শিক্ষা সংস্কারে উসমানীয় সুলতান সুলায়মান আল কানুনীর অবদান
, ০৫ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৫ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ২৪ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ১০ আষাঢ়, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) ইতিহাস
সুলতান সুলায়মান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন শিক্ষাক্ষেত্রে। উসমানীয় সালতানাতের শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের দিকে উনার বিশেষ মনোযোগ লক্ষণীয়। কারণ তিনি সালতানাতের উন্নয়নে জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানীদের অবদান সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন ছিলেন এবং এটিকে তিনি মুসলিম শাসনের প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে অগ্রাধিকার দেন। তিনি শিক্ষা ও শিক্ষিতদের একজন উদার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। উনার আমলে তুর্কি মুসলিম সাহিত্য বিশেষ সমৃদ্ধি লাভ করে। সম্ভবত উনার ইলমী অনুরাগ ও সাহিত্যের প্রতি প্রবল ঝোঁক এই দিকটিতে দুর্দান্ত ভূমিকা রাখতে প্রেরণা দিয়েছিল। ওয়াকফ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে আলেম উনাদের দ্বারা পরিচালিত মাদরাসাগুলোতে তিনি বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি নতুন পাঠ্যক্রম এবং চিন্তাধারার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। সালতানাতের অর্থায়নে নির্মিত মসজিদ-মাদরাসাগুলো মুসলিম শিশুদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিল। এগুলো খ্রিষ্টান ভূখন্ডগুলোর শিক্ষাকেন্দ্র থেকে বহুগুণে এগিয়ে ছিল।
সুলতান সুলায়মান রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের দ্বীন ইসলাম উনার নীতিমালা শিক্ষার জন্য ১৪টি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। আগ্রহী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যাবার লক্ষ্যে মাদরাসাগুলোতে অন্তর্ভূক্ত করেন আটটি বিশেষ বিষয়। তন্মধ্যে রয়েছে- নাহু, সরফ, বালাগাত তথা আরবি ব্যাকরণ, ভাষা-অলংকার, দর্শন এবং জ্যোতির্বিদ্যা।
মাদরাসাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করতেন। উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে স্নাতকরা ইমাম, শিক্ষক ও বিচারক হতেন। শিক্ষাকেন্দ্রগুলো প্রায়শই মসজিদের উঠোনের আশপাশের কয়েকটি বিল্ডিংয়ে হতো। উসমানীয় সালতানাতে গাণিতিক ও চিকিৎসা-বিজ্ঞানের উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করার পরে সুলতান সুলায়মান চারটি বিশেষ মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে গণিত, মেডিসিন ও আধুনিক চিকিৎসা-বিজ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হতো।
সুলতান সুলায়মানের নির্দেশে বিখ্যাত মুসলিম স্থপতি মিমার সিনানের তত্ত্বাবধানে সুলায়মানিয়া শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষাকেন্দ্রগুলো ১৫টি বিভাগে ছিল। তন্মধ্যে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়, চিকিৎসা বিষয়ক শিক্ষাকেন্দ্র, মানসিক হাসপাতাল, পবিত্র হাদীছ শরীফ, মুদ্রন শিল্প, অতিথিশালা।
ষোড়শ শতকের আনাতোলিয়ায় ছিল শত শত মাদরাসা। এডিরন শহরে ১৪টি মাদরাসা ছিল। অনেক মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পরে সেগুলোতে পড়াশোনা ও পরিচালনার জন্য একটি সুফলদায়ক পদ্ধতি চালু করা হয়। সুলতান সুলায়মান এই শিক্ষাকেন্দ্র গুলোতে ১২টি গ্রেডে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। এর প্রতিটির নিজস্ব নাম ছিল এবং প্রতিটি ছাত্রকে অবশ্যই পরবর্তী গ্রেডে যাওয়ার জন্য পূর্বের গ্রেডে কৃতকার্য হতে হতো।
প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা শিক্ষার্থীরা এখানে শিক্ষা সমাপন করে উসমানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করতে পারতেন। বিচারক, কাজি ও মুফতী হতে পারতেন। যোগ্যতা অনুসারে সালতানাতের গুরুত্বপূর্ণ পদে অভিষিক্ত হতে পারতেন। আরবি, তুর্কি, ফারসি এবং ল্যাটিনসহ অনেক ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতেন উনারা। পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইসলামী ইতিহাস ও তাহযীব তামাদ্দুন বিষয়েও বিশেষ পারদর্শী হতেন। এই বিষয়টিকে প্রথমেই অগ্রাধিকার দেয়া হতো। পাশাপাশি, সামরিক শিক্ষাও অর্জন করানো হতো তাদের। তরবারি ও গোলাবর্ষণেও যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিতেন এসব শিক্ষার্থীরা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আগলাবী সালতানাতের মুসলিম নৌবহর (১)
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বর্ণালী যুগে মুসলমানদের বিজয় রহস্য এবং বিধর্মীদের স্বীকারোক্তি (১)
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারস্যের এক গভর্নরের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের ঘটনা
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র আযানের জন্য ২২ জন মুসলমানের শহীদ হওয়ার ঈমানদীপ্ত ঘটনা
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সুলতান আব্দুল হামিদ ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইহুদীবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে দৃঢ়চিত্ততা (বিস্তারিত)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যুগে যুগে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের ইতিহাস (২)
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যুগে যুগে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের ইতিহাস (১)
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নেপোলিয়নের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ এবং ১২ই শরীফ পালন নিয়ে ঐতিহাসিক তথ্য
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বাংলার ইতিহাসের স্বর্ণপাতায় মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ সংক্রান্ত ঐতিহাসিক একটি ঘটনা
১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)