রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কতটুকু
, ২২শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৬ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ০১ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) তাজা খবর

নিজস্ব প্রতিবেদক:
এবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে, যেহেতু সামনে জাতীয় নির্বাচন। যদিও দেশের সংবিধানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত, কিন্তু নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধ অব্যাহত থাকায় নির্বাচন এলে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা আলোচনায় আসে। সীমিত ক্ষমতার মধ্যেই নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রপতি দলগুলোর বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করাসহ কিছু ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারেন, এমন একটা ধারণা সাধারণভাবে রয়েছে। এবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগে। সে কারণে সবার আগ্রহ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে।
সংসদীয় পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতির নামেই রাষ্ট্রের সব কর্মকা- চলে। সংবিধানে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সব ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করবেন। রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন রাষ্ট্রপ্রধান, কিন্তু তিনি সরকারপ্রধান নন।
শুধু দুটি স্বাধীন ক্ষমতা:
দুটি ক্ষমতা সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে।
রাষ্ট্রপতি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে প্রধান বিচারক নিয়োগ করতে পারেন। প্রধান বিচারক কে হবেন, তা নির্ধারণ করা এবং তাঁকে নিয়োগ করার ক্ষমতা সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে।
সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি স্বাধীনভাবে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে পারেন। সংসদ নির্বাচনে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাবে, সেই দলের নেতাকেই প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে হয়। তবে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে, তখন কোন দলের জোট থেকে কে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পাবেন, তা রাষ্ট্রপতিই নির্ধারণ করবেন।
পরোক্ষ ক্ষমতা:
রাষ্ট্রপতি অনুরোধ করলে যেকোনো বিষয় মন্ত্রিসভায় বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী পেশ করবেন। এই পরোক্ষ ক্ষমতার কথা বলা আছে সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদের ৫ নম্বর পরিচ্ছেদে।
পরোক্ষ ক্ষমতার বিষয়টি দেখলে মনে হবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা অনেক, আসলে তা নয়। প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারক নিয়োগ-এই দুটি কাজের ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রপতির কারও পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এর বাইরে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া রাষ্ট্রপতির কোনো দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা নেই।
সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারক নিয়োগ ছাড়া বাকি সব দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন।
একই সঙ্গে সংবিধানে এমন শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোনো পরামর্শ দিয়েছেন কি না, কিংবা পরামর্শ দিয়ে থাকলে তা নিয়ে কোনো আদালত প্রশ্ন তোলা যাবে না।
সংবিধানে বলা হয়েছে, সংবিধান ও অন্য কোনো আইনের দ্বারা রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া ও অর্পিত সব ক্ষমতা প্রয়োগ ও কর্তব্য পালন করবেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় ও পররাষ্ট্রনীতিসংক্রান্ত বিষয় রাষ্ট্রপতিকে অবহিত রাখবেন প্রধানমন্ত্রী।
রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোও এর সমর্থনে বিভিন্ন সময় বক্তব্য দিয়েছে, কিন্তু তা আলোচনাতেই রয়ে গেছে।
কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের দেওয়া যেকোনো দ-ের মার্জনা বা ক্ষমা করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতিকে সংবিধানে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির দায়মুক্তি:
রাষ্ট্রপতিকে তার দায়িত্বের ব্যাপারে কোনো আদালতে জবাবদিহি করতে হবে না।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তার বিরুদ্ধে কোনো আদালতে কোনো প্রকার ফৌজদারি মামলা করা যাবে না। তাঁকে গ্রেপ্তারের বা কারাগারে নেওয়ার জন্য কোনো আদালত থেকে পরোয়ানা জারি করা যাবে না।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার যোগ্যতা:
রাষ্ট্রপতি হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ৩৫ বছর, সংবিধানে সর্বোচ্চ বয়সসীমা উল্লেখ নেই ।
সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার জন্য যে যোগ্যতা থাকতে হয়, সেই যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীকে। তবে প্রার্থীর সংসদ সদস্য হওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই।
কেউ আগে কখনো রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারিত হয়ে থাকলে তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
যিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের দিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারবেন।
তবে রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তার উত্তরাধিকার দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত তিনিই নিজের পদে বহাল থাকবেন। দুই মেয়াদের বেশি কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না।
রাষ্ট্রপতি তার দায়িত্ব পালনের সময় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হবেন না। কোনো সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের দিনে সংসদে তার সদস্যপদ শূন্য হবে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয় যেভাবে:
রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদ সদস্যদের ভোটে। প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করতে হয় একজন সংসদ সদস্যকে এবং আরেকজন সংসদ সদস্যকে সেই প্রস্তাব সমর্থন করতে হয়।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তফসিল ঘোষণার আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতীয় সংসদের স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা করে থাকেন।
১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি আইন অনুসারে, ইসি ভোটার তালিকা প্রণয়ন করবে এবং যাচাই-বাছাই করবে মনোনয়নপত্র।
প্রার্থী একজন হলে এবং যাচাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বৈধ বিবেচিত হলে তাঁকে নির্বাচিত ঘোষণা করবে ইসি।
একাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলে ভোট করতে হবে। সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্তকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করার বিধান রয়েছে সংবিধানে।
রাষ্ট্রপতির অভিশংসন:
পদটি আলংকারিক হলেও একজন রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করতে দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যের ভোট প্রয়োজন হবে।
সংবিধান লঙ্ঘন বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসিত বা অপসারণ করা যাবে। তবে সে জন্য প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের স্বাক্ষরে অভিযোগের বিবরণ লিখে একটি প্রস্তাবের নোটিশ স্পিকারের কাছে পেশ করতে হবে।
স্পিকারের কাছে অভিযোগসম্পর্কিত নোটিশ যেদিন পেশ করা হবে, সেদিন থেকে ১৪ দিনের মধ্যে ওই বিষয়ে সংসদে কোনো আলোচনা করা যাবে না। আবার ৩০ দিন পরও বিষয়টি আলোচিত হতে পারবে না। ফলে ১৪ দিন পর এবং ৩০ দিনের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনা করতে হবে।
এ সময়ে সংসদ অধিবেশন না থাকলে স্পিকার অবিলম্বে অধিবেশন আহ্বান করবেন।
ভোটের আগে আলোচনা করে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের একমত হতে হবে যে রাষ্ট্রপতি আইন ভেঙেছেন।
এ ছাড়া অভিযোগ তদন্তের জন্য সংসদ কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দিতে পারে। অভিযোগ বিবেচনা করার সময় রাষ্ট্রপতির উপস্থিত থাকার বা প্রতিনিধি পাঠানোর অধিকার থাকবে।
অভিযোগ বিবেচনার পর সংসদে সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের ভোটে প্রস্তাব গৃহীত হলে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হবে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বিএনপি অভিশংসনের উদ্যোগ নিলে তিনি নিজেই পদত্যাগ করেন।
বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল না দিতে যাওয়ার কারণ হিসেবে রাষ্ট্রপতিত্ব হারিয়েছেন।
বর্তমানে সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। ফলে চাইলে যে কাউকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কিংবা অপসারণ ক্ষমতাসীন দলটির জন্য কঠিন কিছু নয়।
রাষ্ট্রপতির অপসারণ:
শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতিকে তার পদ থেকে অপসারণ করা যাবে। সে জন্য সংসদের মোট সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের স্বাক্ষরে কথিত অসামর্থ্যের বিবরণ লিপিবদ্ধ করে একটি প্রস্তাবের নোটিশ স্পিকারের কাছে পেশ করতে হবে।
সংসদ অধিবেশন না থাকিলে নোটিশ পাওয়ামাত্র স্পিকার সংসদের অধিবেশন আহ্বান করবেন এবং একটি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে এ কটি বোর্ড গঠনের প্রস্তাব আহ্বান করবেন।
সংসদের স্পিকার সদস্যদের নোটিশ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দ্রুত রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে ১০ দিনের মধ্যে চিকিৎসক বোর্ডের কাছে স্বাস্থ্য পরীক্ষার অনুরোধ জানাবেন।
সদস্যদের নোটিশ পাওয়ার ১৪ দিন পর স্পিকার অধিবেশনে বিষয়টিতে আলোচনার সুযোগ দেবেন।
অভিযোগ তদন্ত বা বিবেচনা করার প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতির উপস্থিত থাকার বা প্রতিনিধি পাঠানোর অধিকার থাকবে।
দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে সংসদে প্রস্তাব গৃহীত হলে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হবে।
রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে কিংবা অন্য কোনো কারণে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত।
রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে বা অসুস্থ হলেও স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
৯০ দিন পর কী হবে, শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বুড়িগঙ্গা যেন ঢাকার ‘ডাস্টবিন’
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ভোলায় চিকিৎসককে মারধর, নেপথ্যে দালাল চক্র
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ব্যবসার উচ্চ খরচে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাচ্ছে বাংলাদেশ
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
১০ অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল করলো বিডা
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সরিয়ে দেয়া হলো ডিবিপ্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইয়েমেনের ইয়াফা ড্রোনে ইসরায়েলের রাজধানী কাঁপলো
১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সন্ত্রাসী ইসরায়েলের ৩৬টি হামলায় শুধু নারী ও শিশু নিহত -জাতিসংঘের বিশ্লেষণ
১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ফের রেকর্ড দামে সোনা, ভরি ছাড়াল ১ লাখ ৬৩ হাজার
১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দিনাজপুরে লিচু ফুল থেকে ১২০ কোটি টাকার মধু আহরণ
১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
অধস্তন আদালত পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে হাইকোর্টের ১৩ বিচারক
১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ইহুদীবাদী ইসরাইলী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে রাজধানীর রাজারবাগ শরীফ হতে বিশাল প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল
১১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)