যুগে যুগে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের ইতিহাস (১)
, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) ইতিহাস
পবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মহাসম্মানিত আনুষ্ঠানিক সূচনাপর্ব থেকেই জাকজমকের সাথে পালিত হয়ে আসছে। যার দলীল ইতিহাসের বাকে বাকে বিদ্যমান। প্রবন্ধটির মাধ্যমে আমরা সেই স্বর্ণালী ইতিহাসই জানবো-
* আল্লামা হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন- পবিত্র মদীনা শরীফবাসী উনারা পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ খুবই আগ্রহ, উৎসাহ ও আনন্দের সহিত এ দিবস মুবারক উদযাপন করতেন। (মাওরিদ আর রাওয়ী ফি মাওলিদ আন নাবী, পৃষ্ঠা-২৯)
* হযরত ইবনে যাওজী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, পবিত্র হারামাইন শরীফাইন উনার (পবিত্র মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফ), মিশর, ইয়েমেন ও সিরিয়ার এবং আরব এর পূর্ব ও পশ্চিম জনপদের অধিবাসী উনারা পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উদযাপন করতেন। উনারা পবিত্র সাইয়্যিদুশ শুহূর, শাহরুল আ’যম শরীফ মহাসম্মানিত রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার চাঁদ দেখে আনন্দিত হতেন, গোসল করতেন এবং নতুন পোশাক পরিধান করতেন। সুগন্ধী মাখতেন, দান করতেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত মুবারক করতেন। পবিত্র ১২ই শরীফ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ পালন করে যে নিরাপত্তা ও স্বস্তি, জীবিকার মানোন্নয়ন, শিশু ও সম্পদ বৃদ্ধি এবং শহরের শান্তি ও তাদের সাফল্য লাভ হয়েছে তা প্রকাশ করতেন। (তাফসীরে রুহুল বয়ান, আদ দুররুল মুনাজ্জাম পৃষ্ঠা- ১০০/১০১)
* আজ থেকে ৭০০ বছর পূর্বে একত্রিত হয়ে পবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন হতো।
হযরত উমর বিন মুল্লা মুহম্মদ মউসুলি রহমতুল্লাহি আলাইহি এ দিবস মুবারক উনাকে নিয়মিতভাবে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে জারী রাখতেন। উনার অনুসরনে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মহান সিপাহসালার সুলতান হযরত সালাউদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বোনজামাই আরবলের বাদশাহ মালিক আবু সাঈদ মুজাফফর আল দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ অনুষ্ঠান পালন-প্রচলন করেন। সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পূর্ব থেকেই পালিত হতো। তবে তিনি সালতানাতের কেন্দ্রীয় উদ্যোগে প্রথম উদযাপনের নিয়ম চালু করেন।
‘তারিখ-ই-মারাত আয জামান’ এর মতে ঐ অনুষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হত । হিজরী ৭ম শতকের শুরুতে সে যুগের বিখ্যাত ওলামা ও প্রসিদ্ধ ফোজালাগণের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব আবুল খাত্তাব উমর বিন হাসান দাওহিয়া ক্বলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি পবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর একটি কিতাব লিখেন যার নাম দেন ‘আত-তানভির ফি মাওলিদিল বাশীর আন নাজির’। তিনি বাদশাহকে এই বই উপহার প্রদান করেন। তিনি নিজে গ্রন্থখানা পাঠ করে বাদশাহকে শোনান। বাদশাহ অত্যন্ত খুশি হয়ে উনাকে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা উপহার দেন।
শুধু আরবলের বাদশাহ কিংবা মিশরের সুলতান নন, সুলতান আবু মুসা তালামসানী এবং পুর্বেকার আন্দালুস ও পবিত্র আল আকসা শরীফ উনার শাসকেরা পবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করতেন। এ দিবসে উনারা হাজার হাজার স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করতেন। আল্লামা ইবনে জাজরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এর সাক্ষী ছিলেন। আবদুল্লাহ তন্সী সুম্মা তালামসানী এ উদযাপনের উপর বিস্তারিত একটি বই লিখেছেন যার নাম দিয়েছেন “রাহ আল আরওয়াহ“।
তথ্যসূত্র:
১. সুবুলুল হুদা ওয়ার রিশাদ ফি সিরা খায়েরিল আল- মুহব্বদ বিন আলী ইউসুফ দামিশকি।
২. আদ-দূররুল-মুনাজ্জাম ফি হুকমী মাওলিদিন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
৩. আনওয়ার আস সাতিয়া ১৩০৭ হিজরী, পৃষ্ঠা- ২৬১।
* “ফয়ূযুল হারামাইন” কিতাবে হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “আমি এর পূর্বে পবিত্র মক্কা শরীফে পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার বরকতময় ঘর মুবারকে উপস্থিত ছিলাম। আর সেখানে লোকজন সমবেত হয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর একত্রে দরুদ শরীফ পাঠ করছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আগমন মুবারক উনার সময় সংঘটিত অলৌকিক ঘটনাবলী ও মহাসম্মানিত নবুওয়াত মুবারক প্রকাশ উনার পূর্বে সংঘটিত ঘটনাবলী আলোচনা করছিলেন। তারপর আমি সেখানে এক মিশ্র নূরের ঝলক প্রত্যক্ষ করলাম। আমি বলতে পারিনি যে, এ নূরগুলো চর্মচক্ষে দেখেছিলাম এবং এটাও বলতে পারি না যে, এগুলো কেবল মাত্র অন্তর চক্ষুতে দেখেছিলাম। এ দুটোর মধ্যে প্রকৃত ব্যাপার কি ছিল, তা মহান আল্লাহ পাক তিনিই ভাল জানেন। অতঃপর আমি গভীরভাবে চিন্তা করলাম এবং উপলব্ধি করতে পারলাম যে, এই নূর বা জ্যোতি ঐ সব ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের, যারা এ ধরণের মজলিস ও উল্লেখযোগ্য দ্বীনি স্থানসমূহে সম্মানিত নূর মুবারক বিচ্ছুরণের জন্য নিয়োজিত থাকেন। (ফয়ূযুল হারামাইন (আরবী-উর্দু), পৃষ্ঠা নং- ৮০-৮১)
-মুহম্মদ শাহ জালাল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার সময়কার একটি ঈমানদীপ্ত ঘটনা
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে ভারতীয় লুটেরা সেনাবাহিনীর নজীরবিহীন লুটপাটের ইতিহাস
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে স্বর্ণ পরিশোধন ও রফতানি
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দিল্লির সুলতান হযরত শামসুদ্দীন আলতামাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার গুনাহমুক্ত জীবন
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তাতার বিরোধী যুদ্ধে হযরত আমীর খসরু দেহলভী চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আজকের নগরসভ্যতার জনক মুসলমানগণই
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আফগানিস্তানেও উগ্রতাবাদী ওহাবী-সালাফীদের অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)