যিনি সমস্ত শাসকদের জন্য আদর্শ
ঘটনা-৩৮
, ০৩ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২০ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ১৮ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০২ অগ্রহায়ণ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) মহিলাদের পাতা
কাছে গিয়ে দেখেন যে, একজন মহিলার আশেপাশে কয়েকটি ছেলেমেয়ে কান্নাকাটি করছে। আর মহিলাটি চুলার উপর পানি ভর্তি পাতিল বসিয়ে রেখেছে। হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম জানতে চাইলেন, বাচ্চারা কেন কান্নাকাটি করছে। মহিলাটি বললো, ‘তারা ক্ষুধার জ্বালায় অস্থির হয়ে কাঁদছে। তাদের সান্তনা দেয়ার জন্য আমি পানি ভর্তি পাতিল চুলায় দিয়েছি, যেন তারা খাওয়ার আশায় চুপ থাকে ও ঘুমিয়ে যায়।’ মহিলাটি আরো বললো, ‘মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফে আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার এবং আমার ফায়ছালা হবে যে, কেন তিনি আমাদের এই দুরাবস্থার খবর রাখেন না!’ হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম কেঁদে বললেন, ‘মহান আল্লাহ পাক আপনার উপর রহমত নাযিল করুন! আমীরুল মু’মিনীন কিভাবে আপনাদের অবস্থা জানবেন?’ মহিলাটি বললো, ‘এটা কেমন কথা যে, তিনি আমাদের আমীর হয়েছেন অথচ আমাদের খবর রাখবেন না?’
এটা শুনে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আসলাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সাথে নিয়ে চলে আসলেন এবং বায়তুল মাল হতে আটা, খেজুর, চর্বি, কাপড় ও কিছু টাকা নিয়ে একটা বস্তায় ভরলেন। তিনি বললেন, ‘এই বস্তা আমার পিঠে তুলে দাও।’ সবাই উনাকে বাঁধা দিয়ে বলল, ‘হে আমীরুল মু’মিনীন আলাইহিস সালাম! আপনি কেন বোঝা বহন করবেন? আমাদেরকে দিন! আমরা বহন করে পৌঁছে দিচ্ছি।’ কিন্তু তিনি বললেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন কি আমার বোঝা তোমরা উঠাবে? এটা আমাকেই বহন করতে হবে। কেননা এ ব্যাপারে আমাকেই প্রশ্ন করা হবে।’
তারপর বস্তা উনার পিঠ মুবারকে উঠিয়ে দেয়া হলো। তিনি খুব দ্রুত মহিলাটির নিকট গেলেন এবং নিজ হাত মুবারকে খাবার তৈরি করে শিশুদেরকে খাওয়ালেন। এতে মহিলাটি খুব আনন্দিত হয়ে বললো, ‘মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে উপযুক্ত পুরস্কার দিন! হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার স্থলে আপনি যদি খলীফা হতেন!’ হযরত উমর ফারূক্ব আলাইহিস সালাম তাকে সান্ত¡না দিয়ে বললেন, ‘তুমি আগামীকাল আমীরুল মু’মিনীন আলাইহিস সালাম উনার নিকট যেও। আমি উনার তরফ থেকে তোমার জন্য ভাতার বন্দোবস্ত করে দিব।’ তারপর তাদের থেকে বিদায় নিয়ে তিনি খানিকটা দূরে গেলেন এবং সেখান থেকেই কিছুক্ষণ তাদেরকে দেখলেন। তিনি প্রথমে তাদেরকে কান্না করতে দেখে কষ্ট পেয়েছিলেন, এখন তাদেরকে আনন্দিত অবস্থায় দেখে শান্তি লাভ করলেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলতেন, ‘ফোরাতের তীরে একটি কুকুরও যদি না খেয়ে থাকে, তাহলে আমাকে তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে।’ সুবহানাল্লাহ! তিনি বিশ্বের সমস্ত শাসকের জন্য অসামান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন এবং ইসলামী শাসন ব্যবস্থার মর্যাদা ও প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছেন। সুবহানআল্লাহ।
মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া জায়িয নয়
প্রকাশ থাকে যে, আমীরুল মু’মিনীন খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মহিলাদেরকে জামায়াতে নামায পড়তে মসজিদে যেতে নিষেধ করেন এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি তা পূর্ণ সমর্থন ও সত্যায়িত করেন। এর দ্বারা এটা প্রতিভাত যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিষেধকৃত বিষয়কে এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার সমর্থন ও সত্যায়নকৃত বিষয়কে যারা মানবে না তারা ঈমান ও ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। নাঊযুবিল্লাহ! কেননা ফতওয়া হচ্ছে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মতের খিলাফ বা বিরোধিতা করা এবং হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের হুকুমের বিরোধিতা করা কুফরী।
অতএব খাছ ফতওয়া হচ্ছে, মহিলাদের জামায়াতে নামায পড়ার জন্য মসজিদ ও ঈদগাহে যাওয়া কুফরী। কারণ এর দ্বারা সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল কায়িনাত সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার বিরোধিতা করা হয় এবং হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে যিনি দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব আমীরুল মু’মিনীন খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার বিরোধিতা করাসহ সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরও বিরোধিতা করা হয়। নাঊযুবিল্লাহ!
আর আম বা সাধারণ ফতওয়া হচ্ছে, মহিলাদের জামায়াতে নামায পড়ার জন্য মসজিদ ও ঈদগাহে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী। নিম্নে মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদ ও ঈদগাহে যাওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী হওয়ার দলীলসমূহ পেশ করা হলো।
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী সংক্রান্ত অকাট্য দলীলসমূহ:
قال صاحب الهدايه- ويكره لهن حضور الجماعت يعنى الشواب منهن- وقوله الجماعة يتناول الجمع والاعياد والكسوف والاستسقاء- قال اصحابنا لان فى خروجهن خوف الفتنة وهو سبب للحرام وما يقضى الى الحرام فهو حرام فعلى هذا قولهم يكره مرادهم يحرم
অর্থ: ‘হেদায়া’ কিতাবের লেখক তিনি বলেন, ‘যুবতী মহিলাদের জামায়াতে যাওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী।’ তিনি আরো বলেন, ‘জামায়াত বলতে এখানে (পাঁচ ওয়াক্তসহ) জুমুয়া, ঈদাইন, কুসূফ, ইস্তেস্কা ইত্যাদি সবই অন্তর্ভুক্ত।’ আমাদের ফক্বীহগণ উনারা বলেন, কেননা তাদের (মহিলাদের) জামায়াতের জন্য বের হওয়ায় ফিৎনার আশঙ্কা রয়েছে। আর ফিৎনা হারামের অন্তর্ভুক্ত। আর যা হারাম কাজে সহায়তা করে তাও হারাম। এ কারণেই ফক্বীহগণের বক্তব্য হচ্ছে, মাকরূহ্ তাহরীমীর দ্বারা মূলতঃ মহিলাদের জামায়াতে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়াই উদ্দেশ্য। (উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী ৫ম জিল্দ পৃষ্ঠা ১৫৬, ফাতহুল মুলহিম, শরহে মুসলিম ২য় জিল্দ পৃষ্ঠা ৪২৮, তাফহীমুল মুসলিম ১৪ জিল্দ পৃষ্ঠা ২১)
ومنعهن المتأخرون عن الخروج فعن ابن مسعود رضى الله تعالى عنه صلاتها فى حجرتها وصلاتها فى مخدعها افضل من صلاتها فى بيتها- هذا يدل على ان مرضى الشرع ان لا تخرجن الى المساجد
অর্থ: উলামায়ে মুতাআখখিরীণগণ উনারা মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া নিষেধ বলে মত প্রকাশ করেন। কেননা হযরত ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে মরফূ হাদীছ শরীফ হিসাবে বর্ণিত রয়েছে যে, মহিলাদের হুজরায় নামায পড়ার চেয়ে ঘরে নামায পড়া সর্বোত্তম এবং ঘরের চেয়ে গোপন প্রকোষ্ঠে নামায পড়া সর্বোত্তম। উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকে সম্মানিত শরীয়ত এ মতেই ব্যক্ত করে যে, মহিলাগণ জামায়াতের জন্য মসজিদে যাবে না। (ফায়যুল বারী শরহে বুখারী ২য় জিল্দ পৃষ্ঠা ৩২২, বযলুল মাযহূদ শরহে আবূ দাউদ) (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ আবূ সাফওয়ান
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ মুবারক বাস্তবায়নে হযরত মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের বেনযীর দৃষ্টান্ত
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের যারা অনুসরণ করবেন উনারাও হাছিল করবেন সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি মুবারক
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইলমে তাসাউফ অর্জন করা ব্যতীত ইবাদত মূল্যহীন
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুলত্বানুল হিন্দ হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার স্মরণে এই উপমহাদেশের সরকারগুলোর উদ্যোগ কোথায়?
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সুলত্বানুল হিন্দ হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চীশতি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উসীলায় এক কোটিরও বেশি বিধর্মী পবিত্র ঈমান লাভ করেন
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র সুন্নত যিন্দাকারী অর্থাৎ মুহ্ইউস সুন্নাহ
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আফসুস! পাঠ্যবইয়ে ‘স্বাস্থ্য শিক্ষার’ নামে শিশুদের লজ্জাহীনতার শিক্ষা দেয়া হচ্ছে!
০৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত ‘মাহে রজব’ উনার মর্যাদা মর্তবার অন্যতম কারণ ‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ’
০২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানিত গায়িবী নিদা মুবারক
০২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘শীতকাল মু’মিনদের জন্য বসন্ত’
০১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র রজবুল হারাম মাসে রোযা রাখার ফযীলত
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নফসের অনুসরণকারী ধর্মব্যবসায়ীদের অনুসরণ করা জায়েজ নেই
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)