ইতিহাস
যুগে যুগে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের ইতিহাস (২)
, ২৪ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ৩১ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১৩ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) ইতিহাস
পবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মহাসম্মানিত আনুষ্ঠানিক সূচনাপর্ব থেকেই জাকজমকের সাথে পালিত হয়ে আসছে। যার দলীল ইতিহাসের বাকে বাকে বিদ্যমান। প্রবন্ধটির মাধ্যমে আমরা সেই স্বর্ণালী ইতিহাসই জানবো-
* পবিত্র মক্কা শরীফ উনার পত্রিকা আল ক্বিবলার মতে- পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পবিত্র মক্কা শরীফ এবং উনার অধিবাসীরা পালন করতেন যার নাম ছিলো ইয়ামুল ঈদ মাওলিদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। মুসলমানেরা উত্তম খাবার রান্না করতেন। পবিত্র মক্কা শরীফ উনার আমীর এবং হিজাজের কমান্ডার উনাদের সেনাদের সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত রওজা শরীফ যিয়ারত করতেন এবং ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করতেন। পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বিলাদত শরীফ উনার স্থান মুবারক পর্যন্ত আলোকসজ্জা করা হত এবং দোকান পাট সুসজ্জিত করা হতো। ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ রাতে বাদ ইশা পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের লক্ষ্যে সবাই একত্রিত হতেন। ১১ই রবীউল আউওয়াল শরীফ মাগরীব থেকে ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ আছর নামায পর্যন্ত প্রতি নামাযের পরে ২১ বার তোপধ্বনি দেওয়া হত। (মাসিক তরিকত, লাহোর: জানুয়ারী ১৯১৭, পৃষ্ঠা ২/৩)
* ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাবে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ সম্পর্কে লিখেন, পবিত্র মক্কা শরীফ, পবিত্র মদীনা শরীফ, মিশর, ইয়েমেন, সমগ্র আরবের মুসলমান অনেকদিনব্যাপী পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করতেন। পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার চাঁদ দেখে উনাদের খুশির সীমা ছাড়িয়ে যেত। উনারা একসাথে হয়ে ঈদ (পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ) পালন করতেন। যার কারণে উনারা সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে অবস্থান করেছেন। (বায়ান আল মাওলিদ আন নাবী, পৃষ্ঠা-৫৮)
* শায়খুল ইসলাম ইবনে হাজর আল হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেন, আমাদের সময়ে যখন পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের জন্য জড়ো হতেন, উনারা ভালো কাজের মধ্যে মশগুল থাকতেন। যেমন-দান-ছদকা করা হতো, যিকির হতো, দরুদ শরীফ ও সালাম শরীফ পেশ করা হতো। (ফতোয়ায়ে আল হাদিছিয়াহ, পৃষ্ঠা- ২০২)
মিশর ও সিরিয়াবাসী:
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ অর্থাৎ পবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনে অগ্রগামী ছিলেন মিশর ও সিরিয়াবাসী। মিশরের সুলতান প্রতি বছর সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ রাত্রে পবিত্র মীলাদ শরীফ মাহফিলের আয়োজনের অগ্রণী ভূমিকা রাখতেন। ইমাম সামছুদ্দীন সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, আমি ৭৮৫ হিজরীতে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার রাতে সুলতান বরকুকের উদ্যোগে আলজবলুল আলীয়া নামক কেল্লায় আয়োজিত পবিত্র মীলাদ শরীফ মাহফিলে হাজির হয়েছিলাম। ওখানে আমি যা কিছু দেখেছিলাম, তা আমাকে অবাক করেছে এবং অসীম তৃপ্তি দান করেছে। সে পবিত্র রাতে বাদশার ভাষণ, উপস্থিত বক্তাগণের বক্তব্য, কারীগণের তেলাওয়াতে কুরআন শরীফ এবং না’ত শরীফ পাঠকারীগণের না’ত আমি সাথে সাথে লিপিবদ্ধ করে নিয়েছি।
স্পেন ও পাশ্চাত্য:
স্পেন ও পাশ্চাত্য শহরগুলোতে পবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রাতে রাজা বাদশাহগণ জুলুস বের করতেন। সেখানে বড় বড় ইমাম ও ওলামায়ে কিরামগণ অংশগ্রহণ করতেন। মাঝপথে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক এসে তাদের সাথে যোগ দিতেন এবং বিধর্মীদের সামনে সত্য বানী তুলে ধরতেন। আমি যতটুকু জানি, রোমবাসীগণও কোন অংশে পিছিয়ে ছিলো না। তারাও অন্যান্য বাদশাহগণের মত পবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলের আয়োজন করতেন।
অনারব দেশ:
আরব ছাড়াও অনারবে পবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলের প্রচলন ছিলো মহাসমারোহে। পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসে এবং মহিমান্বিত দিনে এ সকল এলাকার অধিবাসীদের পবিত্র মীলাদ শরীফ মাহফিলের জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন হতো। গরীব মিসকিনদের মধ্যকার বিশেষ ও সাধারণ সকলের জন্য বহু ধরনের খাবারের বন্দোবস্ত করা হত। তাতে ধারাবাহিক তেলাওয়াত, বহু প্রকার খতম এবং উচ্চাঙ্গ ভাষায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ছানা-ছিফত সম্বলিত কবিতা আবৃত্তি হতো। বহু বরকতময় ও কল্যানময় আমলের সমাহার ঘটতো। বিখ্যাত আলেমগণও তাতে অংশগ্রহণ করতেন। মুঘল বাদশাহ হুমায়ুনও বিশাল জাকজমকের সাথে প্রতিবছর ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলের আয়োজন করতেন।
সূত্র: আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবিয়্যি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ইমামুল মুহাদ্দেসীন হযরত মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি।
-মুহম্মদ শাহ জালাল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার সময়কার একটি ঈমানদীপ্ত ঘটনা
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে ভারতীয় লুটেরা সেনাবাহিনীর নজীরবিহীন লুটপাটের ইতিহাস
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে স্বর্ণ পরিশোধন ও রফতানি
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দিল্লির সুলতান হযরত শামসুদ্দীন আলতামাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার গুনাহমুক্ত জীবন
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তাতার বিরোধী যুদ্ধে হযরত আমীর খসরু দেহলভী চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আজকের নগরসভ্যতার জনক মুসলমানগণই
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আফগানিস্তানেও উগ্রতাবাদী ওহাবী-সালাফীদের অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)