রেসিপি: হাইসাহ্
, ২৭ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৫ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ৩০ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মহিলাদের পাতা
حَدَّثَنَا ابْنُ اَبِـي مَرْيَـمَ اَخْبَرَنَا مُـحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ اَخْبَرَنِـي حُـمَيْدٌ اَنَّهُ سَـمِعَ حَضْرَتْ اَنَسًا رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ يَقُوْلُ قَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَبْنِيْ بِصَفِيَّةَ فَدَعَوْتُ الْمُسْلِمِيْنَ اِلَى وَلِيْمَتِهِ اَمَرَ بِالاَنْطَاعِ فَبُسِطَتْ فَأُلْقِيَ عَلَيْهَا التَّمْرُ وَالاَقِطُ وَالسَّمْنُ. وَقَالَ حَضْرَتْ عَمْرٌو رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ حَضْرَتْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ بَنَىْ بِـهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُـمَّ صَنَعَ حَيْسًا فِي نِطَعٍ.
অর্থ : “হযরত আনাস রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল ‘আশিরহ্ আলাইহাস সালাম উনার সঙ্গে পবিত্র নিসবাতুল আ’যীম শরীফ গ্রহণ করলেন। আমি উনার সম্মানিত ওলীমা মুবারক উনার জন্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের দাওয়াত করলাম। উনার মুবারক নির্দেশ মোতাবেক পবিত্র দস্তরখান বিছানো হলো। তারপর খেজুর, পনির ও ঘি দেয়া হলো। হযরত ‘আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র নিসবাতুল আ’যীম শরীফ গ্রহণ করলেন এবং চামড়ার দস্তরখানে ‘হায়স’ তৈরী করলেন।” (বুখারী শরীফ: কিতাবুত ত্বয়ামা‘য়াহ: বাবুল খ্বুবযিল মুরাক্কাক্বি ওয়া আকলি ‘আলাল খ্বিওয়ানি ওয়াস সুফরাহ: হাদীছ শরীফ নং ৫৩৮৭)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت اَنس رضي الله تعالى عنه قال كان رسول الله عروسا بزينب، فعمدت أم سليم إلى تـمر وسـمن وأقط، فصنعت حيسا فجعلته في تور فقالت يا أنس اذهب بـهذا إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم، فقل بعثت بهذا إليك أمي وهي تقرئك السلام، فقال صلى الله عليه وسلم ادع لي فلانا وفلانا رجالا سـماهم، وادع لي من لقيت، فدعوت من سـمى ومن لقيت، فرجعت، فإذا البيت غاصّ، بأهله، قيل لأنس ما عددهم؟ قال كانوا ثلاثـمائة فرأيت النبي صلى الله عليه وسلم وضع يده الشريفة على تلك الحيسة وتكلم بـما شاء الله، ثـم جعل يدعو عنده عشرة عشرة يأكلون منه، ويقول لـهم اذكروا الله وليأكل كل رجل مـما يليه، فأكلوا حتى شبعوا كلهم، ثـم قال صلى الله عليه وسلم لي يا أنس ارفع فرفعت، فما أدري حين وضعت كانت أكثر أو حين رفعت،
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে যখন উম্মুল মু‘মিনীন আল খ¦মিসাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মাসাকীন আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মনিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়, তখন (আমার সম্মানিতা আম্মাজান) হযরত উম্মু সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা তিনি গিয়ে খেজুর, মাখন/ঘি এবং পনির মিশ্রিত করে ‘হাইস্’ নামক এক প্রকার খাবার তৈরী করে একটি পিতলের পাত্রের মধ্যে (গামলার মতো মোটামোটি একটি বড় পাত্রের মধ্যে) রাখেন। তারপর বলেন, হে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু! আপনি এই সম্মানিত খাবার মুবারক নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ গিয়ে বলুন, এই সম্মানিত খাবার মুবারক আপনার জন্য আমার সম্মানিতা আম্মাজান তিনি পাঠিয়েছেন এবং তিনি আপনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ সম্মানিত সালাম মুবারক পেশ করেছেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনেকের নাম মুবারক উল্লেখ করে ইরশাদ মুবারক করেন, আমার নিকট আপনি অমুক, অমুক এবং যাঁদের সাথে আপনার সাক্ষাৎ হয় উনাদেরকে ডেকে আনুন। তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যাঁদের নাম মুবারক উল্লেখ করেছেন এবং আমার সাথে যাঁদের সাক্ষাৎ হয়েছে উনাদেরকে ডেকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ ফিরে আসলাম। হঠাৎ দেখলাম যে, সম্মানিত হুজরা শরীফ লোক দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে গেলেন। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, উনাদের সংখ্যা কত ছিলেন। তিনি বলেন, উনারা ৩০০ জন ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! (হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন,) অতঃপর আমি দেখলাম যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল মাগফিরাহ্ মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাত মুবারক) সেই খাবারের পাত্রের মধ্যে রেখে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ইরাদা বা ইচ্ছা মুবারক অনুযায়ী কিছু বাক্য মুবারক উচ্চারণ করলেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খাবার খাওয়ার জন্য উনার নিকট ১০ জন ১০ জন করে লোক ডাকলেন এবং উনাদেরকে বললেন, আপনারা ‘বিসমিল্লাহ শরীফ’ বলে প্রত্যেকেই পাত্রের নিজ নিজ দিক থেকে খাবার মুবারক গ্রহণ করুন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর উনারা প্রত্যেকেই তৃপ্তি সহকারে খেলেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে বললেন, হে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু! আপনি ঢাকনা মুবারক তুলুন। অতঃপর আমি ঢাকনা মুবারক তুললাম। আমি জানি না যে, যখন পাত্র মুবারক-এ খাবার রাখা হয়েছে তখন বেশি খাবার মুবারক ছিলো, না কি যখন ঢাকনা মুবারক তুললাম তখন বেশি (খাবার মুবারক ছিলো। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ পাত্র মুবারক-এ যখন খাবার মুবারক রাখা হয়েছে তখন যে পরিমাণ খাবার মুবারক ছিলো এবং যখন ঢাকনা মুবারক তুললাম তখনও ঠিক সেই পরিমাণই খাবার মুবারক ছিলো।)” সুবহানাল্লাহ! (আস সীরাতুল হালাবিয়্যাহ শরীফ ৩/৪০৯)
প্রস্তুত প্রণালী:
উপকরণ: ১. খেজুর, ২. পনির, ৩. মাখন/ঘি
তৈরির পদ্ধতি-১: খেজুর, পনির ও মাখন/ঘি একসাথে মিশ্রিত করে কাঁইয়ের মতো করা হয়। আধা কাপ পানি দিয়ে কিছুক্ষণ চুলায় জাল দেয়া হয়। মিশ্রণটি হালুয়ার মতো হলে নামিয়ে ফেলা হয়। কিছুটা ঠান্ডা হওয়ার পর নাড়ুর মতো গোল গোল করে পরিবেশন করা যায় অথবা ছুড়ি দিয়ে কেটে চৌকোণাকৃতির করা যায়।
তৈরির পদ্ধতি-২: মাখন/ঘি একটি কড়াইতে গলানো হয়। তাতে আধা কাপ যবের গুড়া বা ময়দা দিয়ে লালচে রং আসা পর্যন্ত ভালোভাবে নাড়া হয়। এ সময় খেজুরগুলোর বিচি বের করে ম- তৈরি করা হয়। ম-টি মাখন ও ময়দার মিশ্রণের সাথে দিয়ে ভালোভাবে মিশ্রিত করে ফেলা হয়। চুলা থেকে নামিয়ে হাইস ঠান্ডা করা হয়। অতঃপর কেটে অথবা গোল করে পরিবেশন করা হয়।
পবিত্র মদীনা শরীফে এখনও অতিথি আপ্যায়নে মিষ্টান্ন হিসেবে হাইস পরিবশেন করা হয়। বর্তমানে পবিত্র মদীনা শরীফে প্রচলিত হাইস তৈরীর পদ্ধতি:
উপকরণ:
১. খেজুর (১ কেজি), ২. মাখন অথবা ঘি (২০০ গ্রাম),
৩. পানি (৫০০ মিলি), ৪. আটা বা যবের আটা (৫০০ গ্রাম)।
তৈরির পদ্ধতি-৩: প্রথমে মাখন বা ঘি দিয়ে আটা/যবের গুড়া হালকা ভাজতে হবে। বিচি ছাড়ানো খেজুর পানিতে সেদ্ধ করে সেই পাত্রেই ধীরে ধীরে আটা দিতে হবে এবং সাথে সাথে হাতে ব্লেন্ড করতে হবে অথবা দ্রুত নাড়তে হবে। সবগুলোর মিশ্রণ ভালোভাবে হয়ে গেলে নামিয়ে ফেলতে হবে। হায়েস হালকা অবস্থায় অথবা পুরোপুরি ঠান্ডা করেও পরিবেশন করা যায়।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কিভাবে প্রথম মাসে আপনার শিশুর বিকাশে সাহায্য করবেন?
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘ই’জায শরীফে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সন্তানদের ও পরিবারের সকলকে সালাম দেয়া শিক্ষা দান করুন
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৪)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কাফের বিশ্বে নারীরা শুধু কি এখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে?
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একজন দ্বীনদার পরহেযগার আল্লাহওয়ালী মহিলা উনার পর্দা পালনের বেমেছাল দৃষ্টান্ত
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বচক্ষে দেখা কিছু কথা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারিবারিক তা’লীমের গুরুত্ব ও তারতীব
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)