন্ধ হতে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই যখন একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন, তখন বাংলাদেশের দেড় দশকের সন্ত্রাসী মাফিয়ালীগের রক্তাক্ত তা-বে সুষুপ্তিতে থাকা ভারত সরকার সর্বস্ব হারানোর বেদনাবিদ্ধ অস্থিরতা আর অস্বস্তি বিস্ময়কর রকমের প্রকট হয়ে উঠেছে। শেখ হাসিনার পতন হজম করতে পারছে না ভারত সরকার। শেখ হাসিনার পতনে তাদের অন্তরে ভয়ঙ্কর অনল দহন। এর কারণ অতিমাত্রায় দাদাগিরি করার ফলে ভারতের সাথে তার প্রত্যেক প্রতিবেশীর সম্পর্ক তলানিতে। শুধু হাসিনার ঘাড়ে সওয়ার হয়ে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব স্থাপন করেছিল বাংলাদেশের ওপর। ভারত বাংলাদেশকে আশ্রিত রাজ্যের মতো বিবেচনা করত। সেই আশ্রিত রাজ্য হাত ফসকে গেছে। বিগত ১৫ বছর হাসিনাকে সামনে রেখে ভারত বাংলাদেশকে কার্যত দখল করে নেয়ার চেষ্টা করেছিল।
তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশকে আবার কিভাবে তাদের করতলে নেয়া যায়, সেই লক্ষ্যেই তারা নীলনকশা করছে। ভারতের সরকার মনে করে, বাংলাদেশকে অষ্টম সিস্টার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা গেলে তাদের সেভেন সিস্টার্স নিরাপদ থাকবে। চানক্য ভারতের বশংবদ ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন ও পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়ার পর থেকেই মোদি ও তার গদি মিডিয়া বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্র এবং অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। তারা চরম হতাশা-আহাজারিতে নিমজ্জিত। তাদের আচরণ ক্রমশঃ স্পষ্টত অসুপ্রতিবেশীসুলভ, অস্বাভাবিক এবং একদেশদর্শী। একজন স্বৈরাচারের পতন নিয়ে কোনো দেশের এমন আহাজারি বিশ্বে বিরল। ভারতের কতিপয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বানোয়াট গল্প প্রচার ও প্রোপাগান্ডা চালিয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে চলেছে। ভারতীয় সাম্প্রদায়িক শাসকগোষ্ঠী ও হাসিনার যৌথ ইন্ধনে ভারতীয় কিছু উগ্র হিন্দত্ববাদী গণমাধ্যম এমন অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের বর্তমান বয়ান মিথ্যার ধোঁয়াজাল দিয়ে ঘেরা। ভারত অন্তর্গত দিক থেকেই বাংলাদেশ বিদ্বেষী। এদের মধ্যে মানবিক নৈতিকতার ছিটেফোটাও নেই।
রিজভী বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভঙ্গের কোনো কারণের অভ্যুদয় হয়নি। কিন্তু পাশ্ববর্তী দেশ থেকে হাইপার প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের। বাংলাদেশের ভাবমর্যাদাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করার জন্য ভারত উঠেপড়ে লেগেছে। বাংলাদেশ থেকে দুঃশাসনের অবসান হওয়া, হাসিনার পালিয়ে যাওয়া ইত্যাদি তাদের মনে ভীষণ পীড়া দিচ্ছে। তাই বাংলাদেশকে লাঞ্ছিত করতে, দুর্দশায় ফেলতে, অবমাননা করতে চলছে অতিকথন আর অপপ্রচারের বিরতিহীন ধারাভাষ্য। তথাপিও যাবতীয় ভয়, হুমকি ও দুর্বিপাকের মধ্যেও বাংলাদেশীরা মৃত্যুঞ্জয়ী সংকল্পে সকল চক্রান্তকে প্রতিহত করবে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, প্রতিদিন বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারত সরকার এবং উগ্রবাদী বিজেপির নেতারা বক্তব্য-বিবৃতি হুঙ্কার এবং বায়বীয় অভিযোগ করেই চলেছে। কলকাতায় আমাদের উপ-হাইকমিশনে উগ্রবাদী হিন্দুরা আক্রমণ চালিয়েছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাতে ভারতীয় গোয়েন্দারা আওয়ামী লীগ ও বিশেষ একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠিকে কিভাবে ব্যবহার করছে, সেই পরিকল্পনার ছক প্রকাশ্যে এসেছে। তাদের যে কোনো ভিত্তি নেই, তার প্রমাণ মিলেছে সম্প্রতি ভয়েস অব আমেরিকার (ভিওএ) করা একটি জরিপে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৬৪.১ শতাংশ মনে করেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের চেয়ে অন্তর্র্বতী সরকার ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বেশি নিরাপত্তা দিচ্ছে। এই জরিপ বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান করেনি। বিদেশী প্রতিষ্ঠান করেছে। ফলে এ নিয়ে প্রশ্ন থাকার কোনো অবকাশ নেই। বরং ভারতে কিভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে, তা নিয়ে স্পষ্টভাবে প্রশ্ন তোলা যায়। ভারতে প্রতিনিয়ত মুসলমানরা নিপীড়ন-নির্যাতন, এমনকি খুনের শিকার হচ্ছে। বাড়ি-ঘর-স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। শুধু মুসলমানই নয়, দেশটির খ্রিস্টান সম্প্রদায়ও আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। আসামে খ্রিস্টিয়ান ফোরাম বলেছে, আসামে কয়েক বছর ধরে সংখ্যালঘু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ধারাবাহিকভাবে আক্রমণের শিকার হচ্ছে। ভারত সরকার তার প্রতিবাদ বা প্রতিকার করে না। মণিপুরে হিন্দু ও খ্রিস্টানদের উপাসনালয় ধ্বংস করা হয়েছে।
একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে রিজভী বলেন, ভারতে ২৫০টিরও বেশি গির্জা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, দুইশ’ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং ৬০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ভারতের অহিন্দু জনগোষ্ঠী মুসলিম, খৃস্টান ও শিখ সম্প্রদায় যৌথভাবে সাম্প্রদায়িকতার হুমকির সম্মুখীন। বিজেপির সাম্প্রদায়িকতার নীতি হলো সহিংসতা, বৈষম্য, সংখ্যালুঘুদের ওপর ধর্মীয় নিপীড়নের মাধ্যমে ভীতি ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা। বিজেপি ও আরএসএস-এর পৃষ্ঠপোষকতায় এই নীতিগুলোর চর্চা করা হচ্ছে। একেবারে খোলাখুলিভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ভিন্নমতকে জায়গা দেয়ার মতো বিষয়কে খারিজ করে দেয়া হচ্ছে।’
ভারতকে দ্বিচারিতা বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘হিসাব করলে দেখা যাবে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ভারতে। তারাই আবার বড় গলায় বলছে বাংলাদেশে না কি সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ভারত তার নিজের দেশের যেখানে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে এত মাথা ব্যথা কেন ভারতের? বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নিয়ে অনবরত অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো। অপপ্রচারে মেতেছে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি ও তার সহযোগীরাও। ভারতের এই আচরণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে হুমকি।’
তিনি বলেন, অপরদিকে বাংলাদেশে বিতর্কিত এক ধর্মীয় নেতা চন্দন কুমার ধর ওরফে চিম্ময়ের অনুসারী হিন্দু সন্ত্রাসীরা তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে আইন অমান্য করেছে, আদালত অবমাননা করেছে এবং আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। ভারত সরকার এই বর্বরোচিত হত্যাকা-ের প্রতিবাদ করেনি। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে যে হিন্দুদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন ও মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর, জমিজমা দখল হয়েছে, তা নিয়ে ভারতকে তো কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। এমনকি, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা বিএনপির যে লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের ওপর স্টিম রোলার চালিয়ে, গুম, খুন, অপহরণ, জেল-জুলুম করেছে, অরাজনৈতিক বিরোধী মতকে দমন করেছে, তা নিয়েও টু শব্দ করেনি। পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ, শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যা, হত্যাকা-, তিনটি ভোটারবিহীন সংসদ নির্বাচনসহ কোনো অপকর্মের প্রতিবাদ ভারত করেনি। বরং এসবের বৈধতা ও সমর্থন দিয়েছে ভারত।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশে তীব্র ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নভেম্বরে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ১৬, আহত ৫৯৯
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘বাংলাদেশ চলো’ কর্মসূচির অনুমতি নাকচ করলো ত্রিপুরা পুলিশ, বাঁশের ব্যারিকেড
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
গুমের তদন্তে আরও তিন মাস সময় পেলো কমিশন
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আধপেটা থাকছে কলকাতার ব্যবসায়ীরা -বাংলাদেশিরা না যাওয়ায় হাহাকার
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বাংলাদেশ সীমান্তে অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করেছে বিএসএফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ অবমাননার দায়ে আটক আকাশ দাস
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘দিল্লি না ঢাকা’ স্লোগানে উত্তাল বিএসএমএমইউ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে ঢাকা
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ভুয়া খবর ছড়ায় ভারত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৫ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৬২৯
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কারামুক্ত হলেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)