যেমন বুযুর্গ পিতা-মাতা, তেমনই উনাদের বুযুর্গ সন্তান
ঘটনা-৭১
, ২০ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৫ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ০৩ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ১৯ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মহিলাদের পাতা
একদিন একজন ক্ষুধার্ত যুবক দজলা নদীর তীর দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ উনার চোখে পড়ল, নদীর মধ্যে একটি আপেল ফল ভাসছে। ক্ষুধা এত অধিক ছিল যে, তিনি বেশি কিছু না ভেবে আপেলটি তুলে খেয়ে ফেললেন। কিন্তু রাত্রে বিছানায় শুয়ে চিন্তা করতে লাগলেন, আপেলটি খাওয়া কতটুকু জায়েয হলো। যদিও পবিত্র শরীয়ত অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি ৩ দিন না খেয়ে থাকে তার জন্য হারামটা মুবাহ হয়ে যায়; তবুও তিনি শান্তি পাচ্ছিলেন না। সকাল হতেই তিনি আবার দজলা নদীর তীরে গেলেন। যেদিক থেকে আপেলটি ভেসে এসেছিল সেদিকে হাঁটতে লাগলেন। কিছুদূর যাবার পর তিনি দেখলেন, নদীর কিনারায় একটি আপেলের বাগান। বাগানের গাছের একটি শাখা ফলসহ নদীর উপর ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। আর সেখান থেকে কিছু ফল পানিতে পড়ে ভেসে আছে। তখন তিনি নিশ্চিত হলেন যে, নিশ্চয়ই তিনি এই গাছেরই ফল খেয়েছেন।
তারপর তিনি বাগানের মালিকের বাড়িতে গেলেন। বাগানের মালীর সাথে কথা বলে জানতে পারলেন এই বাগানের মালিক হচ্ছেন একজন বিশিষ্ট বুযুর্গ ব্যক্তি, হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাই রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি তখন উনার সাথে সাক্ষাত করার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। কিছু সময় পর যখন উভয়ের সাক্ষাত হলো যুবক বললেন, ‘হুযূর! আমি গতকাল অনুমতি ছাড়াই আপনার বাগানের একটি আপেল ক্ষুধার কারণে খেয়ে ফেলেছি, যেটা আমি নদীতে ভাসমান অবস্থায় পেয়েছিলাম। এখন আমি তার মূল্য পরিশোধ করতে এসেছি।’ একথা শুনে হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাই রহমাতুল্লাহি আলাইহি খুবই আশ্চর্য হলেন এবং মনে মনে ভাবলেন, ‘কত লোকই তো আমার বাগানের কত ফল খেয়েছে! আর যেগুলি পানিতে পড়ে ভেসে গিয়েছে সেগুলোর তো দাবিই ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু কেউই এ পর্যন্ত দাম দিতে আসেনি। নিশ্চয়ই এ যুবক মহান আল্লাহ পাক উনার একজন ওলী হবেন।’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার নিকট কত দিরহাম আছে?’ উত্তরে যুবক বললেন, ‘দিরহাম থাকলে তো আপনার ফলই খেতাম না।’ পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘তাহলে কি দিয়ে মূল্য পরিশোধ করবেন?’ যুবক বললেন, ‘আপনার বাগানে কাজ করে ফলের মূল্য পরিশোধ করতে চাই।’ হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাই রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, ‘বেশ, কাজ করতে থাকুন।’
যুবকটি অনেকদিন বাগানে কাজ করলেন। তারপর একদিন হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাই রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বললেন, ‘হুযূর! আমার ফলের মূল্য কি এখনও পরিশোধ হয়নি?’ হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাই রহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন, ‘হ্যাঁ হয়েছে। তবে আর একটি শর্ত আছে, যেটা পালন করলে আমি দাবি ছেড়ে দিতে পারি।’ যুবক বললেন, ‘কি শর্ত?’ হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাই রহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন, ‘আমার একটি মেয়ে আছে। মেয়েটি অন্ধ, বোবা, বধির, ল্যাংড়া, লুলা, কালো ও কুৎসিত। তাকে আপনার বিয়ে করতে হবে।’ শর্ত শুনে যুবক ভাবলেন, ‘এমন একটি মেয়েকে বিয়ে করলে, তার কাছ থেকে কোনো খিদমত তো পাওয়াই যাবে না; উল্টো তারই খিদমত করতে হবে।’ কিন্তু পরক্ষণেই আবার চিন্তা করলেন, ‘দুনিয়া তো ক্ষণস্থায়ী। বাগানের মালিকের থেকে যদি মাফ না পাওয়া যায়, তবে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে কি জবাব দিব?’ এসব চিন্তা করে তিনি রাজী হয়ে গেলেন। বিয়ে হয়ে গেলো।
বিয়ের পরে যুবক বাসর ঘরে প্রবেশ করলেন। কিন্তু পরক্ষণেই আবার বিদ্যুৎগতিতে বাইরে বের হয়ে আসলেন। ঘরের সামনেই একটি ছোট রাস্তা ছিল। সেখানে হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাই রহমাতুল্লাহি আলাইহি দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি জানতেন যে এমন কিছু হবে! যুবক উনাকে দেখতে পেয়ে কাছে এগিয়ে গেলেন। বললেন, ‘হুযূর! বিনা অনুমতিতে একটি আপেল খাওয়ার জন্য যদি আমাকে এতো দিন বাগানে মজুরী খাটতে হয়; তাহলে একজন বেগানা মহিলাকে দেখার শাস্তি কী হতে পারে, সেই চিন্তা করে আমি এক মুহূর্তও ঘরে থাকিনি। বের হয়ে এসেছি।’ হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাই রহমাতুল্লাহি আলাইহি জানতে চাইলেন, আপনি কি দেখেছেন ? যুবক বললেন, আপনি আমাকে আপনার মেয়ের যেমন বর্ণনা দিয়েছিলেন, আমি ঘরে প্রবেশ করে দেখি তার সম্পূর্ণ বিপরীত একজন বসে রয়েছেন। ‘হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাই রহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন, বাবা! আপনি চিন্তা করবেন না। আপনি যাকে দেখেছেন, তিনিই আপনার আহলিয়া। আপনি এখন ঘরে যান। আমি কাল সকালে আপনার প্রশ্নের জবাব দিব।’
পরদিন হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাই রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি যুবককে বললেন, ‘বাবা! আমি আমার মেয়েকে অন্ধ বলেছি, কারণ সে কখনও কোনো পর পুরুষকে দেখেনি; বোবা বলেছি, কারণ সে কখনও কোনো পাপের কথা মুখে আনেনি; বধির বলেছি, কারণ সে কখনও কোনো পাপের কথা কানে শোনেনি; খঞ্জ ও লুলা বলেছি, কারণ সে কখনও কোনো পাপের পথে পা বাড়ায়নি এবং কোনো পাপ কাজ স্পর্শ করেনি; কালো ও কুৎসিত বলেছি, কারণ তাকে কখনও কোনো পর পুরুষ দেখেনি।’ সুবহানাল্লাহ! এই কথা শুনে যুবক যারপরনাই খুশি হলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করলেন।
এই যুবক হলেন, সাইয়্যিদ আবূ ছলেহ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি জঙ্গ বা জিহাদ প্রিয় ছিলেন এজন্য উনাকে জঙ্গী দোস্ত বলা হতো। আর উনার সম্মানিতা আহলিয়ার নাম হলো, সাইয়্যিদা উম্মুল খায়ের আমাতুল জাব্বার ফাতিমা রহমাতুল্লাহি আলাইহা। উনাদের ঘরেই আগমন করেন মহান আল্লাহ পাক উনার বিশিষ্ট ওলী, গাউসুল আ’যম বড়পীর হযরত শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। সুবহানাল্লাহ! যেমন বুযুর্গ পিতা-মাতা, তেমনি উনাদের বুযুর্গ সন্তান।সুবহানআল্লাহ।
ইনশাআল্লাহ চলবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নিকাহ বা বিবাহের ফযীলত (১৯)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইলিম চর্চায় কতবেশি মনোযোগ!
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
শিশু সন্তান জন্ম গ্রহণের ৭ম দিনে সুন্দর অর্থবোধক নাম রাখা
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দেনমোহর নিয়ে কিছু কথা.... (১)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (১)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইতিহাস কথা বলে: নারী নির্যাতনের সাথে বিধর্মীদের সম্পৃক্ততার অনুসন্ধানে
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হাত-পা, চেহারা খোলার মাধ্যমে অবশ্যই সৌন্দর্য প্রকাশ পায়
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইতিহাস কথা বলে- ‘বোরকা’ বাঙালি মুসলমানদের আদি সংস্কৃতি
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আপনি চান, আপনার সন্তান সুশ্রী এবং সুন্দর হয়ে জন্মগ্রহণ করুক?
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে ব্যক্তিত্ব বা আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
‘শরয়ী পর্দা’ মেয়েদের অন্তরের পবিত্রতার সাথে সাথে বাহ্যিক সৌন্দর্য্য ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখে
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)